#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
২১.
“আপনারা শুধু শুধুই অমৃতাকে দোষাচ্ছেন।মেইন কা!লপ্রি!ট হলাম আমি”
কথাটি বলে বেশ বিরক্তির সহিতই চৈত্রের সামনে এসে দাঁড়ালো প্রণয়।অতঃপর আবারও বললো,
“আমি এখানে চাঁদকে বিয়ে করতেই এসেছিলাম।অমৃতাকে নয়।”
কথাটি শ্রবণ হতেই বিস্ময় নিয়ে তাকায় সকলে।চাঁদের বাবা প্রণয়ের সামনে এসে বলেন,
“সেদিন তোমায় দেখেই এটা আন্দাজ করেছিলাম তবে আসলেই যে এমনটা হবে কস্মিনকালেও ভাবিনি”
“আমি দুঃখিত আব্বু।তবে আপনারা এভাবে মেয়েটাকে দোষাবেন না।আর ভাইয়া তার গায়ে হা!ত তো!লাটা আপনার ঠিক হয়নি।”
“হয়েছে কি হয়নি সেটা আমি বুঝে নেবো প্রণয়”
চৈত্রের কথা শুনে রুবার যেনো পিত্তি জ্ব!লে গেলো।সে তেতে উঠে বললো,
“আমার ভাইয়া যখন এমনটা করতে চেয়েছিলো আপনি তখন কী করেছিলেন মি.চৈত্র?”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুবার পানে চেয়ে চৈত্র কিছু বলবে তার আগেই রায়হানের উচ্চস্বর শোনা যায়,
“ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিটস রুবা” [নিজের সীমা লঙ্ঘন করবেনা রুবা]
চৈত্র রুবার জবাব দিলো,
“দুটো পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলো মিস রুবা”
রুবা কিছু কড়া কথা বলার জন্য প্রস্তুত হতেই রায়হানের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“ওখানেই থেমে যাও।আদারওয়াইজ আমি ভুলে যাবো আমরা প্রণয়ের শ্বশুরবাড়ি আছি”
অমৃতার বাবা অমৃতার সামনে এসে বলেন,
“কোন মুখে তুমি আবার ফেরত এসেছো?এসেছোতো এসেছো এই বাড়িতে কেনো এসেছো?”
অমৃতার সোজাসাপটা জবাব,
“আমি আমার বোন আর দুলাভাইকে দেখতে এসেছি”
“এভাবে বলতে লজ্জাও করছেনা তোমার?”
“লজ্জার কি হলো বাবা?আমি যা চেয়েছিলাম তাইতো হয়েছে।আমার বোনটার দিকে তাকিয়েছো একবার?এমন প্রাণবন্তই তো আমার চাঁদ আপু ছিলো।প্রণয় জিজুর বদৌলতে সে আগের ন্যায় হচ্ছে এবং আশা করছি পুরোপুরি হবে।আর এটাইতো আমি চেয়েছিলাম”
অমৃতার বাবা বললেন,
“মানে?”
চৈত্রও বিস্ময় নিয়ে বললো,
“বুঝিনি?”
অমৃতার মা এবার সামনে এসে বলেন,
“আমি বলছি সবটা।সেদিন অমৃতা যে চিঠি রেখে গিয়েছিলো তাতে ও স্পষ্ট লিখেছিলো চাঁদ আর প্রণয় একে অপরকে ভালোবাসে।কিসব ভুল বোঝাবুঝির জন্য আলাদা হয়ে গেছে নাকি।চাঁদ আর প্রণয়ের বিয়েটা যেকোনোভাবে দিতেই হবে।ওদের দুজনকে এক করতেই হবে।এই দুটো মানুষ একে অপরকে ছাড়া নাকি প্রা!ণহীন হয়ে আছে।ওদের বিয়েটা না দিতে পারলে অমির সব চেষ্টা বৃথা যেতো।আর এজন্যই আমি সেদিন চিঠির ব্যাপারে এড়িয়ে গিয়েছি।আর এ খবর যেনো চাঁদের বা তার পরিবারের কেউ না জানে এটাও অমি বলেছিলো।কিন্তু আমি দুঃখিত রে মা।তবে আর উপায় দেখছিনা।তোর নামে এতোকিছু শুনতে পারলাম না।বলতে হলো”
চৈত্র বিস্ময় নিয়ে বললো,
“চাঁদ আর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো?”
রামিম অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে বলে,
“এই নিরামিষটা আবার প্রেমও করেছে?”
রায়হান প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে শান্তস্বরে বললো,
“ভালোবাসিস বলে এতোদূর চলে এসেছিস?”
চাঁদ ভরাট কন্ঠে বলে,
“আমি এ জন্মে প্রেম করিনি।আর না আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিলো”
শিফা বললো,
“তাহলে দুজন দুজনের ব্যাপারে এতোকিছু কি করে জানো ভাবি?”
“জানতেই পারি।যেহেতু একই মেডিকেলে পড়ে এসেছি”
রুবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি চাঁদের পানে।সে চাঁদের বলা কথার সাথে সাথে জবাব দেয়,
“ঢামেক ছেড়ে এতোদূর আসার কারণ অবশ্যই সামান্য নয় ভাবি?”
রুবার কথা শুনে সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে।এমনকি প্রণয়ও চাঁদের পানে তাকায় উত্তরের আশায়।সে জানে চাঁদের কাছে এর উত্তর নেই।তবুও সে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো সামনে দাড়িয়ে থাকা ধূসরনীল বর্ণের পোশাকে আবৃত ধূসরকন্যার দিকে।তবে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা সম্ভব হলোনা।এই মেয়েটার দিকে তাকালে চোখ সরানো দায় হয়ে পড়ে।আগের ন্যায় সেই উজ্জ্বল ভাবটা না থাকলেও লাবণ্যময়তা কমেনি একটুখানিও।দৃষ্টি এলোমেলো করে অন্যপানে তাকাতে বাধ্য হলো প্রণয়।এভাবে তাকিয়ে থাকলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে হবে নিশ্চিত।ধ্যান ভাঙলো চৈত্রের গম্ভীর আর তেজী কন্ঠস্বরে,
“দ্যাটস নান অফ ইওর বিজনেস” [এটা মোটেও আপনার কাজ নয়]
রুবা কিছু বলতে গেলে হাতের ইশারায় রুবাকে বাধা দেয় রায়হান।অতঃপর প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“কিরে ভালো যেহেতু বাসিসই না বিয়ে করতে এতোদূর আসার কারণ?”
প্রণয় এ প্রশ্নের জবাবে কিছু বলার পূর্বেই রিহা উত্তর দিয়ে ফেলে,
“কে বলেছে ভালোবাসেনা?”
রিদি বললো,
“চাঁদ ভাবি না বললো”
“চাঁদ কখন বলেছে ভালোবাসেনা?”
“তখননা…”
মির জবাব দিলো,
“চাঁদ বলেছে ওদের সম্পর্ক ছিলোনা।প্রেম করেনি”
মাথা নিচু করে রিদি বললো,
“হ্যা তাইতো…”
মিরের তীক্ষ্ণ নজর রিদির দিকে।দাতে দাত চেপে সেভাবে তাকিয়ে থেকেই সে বললো,
“প্রেম না করলে ভালোবাসা যায়না?”
এ কথা শুনতেই ঝট করে মাথা তোলে রিদি।অতঃপর রিহার কথা শুনে সে পানে তাকায়,
“আড়ালে ভালোবাসতে ক’জন পারে?ওরা পেরেছিলো।”
মির চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভালো নিখুঁতভাবে দুজনই বেসেছিলো।কেবল প্রকাশটুকু করেনি”
রামিম বিস্ময়ের সহিত বললো,
“প্রণয় সত্যিই কোনো মেয়েকে ভালোবাসতে পারে?নারী বি!দ্বেষী ছেলেটা সত্যিই এই পরীটাকে ভালোবাসে?”
প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“এসব টপিকে আর দ্বিতীয় কোনো শব্দ আমি শুনতে চাচ্ছি না।অমৃতার এখানে কোনো দোষ ছিলোনা তাই তার দিকে আঙুল তুলবেন না কেউ।যা বলার আমায় বলবেন।আর তুমি,যাও ফ্রেশ হয়ে নিমৃতাকে নিয়ে এখানে এসে পড়ও।তোমাদের বোন এখানে কেবল দু’দিনই আছে”
বলেই প্রস্থান করে সে স্থান।একে একে সকলেই যে যারমতো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।আর চাঁদ বাইরে এসে সিড়ি ভেঙে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।সেখানে কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে মোবাইল বের করে ডায়াল করে তার বেস্ট ফ্রেন্ডের দেওয়া সেই লয়ারের নাম্বারে।প্রথম দু’বার বেজে বেজে কেটে গিয়ে তৃতীয়বারের বেলা কলটি রিসিভ হতেই চাঁদ বলে,
“হ্যালো।আসসালামু আলাইকুম।ব্যারিস্টার উশ্মিতা উশ্মি বলছেন?”
“ওয়ালাইকুম’সালাম।জ্বি বলুন”
“আমি চাঁদ বলছিলাম”
“কোন চাঁদ?”
“মুহাই…”
চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মেয়েটা বলে,
“ওহ হ্যা।সমুদ্রের বেস্ট ফ্রেন্ড বলছিলেন?”
“জ্বি”
“হ্যা হ্যা বলুন।যদিও সমুদ্র আমায় বলেছে।তবুও আপনি বলুন আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
“আসলে ম্যা’ম আমার ডিভো!র্স লাগতো আরকি”
“আমি আহামরি কোনো বড় কেউ নই যে আমায় ম্যা’ম বলতে হবে।তাছাড়া আমার জানামতে আপনি,আমি,সমুদ্র আমরা একই ক্লাসে পড়ি।তাই আমায় নাম ধরে ডাকলে খুশি হবো”
“জ্বি আচ্ছা”
“দেখুন মিসেস.চাঁদ আমি স্টিল বিডিতে ল্যান্ড করিনি।হয়তো রাত হবে নয়তো ভোর।অথবা সকালও হতে পারে।আমি আপনায় আগামীকাল জানাচ্ছি।আর চিন্তা করবেন না।আপনার সাথে যদি অনুচিত হয় আমি আপনাকে যেভাবেই হোক আপনার হাজবেন্ড থেকে ছাড়াবোই।”
রিদি জানালার পাশে টুল নিয়ে বসে আছে।চেয়ে আছে আকাশ পানে।মন তার বিসন্ন।কাধে কেউ হাত রাখতেই ঘুরে তাকায় সেদিকে।রুবা আর শিফাকে দেখে স্মিত হাসে সে।হাসিটার পেছনে লুক্কায়িত কষ্টের ঢেউগুলো তারা স্পষ্ট দেখতে পেলো যেনো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবা বললো,
“মন খারাপ করিস না রিদু।সুন্দর ছেলেদের গার্লফ্রেন্ড থাকাটাই স্বাভাবিক।বরং না থাকাটাই অস্বাভাবিক।এক্সসেপ্ট প্রণয় ভাইয়া”
শিফা রিদির পাশে টুল নিয়ে বসে তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
“একপাক্ষিক প্রেমে যতটা প্রশান্তি পাবি ঠিক ততটাই অশান্তিও পাবি জানিস না?”
রুবা রিদির আরেক পাশে বসে বলে,
“প্রেম ট্রেম নিয়ে হয়তো আমার আইডিয়া নেই।তবে ভালোবাসা জিনিসটা ভালো নয়।এ জিনিসটা কেবলই কষ্ট দেয়।নাহয় চাঁদ ভাবি আর ভাইয়া কেনো আলাদা হয়েছিলো?”
রিদি মাথা নিচু করে বিসন্ন গলায় বললো,
“তাদের কষ্ট বোঝার মতো ক্ষমতা হয়তো আমাদের কারোরই নেই তবে আমি মিরকে অন্য কারো সাথে কল্পনাও করতে পারিনারে!”
শিফা মৃদু হেসে আঙুলে ওড়না পেচাতে পেচাতে বলে,
“অথচ আমি তাকে অন্য কারো সাথে প্রতিনিয়ত দেখেছি।মনকে ক্ষ!ত!বিক্ষ!ত করে তাদের শুভকামনাও জানিয়েছি।আমি পারলে তুই কেনো পারবিনা রিদু?”
শিফাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিয়ে রিদি বলে,
“তোদের দুজনের মতো স্ট্রংতো আমি নই!নইরে!”
রুবা রিদিকে পাশে দিয়ে জড়িয়ে বলে,
“স্ট্রং না হলে দুনিয়ায় টেকা মুশকিলরে দোস্ত”
রিদি রুবাকে এক হাতে জড়িয়ে বললো,
“জীবনে আর যাই করিস কাউকে ভালোবাসার মতো ভুল কখনোই করবিনা।বিশেষ করে যার কাছ থেকে ভালোবাসার বিন্দু পরিমাণও পাবিনা তাকেতো একদমই না”
শিফাও রুবাকে বললো,
“সে কখনো তোর হবেনা জেনেও সেদিকে আর পা বাড়াবিনা ভুলেও”
রাত আটটা বেজে সাতাশ মিনিট,
বিদ্যুৎ ভ্রষ্ট হয়েছে কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই।গরমে সবাই বাড়ির বাইরে এসে পড়েছে।রয়ে গেছে কেবল রিদি।তার নাকি শরীরটা ভালো ঠেকছেনা।তাই বিছানায় শুয়ে আছে।কাদতে কাদতে নাক বন্ধ হয়ে কাশি উঠে গেছে।তাই রুমে পানি না পেয়ে রুম থেকে বের হয়েছে পানি খেতে।যেইনা রুম থেকে বের হয়েছিলো ওমনি কেউ হাত ঠেনে রুমের ভেতরে এনে দরজা চাপিয়ে দেওয়ালে রিদির পিঠ ঠেকিয়ে মুখ চেপে ধরে।রিদি হাসফাস করছে দেখে ছেড়ে দিয়ে কানের কাছে মাথা নিয়ে বলে,
“যেখানে কষ্ট বৈ কিছু পাওয়া যায়না সেখানে পা বাড়ানো উচিত নয়।আর ভুল জায়গায়তো একদমই না।ভুল পথে পা বাড়িয়ে ফেলেছো,দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই পিছু নিয়ে নাও।আর তুমি যা চাচ্ছো তা কখনোই সম্ভব নয়।তোমার চাওয়াটায় নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।এ চাওয়া কখনোই পূর্ণ হবার নয়”
To be continued….
[বিঃদ্রঃ গল্প পরদিনই দিতাম।ঈদের ব্যস্ততার জন্য দিতে পারিনি।অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।এতোটুকুর বেশি লিখতে পারিনি।মানিয়ে নেবেন প্লিজ।পরবর্তী পর্ব বড় করে দেবো ইনশাআল্লাহ।আর সবাইকে ঈদ মুবারক]