#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
২৮.
“ভাবির সাথে অতীতে ঠিক কী হয়েছিলো ভাইয়া?”
উশ্মির প্রশ্নে তার পানে না তাকিয়েই চৈত্র জবাব দেয়,
“অতীতকে অতীতের সাথে ধুয়েমুছে ফেলা উচিত বলেই আমি মনে করি”
“অতীত না জানলে ভাবির কেসটা আমি কিভাবে নেবো ভাইয়া?”
অবাক হয়ে কপাল কুচকে চৈত্র বলে,
“কেস?”
“জ্বি কেস।ভাবি আমার কাছে ডিভো!র্স কেস নিয়ে এসেছিলো।আমি প্রত্যাখ্যান করেছি।কিন্তু আজকে যা ঘটনা হলো এরপর বিষয়টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।আপনি কাইন্ডলি বিষয়টা বুঝিয়ে বলুন ভাইয়া”
“কোনো কেসের দরকার নেই।ডিভো!র্সও হবে না আর না অতীত নিয়ে আপনাকে জানতে হবে।আপনি পারলে চাঁদের কাছে একটু বসুন।নাহয় রেস্ট নিন।আমাকে ফারদার এসব প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করবেন না প্লিজ”
বলেই সে স্থান ত্যাগ করে বোনের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় চৈত্র।সেখানে আসতেই দেখে তার বোন ঘুমাচ্ছে।পাশেই রুবা,শিফা আর রিদি বসে আছে তার।রিহাও চিন্তিত।অপরপাশে আছে অমৃতা-নিমৃতাও।চৈত্র রিহাকে বলে,
“মিস রিহা?”
রিহা চৈত্রের পানে চেয়ে বলে,
“জ্বি বলুন?”
“আপনারা সবাই একটু বের হলে বোনের সাথে কয়েকটা কথা বলতাম”
“হ্যা হ্যা অবশ্যই।চল তোরা”
অমৃতারা ঠায় বসে আছে বলে চৈত্রের শীতল কন্ঠস্বরে তারাও যেতে বাধ্য হয়,
“তোদের কি ফেয়ারওয়েল কার্ড পাঠানোর পর বেরুবি?”
সকলে বের হতেই দরজা ভিড়িয়ে চাঁদকে আস্তে করে ডাকে চৈত্র।চাঁদ খানিকটা নড়েচড়ে উঠতেই চৈত্র বলে,
“একটু উঠতে পারবি ছোটি?”
চাঁদ পিটপিট করে চোখ মেলে চাইতে নিলে আবারও শুনতে পায়,
“ভাই তোর সাথে কথা বলতাম?”
চাঁদ ধড়ফড়িয়ে উঠতে নিলে চৈত্র তাকে শান্ত করে বলে,
“আস্তে আস্তে।এমন করার কিছু নেই।তুই ভালোভাবে বস।এরপর ভাইকে বল কী হয়েছিলো?”
বালিশে হেলান দিয়ে চাঁদ বলে,
“আমি ছাদে গিয়েছিলাম ভাই”
বলেই থামে চাঁদ।চাঁদকে থামতে দেখে চৈত্র শান্তস্বরে বলে,
“আচ্ছা।তারপর?”
“আমার ডায়েরী দু’টো আছেনা?লক সিস্টেম?”
“হিম?”
“ওগুলো নিয়ে গেছিলাম।একটা নিচে রেখে আরেকটা দিয়ে লিখছিলাম কিছু একটা”
“আচ্ছা এরপর?”
“রুবা আর উশ্মি এসে হঠাৎ ডাক দিলো।তাই হাত থেকে ফসকে ডায়েরীটা রাস্তায় পরে গেলো।নিচেও নেমে গেলাম আমি।খুজলাম কিন্তু পেলাম না।এখন অন্যটাও পাচ্ছিনা”
“কী এমন ছিলো ডায়েরীগুলোয়?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“আমার সমস্ত জীবনের স্মরণীয় এবং জোর করে স্মরণীয় সকল স্মৃতি ছিলো।তুই তো বুঝতেই পারছিস?”
“এগুলো কেউ ডায়েরীতে লিখে?”
“লিখেছিলাম।ভেবেছিলাম লক সিস্টেম যেহেতু কেউ খুলতে পারবেনা আমি বাদে।তাই”
“তাহলে চিন্তা করছিস কেনো?কেউতো খুলতে পারবেনা”
“একটা নাহয় নাই পারলো।কিন্তু অপরটা?যেটা রাস্তায় পড়লো?সেটাতো খোলাই ছিলো।যদি কোনোভাবে লক হয়ে যায় তাহলে ভালো।নাহলে?সবাই জেনে যাবে ভাই!সবাই জেনে যাবে।এরপর আমার যাও অল্পকিছু শান্তি আছে তাও হারা!ম হয়ে যাবে তাইনা ভাই?”
“এভাবে বলিস না।কিছু হবেনা।আমি আছি না?”
“তোরা আছিস বলেই আমি আছি।নাহয়…”
বোনের ঠোটে হাত রেখে চৈত্র বলে,
“আর কিছু না।আজ অনেক কাহিনী হয়ে গেলো।তোর এভাবে প্যানি!ক করা উচিত হয়নি।অনেকেই অনেক কিছু ভাবছে।তোর ঐ উকিল ননদ আমাকে রীতিমতো ইনভেস্টিগেট করে ফেলেছে”
“উশ্মি?”
“হ্যা যেই হোক।এখন সবটা কিভাবে সামাল দিবি দেখ।আব্বু-আম্মুও খুব ভয় পেয়েছে”
“আমি তখন কিছু ভাবতে পারিনি ভাই।মনে হচ্ছিলো আমার সব শেষ।আমারতো সব শেষই রে ভাই!কে নিলো আমার ডায়েরীগুলো?বুঝতে পারছিনা কিছুই।হঠাৎ করে রাস্তা থেকে অচেনা ডায়েরী কে ই বা নেবে?আর ছাদের টা?ওয়েইট!উশ্মি আর রুবা?”
“তোর ননদেরা?”
“হ্যা?ওরাইতো লাস্ট টাইম ছিলো ওখানে”
“নাওতো নিতে পারে।আর নিলেও লকতো খুলতে পারবেনা”
“তা পারবেনা।তবুও জিজ্ঞেস করবো দেখি”
“আর তুই নাকি প্রণয়ের থেকে ডি*ভোর্স নিবি?”
“কে বললো তোকে?”
“যার কাছে কেস দিতে চেয়েছিস সেই”
“উশ্মি?”
“হিম।দেখ বোন।জীবনতো একটাই তাইনা?জীবনকে আর কত রঙহীন রাখবি বল?এবার জীবনে রঙের ছিটেফোঁটা নাহয় আসতে দে?”
“আমার জীবন সাদামাটাই সুন্দর ভাই”
“প্রণয়ই সে না যার জন্য তোর ও শহর ছাড়তে হলো?যার প্রশ্নের সম্মুখীন তুই হতে চাইতিস না?যার জীবনে তুই আধার আনতে চাইতিস না?সেই কিনা সে বল?”
ভাইয়ের কথায় মাথা নিচু করে চাঁদ।তা দেখে স্মিত হেসে চৈত্র বলে,
“ছেলেটাকে খুব ভালোবাসিস না?”
“ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই ভাই”
“পেয়েও হারাতে চাস?”
“বহু আগেই হারিয়েছি।নতুন করে পাওয়ার আর সাধ নেই।সাধ যদি থেকেও থাকে তবুও তাকে আমার আর পাওয়া হবেনা।বরং আমিই পেতে চাইনা”
অসুস্থ চাঁদ রুম থেকে বের হতে বাধ্য হলো ড্রয়িংরুমে তার মা আর বাবার তুমুল ঝগড়ার খবর পেয়ে।ক্লান্ত শরীর নিয়ে তাদের সামনে হাজির হয়ে বলে,
“হয়েছে টা কী আম্মু?এভাবে চেচাচ্ছো কেনো?বাসাভর্তি মেহমান তা কি ভুলে গেছো তোমরা?আব্বু তুমিও?”
চাঁদের বাবা সামনে এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“এখন কেমন লাগছে আম্মু?”
“আলহামদুলিল্লাহ এখন ঠিক আছি আব্বু।তোমরা বলো হয়েছে টা কী?”
চাঁদের মা এবার খানিকটা চেচিয়ে বলেন,
“কোথায় ঠিক আছিস তুই হ্যা?শরীরের কী অবস্থা হয়েছে দেখেছিস?ভুল আমাদের ই ছিলো এভাবে বিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।এবার আর তোকে ওখানে যেতে দেবোনা।তুই এখানেই থাকবি মা।কালই জামাই যেতে চাচ্ছে।আমি বলেছি কয়েক মাস থাকুক।পরে পাঠাবো।এই নিয়ে তোর আব্বু…”
মায়ের কথা ছিনিয়ে চাঁদ বলে,
“কয়েক মাস কেনো থাকবো?এখন আমার বাড়ি তো ওটাই আম্মু।আমি মাঝেমাঝেই এখানে আসবো।থাকবো কয়েকদিন।বিয়ের পর তো জীবন এমনই তাইনা আম্মু?আর তোমরা চাইলে ঢাকা শিফট হয়ে যাও।ওখানেইতো ছিলাম আমরা”
বলেই বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“যেহেতু কাল চলেই যাচ্ছি আজ চাচ্ছিলাম সবাই মিলে একটু কোথাও ঘুরে আসি?তোমরা কি যাবে আমার সাথে?”
রিহা সামনে এসে বলে,
“অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘুরতে চাচ্ছো?”
“অসুস্থ মন আর মস্তিষ্কটাকে সতেজ করতে চাচ্ছি রিহাপু।আর কিছুইনা”
রিহা হেসে বলে,
“খুব পাকা পাকা কথা না?”
উজান চাঁদকে বলে,
“কোথায় যাওয়া যায় ভাবি?”
“অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা ই আমাদের এখানে আছে।কিন্তু কালই তো চলে যাবো।বেশিক্ষণ ঘোরা যাবে কিনা জানিনা।তৈঙ্গা চূড়া যাওয়া যায়রে ভাই?”
বলেই ভাইয়ের দিকে তাকায় চাঁদ।তাকাতেই চৈত্র বলে,
“প্রণয়তো আজ ভোরের দিকেই যাওয়ার কথা বলছে।কিভাবে যাবি তবে?”
মির চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আমরা কাল বিকালেই যাবো।প্রণয় গেলে একা যাক।আজ একটু ঘুরি নাহয়।কতদিন হলো চিত্তের মেঘ সরাইনা”
মিরের কথার প্রেক্ষিতে প্রণয় কিছু বলেনা।শুধু বাকা চোখে তাকায় তার পানে।অতঃপর খানিকটা কেশে চৈত্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“সবাই রেডি হলেই বেরুবো।তৈঙ্গা চূড়া হোক আর যেই চূড়াই হোক সবখানেই যাবো আজ।আপনার বোনকে বলে দেবেন তার হাজবেন্ড এতোটাও খারাপ না যতটা সে ভাবে”
To be continued….