#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১৪
বিদায় নিয়েছে কনকনে শীত। এক পসলা বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে তার আপন রূপে। প্রাণ ফিরে পেয়েছে মৃতপ্রায় পাতাহীন গাছের ঢালগুলো। কোমল বাতাস এবং সুন্দর ফুলের সাথে উষ্ণ আবহাওয়া প্রকৃতির শান্ত-স্নিগ্ধ-অপ্রতীম মুগ্ধতার গন্ধে বলে দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত।
দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকগুলো দিন। সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না। যেভাবেই হোক চলবেই। নিহিলা বেশ মানিয়ে নিয়েছে। সপ্তাহ ধরে রোদের বেশ আমেজ। এ রকম নিয়মিত রোদ, ঝকঝকে নীল আকাশ নিহিলা আসা পর্যন্ত আর দেখেনি। তার সঙ্গে এমন এক আউলা বাতাস বইছে। কিন্তু সে হাওয়ায় একরকম মিষ্টি স্বাদ। দেহে শীত অনুভূত হলেও এক ভালো লাগার আবেশ ছুঁয়ে দেয়। নিহিলা ব্যালকনি থেকে এসবই পর্যবেক্ষণ করছিলো। বেশ কিছুক্ষন থেকে শীত অনুভব হতেই ব্যালকনি ত্যাগ করলো।
নিহিলা নিজের রুমে বসে মোবাইল স্ক্রল করছিল। এমন সময় হুট্ করে অরিন হাতে দুইটা জামা নিয়ে ঢুকলো। তা দেখে নিহিলা ভ্রু কুচকালো।
“তুই তো বের হোসনি তবে হাতে শপিং ব্যাগ কেন?”
অরিন শপিং ব্যাগ দুটো নিয়ে উৎফুল্ল হয়ে খাটে বসলো।
“রাহান ভাইয়া এনেছে। রাহান ভাইয়া এভাবেই হুটহাট আনে অথচ মুখ ফুটে কিছুই বলে না।”
“আচ্ছা।” বলেই নিহিলা আবারো মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ দিল। এই গম্ভীর ছেলেটাকে নিয়ে সে আপাতত আর ভাববে না। এতদিন ভাবতে ভাবতে তার দিন শেষ মানে এতো গম্ভীর মানুষ কিভাবে হয় সেটাই সে ভেবে পায় না।
“এখান থেকে এটা তোর।” বলেই অরিন একটা প্যাকেট নিহিলার দিকে বাড়িয়ে দিল।
নিহিলা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে একবার প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে অরিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“আমার জন্য?”
“হ্যাঁ। পছন্দ হয়েছে কিনা দেখ।” বলেই অরিন নিজের জামাটা নিয়ে চলে যেতে নিতেই আবার ফিরে তাকালো,
“অবশ্য, ভাইয়ার পছন্দ বলে কথা, পছন্দ হবেই।”বলেই অরিন জামা নিয়ে চলে গেল।
নিহিলা প্যাকেটটা খুলে জামাটা বের করলো। সাদা আর হাল্কা গোলাপী রঙের একটা গ্রাউন্ এর মতো। নিহিলা পুরোপুরি বের করলো জামাটা।
সে সেটা নিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে ধরলো।
“আসলেই পছন্দ সুন্দর।” কিন্তু পরক্ষনেই নিহিলা রেখে দিল। সে গাঢ় নীল, কালো ছাড়া অন্য রঙের কাপড় পড়তে তেমন একটা সাচ্ছন্দবোধ করে না কিন্তু এই রঙটা যদিও হাল্কা কিন্তু না পড়তে পড়তে তার আর ইচ্ছে হয় না।
“বলছি না? ভাই মানুষের সাথে মানাবে তেমন কাপড়ই আনবে।” বলেই অরিন নিজের দিকে তাকালো,
“দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে।”
নিহিলা জামাটা রেখে অরিনের দিকে এগিয়ে আসলো। অরিনেরটা সাদা আর হাল্কা লালের মধ্যে।
“মাশাআল্লাহ, কী সুন্দর লাগছে তোকে।”
“তোকেও লাগবে।” বলেই অরিন নিজের জামাটা আরেকটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো।
“এগুলো কেন এনেছেন?”
“কী জানি! এনেছে খুশি হয়েছি অনেক।” বলেই অরিন মাকে দেখাতে চলে গেল।
নিহিলা ভাবনায় পড়ে গেল। হুটহাট মানুষটা এমন কর্মকান্ড করে। আবার পরক্ষনেই নিজের বোকামোতে গালি দিল। হয়ত জামা সুন্দর লেগেছে বিধায় বোনের জন্য নেয়ার সময় নিহিলার জন্যও নিয়েছে। এতে এতো ভাবার কী আছে!
“নিহিলা শোন, বিকালে জামাটা পড়ে তৈরী হয়ে নিবি।”অরিন দ্রুত পদে রুমে এসেই নিহিলার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে উঠল,
“কেন?”
“রাহান ভাইয়া কোথাও নিয়ে যাবে।”
“রাহান ভাই!” নিহিলা ভাবনায় চলে গেল। এই একটা মানুষকে সে ঠিক চিনে উঠতে পারে না। এমন গম্ভীর মানুষের সাথেও ঘোরা যায় না-কি!
“আমি যাবো না।”
“কেন?”
“তোর যে গম্ভীর ভাই! একটু বেশি কথা বললেও ধমক দেয়। এমন মানুষের সাথে যাওয়া মানে জেনে শুনে কুমিরের লেজে পা দেওয়া। আনন্দটাই মাটি।”
“তুই কী আমার ভাইকে অপমান করছিস?” অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিহিলা এগিয়ে আসলো,
“তুই নিজেই তো জানিস আনন্দ মাটি হবে সেটার কথা বললাম।”
“তা ঠিক কিন্তু এইবার বাবা মা সহ যাচ্ছে। সুন্দরভাবেই কাটাতে পারবো।” বলেই সে নিহিলার দিকে তাকালো,
“আমার ভাই কিন্তু অতটাও খারাপ না। তুই যেমনটা মনে করছিস। মাঝে মাঝে আমরা অতিরিক্ত খুশি হয়ে লাফালেও ডাক দেয় না।”
“কই যাবি তো?”
“জানি না এখনো।”
———–
বিকালে সবাই তৈরী হয়ে নিল। নিহিলা রাহানের দেওয়া কাপড় হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই রঙটা তার একসময় পছন্দ ছিল কিন্তু এখন আর পড়তে ইচ্ছে করে না কিন্তু কেউ একজন খুশি হয়ে উপহার হিসেবে এনেছেন। না পড়লে কেমন দেখায়! তা ভাবতে গিয়েই পরক্ষনেই জবাব মিলল, নিহিলার এসবে কারোর ধ্যান থাকবে না। রাহান ভাই নিজের বোনের জন্য কিনতে গিয়ে আরেকটা মেয়ে আছে ভেবেই নিয়েছে। বলতে গেলে দায়ে পড়ে নিয়েছে এতে সে মেয়ে জামাটা পড়লো কী ফেলে দিল এতে মানুষটায় কোনো কিছু যায় আসবে না। অন্তত রাহান ভাইয়ের কাছে এসব কোনো কিছু না। নিহিলা দীর্ঘক্ষণ মনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে কাপড়টা রেখে দিল। এটা সে পড়বে না। সে আলমারি থেকে আরেকটা কুর্তি বের করে সামনে দিয়ে বিনুনি এনে আগের নিয়মেই তৈরী হয়ে নিল।
অরিন রুমের বাইরে থেকে নিহিলাকে ডাক দিয়ে নিচে নেমে গেল। নিহিলা দ্রুত পদে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেল সামনে বরাবর রাহান ভাইও এসে দাঁড়িয়েছে। বোধহয় উনিও মাত্রই রুম থেকে বেরিয়েছে।
নিহিলা রাহান আগে নেমে যাওয়ার জন্য সরে দাঁড়ালো। কিন্তু তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো।
“কাপড়টা পড়োনি কেন?”
রাহান ভাইয়ের কণ্ঠস্বর পেয়ে নিহিলা তাকালো। তিনি দুহাত পকেটে রেখে সামনের দিকে তাকিয়েই কথাটা বলেছেন।
“এমনিতে।”
“সবসময় গাঢ় নীল, কালো এসব জামা পড়ো। খুবই অশুভ এর মতো। মাঝে মাঝে বদলিয়ে পড়ো, ভালো লাগবে।”বলেই তিনি নিচে নেমে গেলেন। আর নিহিলা ঐভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। সে বুঝতে পারছে না! এমন কথা তাও রাহান ভাই বলেছে! এমন অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ অন্য কারোর জামার রঙের দিকেও খেয়াল দেয় না-কি? সে কী বুঝে নেমে যেতে পা বাড়াতে নিতেই থেমে গেল। অরিন নিচে থেকে ডাক দিচ্ছে।
“অরিন, কিছুক্ষন অপেক্ষা কর।” বলেই নিহিলা আবার রুমের দিকে পা বাড়ালো।
কিছুক্ষনের মধ্যে রাহানের আনা সেই হাল্কা গোলাপী সাদা মিশ্রনের কাপড়টি পড়ে নেমে আসলো নিহিলা।
#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। আমি ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে আছি। যেহেতু দুইদিন গ্যাপ নিছিলাম তাই বাধ্য হয়েই গল্পটা দিতে হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে দিবো। আপাতত আজকে এই অল্প পর্বটা পড়ার অনুরোধ। ভুলভ্রান্তি ক্ষমার নজরে দেখার অনুরোধ।)