আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ০২.

0
1804

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০২.
আকাশ থেকে মেঘের ‘গুড়ুম গুড়ুম’ ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।ক্ষণে ক্ষণেই বিদ্যুৎ চ*ম*কা*চ্ছে গগণে।সময়টা তখন চৈত্র মাসের।ফাগুনের গরমকে পেছনে ফেলে চৈত্রের বৃষ্টি আকাশ চি*ড়ে ধরণীতে তার আগমন ঘটাতে চাচ্ছে যেনো।রাত্রি তখন এগারোটা বেজে ছাপ্পান্ন মিনিট।ছাদের উপর স্টেজ সাজানো হয়েছে সাদা আর গোলাপি কম্বিনেশনে।পুরো ছাদটাকে আকাশে বিদ্যমান অর্ধচন্দ্র তার আলোয় আলোকিত করতে ব্যস্ত।সেইসাথে ব্যস্ত কয়েকজন ছেলেপেলেও।চোখ বেধে সাদায় মোড়ানো প্রিন্সেস ড্রেসে আবৃত এক কন্যাকে ছাদের কিনার ঘে*ষে দাড় করানো হয়েছে।তার ঠিক ডান পাশেই গগণ হতে চন্দ্রিমা সেই সফেদ কন্যাকে তার আলোয় করে তুলছে অভূতপূর্ব!এমতাবস্থায় একটা মেয়ের মিষ্টি আর কম্পিত কন্ঠ শুনতে পাওয়া যায়,

“চোখের বাঁধন টা খুলে ফেল চাঁদ!”

ঘড়িতে তখন ঠিক বারোটা বেজে শূন্য এক সেকেন্ড।বাঁধন খোলামাত্রই চাঁদের সম্মুখে নিজের প্রিয় মানবকে দেখে যতটানা সে অবাক হয়েছে তার চাইতেও বেশি অবাক হয়েছে তার কন্ঠস্বরে এরূপ এক বাক্য শুনে,

“হ্যাপি টুয়েন্টি মিস হোয়াইট বাটারফ্লাই”

স্ত*ম্ভি*ত অবস্থা থেকে চাঁদের স্বাভাবিক হওয়ার পূর্বেই অবাকের চরম পর্যায়ে চাঁদকে ফে*লে দিতে ছেলেটা তার সামনে গিয়ে তার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আধারিয়া অম্বরে বিদ্যমান অর্ধচন্দ্রিমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“দ্যা মুন ইজ বিউটিফুল”

বলেই অল্প একটু থেমে নিশ্বাস সঞ্চয় করে চাঁদের দিকে ঘুরে তার দিকেই খানিকটা হেলে উভয় ভ্রু উচিয়ে বললো,

“ইজন্ট ইট?”

গাড়ির বাইরে মাথা রেখে আকাশে অবস্থিত অর্ধচন্দ্রের দিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে অতীতের পাতার কিছু অংশ স্মৃতিচারণ করছিলো চাঁদ।দিনটা ছিলো তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম।তার বিশতম জন্মদিনে শ্রেষ্ঠতম উপহারটাই যেনো সে পেয়েছিলো।তবে কেনো ভাগ্য সহায় হলোনা?প্রকৃতি কি তবে শুধু ছি*নি*য়ে নেয়ার জন্যই জীবনে অপার সৌন্দর্যেমন্ডিত জিনিসগুলো প্রেরণ করে?চাঁদের ভাবনায় বে*ঘা*ত ঘটলো তারই দেবরের হঠাৎ চেচানোতে,

“ভাবি!কী করছো?গাড়ির বাইরে মাথা নিয়োনা এটা ঝু*কি*পূ*র্ণ”

চাঁদ মাথা ভেতরে নিয়ে বললো,

“যেই ঝু*কি*পূ*র্ণ পরিস্থিতিতে এসে পড়েছি তার তুলনায় অন্য কিছু কিই বা ঝু*কির হবে?”

কথাটা যে তার পাশে বসা মানবকে বলা হয়েছে সেখানে উপস্থিত সকলেই তা বুঝতে পারলো।ছেলের ছোট ভাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,

“তোমার কথাবার্তা শুনে মোটেও লাগছেনা ভাইকে বিয়ে করার জন্য তুমি অমৃতা আপুকে কোথাও গা*য়ে*ব করতে পারো!”

চাঁদ ভ্রু কুচকে বললো,

“তোমার আদৌ মনে হয় এই লোককে বিয়ে করতে আমি জাস্ট ম*রে যাচ্ছিলাম?”

“তাহলে অমৃতা আপুকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা কেনো?বিয়েটাতো অমৃতা আপুর সাথে হওয়ার কথা ছিলো?”

“তোমার এখনো মনে হচ্ছে আমি অমিকে কোথাও লুকিয়ে রেখে এই মানবকে বিয়ে করতে উ*ঠে প*ড়ে লাগবো?যাকে আমি দুই চোখে দেখতে পারিনা তাকে?আর তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তোমার এই ভাই কোনোভাবেই আজ বিয়ে না করে বিয়ের আসর থেকে উঠবেনা বলেছিলো।আমি এমন বিয়ে পা*গ*ল মানুষ আজ অব্দি দেখিনি।এমনতো না যে সে আর কোনো মেয়ে পাবেনা তাও!আ*জ*ব প্রকৃতির লোকজন!তার উপর আমার সে*ন্সি*টি*ভ ফ্যামিলি আরও একধাপ এগিয়ে!”

“হ্যা আমি মানছি ভাই শেষে দিয়ে অতিরিক্তই করেছে।এমনটা করা উচিত হয়নি।কিন্তু তুমিতো মানা করতে পারতে নাকি?”

“করিনি ভেবেছো?”

“তোমার ফ্যামিলি জোর করেছে?”

এবার চুপ করে রইলো চাঁদ।কিছুই বললোনা।কেউ কিছু বলার পূর্বেই চাঁদের স্বামী বললো,

“তাকে জিজ্ঞেস কর,তাহলে অমৃতা হুট করে কোথায় গা*য়ে*ব হয়েছে?বিয়ের যখন ইচ্ছেই ছিলোনা তবে কেনো অন্যের বিয়েতে বা*গ*ড়া দিচ্ছিলো?”

দা*তে দা*ত চেপে রইলো চাঁদ।এই লোকের সাথে কথা বলতে মোটেও ইচ্ছুক না সে।

ছেলের ফুপাতো ভাই বললো,

“এভাবে না জেনে কারো নামে বলা ঠিকনা প্রণয়”

“তো তুই কি বলতে চাচ্ছিস অমৃতা নিজে থেকেই পা*লি*য়ে*ছে?এই মেয়ের কোনো হাত নেই এতে?”

“না নেই”

এক ভ্রু উচিয়ে প্রণয় বললো,

“তুই এতো শিওর কী করে?”

“কারণ আমি মা আর মামিকে বলতে শুনেছি অমৃতা নাকি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পা*লি*য়ে*ছে।সুযোগ বুঝে কো*প মেরেছে আরকি!মেয়েটা ভালো করেই জানতো এমন সময় পালালে সবাই চাঁদকেই সন্দেহ করবে।আর হলোও ঠিক সেরকমটাই।আর চাঁদের পরিবারের লোকজন একেকটা অতিরিক্ত ট*ক্সি*ক!এক মেয়ের জন্য অপর মেয়ের লাইফ কেউ কি করে ন*ষ্ট করতে পারে?অমৃতার দো*ষ ঢাকতে চাঁদের উপর সব আ*রো*প দিয়েছে।এমনকি ব*লি*র পা*টা হিসেবে তোর সাথে বিয়েও দিয়ে দিয়েছে।”

চাঁদ জবাব দিলো,

“সরি ভাইয়া কিন্তু আপনি আমার পরিবারের নামে এভাবে কথা বলতে পারেন না।আগে নিজের ভাইয়ের দো*ষ*টা দেখুন।পরে অন্যের দিকে আঙুল তুলবেন”

“আমি কখন বললাম প্রণয়ের দো*ষ নেই?”

প্রণয় সামান্য হেসে বললো,

“হ্যা সেটা কেনো বলবি?তুইতো বলবি ব*লি*র পা*টা!আমার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে কি এই মেয়ে ম*রে যাবে?নাকি আমি মে/রে ফে*ল*বো?একটা অপরিচিত মেয়ের জন্য এতো দরদ উ*ত*লি*য়ে পড়ছে কেনো তোর?নাকি ভালো লেগে গেছে?”

“জাস্ট শা*ট আ*প প্রণয়!”

চাঁদ কথা ছিনিয়ে বললো,

“কাকে কি বলছেন ভাইয়া?যার চিন্তাধারা যেমন মুখ দিয়ে বেরুবেও তো ঠিক তেমনই বুলি তাই না?”

কথাটা শুনে আড়চোখে তাকালো প্রণয় চাঁদের দিকে।

প্রণয়ের ছোট ভাই বললো,

“তুমি আর ভাই একে অপরের কথাই স*হ্য করতে পারোনা একসাথে থাকবে কি করে ভাবি?”

প্রণয় বিরক্ত হয়ে বললো,

“তোকে কেউ ভাবতে বলেছে?”

চাঁদও বিরক্ত হয়ে বললো,

“তুমি অযথা কথা বাড়াচ্ছো কেনো তন্ময়?দেখছোনা মুখ দিয়ে সা*পে/র চেয়েও বি*ষা*ক্ত বুলি ঝড়ছে কেবল?”

তন্ময় অবাক হয়ে বললো,

“তুমি আমার নাম কী করে জানো?”

প্রণয়ের খালাতো বোন বললো,

“আরে ভাইয়া তখন শুনোনি প্রণয় ভাইয়া আর চাঁদ ভাবি সেম মেডিতে ছিলো?এই ভাবি বলোনা তুমি টেকনাফ কি করে গেলে?এতো দূর থাকছোই বা কেনো?আমি শুনেছি তোমার ফ্যামিলির সবাই নাকি আগে ঢাকা থাকতো।আর সবাইতো ঢামেকে চান্সও পায়না।তুমি ঢামেক ছেড়ে চলে এলে?এটা অবিশ্বাসনীয়!”

প্রণয় বিরক্ত হয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“কখন থেকে ননস্টপ উদ্ভট কথাবার্তা বলেই চলেছে!আর একটা বাড়তি কথা আমার কানে এলে গাড়ি থেকে হয় আমি বে*র হবো নাহয় সবক’টাকে বে*র করবো।এন্ড আই মিন ইট!”

সাথে সাথে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো সেখানে।কেনোনা প্রণয়ের এই গম্ভীর কন্ঠস্বরের সাথে সবাই ই পরিচিত।আর কিছু বললে যে হি*তে বি*প*রী*ত হবে সেটা সবাই ই জানে।তাই মৌনতা অবলম্বন করাই শ্রেয়!সবাই চুপ হতেই বাতাসের শব্দ কানে ভেসে আসে চাঁদের।মাথা ব্যাথাটা তী!ব্র হওয়ার পূর্বেই ক্লান্ত শরীরটাকে সিটে এলিয়ে দিতে বিলম্ব করলোনা সে।

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।কারো মুখেই কোনো রা নেই।কেউ কেউ মোবাইলে মনোযোগ দিয়েছে তো কেউ আবার বাইরের প্রকৃতিতে করেছে নিজেকে মগ্ন।গাড়িটা ছোট না।মোটামুটি বড় ই।সামনের সিটগুলোয় বসেছে প্রণয়ের তিনভাই।মাঝের দিকে প্রণয় আর চাঁদ।তাদের সাথে আর কেউই বসেনি।অবশ্য চেয়েছিলো।চাঁদই বারণ করেছে।কেনোনা সে প্রণয়ের গা ঘে*ষে মোটেও বসবেনা।তাই মাঝের সিটটা ফাকাই রয়ে গেছে।আর পেছনের দিকে বসেছে প্রণয়ের বোনেরা।হুট করেই সকলের মোবাইলের মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দ ভেসে আসলো।কান অব্দি শব্দ পৌঁছাতেই চমকে একে অপরের দিকে তাকালো সবাই।প্রণয় হলো মহা বিরক্ত।তার গম্ভীরভাব বজায় রেখেই সে বললো,

“মোবাইল কি সাইলেন্ট করে রাখা যায়না?”

সাথে সাথেই সবাই হুড়মুড়িয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।সেইসাথে নজরে পড়লো প্রণয়ের খালাতো বোন শিফার মেসেঞ্জারে নতুন গ্রুপ খোলার নোটিফিকেশন।গাড়িতে উপস্থিত প্রণয় আর চাঁদ বাদে বাকি সবাইকে নিয়েই শিফা গ্রুপটা খুলেছে।আর মেসেজও দিয়েছে,

“বোর হচ্ছিলাম তাই গ্রুপ খুললাম।কেউ কিন্তু লিভ নিয়োনা”

তন্ময় রিপ্লাই দিলো,

“আমিও বোর হচ্ছিলাম।ভালো করেছিস খুলেছিস।চল আড্ডা দেই সবাই”

প্রণয়ের মামাতো বোন রিদি রিপ্লাই দিলো,

“তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু কি বিষয়ে আড্ডা দেওয়া যায়?”

প্রণয়ের ফুপাতো বোন রুবা বললো,

“কি আবার?ভাই আর ভাবির অতীত জানতে হবে গাইজ!”

তন্ময় বললো,

“জানবো কার কাছ থেকে?এরা দুজনতো কখনোই বলবেনা”

প্রণয়ের চাচাতো ভাই উজান বললো,

“তোদের অন্যের বিষয়ে এতো ইন্টারেস্ট কেনো?”

তন্ময় রিপ্লাই দিলো,

“অন্যের বিষয় মানে? আমাদের ভাই আর ভাবি হয় তারা”

শিফা উজানের মেসেজের রিপ্লাই দিলো,

“সেটাইতো ভাইয়া।তুমি বেশি বড় সাজতে এসোনাতো!রায়হান ভাই কোথায়?ভাইকে এক্টিভ দেখছিনা কেনো?”

রুবা বললো,

“ভাইয়া আবার এক্টিভ থাকে কবে?”

রিদি শিফার মেসেজে আড়চোখের ইমোজি সহ রিপ্লাই দিলো,

“তোর এতো ভাইয়াকে নিয়ে গবেষণা কেনো?”

উজান বললো,

“তোরা সবাই রায়হানকে নিয়ে গবেষণা করছিস কেনো?জানিস না ওর মুড খারাপ?প্রণয়ের উল্টাপাল্টা কথায় এমনিতেই রে*গে আছে।আর ও তো ড্রাইভ করছে নাকি?গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে তোদের সাথে আড্ডা দেবে?”

শিফা উজানকে রিপ্লাই দিলো,

“তুমি চালালেওতো পারো এখন।আর তন্ময় তুমিও তো চালাতে পারো নাকি?সেই কখন থেকে চালাচ্ছে!”

এভাবেই চলতে থাকলো তাদের সকলের আড্ডা।সবাইকে মোবাইলে মগ্ন দেখে প্রণয়ও মোবাইল হাতে নিলো।নিতেই দেখলো রবিনের মেসেজ,

“চাঁদের সাথে এটা কি তুই ঠিক করলি?”

প্রণয় রবিনের মেসেজের রিপ্লাই এ লিখলো,

“যে যেমন তার সাথে প্রণয় তেমনটাই করবে।বিনা কারণে আমায় ছেড়ে চলে যাওয়া।সবার সামনে এমন একটা ভাব ধরা যেনো ওর সাথে কতবড় অ*প*রা*ধ করে ফেলেছি!অথচ আজ পর্যন্ত আমি জানতেও পারলামনা আমার দো*ষটা কি ছিলো?হুট করেই কোথায় যেনো চলে গেলো আর খোজ ই পেলাম না?আর সেদিনের কথা আমি কি করে ভুলে যাবো?যার জন্য আমি আমার ভাইয়ের মতো বেস্ট ফ্রেন্ডকে হারিয়েছি?তাকেতো এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায়না?চাঁদকে ওর শা*স্তি পেতেই হবে।আর সেটা দেবো আমি।তি!লে তি/লে ওকে শে*ষ করবো।যেভাবে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে ও শে*ষ করেছে ঠিক সেভাবেই!আমি আজও অরনের র*ক্ত*মা*খা চেহারাটা ভুলতে পারিনারে!যেই মেয়েকে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছি তাকে আজ থেকে আ!ম!র!ণ ঘৃ*ণা দেবো!না পারবে ম*র*তে না চাইবে বাঁ*চ/তে!ওর জীবন যদি জা*হা*ন্না*মের চেয়েও জ”ঘ”ন্য না বানাই তবে আমার নামও রুহায়ের প্রণয় না!”

মেসেজটা সেন্ড করেই প্রণয় নিজের ফোন থেকে তা ডিলিট করে দিয়ে আড়চোখে চোখে চাঁদের দিকে এমনভাবে তাকালো যেনো তার চোখের অ*গ্নি*বর্ষ/ণ দিয়েই চাঁদকে ভ*স্ম করে দেবে!

To be continued…

[বিঃদ্রঃসবাই গতপর্বে কনফিউজড ছিলেন।আশা করছি এবার ক্লিয়ার হবে।আর হ্যা গল্প মানেই কল্পনা।তাই বাস্তবতার সঙ্গে না মেলানোর অনুরোধ রইলো।আর যাদের ভালো লাগবেনা দয়া করে ইগনোর করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here