#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১০
আজ সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলো নিহিলা। আজকে থেকে ক্লাস শুরু। সে গায়ে চাদর নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। অদূরে কিছু গাছ দেখা যাচ্ছে। এখনো কনকনে শীত বিদ্যমান। নিহিলা চোখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। তার চেরি ব্লসম দেখার ইচ্ছে আছে কিন্তু কোনো গাছে এমন নিদর্শন নেই। দেখি আজ অরিনকে বলবে। এতদিন তেমন একটা বের হওয়া হয়নি। অরিন আর সে একসাথেই ভর্তি হয়েছে বিধায় নিহিলার অস্বস্তি একটু কম হচ্ছে কারণ অন্তত একজন আছে তো সাথে। নিহিলা ফ্রেশ হয়ে অরিনকে টেনে তুললো। এখন অরিন তার রুমেই থাকে। প্রথম যেদিন থেকেছিল সেদিনের পরের রাত অরিন বালিশ নিয়ে চলে এসেছিলো।
“তোমার কোনো সমস্যা হবে? আমি যদি তোমার রুমে ভাগ্ বসাই?”
“আরে না কেন হবে! আসো। এমনিতেও বাড়িতে আমি আর রিহি একসাথেই থাকতাম তাই এখানে খালি খালি লাগছে। তুমি কিছু ভাববে ভেবে বলিনি। নিজে থেকে এসেছো অনেক খুশি হয়েছি।”
অরিন খুশি হয়ে বালিশ রেখে নিহিলাকে জড়িয়ে ধরলো।
“আমারো খালি খালি লাগে। জানো তো? এখন তুমি এসেছো বিধায় ভালোই সময় কাটে বাসায়। আগে তো আমি বাসায়ই থাকতাম না।”
নিহিলা ঘুমন্ত অরিনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। মেয়েটা একদম মায়ের মতোই মিশুক স্বভাবের হয়েছে। নয়তো কেই বা মাত্র কয়েকদিনে প্রথম দেখা মানুষটাকে এতো আপন করে নিতে পারে!
নিচে থেকে রিনা আহমেদের ডাক ভেসে আসলো,
“আর কতক্ষন করবি তোরা, ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে তো।”
নিহিলা “আসছি” জবাব দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো। আর বেশি সময় নেই। অরিনকে বার দুয়েক ডাকলো কিন্তু অরিন পাশ ফিরে আবারো শুয়ে পড়লো। নিহিলা আগে ফ্রেস হয়ে এলো। তারপর অরিনের গায়ে থেকে লেপ টেনে নিতেই অরিন চোখ মুখ কুঁচকে উঠে গেল।
“এই নিহি, এমন করছিস ক্যান?”
“ঘড়ি দেখুন ম্যাম। আজকে না ক্লাস?” নিহিলার কথা শুনে অরিন ধরফড়িয়ে উঠে বসলো। ক্লাসের কথা তার একদম মাথায় ছিল না।
অরিন ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে নিহিলা একেবারে তৈরী হয়ে নিল। একটা লং নীল কুর্তির সাথে চুলগুলো একপাশে বিনুনি করে নিল। সাথে সাদা উড়নাটা গলায় পেঁচিয়ে নিল।
অরিন বেরিয়েই নিহিলার দিকে এগিয়ে গেল। নিহিলার সামনে হাটু মুড়ে বসে বুকে হাত দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার ভান করলো।
“হ্যায় মেরি জান, তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই মন দিয়ে ফেলেছি আর আজ তো আমি মরেই যাবো। প্লিজ আর অন্য ছেলেরা মরে যাওয়ার আগে আমার প্রস্তাবটা গ্রহণ করে ধন্য করুন ম্যাম।”
নিহিলা অরিনের মাথায় গাট্টি মেরে তুলে দিল।
“হয়েছে এতো ডং করা লাগবে না। আপনি আরো বেশি সুন্দরী। এইবার আসুন।”
অরিন আরো কিছু বলতে নিচ্ছিলো কিন্তু নিহিলা জোর করে তৈরী হতে পাঠিয়ে দিল।
“দেখলি! মেয়েগুলোকে সেই কখন ডেকে এসেছি এখনো আসার নামগন্ধ নেই।”
“মা, আরেকবার ডাক দাও। আমার দেরি হচ্ছে।”
“দাড়া বাবা যাচ্ছি। এতক্ষন লাগে মেয়েগুলোর আসতে। নিশ্চই অরিন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। আমার এই মেয়েটাও হয়েছে না ঘুমকাতুরে।” বলতে বলতেই তিনি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নিতেই নিহিলা আর অরিন চলে আসলো।
“মাশাআল্লাহ কী সুন্দর লাগছে আমার দুই পুতুলকে।”রিনা আহমেদ এগিয়ে গেলেন নিহিলা অরিনের দিকে।
“মা দেখো না ওকে আমিও সেটা বলছি ও আরো আমাকে নিয়ে মজা করছে।”
রিনা আহমেদ নিহিলার গালে পরম আদরে হাত রেখে অরিনের উদ্দেশ্যে বলা শুরু করলো,
“জানিস? আমার ভাইজানের চেহারাও অনেক সুন্দর ছিল। সুদর্শন মানুষের কাতারে ভাইজান পড়বেই। নিহিও বাবার মতোই চেহারা পেয়েছে। আমি তো সবসময় হিংসা করে বলতাম, ছেলে হয়ে চেহারা এতো সুন্দর হওয়ার দরকার কী! সবসময় সে আর আমি ঝগড়ায় মেতে থাকতাম। যাক, অন্তত চেহারাটা ভাইয়ের পেয়ে ভালো হয়েছে। ভাইজানের অস্তিত্ব মনে হয়। মনে পড়ে অনেক।” বলতে বলতেই তিনি শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিলেন।
ফুপির কথায় নিহিলারও বাবাকে মনে পড়ে গেল। বাবা কী জিনিস সেটা বুঝ হওয়ার পর আর অনুভব করতে পারেনি। যদিও আমান শেখ অনুভবটা হতে দেয়নি কিন্তু বাবা তো বাবাই। বাবার স্থান কী আর কেউ নিতে পারে! নিহিলার মন খারাপ হয়ে গেল। চোখে পানি টলমল করছে। মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেললেই পানিগুলো ঝর্ণার রূপ নিবে।
“মা আমি বেরোবো।”
“এই তোরা তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নেয়। রাহান অফিসে যাওয়ার সময় নামিয়ে দিবে তোদের।”বলেই তিনি তাড়াহুড়ো করে ফিরে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন। ঘরের প্রতিটা সদস্য বুঝতে পারলো তিনি নিজের মন খারাপকে লোকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিহিলা খাবারের প্লেট নিয়েই নাড়াচাড়া করতে লাগলো। তার আজ আর খাওয়ার ইচ্ছে নেই কিন্তু পাশে সবাই আছে বিধায় বাধ্য হয়ে খাবার নিয়েছে।
“অরিন দ্রুত কর।” রাহানের বলা কথা শুনে অরিন ভাইয়ের দিকে তাকালো। সে বুঝতে পারলো না এমন কেন বললো তার ভাই! সে তো ঠিকই খাচ্ছে! পাশে নিহিলার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো।
“এই নিহি, তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়।”
“আমার খাওয়া শেষ। তুই শেষ কর।”
“শেষ মানে? কিছুই তো খেলি না।” রিনা আহমেদ রেগে বলে উঠলেন।
“ওহ ফুপি, এটা নিয়ে চিন্তা করো না তো।” বলেই সে অরিনের দিকে তাকাতেই অরিনও উঠে পড়লো।
রাহান লক্ষ্য করলো নিহিলাকে। সে বসা থেকে উঠে আগে আগে বেরিয়ে যেতে যেতে অরিনের উদ্দেশ্যে ডাক দিল,
“আমি যাচ্ছি।”
“দাড়া না ভাইয়া। আমরা আসবো তো।”
বোনের কথা শুনে রাহান ফিরে তাকালো,
“তোরা কী হাঁটতে পারিস না? কোলে করে নেওয়া লাগবে?”
“পারি তো।” অরিন মিনমিনিয়ে মাথা নিচু করে জবাব দিল।
“তো দাঁড়াতে কেন বলছিস?”
রাহান বেরিয়ে যেতেই অরিন আর নিহিলা রিনা আহমেদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। গাড়িতে বসেও নিহিলার মন খারাপ ছিল। সে জানালার ধারে মুখ বের করে দিল। আহ জাপানের বাতাস! কী স্নিগ্ধ লাগছে! চেরি ব্লসমের দেশ! অথচ এই কয়েকদিন সে বেরই হলো না।
“নিহিলা ঠান্ডা লাগবে, মাথা ঢুকিয়ে ফেল।”
“অরিন? চেরি ব্লসম চোখে পড়ছে না যে?”
নিহিলার কথা শুনে অরিন হাসলো।
“এখন না, শীত শেষ হলেই এগুলো ফুটবে। এখনো তো শীত রয়ে গিয়েছে।”
নিহিলা আর জবাব দিল না। সে জানালার কাছে মাথা হেলান দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিল। তার জীবনটা এমন কেন! যদি বাবা থাকতো তবে হয়ত আজকে পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ অন্যরকম হতো। সবার বাবা ডাক শুনলে তার বুঁকের ভেতর কোথাও যেন চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয়।
নিহিলার মন খারাপ সেটা বুঝতে পেরে অরিন একের পরে একেক কথা বলে নিহিলাকে হাসানোর চেষ্টা করলো। নিহিলাও চুপচাপ সাঁই জানাচ্ছে।
“অরিন।” রাহানের এমন ধমক শুনে অরিন চুপ হয়ে গেল। সে তো ভুলেই গিয়েছিল গাড়িটা তার ভাইই চালাচ্ছে।
নিহিলা গাড়ির সামনের আয়না দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসা রাহানের দিকে বার দুয়েক তাকালো। দেখে মনে হচ্ছে ভারী বিরক্ত। বোনের জন্য তো বিরক্ত হবে না স্বাভাবিক। তাহলে কী কোনোভাবে নিহিলার উপস্থিতিতে বিরক্তবোধ হচ্ছে লোকটা? নিহিলা ভাবলো। হতেই পারে। আচ্ছা, লোকটা কী ছোট বেলা থেকেই এমন! সবসময় এমন গুমোট ভাব নিয়ে কেন থাকে! নিজেও তো পরিবারের সাথে হাসিখুশি থাকতে পারে।
#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। রি চেক করা হয়নি। অগোছালোর জন্য দুঃখিত। ভুল ভ্রান্তির জন্য অগ্রীম ক্ষমাপ্রার্থী।)