#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_০৫
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-“শিকদার ভিলায় আনন্দের হাট বসেছে।শিক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।সেই উপলক্ষ্যে সাদ্দাম শিকদার তার অফিসে মিষ্টি বিতরণ করছেন।বাসায় অন্তরা নিজে হাতে তৈরি করেছেন শিক্ষার পছন্দের পোলাও , নারকেল দিয়ে রাজহাঁসের গোশত , নারকেল দিয়ে চিতই পিঠা, গরুর গোশত, সাদা ভাত, পাঙ্গাশ মাছের ঝোল, শুঁটকি মাছের পাতুরি, ফুলকো লুচি , আলুর দম আর মুলার পায়েস। সাধারণত সবসময় মুলা পাওয়া যায় না। শিক্ষা মুলার তরকারি অপছন্দ করলে ও মুলার পায়েস তার খুব পছন্দের। এজন্য অন্তরা মুলার সিজনে কিছু মুলা কুচি কুচি করে কে’টে সিদ্ধ করে ডিপে রেখে দিয়েছিলো।আর আজ স্পেশাল দিনে শিক্ষার জন্য তিনি স্পেশাল রান্না করছেন। মোটামুটি একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে শিকদার ভিলায়।অন্তরা সবে রান্নার পর্ব শেষ করে কিচেন থেকে বেড়িয়েছে এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।অন্তরা দরজা খুলে দেখে তার স্বামী সাদ্দাম শিকদার এসেছেন।হাতে একটা গিফট বক্স রয়েছে।তিনি অন্তরা কে জিজ্ঞেস করলো মনি কোথায়? মনি কে দেখছি না যে?”
-” আছে হয়তো আম্মার রুমে।”
-” ঠিক আছে আমি দেখছি। তুমি খাবার রেডি করো।”
-” সব রেডি। তুমি ফ্রেশ হয়ে শিক্ষা কে নিয়ে নিচে এসো। শিক্ষা বলেছিলো যতদিন আবৃত্তি বাড়িতে আছে সে কয়দিন ও নিচে খেতে আসবে না। উপরে আম্মার সাথে খেয়ে নিবে। আবৃত্তির কথায় মেয়েটা বেশ কষ্ট পেয়েছে। আবৃত্তির উচিত হয় নি মেয়েটাকে এইভাবে বলার। মেয়েটা ওকে কতো ভালোবাসে ।আর ও তাকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না। ( লেখিকা নূন মাহবুব )
-” তুমি চিন্তা করো না আমি নিয়ে আসছি শিক্ষা কে বলে সাদ্দাম শিকদার উপরে এসে দেখে শিক্ষা তার মায়ের পায়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছে।তাকে দেখে শিক্ষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,বড় আব্বু তুমি এই সময়ে বাড়িতে কেন? তোমার তো এখন অফিসে থাকার কথা।”
-” আমার মনি এতো ভালো রেজাল্ট করেছে শুনে আমি কিভাবে অফিসে বসে থাকতে পারি ? ”
-” তুমি খুব খুশি হয়েছো তাই না বড় আব্বু?”
-” সন্তানের সাফল্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় তার বাবা মা। আমি অনেক অনেক খুশি হয়েছি মনি।”
-” শিক্ষা এসে সাদ্দাম শিকদার কে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার জন্য দোয়া করো বড় আব্বু।আমি যেন তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।”
-” আমি জানি আমার মনি পারবে বলে সাদ্দাম শিকদার গিফট বক্স টা শিক্ষার হাতে দিয়ে বললো,এই যে তোর সেই সারপ্রাইজ।এখন খুলে দেখ তোর পছন্দ হয় কি না।”
-” শিক্ষা দৌড়ে গিয়ে হাত পরিষ্কার করে এসে প্যাকেট খুলে দেখে একটা স্মার্ট ফোন। শিক্ষা খুশি তে আত্মহারা হয়ে সাদ্দাম শিকদার কে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি সত্যিই অনেক খুশি হয়েছি।আমি কখনো ভাবতে পারিনি তুমি আমাকে এমন একটা গিফট দিবে।লাভ ইউ বড় আব্বু।”
-” পছন্দ হয়েছে ফোন?”
-” আমার বড় আব্বু পছন্দ করে এনেছে আমার জন্য,আর আমার পছন্দ হবে না এমন টা কখনো হতে পারে না। কিন্তু বড় আব্বু তোমার ছেলে যদি জানতে পারে আমার কাছে ফোন রয়েছে ,তাহলে তিনি খুব রাগ করবেন।তিনি আগেই বলে দিয়েছে আমাকে যেনো ফোন না দেওয়া হয়।”
-” ডোন্ট টেক এ টেনশন। সাহিত্য আমার ছেলে।আমি সাহিত্যের ছেলে না।তাই আমার কথার উপর সাহিত্য কখনো কথা বলার সাহস পাবে না। এখন নিচে চল তো খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে যে।অন্তরা সব তোর পছন্দের খাবার রান্না করেছে। কব্জি ডুবিয়ে খাবো আজ।”
-” কিন্তু আবৃত্তি আপু? আমি নিচে গেলে আপু তো খেতে আসবে না ডাইনিং টেবিলে ।আমি চাই না আমার জন্য তোমাদের মধ্যে মন কষাকষি হোক।”
-” সেটা আমি দেখে নিবো।তুই নিচে আয় আমি আবৃত্তি কে নিয়ে আসছি।আজ সবাই মিলে একসাথে বসে খাবো।”
-” ঠিক আছে তুমি যাও ,আমি আসছি।
-” নতুন ফোন পেয়ে শিক্ষা দিন দুনিয়ার সব যেন ভুলে গেছে। সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শিক্ষা নিজের রুমে এসে সেলফি তুলছে ,এমন সময় সাহিত্য এসে বললো, শুনলাম তোকে নাকি বাবা ফোন গিফট করেছে?আমি বাবা কে বারন করেছিলাম তোকে যেন ফোন না দেয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা?”
-” চোখ কি পিছনে রয়েছে আপনার? স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন আমি ফোন দিয়ে ছবি তুলছি। তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
-” ইদানিং বড্ড বাড় বেড়েছে তোর। কিন্তু জানিস তো কোথাও একটা পড়েছিলাম ” পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। অর্থাৎ ম’রা’র আগে পিপিলিকা উড়তে শুরু করে।তোর ও এমন অবস্থা হয়েছে শিক্ষা।”
-” মানে কি?”
-” কিছু না।তোর ফোন টা আমাকে দে তো।”
-” কেন?”
-” দিতে বলছি দিবি।এতো প্রশ্ন করবি না।”
-” দেখছেন তো আমি সেলফি তুলছি।এখন দিতে পারবো না।”
-” তুই বরং আমার ফোন নিয়ে সেলফি তোল। আর তোর টা আমার কাছে দে। নতুন ফোনের অনেক কিছু সেট আপ করতে হয় । আমার কাছে দে আমি সব করে দিচ্ছি।”
-” শিক্ষা মনে মনে বললো,বেটার মতলব তো ঠিক মনে হচ্ছে না।এতো মধু ঠেলে কথা বলার লোক সাহিত্য শিকদার নয়। নিশ্চয় কোনো না কোনো ঘাপলা আছে।
-” কি এতো ভাবছিস বল তো ? ”
-” কিছু না।”
-” তাহলে দে ফোন।আর এই নে আমার টা।তোর যতো ইচ্ছে হয় সেলফি তুলতে পারিস।”
-” হুম এই নিন শিক্ষা সাহিত্য কে তার ফোন দিয়ে বললো।” ( লেখিকা নূন মাহবুব)
-” সাহিত্য শিক্ষার ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। শিক্ষা সাহিত্যের ফোন দিয়ে সেলফি তুলছে এমন সময় হঠাৎ সাহিত্যের ফোনে টুং করে একটা মেসেজ এলো। শিক্ষা কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে মেসেজ বক্সে গিয়ে দেখলো , আননোন নাম্বার থেকে রোমান্টিক সব মেসেজ করেছে। মেসেজের ধরন দেখে মনে হচ্ছে কোনো মেয়ে মেসেজ দিয়েছে। মেসেজ গুলো ছিলো এমন, আমার স্বপ্নের পুরুষ কবে আপনি আমার স্বপ্ন থেকে বাস্তবে আসবেন বলুন তো? কবে স্বপ্নের মতো বাস্তবে আপনাকে ছুঁয়ে দিতে পারবো? জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছেন আমাকে।এমন অবস্থা হয়েছে আমার আমি যেন পাগল হয়ে গেছি।হোয়েন আই রিমেম্বার ইউ আই ক্যান নট স্লিপ, আই ক্যান নট ইট,আই ক্যান নট বি হেলদি।” শিক্ষা ভাবলো ,এই মেসেজ যদি সাহিত্য দেখে তাহলে তো সাহেবের পা মাটিতে পড়বে না।তিনি আকাশ দিয়ে হেঁটে বেড়ানের।তার চেয়ে বরং আমি মেসেজ ডিলিট করে দিবো।ব্যাস খেল খতম বলে দুষ্টুমির হাসি হাসলো শিক্ষা।”
-” সাহিত্য এসে শিক্ষার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস আওয়াজে বললো, তুই নিজেকে বড্ড বেশি চালাক মনে করিস শিক্ষা।তবে একটা কথা মনে রাখিস তুই চলিস ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায় বলে সাহিত্য শিক্ষা কে চোখ টিপ দিল।”
-” দূরে থেকে কি কথা বলা যায় না? অসভ্যের মতো সবসময় গায়ে এসে পড়েন কেন?”
-” তুই বুঝবি না বলে সাহিত্য শিক্ষার দিকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে বেড়িয়ে গেল।”
-” শিক্ষা ঠাঁই সেইখানে দাঁড়িয়ে বললো,এই লোকটা কে আমি কখনো বুঝে উঠতে পারি না। গতকাল ও মন্ত্রীর বাড়িতে কি উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম সেইটা জানার জন্য আমাকে জেরা করেছে। ভাগ্যিস তখন নির্জন ভাই ফোন দিয়েছিলো ,তাই পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিলাম। কিন্তু গতকালের পর থেকে আমাকে এই বিষয়ে সাহিত্য আর কোনো প্রশ্ন করে নি।আর আজ এতো ভালো ব্যবহার। কিন্তু কেন? কি চায়ছে এই লোকটা?”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।