#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_১২ ( বোনাস )
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-” শিক্ষা গুন্ডাদের আহত করে নিচে ফেলে দিয়ে আবৃত্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই কেউ একজন শিক্ষার পেট বরাবর ছুরি চালিয়ে দেয়। মূহুর্তের মধ্যে ফোঁটা ফোঁটা র’ক্ত ফ্লোরে পড়তে থাকে।তবে সেটা শিক্ষার পেট থেকে নয়। সাহিত্যের হাত থেকে।গুন্ডা টা যখন শিক্ষার পেট বরাবর ছুরি চালিয়ে দিতে যায়,তার আগেই সাহিত্যে এসে হাত দিয়ে ছুরি ধরে ফেলে।যার ফলস্বরূপ সাহিত্যের হাত কে’টে যায়। সাহিত্য গুন্ডাটার নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। পরক্ষণেই আবার গুন্ডাটার শার্টের কলার ধরে টেনে তুলে বললো, কি মিস্টার দিগন্ত আগারওয়াল ওরফে বাচ্চু বিল্লা।কি ভেবেছিলি তুই তোর নাম আর ছদ্মবেশ চেঞ্জ করলে সিআইডি তোকে চিনতে পারবে না? বোকা কোথাকার।তোর বিষয়ে অনেক আগেই জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য আর প্রমাণের জন্য তোকে হাতেনাতে ধরতে পারছিলাম না। এবার বুঝতে পারবি মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসানোর আসল মজা।”
-” বাচ্চু বিল্লা ঘাবড়ে গিয়ে বললো, দেখুন স্যার! এইখানে যা হয়েছে ভুলে যান। বিনিময়ে আমি আপনাকে অনেক টাকা দিবো। সিআইডি তে চাকরি করে মাত্র কয়েক টাকা পান। আমার কথা মেনে নিলে আমি আপনাকে টাকার পাহাড় বানিয়ে দিবো।বাকি জীবন বউ বাচ্চা নিয়ে হাসি খুশি তে কাটাতে পারবেন।”
-” সাহিত্য বাচ্চু বিল্লার গলা চেপে ধরে বললো,হাউ ডেয়ার ইউ? তোর সাহস হলো কি করে সিআইডি অফিসার কে টাকা অফার করার? অনেক টাকার মালিক তুই তাই না? কিন্তু এবার এই টাকাও তোকে বাঁচাতে পারবে না। ফাঁ’সি’র দড়িতে ঝুলতে হবে তোর।তোর বিরুদ্ধে একটা নয় হাজার টা প্রমাণ রয়েছে। তুই একজন ড্রাগ ব্যবসায়ী , স্মাগলারদের সাথে জড়িত, তোর জন্য হাজার হাজার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও কিডন্যাপিংয়ের কাজ ও করেছিস। সিআইডি অফিসার কে টাকার লোভ দেখিয়েছিস। এরকম আরো হাজার টা রেকর্ড আছে তোর।তোর তো ম’রা’র সময় এসে গেছে। প্রথমে জেলে পঁচে মরবি।আর তারপর ফাঁ’সি’র দড়িতে। ( লেখিকা নূন মাহবুব )
-” হা হা হা হা। পৃথিবীতে এমন কোনো জেল তৈরি হয় নি যেইখানে এই বাচ্চু বিল্লা কে আটকে রাখতে পারবে।তার থেকে বরং সবকিছু ভুলে যাওয়া আপনার জন্যে ও মঙ্গল আর আমার জন্যেও।”
-“সাহিত্য বাচ্চু বিল্লার হাত পেছনে মুচড়ে দিয়ে বললো, কি ভুলে যেতে বলছিস তুই হ্যাঁ? তুই জানিস কার দিকে হাত বাড়িয়েছিস ? তুই সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বোনের দিকে হাত বাড়িয়েছিস। যে বোনের গায়ে আমি একটা আঁচড় ও লাগতে দেই না , তুই তাকে আঘাত করেছিস।তোর এই হাত আমি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো।”
-” অবস্থা বেগতিক দেখে নির্জন এসে সাহিত্য কে ছাড়িয়ে বললো,কি করছিস সাহিত্য? ও তো এখানেই ম’রে যাবে।তাহলে ওর জন্য যে ফাঁ”সি’র দড়ি অপেক্ষা করছে তার কি হবে? ছেড়ে দে ভাই।”
-” এদের সব কটা কে নিয়ে যা নির্জন। এবার আমি ও দেখবো তোর বাপের টাকা কিভাবে তোর ফাঁ’সি হওয়া থেকে আটকাতে পারে।”
__________________________________
-” শিক্ষা এসে আবৃত্তির হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে বললো,আপনি ঠিক আছেন আবৃত্তি ম্যাম? খুব কষ্ট হয়েছে তাই না?”
-” আবৃত্তি শিক্ষা কে বুকে টেনে নিয়ে বললো, আমার কথা ছাড় শিক্ষা।তোর এই প্রতিদান আমি কখনো ভুলতে পারবো না।আজ যদি তুই ছুটে না আসতি ,হয়তো কাল আর আমার মুখ দেখতে পারতি না।প্রেস মিডিয়ায় ছড়িয়ে যেত সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বোনের মৃত্যুর খবর।যদিও বাচ্চু বিল্লা আমাকে প্রাণে মা’রতো না। কিন্তু আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতাম। আমার জন্য ড্যাড, ভাইয়ার মুখে চুনকালি লাগতে দিতাম না।তোকে আমি কতোভাবে অপমান করেছি।এই নিয়ে তুই আমাকে দুই বার বাঁচিয়ে নিলি। একবার ও নিজের কথা ভাবলি না শিক্ষা? আমাকে বাঁচাতে এসে নিজের কি হাল করেছিস তুই? হাত দিয়ে র’ক্ত বের হচ্ছে, জায়গায় জায়গায় র’ক্ত জমাট বেঁধে গেছে।তোর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না শিক্ষা।”
-” এসব কথা ছাড়ুন আবৃত্তি ম্যাম। আমার শরীর খারাপ লাগছে।বাড়ি যাবো আমি।”
-” আচ্ছা তুই এটা বল তুই মার্শাল আর্ট কবে ,কখন , কোথা থেকে শিখলি?”
-” আমি কিছু জানি না বলে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো শিক্ষা।”
-” শিক্ষা কে নিচে পড়ে যেতে দেখে নির্জন ছুটে এসে বললো, শিক্ষা কি হলো তোর? চোখ খোল শিক্ষা।”
-” তুই দেখতে পাচ্ছিস শিক্ষা অজ্ঞান হয়ে গেছে।আর অজ্ঞান হওয়া ব্যক্তি নিশ্চয় তোর কথা শুনতে পাবে না। দাঁতে দাঁত চেপে বললো সাহিত্য।”
-” আহ্ সাহিত্য রেগে যাচ্ছিস কেন? শিক্ষা অনেক আঘাত পেয়েছে।একা একা এতো গুলো গুন্ডাদের সাথে লড়েছে। আই থিংক ওকে হসপিটালে বা বাসায় নিয়ে যাওয়া উচিত।এক কাজ কর সাহিত্য। আমি শিক্ষা কে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি। তুই ঐ বাচ্চু বিল্লা কে নিয়ে যা।”
-” শোন নির্জন, এইখানে শুধু শিক্ষা নয় আমার বোন ও আছে। আমি এইদিক টা দেখছি । তুই ওদের কে নিয়ে যা।”
-” সাহিত্যের কথার বিপরীতে আর কথা বাড়ালো না নির্জন।সে বাচ্চু বিল্লার পুরো গ্যাং নিয়ে ছুটে চললো তার গন্তব্যে।”
-“নির্জন যাওয়ার পর আবৃত্তি সাহিত্যের হাত ধরে বললো, তোমার হাত থেকে তো র’ক্ত পড়ছে। ইস্ কতোখানি কে’টে গেছে বলে আবৃত্তি শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে সাহিত্যের হাত বেঁধে দিলো।”
-” আমার কিছু হয় নি বোন।এসবে অভ্যস্ত আমি। তুই শিক্ষার কথা ভাব।শিক্ষা কে হসপিটালে না নিয়ে বরং বাসায় নিয়ে যাই।বাসায় গিয়ে ডক্টর কে কল করে নিবো।”
-” না ভাইয়া। শিক্ষা কে এই অবস্থায় বাসায় বা হসপিটালে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”
-” কেন?”
-” একচুয়ালি এর আগেও শিক্ষা ঐ বাচ্চু বিল্লার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করছিলো।আর ওকে থা’প্প’ড় ও দিয়েছিলো।এই ব্যাপারটা ড্যাডের কানে কিভাবে জানি পৌঁছে যায়।ড্যাড শিক্ষা কে বলেছিলো,এর পর যদি আবারো শিক্ষা মা’র’পিট করে , তাহলে শিক্ষার বাড়ির বাইরে আসা বন্ধ করে দিবে। এমনকি ভার্সিটিতে ও আসতে দিবে না। শিক্ষা অনেক করছে আমার জন্য। কিন্তু আমি ওর জন্য কখনো কিছু করতে পারি নি।তাই আমি চাই না আমার জন্য পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাক।”
-” এতো কিছু হয়ে গেছে আর আমাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না তুই ।”
-” আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়া।তোমরা আমাকে ঐ ভার্সিটি তে ভর্তি করতে চাও নি। আমি নিজের ইচ্ছাতে ভর্তি হয়েছিলাম।তাই কিছু বলতে পারি নি।সরি ভাইয়া।”
-” ইটস্ ওকে।বাট শিক্ষা কে নিয়ে কোথায় যাবো? ওর শরীরের অবস্থা বেশি একটা ভালো না।”
-” আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে ভাইয়া। এইখান থেকে কয়েক কিলো দূরে আমার বান্ধবী প্রিয়ার বাসা।আমরা তো প্রিয়াদের বাসায় ও যেতে পারি।”
-” কিন্তু?”
-” আমি জানি তুমি কেন যেতে চায়ছো না। টেনশন করো না তুমি। আমি সবটা ম্যানেজ করে নিবো। তাছাড়া আঙ্কেল, আন্টি বাসায় নেই। বাসায় শুধু প্রিয়া আর ওর বোন পাখি আছে। খুব বেশি সমস্যা হবে না তোমার।”
-” ঠিক আছে,চল বলে সাহিত্য শিক্ষা কে পাঁজা কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টাট দিলো ।প্রিয়াদের বাসায় পৌঁছাতে তাদের বেশি সময় লাগলো না। সাহিত্য শিক্ষা কে কোলে করে দরজা খোলার জন্য দরজার বাইরে অপেক্ষা করছে, এমন সময় অপরিচিত কেউ একজন দরজা খুলে দিয়ে সাহিত্যে কে জড়িয়ে ধরলো।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।।