আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৫৪.

0
964

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫৪.
“কেউ থাকেনা চিরদিন সাথে,প্রেম এসেছিলো নীরবে”

বাক্যটুকু লিখে তার পাশে আজকের তারিখ লিখে সেভাবেই তা রেখে দিয়ে আরেকটা ডায়েরী হাতে নেয় চাঁদ।অপর ডায়েরিটা খুলে তার ফাকা পৃষ্ঠায় লেখে,

“আপনাকে ভালোবেসেছিলাম।আর আপনি কী দিলেন?এক আকাশসম অপমান,পাহারসম অবিশ্বাস আর সমুদ্রের ন্যায় বিশাল দুঃখের পরিমাণ”

লিখা শেষ করে তা সশব্দে বন্ধ করে চাঁদ।অতঃপর পাশের ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টিয়ে তার পরবর্তী পৃষ্ঠার মাঝ বরাবর কলম চালায়,

“অতঃপর প্রেমের দ্বার হলো বন্ধ,মায়া হলো ত্যাগ”

বাক্য সম্পন্ন করে তার ডান পাশে আজকের তারিখসহ সময়ও উল্লেখ করে চাঁদ।

প্রায় এক সপ্তাহ কলেজে পা রাখেনি চাঁদ।নিজেকে সময় দিয়েছে।সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসার উপযুক্ত হওয়ার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করেছে এবং কিছুটা সে সফলও।তাই অষ্টম দিনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগে।কী এমন ভুল জীবনে করেছিলো?যার দরুন প্রেম নামক মিছেমায়া তার জীবনে এসেছিলো?ভাবতে ভাবতেই হিজাবে পিন লাগায় চাঁদ।পুরো হিজাব পরা শেষ করে ব্যাগ কাধে নিতেই তার ভাই চৈত্র পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

“আজ কলেজ না গেলে হয়না?”

ভাইয়ের পানে চেয়ে চাঁদ শুধায়,

“ঠিক আছে যাবোনা।তবে কারণ?”

“আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।যাবি?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“তুমি রেডি থাকলে চলো”

অবাক হয়ে চৈত্র বলে,

“আমাদের আশেপাশেতো অপরিচিত কেউ নেই তুমি করে বলছিস কেনো?কী হয়েছে?”

চাঁদ খানিকটা হেসে বলে,

“বাঃ রে!ভাইকে তুমি বলতে লোকজন থাকার প্রয়োজন?আমার ভাইকে যখন যা ইচ্ছা হবে তাই বলে ডাকবো।তোকেতো ঠিকঠাকই লাগছে চল”

“দাড়া এখানে।এক্ষুনি আসছি”

বলেই নিজের রুমের দিকে এগোয় চৈত্র।অতঃপর একটা কাগজের ফাইল নিয়ে চাঁদসহ বের হয় বাড়ির বাইরে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কাজী অফিস থেকে হাসিমুখে বের হয় দুই ভাইবোন।পাশে আছে চাঁদের নতুন ভাবি,যাকে সদ্য বিয়ে করেছে তার ভাই চৈত্র।এবং তাদের সাথে আরও আছে চৈত্রের এক বন্ধু,তার নব্য বিবাহিতা স্ত্রীর এক ভাই আর এক বোন।চাঁদ গলা পরিষ্কার করে বলে,

“রূপ ভাবি তুমি বরং আমার সাথে চলো আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় তোমাদের নিয়ে যাই।ও ভীষণ খুশি হবে জেনে যে আমার ভাইয়া বিয়ে করেছে”

চাঁদের ভাবি রূপা বলে,

“না চাঁদ প্লিজ কাউকে বিয়ের কথা বলবেনা।আমি চাই এই কথা কেবল আমাদের ছ’জনের মাঝেই থাকুক”

চাঁদ কপাল কুচকে নিতেই চৈত্র বোনকে চোখের ইশারায় কিছু বলে।তা দেখে মুচকি হেসে ভাবির গালে হাত রেখে চাঁদ বলে,

“ঠিক আছে আমার মিষ্টি ভাবি”

চৈত্রের বন্ধু বলে,

“শোন চৈত্র আমরা সকলে মিলে তোদের জন্য একটা প্ল্যান করেছি।যেহেতু আজ বৃহস্পতিবার কাল শুক্রবারও আছে।তোরা দু’জন আজকে আর কালকের জন্য সাজেক থেকে ঘুরে আয়।যদি সমস্যা হয়ে যায় তবে শনিবারও থাকিস।একদিন ছুটি নিলে কিছু হবেনা”

চৈত্র চিন্তিত হয়ে বলে,

“তা ঠিক আছে কিন্তু আমার বাসার দিকটা?আর রূপ?”

চাঁদ ভাইকে আশ্বস্ত করে বলে,

“আম্মু-আব্বুর টেনশন নিওনা ভাইয়া।আমি ম্যানেজ করে নেবো”

রূপার বড় ভাই বলে,

“দেখো চৈত্র অনেক ভরসা করে তোমার হাতে বোনকে দিয়েছি।আমি জানি আমার বোনকে তুমিই ভালো রাখতে পারবে।হয়তো আমি ওর আপন ভাই না তবে একই বংশধর আমরা।ভালোও বাসি ভীষণ।সারাক্ষণ তোমায় নিয়ে চিন্তায় থাকে।বারবার বলবে ‘ভাইয়া ছেলেমানুষও বুঝি এতো সুন্দর হয়?’ আগেতো বুঝিনি হঠাৎ একদিন তোমার কথা বললো।তারপর ওর ইন্সিকিওরেন্স দেখে এই পদক্ষেপ নিতে হলো আমাদের।বাকিটা আমরা সামলে নেবো”

রূপার ভাইয়ের দিকে চেয়ে চৈত্র বলে,

“আমি আমার রূপন্তিকাকে ভীষণ ভালোবাসি ভাইয়া।আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা”

রূপার বোন বলে,

“ভাইয়া রূপা কিন্তু সবসময় বলতো ‘জানিস তোর দুলাভাইয়ের মতো সুদর্শন পুরুষ আমি আর দু’টো দেখিনি।যেদিন দেখবিনা?হা হয়ে থাকবি একদম!’ সত্যি ভাইয়া আপনাকে দেখে আমি হা ই হয়ে গেছিলাম।এই চাঁদ তোমরা দু’জন এতো সুন্দর কেন বলোতো?”

চাঁদ খানিকটা হেসে বলে,

“আল্লাহ সবাইকেই সুন্দর করে বানিয়েছেন সেজন্য”

রূপার ভাই চাঁদকে বলে,

“আমি কিন্তু আপনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি বেয়াইন সাহেবা”

চাঁদ মৃদু হেসে বলে,

“প্রেম জীবনে ধ্বংস বৈ কিছু আনেনা।প্রেম হতে সাবধান বেয়াই সাহেব”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ভাই আর ভাবিকে বিদায় দিয়ে চাঁদ হাটতে হাটতে কন্টাক্টলিস্টে গিয়ে অরণকে কল দেয়।তিনবার রিং হতেই অরণ তা রিসিভ করে বলে,

“হ্যালো চাঁদ?এতোদিন কোথায় ছিলে?তুমি কি প্রণ….”

অরণকে থামিয়ে দিয়ে চাঁদ বলে,

“তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কথা অথবা নাম কোনোটাই শুনতে চাচ্ছিনা।আপনার সাথে দেখা করাটা জরুরী আসতে পারবেন?”

“প্রণয় আবারও ভুল….”

অরণকে থামিয়ে দিয়ে চাঁদ শক্ত কন্ঠে বলে,

“আরেকবার সেই টপিকে কিছু বললে আপনার সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেবো”

“আচ্ছা সরি।আমিতো এখন হাসপাতালে আছি।তুমি কোথায় আছো?আর কোথায় আসতে হবে বলো”

“আমি এখন ঢাকা ভার্সিটির রোডে আছি।রোকেয়া হলের দিকে।ওখানটায় আসুন।না থাক টিএসসির মোড়েই আসুন আমি সেদিকটায় যাচ্ছি”

“ঠিক আছে আসছি”

অরণ কল কাটতেই চাঁদ অনেক ভেবেচিন্তে আরেকটা নম্বরে ডায়াল করে।কল রিসিভ হতেই চাঁদ ইতস্তত করে বলে,

“মি.আহিন?”

“বলছি”

“কিছু কথা বলা যাবে?”

“কথা বলতেই অবশ্যই ফোন দিয়েছেন”

“জ্বি”

“বলুন”

“আসলে একটা হেল্প লাগতো”

“যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বলুন”

“ব্যস্ত না থাকলে দেখা করতে পারবেন?”

খানিকটা হেসে আহিন বলে,

“কী এমন কাজ পড়ে গেলো যে প্রণয়কে রেখে আহিনকে মনে পড়লো আপনার?”

“পার্সোনাল জিনিসে না যাই?”

“হ্যা হ্যা অবশ্যই।বলুন দেখা করতে চাচ্ছেন কেনো?আমি একটু ব্যস্ত আছি।সামনে ইলেকশন”

“হ্যা জানি।তবুও ঝামেলায় ফেলে দিচ্ছি।চাচ্ছিলাম না তবে আমি নিরুপায়।আপনি ছাড়া আর কেউ হেল্প করতে পারবেনা”

“চেষ্টা করবো।একটু তাড়াতাড়ি বলুন।আমার মিটিং আছে”

“জ্বি আসলে আপনার বাবাতো ঢামেকের সহকারী সভাপতি।ওনি নিশ্চয়ই মেডিকেলের ভেতরে যেই বাগান টা আছে সেই সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত?”

“মেডিকেলের বাগান?”

“জ্বি।আমার আসলে সেই বাগানটার ব্যাপারে জানাটা ভীষণ জরুরী।আপনি যদি তাকে জিজ্ঞেস করে আমায় জানাতেন!”

“বাগান সম্পর্কে কী জানতে চান?”

“আপনি শুধু ওনাকে বলবেন আপনি সেই বাগান টা ঘুরে দেখতে চান।ঐ বাগানটা আপনার ভালো লেগেছে।তখনই আপনার বাবার প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবেন।আর বাকিটা দেখা করে তারপর বলবো আমি।দেখা করা যাবে?”

“কবে করতে চান?”

“যদি আপনার হাতে সময় থাকে তো আজই”

“আমি মিটিং শেষ করে আপনায় কল দেবো”

“আর শুনুন!”

“বলুন”

“আমি যে আপনাকে এসব বলতে বলেছি।কাইন্ডলি আমার নামটা আপনার বাবার সামনে নেবেন না”

“তার বিনিময়ে আমি কী পাবো?”

“ঘুষ চাচ্ছেন?”

“অনেকটা তেমনই ধরতে পারেন।রাজনীতির মূলনীতিই হচ্ছে ‘একহাতে দাও একহাতে নাও”

“একদম পাকাপোক্ত রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন দেখছি”

“আপনিও তো পাকাপোক্ত প্রেমিকা হয়ে উঠেছেন”

“রাখছি।মিটিং শেষ হলে টিএসসি আসবেন।ওখানেই থাকবো”

“ঠিক আছে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আধাঘন্টা পর টিএসসির মোড় হতে অরণ আর চাঁদ এক ফুচকার দোকানের পাশের পাকায় বসে দুই প্লেট ফুচকা অর্ডার করে।অতঃপর অরণ বলে,

“হঠাৎ কী হলো?”

“আমি আহিনকেও ডাকিয়েছি অরণ”

“আহিনকে কেনো?সেদিন না মানা করলে?”

“করেছিলাম তবে আমার মনে হলো তার বাবা যেহেতু কলেজের সাথে জড়িত হতেও পারে কিছু জানেন অথবা তিনিও শামিল”

কিছুক্ষণ ভেবে অরণ বলে,

“হ্যা এমনটা হতে পারে।কখন আসবে ও?”

“একটা মিটিং আছে তারপরই নাকি আসবে।সেজন্যই ফুচকা অর্ডার দিলাম।কিছুক্ষণ এখানে বসি এরপর তাকেসহ উদ্যানে ঢুকবো”

“আচ্ছা।কিন্তু সেদিন যে প্ল্যানের কথা বললে সেটা কতদূর এগোলো?”

“তার মাঝে কত কাহিনীই তো হয়ে গেলো।আজ কলেজ যাওয়ার ছিলাম একটা কাজে আটকা পড়েছি।শনিবার যাবো।সেদিন দেখি আশা করছি হয়ে যাবে”

“আজই নাহয় চলো?ওদের ক্লাসটাইম শেষ হতে বিকাল হবে।আমাদের কাজ তার আগেই হয়ে যাবে”

“কিন্তু রাখবো কোথায়?”

“আমার বাসায়”

“কেউ জানবেনা?”

“না”

“ঠিক আছে।আহিনের সাথে কথা বলেই আমরা বেরুবোনে”

“ঠিক আ…ঐতো ফুচকা।নাও খাও”

বলেই ফুচকার প্লেট চাঁদের দিকে এগিয়ে দেয় অরণ।নিজেও আরেকটা নিয়ে কথা বলতে বলতে খাওয়া আরম্ভ করে।ফুচকা খেতে খেতেই চাঁদ অরণকে বলে,

“নাস্তা না করেই বেরিয়েছিলাম।এখন আবার ফুচকা খাচ্ছি।নিশ্চিত গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা উঠবে”

নিজের ফুচকার প্লেট টা চাঁদকে ধরতে দিয়ে কাধের ব্যাগ সামনে এনে অরণ বলে,

“আমার ব্যাগে প্রায় অনেকধরণের ট্যাবলেটই আছে।তোমায় ক্যাপসুল দিচ্ছি।কোনটা খাও?”

“সেকলো টুয়েন্টি”

“ইম…আমার কাছে সরকারি টাই আছে।ওমিপ্রাজল খাও।এটা বেটার”

“ঠিক আছে দিন”

“পানি আছে?”

“হ্যা ব্যাগে আছে”

“ধরো”

প্রণয় আর মিরা এতক্ষণ যাবৎ অরণ আর চাঁদকেই পর্যবেক্ষণ করছিলো।অরণকে হাসপাতালের কাজ রেখে দ্রুত আসতে দেখেই প্রণয় মিরাকে নিয়ে তার পিছু আসে।যদিও মিরা আসতে চায়নি তবে প্রণয়ের জন্য আসতে হয়েছে তার।বর্তমানে প্রণয় ক্ষীপ্র গতিতে চাঁদ আর অরণের দিকে যেতে চাইলে তাকে টেনে গাছের আড়ালে নিয়ে আসে মিরা।অতঃপর গাছের পাশে পাকার উপর বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসে বলে,

“কী করতে যাচ্ছিলি তুই?”

“দেখিস নি কী করছিলো ওরা?”

“হ্যা দেখেছি তো?”

“তো মানে?ফুচকা খাচ্ছে,পানিও খাইয়ে দিচ্ছে।এসব তুই দেখতে পাচ্ছিস না?খুব না সেদিন বললো কিছু নেই?”

“এতোটা জ্ঞানহীন কবে হলি প্রণয়?”

“কী বলতে চাচ্ছিস?”

“ঔষধ দিয়েছে খেতে।তাও গ্যাস্ট্রিকের পাতার মতো দেখলাম।আর তুই কিসব বলছিস?”

“আর প্রেমিকযুগোলের মতো বসে যে ফুচকা খাচ্ছে?”

“তুই অরণকে নিয়ে ইন্সিকিওর ফিল করছিস প্রণয়?সিরিয়াসলি?”

থমথমেভাবে প্রণয় বলে,

“এমন কিছুনা”

“তাহলে কেমন কিছু?”

“ওরা যদি রিলেশনশিপে থেকেই থাকে বলে দিলেইতো পারে।এতো নাটক করার কী আছে বুঝতে পারছিনা আমি”

“হতে পারে জরুরী কাজে এসেছে।আর তুইতো জানিস অরণ পূর্ণকে ভালোবাসে।তবুও এমন কথা কী করে বলছিস?”

“জরুরী কাজটা নিশ্চয়ই ফুচকা খেতে খেতে প্রেম করা?”

কপাল কুচকে মিরা বলে,

“প্রণয় তুই…”

“চুপ থাক।অরণের সাফাই গাইবি না।আমি জানি ও পূর্ণকে ভালোবাসে।তবে বন্ধুর ভালোবাসার দিকে হাত কেনো বাড়ালো?এতো ঘনিষ্টতা কিসের?আর আমিতো….”

বলতে গিয়েও থেমে যায় প্রণয়।তা দেখে মিরা বলে,

“কী?”

“অরণকে আমি সবটা বলেছিলাম।চাঁদের জন্য কী ফিল করি,কবে থেকে করি সবকিছুই।যেদিন থেকে আমি আমার অনুভূতিগুলো বুঝতেও পারিনি সেদিন থেকে আমারও আগে অরণ আমার অনুভূতি ধরে ফেলেছিলো।তাহলে সেই অরণ এমন কেন করছে বলতে পারিস তুই?আমার চাঁদের দিকে ও কেন হাত বাড়াবে?চাঁদকে ছোয়ার এবং ভালোবাসার অধিকার কেবল প্রণয়ের,এটা কি ও জানেনা?”

“আমি বুঝতে পারছি ইউ আর জেলাস বাট হতে পারে কোনো বিশেষ কারণ আছে যার জন্য দুজনকে এভাবে দেখা করতে হচ্ছে।হয়তো আমাদের পরে জানাবে”

“কবে জানাবে?যেদিন আমি জ্যান্ত লা*শ হবো সেদিন?”

প্রণয়ের ঠোট হাত দ্বারা চেপে মিরা খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,

“প্রণয়!”

অতঃপর কপাল কুচকে আবারও বলে,

“কিসব বলিস!”

মিরার হাত সরিয়ে মিরাকে জড়িয়ে ধরে লম্বা শ্বাস নিতে নিতে প্রণয় বলে,

“আমি আর নিতে পারছিনা রে মিরা!”

প্রণয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে মিরা শান্ত কন্ঠে বলে,

“এই যে তুই আমায় জড়িয়ে ধরলি।এটাকে কি তুই প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা বলবি?”

কথাটা শোনামাত্র মিরাকে ছেড়ে দিয়ে প্রণয় বলে,

“তোকে তো আমি…”

“জানি।আর অরণ আর চাঁদেরও একই।ওরা প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে কিছুই ভাবছেনা।আর অরণ চাঁদকে বোন হিসেবেই দেখে যেমনটা মির আর রবিন দেখে”

“তাহলে মির আর রবিনকে ভাইয়া ডাকলেও অরণকে ভাইয়া ডাকেনা কেনো?”

“সেটাতো আমি জানিনা”

“কিন্তু আমি জানি।কারণ অরণের জন্য তার ফিলিংস আছে”

“তুই আসলেই পাগল!ডাকেনাতো ভাইয়া তোকেও।সেটার বেলা?”

“তো অরণকেওতো ডাকেনা।অরণ অরণ বলে ডাকে”

“হ্যা হয়তো কিছু কারণবশত ডাকেনা।অথবা ভাইয়া ডাক আসেনা মুখ দিয়ে”

“আসেনা কারণ শি লাভস হিম”

“ধ্যাত!বেক্কল কোথাকার!ও যদি অরণকেই ভালোবাসতো।তাহলে তোকে…..ধুর!এখন তুই কি চাস তোকে ভাইয়া ডাকুক?”

মুখ গোমড়া করে প্রণয় গম্ভীরভাবে বলে,

“না।এমনকিছুই বলিনি আমি”

“তো অরণ আর চাঁদকে কেনো কাপল বানাচ্ছিস তুই ইয়ার!দেখ,অরণ পূর্ণকে অসম্ভব ভালোবাসে।তা তুইও জানিস আমিও জানি।আমি অরণের চোখে পূর্ণর জন্য যা দেখতে পাই একই জিনিস চাঁদের চোখে তোর জন্য দেখতে পাই মামা!মেয়েটার তোর প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা।তোকে যেভাবে,যেই নজরে দেখে আর কাউকে দেখেনা ট্রাস্ট মি!আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের চোখের ভাষা বুঝবোনা?অন্তত তিন বছরেও না?শুরু থেকেই আমি তোর জন্যই ওর অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলাম।আচ্ছা তুই ই বল আহিনের মতো অত সুদর্শন ছেলেকে রিজেক্ট করার কারণ কী?”

“প্রেম করতে চাইতোনা তাই”

“তাহলে অরণের সাথে প্রেম কী করে করছে?”

“জানিনা”

“ছাগল কোথাকার!আহিনকে রিজেক্ট কেনো?ও তো আরও অনেককেই রিজেক্ট করেছে আমরা দেখেছি।তুইও দেখেছিস।তার মধ্যে বেশিরভাগ সুন্দর ছেলেই ছিলো।এতো সুন্দর সুন্দর ছেলে কেনো রিজেক্ট করেছে?”

“তো তুই বলতে চাচ্ছিস আমি সুন্দর না?”

বিরক্তিতে কপাল কুচকে মিরা বলে,

“উফ!না।কারণ মেয়েটা শুরুতেই তোকে মন দিয়ে বসেছে।যার দরুন আর কেউতেই ওর মন আসেনি।আসবেওনা সম্ভবত”

“কিন্তু অরণ…”

মেজাজ খারাপ করে মিরা বলে,

“থা!প!ড়িয়ে গাল লাল করে দেবো এবার।মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার।কখন থেকে অরণ-চাঁদ অরণ-চাঁদ বলে ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই আছে”

“তুই এতোটা স্বাভাবিক কী করে আছিস বলবি?”

“মানে?”

“এই যে অরণ পূর্ণকে ভালোবাসে।এখন আবার চাঁদের সাথে ওর এতো সখ্যতা।তোর কষ্ট লাগছেনা?একটুওনা?”

খানিকটা হেসে মিরা বলে,

“তুই আর মির বাদেতো আমার মনের খবর কেউ জানেনা,রাখেওনা।বলিস না কিন্তু কাউকে!”

“আহহা!তুই বল কষ্ট লাগেনা তোর?”

লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিরা বলে,

“চাঁদকে নিয়ে আমি মোটেও কিছু ফিল করিনা।কেনোনা আমি জানি ওদের মাঝে কিছুই নেই।কেনোনা অরণ পূর্ণকে ভালোবাসে আর চাঁদ তোকে।তবে অরণের চোখে যখন পূর্ণর জন্য ভালোবাসার বিশালতা দেখি হৃদয় চি!ড়ে যায় রে বন্ধু!”

“আমারও যায়”

“ভুল ভাবছিস তুই।মেয়েটা কেবল তোকেই ভালোবাসে।আমরা সবাই বুঝে গেলাম অথচ তুই বুঝছিস না।তবে তুই যা করেছিস সেদিন,আমার মনে হচ্ছে তোর জন্য সম্মান কমে যাবে মেয়েটার।ভালো আর বাসবে কিনা জানিনা।তবে যদি কখনো তুই ওকে পেতেও চাস অনেক স্ট্রাগল করতে হবে তোর।কেনোনা কোনো মেয়ের ক্যারেক্টার নিয়ে বললে সে সেটা মেনে নেবে না কখনোই।হোক সেটা তার ভালোবাসার মানুষই”

“অথচ করার বেলা মনে ছিলোনা?”

“কী?”

“কিছুনা”

To be continued…..

[বিঃদ্রঃআবারও বলছি গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here