আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ২৪.

0
1102

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৪.
ফুলের থালা হাতে নিয়ে পুষ্পবর্ষণ করছে চাঁদ।সামনে তার কয়েকজন মন্ত্রী এবং সভাপতি,অতিথিরা।ফায়ান,ইফাদ,অবনীসহ আরও দু’তিনজন ছেলেপেলে তাদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগতম করছে।এমন সময় চাঁদের ক্লাসমেট হাবিব একজনকে বুকে দিচ্ছিলো কিন্তু লোকটা তা প্রত্যাখান করে বলে,

“সরি এভাবে নেবোনা”

ফায়ান ভ্রু কুচকে বলে,

“কেনো স্যার?কোনো সমস্যা?তাহলে এটা নিন”

বলেই নিজের হাতে থাকা বুকেটা এগিয়ে দিতেই লোকটা বলে,

“ফুলেতে কোনো সমস্যা নেই।ফুল একটা হলেই হবে তবে ফুল প্রদানকারী হতে হবে ফুলবর্ষনী এই নীলাম্বরীকে”

বলেই চাঁদের সামনে গিয়ে তার হাতে অবস্থিত ফুলের থালা থেকে এক মুঠো ফুলের পাপড়ি নিয়ে তার মুখের সামনে ফু দিতেই চোখজোড়া বন্ধ করে চাঁদ।অতঃপর ফুলের পাপড়িসমূহের মুখে আছড়ে আসা থামতেই চোখজোড়া খোলে সে।

সবেমাত্র গেট দিয়ে প্রবেশ করছিলো প্রণয়।এমতাবস্থায়ই সে দেখতে পায় কালো পাঞ্জাবি পরহিত এক ছেলে বলছে,

“ফুলেতে কোনো সমস্যা নেই।ফুল একটা হলেই হবে তবে ফুল প্রদানকারী হতে হবে ফুলবর্ষনী এই নীলাম্বরীকে”

‘নীলাম্বরী’ শব্দটা শুনে ছেলেটার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেও তাকায় সে পানে।অতঃপর নজরে আসে তার অপছন্দনীয় এক মানবীর মুখশ্রী।চোখেমুখে বিরক্তিভাব থাকলেও চাঁদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তারই মুখের দিকে ছেলেটার এভাবে ফু দেওয়া পছন্দ হয়না প্রণয়ের।কপাল খানিকটা কুচকে পা বাড়ায় সেদিকে।চাঁদ চোখ খুলে নাক ফুলিয়ে দাতে দাত চেপে কিছু বলতে উদ্যত হতেই তার পাশে এসে দাঁড়ায় প্রণয়।অতঃপর সেদিকে তাকাতেই চাঁদ দেখতে পায় প্রণয় ছেলেটার বাহু ধরে তার সামনে থেকে ছেলেটাকে পিছু চাপিয়ে হাবিবের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“নিন আপনার বুকে।ফুলেতে যেহেতু সমস্যা নেই আশা করছি আমাতেও হবেনা।আমিই মিস অশীনের তরফ থেকে দিয়ে দিলাম।টেক ইট”

ছেলেটা মৃদু হেসে বুকেটা নিয়ে বললো,

“আপনাতে সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই আসেনা মি.রুহায়ের প্রণয়।অ্যান্ড হু’জ অশীন?দিজ নীলাম্বরী?তার নাম অশীন?অদ্ভুততো!”

“তার নাম তোর না জানলেও চলবে।”

বলেই ছেলেটাকে নিয়ে সে স্থান ত্যাগ করতে উদ্যত হতে নিলেই চাঁদ বাধা দিয়ে বলে,

“এক্সকিউজ মি ভাইয়া?”

ছেলেটা ভ্রু কুচকে বলে,

“হু’জ ইওর ভাইয়া?” [কে আপনার ভাই?]

“ফরমালিটি বোঝেন?”

“সবই বুঝি ম্যা’ম”

“গ্রেট!লিসেন দেন।” [ভালো!তাহলে শুনুন]

“ইয়েস ওয়েটিং” [হ্যা অপেক্ষিত]

প্রণয় কপাল কুচকে ছেলেটাকে টানতে টানতে বলে,

“দাঁড়িয়ে আছিস কেন?চল”

ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলে,

“তোর সমস্যা কী?এমন ভাব করছিস যেনো জনম জনম ধরে অপেক্ষা করছিলিস।অথচ আমাদের বন্ধুত্বের ইতি আরও বহুবছর আগেই টানা হয়েছে”

বলেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ক্যারি অন নীলাম্বরী”

চাঁদ কোনো কিছু না ভেবেই ছেলেটার সামনে এসে ডান গালে চ!ড় বসায়।তবে বেশি জোরেও না আবার আস্তেওনা।অতঃপর বলে,

“মেডিকেলে দাঁড়িয়ে আছি এবং শুধুমাত্র অতিথি বলে আলতো চ!ড় দিতে হলো।নাহয় আপনি যেই কান্ড ঘটিয়েছেন আপনার ঠোট টে!নে ছি*ড়ে ফেলতাম”

ছেলেটার চেলাপেলা কিছু বলতে নিলেই চোখ রাঙিয়ে তাকায় চাঁদ এবং হাতের ইশারায় বাধা দিয়ে বলে,

“এবং সে ক্ষমতা আর সাহস দুটোই আমার আছে”

বলেই ফায়ানের হাতে থালা ধরিয়ে দিয়ে বলে,

“এটা ধরো।হিজাব ঠিক করে আসছি।এই অবু চল”

বলে যেতে নিলেই ছেলেটার রাশভারি কন্ঠস্বর ভেসে আসে,

“ফু দিয়েছি বলে এ দশা?চুমু দিলে কী করতে নীলাম্বরী?”

চাঁদ ঘাড় ঘুরিয়ে বাকা চোখে চেয়ে বলে,

“জিভ টে!নে ছি*ড়ে না ফেলা পর্যন্ত এক পা’ও নড়তাম না অবশ্যই!”

ঠিক তখনই ভেসে আসে অরণের কন্ঠস্বর,

“প্রণয়ওতো একই কাজ করেছে তার জিভ কেনো টা!নোনি তুমি?”

অরণের কথা শুনে খানিকের জন্য চুপ হয় চাঁদ।অতঃপর সেই ছেলেটার কথায় তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতে বাধ্য হয় সে,

“তাহলে প্রণয়ের মা*ল তুমি?”

মেজাজ চ!টে যায় চাঁদের সেই সাথে প্রণয়েরও।প্রণয়ের কিছু বলার পূর্বেই চাঁদ অরণের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ঠিক এজন্যই এই লোকটার জিভ টা!নার ইচ্ছে পোষণ করেছি অরণ।কোন পুরুষের রুচি,মানসিকতা আর উদ্দেশ্য কেমন তা বোঝার ক্ষমতা প্রতিটা নারীর ষষ্ঠইন্দ্রীয়তে বিদ্যমান।আর আপনার বন্ধুর উদ্দেশ্য যদি বাজে হতো তার জিভ কেবলই ছি*ড়তা*ম না কে!টে ফেলতাম”

অতঃপর সেই ছেলেটার মাথা থেকে পা অব্দি তর্জনীর ইশারায় বলে,

“আর আপনি।এমন কুরুচি নিয়ে চলেন কী করে?আপনাকে চ!ড়টা ঠিকঠাকভাবেই দেওয়া উচিত ছিলো।ব্লা!ডি হেল”

বলেই অবনীর হাত ধরে প্রস্থান করে।

নিমিষেই সেখানে নীরবতা ছেয়ে যায়।সেখানকার প্রধান অতিথি মুখ থমথমে অবস্থায়ই ছেলেটাকে বলেন,

“চলো এখান থেকে।আর এক সেকেন্ডও এখানে থাকার মানে হয়না”

ছেলেটা লোকটাকে বলে,

“আহহা!চিল বাবা।এতো হাইপার হচ্ছো কেন?প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও নবীনবরণ ধুমধাম করেই হবে।বরঞ্চ এবার একটু বেশিই ইন্টারেস্ট জাগলো মনে”

“মেয়েটার সাহস দেখেছো?সে কার ছেলের সাথে রাফ বিহেভ করেছে আদৌ জানে সে?”

ছেলেটা বাকা হেসে বললো,

“ভালোতো এমনিই লেগেছিলো।এখন যেনো উন্মাদনা ছেয়ে গেলো”

“আমার মাথা কিন্তু ঠিক থাকবেনা আহিন।চলো তুমি”

আহিন ছেলেটা হালকা হেসে কিছু বলতে নিলেই প্রণয়ের ঠাট্টাস্বর ভেসে আসে কানে,

“নিজেদের দোষ আজও আপনি মানতে নারাজ মি.অধিরাজ শেখ?সরি সরি!মেয়র অধিরাজ মোহাম্মদ শেখ?”

অধিরাজ শেখ প্রণয়ের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান।অতঃপর কিছু বলতে নিলেই আহিন প্রণয়ের প্রতিত্তোর করে,

“দোষ তো অবশ্যই আছে।তবে দোষটা তোর ঐ অশীনের।তার আহিনের নজরে পড়াটা একদম উচিত হয়নি।”

বলেই তার বাবা এবং বাকি মন্ত্রী,সভাপতি,অতিথিদের নিয়ে মঞ্চে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

অরণ প্রণয়ের কাধে হাত রেখে কিছু বলার পূর্বেই প্রণয় তার দিকে ঘুরে বলা আরম্ভ করে,

“থেমে যা।আজও আমার কাছে উত্তর নেই”

অরণ হাসে।স্মিত সেই হাসি।চশমার আড়ালে থাকা চোখদু’টোও যেনো জানাচ্ছে তার প্রাণও বোধহয় হাসছে।হাসছে তার হৃদয়ও।শরীরের প্রতিটা লোমকূপও বাতাসের তালে হাসতে চাচ্ছে আজ।হাসি বজায় রেখেই অরণ প্রণয়ের কাধে হালকা চাপড় মেরে বলে,

“আমি তোর সর্বনাশ দেখছি প্রণয়।বিরাট সর্বনাশ!”

অনুষ্ঠান শুরু হয়।বেশকিছুক্ষণ যাওয়ার পর মঞ্চে অবস্থিত উপস্থাপকের মুখে শোনা যায় চাঁদের কিছু মিষ্টি প্রশংসা।যে প্রশংসায় সে পঞ্চমুখ,

“মেয়েটার নাম চাঁদ।দেখতেও সে চাঁদের ন্যায়ই উজ্জ্বল।তবে তার ব্যক্তিত্ব আরও বেশি জ্বলজ্বল করে যেনো।মেয়েটাকে দেখলে বোঝাই যায়না এই ছোট্ট একটা মেয়ের মাঝে বিধাতা গুনের বর্ষণ ঢেলে দিয়েছেন।একটা দু’টো নয়।অনেকগুলো গুনই বিদ্যমান এই মেয়েতে।হয়তো আরও আছে।তবে তা লুক্কায়িত।তন্মধ্যেই লুক্কায়িত তার কোনো একটা গুন প্রকাশিতব্য হতে যাচ্ছে আজ।আশা রাখছি সকলেই আমার ন্যায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে তার।মুহাইমা বিনতে চাঁদ আর আরফিদ ফায়ান।এ দুজন যে এ বছরের টপার সবাইতো জানেন তাইনা?পড়ালিখার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা এ দু’ মানব-মানবী আর কিসে কিসে পারদর্শী জানি নাহয় সে সম্পর্কে আজ?পুট ইওর হ্যান্ডস টুগেদার গাইজ!অ্যান্ড লেটস ওয়েলকাম বোথ মুহাইমা বিনতে চাঁদ অ্যান্ড আরফিদ ফায়ান”

ফায়ান আর চাঁদ মুখোমুখি বসেছে।দৃষ্টি তাদের একে অপরেতে নিবদ্ধ।মুখেতে লেপ্টে আছে হাসির মৃদু রেখা।ইশারায় কি যেনো কথোপকথনও চলছিলো দুজনেতে।ফায়ানের আঙুল বিচরণ করছে তার সামনে রাখা পিয়ানোতে।নিখুঁত তার ধ্বনি।কত শ্রুতিমধুর করে তুলেছে পরিবেশটাকে!চাঁদ আর ফায়ানের পেছনে তিনজন করে ছ’জন দাড়িয়েছে তাদের সঙ্গ দিতে।এবং তারাই শুরু করে প্রথম পর্যায়ের পঙক্তিগুলো,

♪♪♪…সর্বত মঙ্গল রাধে বিনোদিনী রাই,
বৃন্দাবনের বংশীধারী ঠাকুরও কানাই।
একলা রাতে জল ভরিতে যমুনাতে যায়,
পিছন থেকে কৃষ্ণ তখন আড়ে আড়ে চায়।…♪♪♪

অতঃপর শোনা যায় ফায়ানের চিকন ও মোটা কন্ঠের মিশ্রণ।দৃষ্টি তার চাঁদেতে নিবদ্ধ,

♪♪♪…জল ভরো,জল ভরো রাধে,ও গোয়ালের ঝি,
কলস আমার পূর্ণ করো,রাধে বিনোদী।…♪♪♪

চাঁদের দৃষ্টিও ফায়ানে বিদ্যমান।মুখে হাসি বজায় রেখে লম্বা শ্বাস টেনে সেও শুরু করে,

♪♪♪…কালো মানিক হাত পেতেছে,চাঁদ ধরিতে চায়, বামুন কি আর হাত বাড়ালে চাঁদের দেখা পায়?…♪♪♪

বিমুগ্ধকর সেই ধ্বনি!চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ করার ক্ষমতা বিদ্যমান তাতে।আকর্ষণ অনুভবও করছে কয়েকজনের হৃদয়।এ যেনো হৃদয় বশ করার বশীকরণী কোনো মন্ত্র!মন্ত্রমুগ্ধ এ সুরের অধিকারিণীর দিকে তাকালে হৃদয় এবং চোখ দু’টোই জুড়িয়ে যাচ্ছে।কি স্নিগ্ধ!কি অপূর্ব ভালোলাগায় আবৃত সে নারী!

To be continued…..

[বিঃদ্রঃ আবারও বলছি,গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here