#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৪৫.
“আপনি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতি প্রণয়,হৃদয় আপনাকে দিলাম”
বাক্যটুকু লিখে তার নিচেই ডান পাশে আজকের তারিখটা দিয়ে ডায়েরীটা সন্তপর্ণে বন্ধ করলো চাঁদ।অতঃপর মুচকি হেসে ডায়েরীটা আলমারিতে রেখে পেছনে ঘুরতেই ভাইকে মোবাইল চালাতে চালাতে কাধের ব্যাগ টেবিলে রাখতে দেখে খানিকটা উস্কাতে বললো,
“সারাদিন প্রেমালাপ করেও মন ভরেনা নাকি?”
ব্যাগ টেবিলে রেখে বোনের কাছে এসে তার কান মলে দিয়ে চৈত্র বলে,
“সারাদিন প্রেমটা কি গিয়ে তুই করিয়ে দিয়ে আসিস?”
“ভাবির কাছে বিচার দেবো কিন্তু!ছাড় বলছি”
আরেকটু জোরে কান চে!পে ধরে চৈত্র বলে,
“তোর ভাবিকে আমি ভয় পাই নাকি?”
“তাই না?বলবো এ কথা ভাবিকে?”
“হ্যা বল।তোর ভাবি আমার কিছুই করবেনা।উলটো সে আমায় ভয় পায়”
“তোকে না।তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় ভাই”
চাঁদের কান ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় বসে দু’হাত বিছানায় উল্টোভাবে দিয়ে ফ্যানে নজরাবন্দী করে চৈত্র বলে,
“এ ভয়ে আমি নিজেই ধুকে ধুকে ম!রি”
ভাইয়ের পাশে বসে তার কাধে হাত রেখে চাঁদ বলে,
“এভাবে বলেনা ভাই।ভাবি তোকে ভালোবাসে বলেই এতোটা ভয় পায়”
সোজা হয়ে বোনের দিকে চেয়ে চৈত্র বলে,
“তাই বলে এতোটা ভয়?আমার ভালোবাসায় কি ওর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই?”
“তুই ভুল বুঝছিস ভাই”
“কী করে যে ওর ভয় আমি কাটাবো বুঝছি ই না”
“আমায় একদিন ভাবির সাথে দেখা করিয়ে দে”
“ও এসবে রাজি হবেনা”
“বলবি কেনো?হঠাৎ তাকে চমকে দেবো”
“যদি রাগ করে?”
“করবেনা।আমি আছিনা?”
চাঁদের নাক টেনে দিয়ে চৈত্র বলে,
“হ্যা আমার পাকা বুড়ি”
নাক কুচকে বাচ্চাদের মতো হেসে দিয়ে চাঁদ বলে,
“হ্যা তোদের চাঁদবুড়ি!দি গ্রেটেস্ট চন্দ্রম…চাঁ…চাঁ…চাঁদ”
কপাল কুচকে চৈত্র বলে,
“কী বলছিলি তুই?”
থতমত খেয়ে চাঁদ বলে,
“ক…কই?কিছুনাতো।আচ্ছা তুই ফ্রেশ হ আমি তোর জন্য শরবত করে আনি”
“ঠিক আছে”
বাইরে থেকে এসে হলরুমে বসে ফোন স্ক্রল করছিলো প্রণয়।এমতাবস্থায়ই সেখানে হাজির হন তার মা পুষ্পিতা জামান।ছেলের পাশে বসে ছেলেকে বলেন,
“তুমিতো একবছর বাদেই ফাইনাল ইয়ার দিবে।ভাইবোনদের একটু আকটু হেল্পতো পড়াশুনায় করতেই পারো”
মায়ের পানে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে আবারও ফোনে মনোযোগ স্থির করে প্রণয়।তা দেখে পুষ্পিতা জামান নারাজ হয়ে বলেন,
“আমি কিছু বলছি প্রণয়”
“শুনেছি মা।কিন্তু কার কথা বলছো তুমি?যাদের কথাই বলছো বেশিরভাগই তো মানবিক বিভাগের আর যারা বিজ্ঞানের আছে ওরা দূরে থাকে এবং সকলের ই কিন্তু টিউটর আছে।আমি ওদের আর কীই বা করিয়ে দেবো?”
“ডাক্তার কেনো হচ্ছো তবে?”
ফোন লক করে মায়ের দিকে ঘুরে প্রণয় বলে,
“তুমি বুঝতে পারছোনা মা।আমিতো বায়োলজি আর ক্যামিস্ট্রি নিয়ে স্টাডি করছি।মেডিকেলে এগুলো বাদে তেমন কিছুই থাকেনা আর।আর এই দুইটা সাবজেক্ট নাইন টেনে যথেষ্ট ইজি।ওরা নিজেরাই পারবে।আমি আর কী বুঝাবো?”
“তন্ময়কেতো একটু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করতে পারো নাকি?”
“ও তো ছোট বাচ্চা না যে আমি যা বলবো ও তাই করবে।কলেজে উঠে গেছে,বুঝ হওয়ার যথেষ্ট উপযুক্ত।এখন ওকে আমি কিভাবেই বা আগ্রহী করবো?যদি না নিজে থেকে আগ্রহী হয়?”
বিরক্ত হয়ে পুষ্পিতা জামান বলেন,
“তোমাদের দুই ভাইয়ের আমি কিছুই বুঝিনা!”
মায়ের দু’গাল টে!নে দিয়ে প্রণয় বলে,
“অতো বুঝতে হবেনা মা।আমি রুমে গেলাম”
“পড়তে বসবে?”
“আমার রুটিনতো তুমি জানোই”
“কফি পাঠাবো নাকি শরবত?”
“কফিই দিও।মাথাটা ধরছে”
“ঠিক আছে।তুমি যাও আমি আসছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মিনিট বিশেক পড়ার পরই মাথা ব্যাথাটা বাড়ে প্রণয়ের।তবুও সে পড়তে চাচ্ছে।বেশি একটা সময় নেই,বছরের শেষের দিকেই ফাইনাল প্রফ দিতে হবে।এতোদিন তেমন কিছুই পড়েনি।খুবই হালকাভাবে সবকিছু দেখে গেছে।তাই তোরজোর করেই পড়তে হবে।কিন্তু মস্তিষ্কটা তার মনের বিপরীতে চলছে।মাথার যন্ত্রণা দ্বিগুণ করে দিচ্ছে নিমিষেই।কফি অর্ধেক খেয়ে রেখে দিয়েছে সে।এতোক্ষণে ঠান্ডাও হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই।আর গরম করে খাওয়ার মতো ইচ্ছা প্রণয়ের মনে জাগছেনা।ডান হাত দিয়ে কপালের দুই পাশ চেপে ধরে বইয়ের দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে।এমতাবস্থায় হঠাৎ করেই ফোন বেজে উঠায় চোখ বন্ধ রেখেই কোথাও দৃষ্টিপাত না করে ফোন কানে লাগিয়ে কিছু বলার পূর্বেই প্রণয় শুনতে পায়,
“শুনলাম কোনো এক চাঁদের প্রেমে নাকি প্রণয় মাতোয়ারা?”
অরিনের কটাক্ষপূর্ণ বাক্য শুনে মাথা ব্যাথাটা যেনো বেগতিক বাড়লো প্রণয়ের।চোয়াল শক্ত করতেই কপালের রগ ফুলে উঠলো।ফর্সা মুখটা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।কোনো জবাব দেয়ার পূর্বে আবারও সে শুনতে পায়,
“আপনার চাঁদ কি আমার চাইতেও বেশি সুন্দর?”
নিজের রাগ সংবরণ করে বেশ ঠান্ডাস্বরেই প্রণয় বললো,
“নিজের সাথে তুলনা দিয়ে আমার চাঁদকে অপমান করার অধিকারতো আমি তোমায় দিইনি”
অতঃপর আবারও বলে,
“যেহেতু অরণের কাছে শুনেছোই,সবটা পরিষ্কার করে দিচ্ছি।প্রণয়কে পাওয়ার দুঃসাহসিকতা কেবল চাঁদেতেই বিদ্যমান।ফারদার আমায় কল দিয়ে ডিস্টার্ব করার পূর্বে এ কথাটা স্মরণ করবে”
অরিনের হৃদয় চূ!র্ণবিচূ!র্ণ করে দিয়ে কলটা কেটে দিয়ে ব্লকলিস্টে ফেলে দেয় প্রণয়।শান্তশিষ্ট প্রণয়ের মেজাজ তুঙ্গে চড়ে গেছে।নিজেকে শান্ত করা প্রয়োজন,তবে কোনোক্রমেই সে কিছু করতে পারছেনা।মাথা ব্যাথাটা যেনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।তৎক্ষনাৎ বইটা বইয়ের তাকে সন্তপর্ণে রেখে দিয়ে রুম থেকে বেরুতে বেরুতে অরণকে কল দেয় সে।অতঃপর দুই-তিনবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে,
“তোর জন্য কী এখন শান্তিমতো পড়াও যাবেনা নাকি?”
“মেজাজ দেখাবিনা বলে দিচ্ছি।এমনেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।এক্ষুনি টিএসসি আয়।আই নিড টু টক টু ইউ রাইট নাও”
“কী হয়েছে?”
“তুই জানিস তোর বাসায় আমি যাই না।আশা করছি এতোদিনে তুই এও বুঝেছিস কেনো যাইনা”
গম্ভীরভাবে অরণ বলে,
“আসছি।বের হ তুই”
.
.
.
.
.
.
.
.
আধাঘন্টার মধ্যেই দুই বন্ধু টিএসসি চত্বরে এসে হাজির হয়।দুজনের টাইমিং ও একই।দুইপাশে দুই বন্ধু একে অপরকে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করলে দুজনই উদ্যানের সামনে এসে দাড়ায়।অতঃপর অরণই শুরু করে,
“হঠাৎ কী হয়েছে?”
“মাথা ধরেছে আমার।চল চা খাবো”
কপাল কুচকে অরণ বলে,
“কিন্তু তুইতো চা খাস না”
“তেতুলের টা খাবো আয়”
প্রণয়ের সাথে আসার জন্য পা বাড়িয়ে চশমা চোখে ভালোভাবে ঠেলে দিয়ে অরণ বলে,
“মাথা ব্যাথার জন্য?”
“হিম।তুই কোনটা খাবি?”
চায়ের টং-য়ের সামনে থেমে অরণ বলে,
“চা খাওয়ার ইচ্ছা আপাতত নেই।তুই খা”
“খেতে তো তোকে হবেই”
অরণকে কথাটা বলেই দোকানিকে উদ্দেশ্য করে প্রণয় বলে,
“এই মামা দুইটা তেতুলের চা দাওতো”
চায়ের অর্ডার করেই অরণের হাত ধরে নিজেও পা ঝুলিয়ে পাকায় বসে তাকেও বসায়।অরণ মহাবিরক্ত হয়ে বলে,
“জোর করে এখন তোর সাথে আমার তেতুল গিলতে হবে?”
“দেখ অরণ তোর বোন এমনেই মেজাজ খারাপ করে রেখেছে।তুই বাকিটা বিগড়াস না”
কথাটা শুনেই থমথমেভাবে অরণ জিজ্ঞেস করে,
“আবার কী করেছে?”
অরণের দিকে ঘুরে তার মুখোমুখি হয়ে প্রণয় বলে,
“যেহেতু চাঁদের ব্যাপারে বলেছিসই,এটা কেনো বলিস নি যে তোর বোনের সাথে আমার কিছুই সম্ভব না।এই জ্ঞানটা কেনো দিস না তাকে?”
প্রণয়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে অরণ শুধায়,
“কখনো কি তুই আমায় বলেছিস অরিন তোকে বিরক্ত করে?একবারও বলেছিস?”
অরণের কথা শুনে দৃষ্টি নত করে প্রণয়।অতঃপর তার মুখ দিয়ে কোনো বুলিই আর ফুটে না।তা দেখে অরণ স্মিত হেসে বলে,
“আমি জানি কেনো বলিস নি।তবে তোর আর আমার বন্ধুত্ব কিন্তু এতোটা ঠুনকো নয় প্রণয়।যে একটা মেয়ের জন্য তা ভেঙে যাবে হোক সেটা আমার নিজের বোনই।নে চা এসেছে,আমি অরিনকে বোঝাবো”
চায়ে কয়েক চুমুক দিয়ে প্রণয় বলে,
“চাঁদের বাসার সামনে যাবো মামা”
প্রণয়ের কথা শুনে ভড়কে গিয়ে চোখ খানিকটা বড় বড় করে অরণ মুখের কাছ থেকে চায়ের কাপ সরিয়ে বলে,
“কী বললি তুই?”
“যা শুনেছিস তাই বলেছি”
“আর ইউ শিওর?এখন আমাকে এই দিনও দেখতে হবে যে রাত বিরাতে প্রণয় কোনো মেয়ের বাসার নিচে উঁকিঝুঁকি দেবে?”
“রাত কোথায় সবেইতো সন্ধ্যা নামলো”
“তার মানে তুই যাবিই?”
“হ্যা দোস্ত”
“তোর জন্য মানুষের তাও আবার মেয়ে মানুষের বাসার নিচে তাকিঝুঁকি করে গনধো!লাই খাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।তোর ধো!লাই তোকেই মোবারক মামা”
চায়ের বিল মেটাতে মেটাতেই কথাটা বলে অরণ।প্রণয় অরণের সামনে এসে অনুনয়-বিনয় করে বলে,
“জিগারের বন্ধু আমার এমন করিস ক্যান?চল না”
“দেখ মেজাজ খারাপ করিস নাতো।জীবনে যা করিস নি আমিও করিনি সেসব করতে বলছিস তুই?”
“জীবনেতো মানুষ সবকিছুই কখনো না কখনো প্রথমবারই করে।কী বলো মামা ঠিক কিনা?”
কথাটা চা-ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করেই বলে প্রণয়।প্রণয়ের কথা শুনে লোকটা বলে,
“হ মামা আর তা যদি হয় প্রেম নিয়া তইলেতো কোনো কতাই নাই”
অরণ পাকায় বসতে বসতে দোকানিকে জিজ্ঞেস করে,
“প্রেম করেছো নাকি কয়েকটা?”
“কয়েকটা না।একটাই করছিলাম।যারে করছি হেরেই বিয়া করছি মামা।এহন একটা চাইর বছরের পোলাও আছে”
“এই কম বয়সেই?তোমার বড়জোর ত্রিশ-বত্রিশ হবেনা?”
আরেকজনের জন্য চা বানাতে বানাতে দোকানি বললো,
“হ।কী আর করতাম?গ্রামের পোলা রাইত বিরাইতে হের মতোন ই গিয়া সুমনের মায়রে দেখতে যাইতাম গাছে উইঠা”
কপাল কুচকে অরণ বলে,
“কী!”
“হ হের লেগাই কইতাছি তোমরাও যাও।এমন দিন আর ফিরা আইবোনা।মন যহন মামির লেগা মামার টানতাছেই তোমগো যাওন দরকার।তুমি না গেলেও তুমি কিন্তু অবশ্যই যাইও মামা”
শেষের কথাটা প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে দোকানি।প্রণয় সে কথা শুনে অরণকে কনুই মে!রে বলে,
“দেখলি?দেখলিতো?”
“এমন অস্থির হয়ে গেছিস কেন?পরশু কলেজে আসলে দেখতে পারবিনা নাকি?”
“কালতো শুক্রবার।পুরো একদিন দেখতে পাবোনা।চল না?”
“তো একদিনে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে শুনি?”
“তাকে দেখার বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে অরণ!”
বিরবির করতে করতে প্রণয়কে উঠাতে উঠাতে অরণ বলে,
“দিনকে দিন প্রেমিক পুরুষদের পেছনে ফেলে মহা প্রেমিক হয়ে যাচ্ছিস তুই।তোর সামনে মজনুও ফেইল”
অরণের কথা শুনে হুহা করে হেসে দিয়ে প্রণয় বলে,
“প্রেমহীন দুনিয়া পানসে লাগে অরণ!প্রেমে এতো মধু কী আর বলবো তোকে!”
ঠেস মে!রে প্রণয়ের বাহু টেনে অরণ বলে,
“হয়েছে আমায় প্রেম নিয়ে লেকচার দিবিনা।তোর লেকচার শুনতে আসিনি।আর হ্যা একদম পাঁচ মিনিটের বেশি থাকবোনা বলে দিলাম”
“আগে যেয়ে তো নেই!চোখ দুটো তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে যে!”
“এই শা*লা!দিনেও না দেখলি?এমন পাগল হইছিস ক্যান?”
পকেটে এক হাত গুজে অপরহাতে অরণের বাহু ধরে তাকে টানতে টানতে প্রণয় বলে,
“ও তুই বুঝবিনা।চলতো”
দুই বন্ধুর কান্ড দেখে দোকানি হেসে দেয় তাদের অগোচরে।মনে পড়ে যায় তার প্রেমের মুহূর্তগুলো।হৃদয় জুড়িয়ে যায় তার।আপনমনে চা বানানোয় মনোনিবেশ করে সে।
মিনিট দশেক হলো চাঁদের বাসার নিচে এসেছে তারা।অরণ হাত দিয়ে বারবার পায়ের কাছে থা!পড়াতে থা!পড়াতে মেজাজ খারাপ করে বলছে,
“দেখ প্রণয়,নিজের ভালো চাস তো চল আমার সাথে।তোর জন্য শরীরে যাও রক্ত বেঁচে ছিলো সব এই মশা গিলে নিচ্ছে।তুই যাবি নাকি আমিই যাবো বল?”
বার কয়েক এপাশ ওপাশ ঘুরে প্রণয় বলে,
“আমি জানি তুই যাবিনা”
“ভালো হচ্ছেনা কিন্তু প্রণয়।সময় আমারও আসবে”
“কবে আসবে?তুইতো কিছু কাউকে বলিসই না”
তেতে উঠে অরণ বলে,
“তুই বলিস?বলেছিস কিছু চাঁদকে?নিজে বলিস না যখন অন্যকেও উপদেশ দিবিনা”
“চাঁদের বারান্দা কোনটারে মামা?এতো বারান্দা কেন এখানে?কয় তলায় ই বা থাকে?”
বিরক্ত হয়ে অরণ বলে,
“আমিতো সব জান্তা সামশের!সবকিছুর খবর রাখি।তোর বিয়ে উপলক্ষে বার কয়েক এসে চাঁদের বাড়ি ঘুরে গেছি তাইনা?”
“চেতছিস কেনো এমন?”
“তো চেতবো না?আমার পা ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে আর তুই বলছিস চেতবোনা?এই তোর না মাথা ব্যাথা?এখন মাথা ব্যাথা কই গেছে?”
“মনের ব্যাথার কাছে এই মাথা ব্যাথা কিছুই না মামা”
অতিষ্ট হয়ে কপালে হাত রেখেই রাস্তায় বসে পড়ে অরণ।তা দেখে প্রণয় বলে,
“থালা এনে দেবো?”
“হ্যা দে।তোর শশুরবাড়ি ঢুকে দুই দু’টো থালা নিয়ে আয়।একটা নিয়ে আমি বসবো,আরেকটা দিয়ে তোকে বসাবো।এরপর তোর বউ বারান্দা দিয়ে চেয়ে চেয়ে আমাদের ভিক্ষা করার স্টাইল দেখবে”
“শাট আপ অরণ।ডাক্তার হওয়ার বয়সে ভিক্ষুক হতে বলছিস?”
“পরীক্ষা চাঙে তুলে প্রেমিক হতে পারিস আর ডাক্তারের বদলে ভিক্ষুক হতে পারবিনা?”
“ভিক্ষুক হলে মেয়ে বিয়ে দেবে নাকি তার বাবা?”
“এই তুই চাঁদকে কল দেতো।কল দিয়ে বল কোন সাইডে ওর বাসা।এক্ষুনি কর।আমি আর বসতে পারছিনা।মেজাজ খারাপ হলে কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাবো প্রণয়”
“কল দিলে বুঝে যাবেনা তার বাসার নিচে আমি?তখন আমার রেপুটেশন কোথায় থাকবে?”
“এখন কোথায় আছে?সবতো গিলে ফেলেছিস একদম।কখনো ভাবিও নি একটা মেয়ের জন্য আমার ফ্রেন্ড তাও আবার তুই!তুই এতোটা ডেসপারেট হবি।যা বলছি কর।কিছুই ভাববেনা।তুই করবি নাকি আমি করবো?”
“করছিতো ভাই”
বলেই মিনিট দুয়েক ভেবে ডায়াল করে চাঁদের নম্বরে।একবার বেজে কেটে গিয়ে পরেরবারের বেলা রিসিভ হতেই প্রণয় কিছু বলতে নিলেই অরণ ফোন কেড়ে নিয়ে বলে,
“কোথায় আছো চাঁদ?”
“বাসায়ই আছি।আর এটাতো প্রণয়ের নম্বর?”
“হ্যা প্রণয়েরই।আমি আর প্রণয় একসাথেই আছি”
“হঠাৎ এমন সময়ে?”
“তোমাকে কিছুক্ষণ আগেই এই যে কসমেটিকস বিক্রি করেনা?এখানে দেখলাম।কেনাকাটা করে তিনতলায় ঢুকে গেলে।লিফটে দেখলাম একটা ছেলের সাথে কথাও বলছো”
বিস্ময় নিয়ে চাঁদ বলে,
“কী!কিন্তু আমিতো কলেজ থেকে এসে আর নামিই নি”
“আরেএ কী বলো।তোমাকেই দেখেছি।আমরা এই রোড ক্রস করছিলাম তখনই দেখলাম।কসমেটিকস সাইডের যে বারান্দাটা ওখানে তোমায় দেখলাম ফোনে আলাপও করছো।ফোন রেখে রুমে গেলে আর কল দিলাম।নিচে থাকতে ডাকতে চেয়েছিলাম পরে ভাবলাম লোকে কী না কী ভাবে”
“কিন্তু আমি সত্যিই নামিনি আর আমার বারান্দাতো ঐ সাইডে না।ফুচকার দোকানগুলোর পাশের দিকে।আর আপনি ভুল কাউকেই দেখেছেন।আমি নিচে নামিনি আর কোনো ছেলের সাথে কথা বলা তাও লিফটে অসম্ভব!নিশ্চয়ই অন্য কাউকে দেখেছেন”
“হয়তো।তিনতলায় এসে নেমে গেলে দেখলাম”
“হ্যা ভুলই দেখেছেন।আমি তিনতলায় না এগারোতলায় থাকি”
“ওহ আচ্ছা!তাইতো বলি তুমি আমাদের দেখেও কথা বললে না কেনো”
“কিন্তু তিনতলায় আমার মতো দেখতে কেউ থাকে এটা জানতাম নাতো”
“কি জানি রাখছি তবে”
ইতস্ততবোধ করে চাঁদ বলে,
“ইম…প্রণয় পাশে নেই?”
“আছেতো।কথা বলবে?”
“না থাক।পড়ছিলাম রাখি”
“ঠিক আছে পড়ো”
অরণ কল কেটে দিতেই প্রণয় আক্রো!শে ফেটে পড়ে বলে,
“কথা বলে রেখে দিলি?আমি কথা বলবো।দে মোবাইল দে”
বলেই মোবাইল ছিনিয়ে নিতেই অরণ বলে,
“বাঃরে! ভালোমানুষির দেখি আজকাল দাম নেই।কই থ্যাংক্স বলবি যে তোর গোলাপের ঠিকানা জেনে দিলাম তা না করে মেজাজ দেখাচ্ছিস?”
“জেনেছিস?কোন দিকে রে?কোন সাইডে বারান্দাটা?”
“বলবোনা।এমন দুর্ব্যবহারের পর একদমই বলবোনা”
“বল না এমন করিস কেন?”
প্রণয়ের অসহায় দৃষ্টি দেখে মুখ টিপে হেসে উপরে উপরে গম্ভীরভাব রেখে অরণ বলে,
“ঐ পাশটায় ফুচকা বসেনা?সেই পাশে বারান্দা আর থাকে হলো এগারোতলায়”
কথাটা শুনে গুনে গুনে এগারোতলা দেখে প্রণয় ভ্রুযুগোল কুঞ্চিত করে বলে,
“কী!”
“হ্যা।এবার চল যাওয়া যাক”
“চন্দ্রকে না দেখেতো এক পা ও নড়বোনা আমি”
“এই শা*লা।অতো উপরে দেখবি কী করে তুই?”
“চল”
বলেই অরণের বাহু টেনে ফুচকার দোকানের সামনে এসে এগারোতলায় তাকাতে তাকাতে ঘাড় ব্যাথা হয়ে যায় তার,সাথে অরণেরও।ঝটপট ঘাড় নামিয়ে অরণ বলে,
“অতো উপরে তাকাতে পারবোনা ভাই।চলতো”
“ওয়েইট”
বলেই আশেপাশে চোখ বুলায় প্রণয়।অতঃপর কিছু একটা খুজে পেয়েছে এমনভাবে চেচিয়ে বলে,
“পেয়েছি মামা!ঐ দেখ”
প্রণয়ের তর্জনীনির্দেশ খেয়াল করে সেপাশে তাকিয়ে অরণ অবাক হয়ে বলে,
“এখন কি তুই চুরি করে মানুষের বাসার ছাদেও উঠবি?”
মাথা ঝাকায় প্রণয়।তা দেখে আকাশপানে মুখ করে অরণ বলে,
“হে আল্লাহ!আর কী কী দেখাবে তুমি আমায়?”
অরণের বাহু টানতে টানতে চাঁদের বাসার পাশের বাসায় চুপিচুপি উঠে পড়ে প্রণয়।সাথে আছে অরণও।সে কিছু বলতে গেলেই প্রণয় ইশারায় চুপ করায় তাকে।বাড়িটা আটতলার।নয়তলায় ছাদ।প্রণয় ছাদে এসে কল দেয় চাঁদকে।ফোন হাতেই ছিলো বিধায় রিসিভ করে চাঁদ বলে,
“হ্যালো?”
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আকুতিভরা কন্ঠে প্রণয় শুধায়,
“একটু বারান্দায় আসবেন চাঁদ?”
অবাক হয়ে চাঁদ বলে,
“আপনারা কি যাননি?”
“না”
“কিন্তু অতো নিচ থেকে দেখা যাবেনাতো”
“আসুননা প্লিজ!”
প্রণয়ের আকুতিভরা নিবেদনকে ফেলে দিতে পারলোনা চাঁদ।সে ফোন কানে রেখেই বললো,
“আসছি”
অতঃপর ওড়না নিয়ে ঘোমটা দিতে দিতে বারান্দায় এসে দাড়ালো।গ্রিল খুলে নিচের দিকে তাকিয়ে কোথাও প্রণয় বা অরণকে দেখতে না পেয়ে বললো,
“আপনাদেরতো দেখছিনা প্রণয়”
“এই যে এ পাশটায় তাকান।আপনার একদম বরাবর বাড়ির ছাদটায়”
প্রণয়ের কথানুযায়ী সে পানেই তাকায় চাঁদ।অতঃপর দৃষ্টিমিলন ঘটতেই আঁখি জোড়া আটকায় বিধ্বস্ত প্রণয়ের দিকে।মলিন হয়ে আছে মুখটা।চুলগুলো খানিকটা এলোমেলো।শার্টও কুচকানো,হাতাও গুটানো নয় ঠিকভাবে।বেশ অগোছালো লাগছে তাকে।পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে পড়ছে।কমলাটে আভা প্রণয়ের সারা মুখশ্রীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার কিরণ।এ যেনো অভূতপূর্ব এক মুহূর্ত!মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য!অগোছালো প্রণয়ের বিড়ালাক্ষী জোড়ায় প্রেমসাগরের ফোয়ারা দেখতে পেলো চাঁদ।হৃদয়ে উষ্ণতা অনুভব করলো।গাল দুটো তার জ্বলে উঠলো লজ্জায়।দৃষ্টি একে অপরেতে থমকালো দুজনার।কিছুক্ষণ,অনেক্ক্ষণ তারপর?তারপর প্রণয় হকচকিয়ে বললো,
“ভেতরে যান।এক্ষুনি ভেতরে যান চন্দ্র।এ বেশে আর কখনো বাইরে আসবেন না।প্রণয়ের দৃষ্টি ব্যতীত আর কারো নজরে এ বেশে আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি হোক লালগোলাপ!”
চাঁদ নিজের দিকে খেয়াল করে দ্রুতগতিতে রুমের দিকে পা বাড়িয়ে ফোন কানে রেখেই বললো,
“নিষেধাজ্ঞা গৃহীত হলো গোধুলী মানব!”
To be continued….