#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_১৬
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-” বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করার সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেল সাহিত্যের। সাহিত্য দেখলো শিক্ষা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বিড়াল ছানার মতো তার বুকে লেপ্টে রয়েছে। তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের মনে পড়ে যায় রাতে দেখা স্বপ্নের কথা। সাহিত্য কোনো কিছু না ভেবে নিজের বুকের উপর থেকে শিক্ষা কে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। আকস্মিক ঘটনায় হতবাক হয়ে যায় শিক্ষা। ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে ছিটকে পড়ে। ফলস্বরূপ খাটের কোনায় মাথা লেগে বেশ খানিকটা কে’টে র’ক্ত বের হয়।যা দেখে সাহিত্যের মধ্যে কোনো অনুশোচনাবোধ জাগে না। উল্টো কর্কশ গলায় শিক্ষা কে বলে তুই একটা ক্রি’মি’না’ল ,খু’নি।তোর সাহস হলো কি করে আমার কাছে আসার? আমার সাথে একই বিছানায় আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোনোর?”
-” নিজের বিয়ে করা বরের কাছে এসেছি।কোনো পরপুরুষের কাছে তো যাই নি। আর নিজের বরের কাছে যেতে সাহসের কি আছে? তাছাড়া আজ প্রথম বার আমি আপনার কাছে আসি নি মিস্টার। বিয়ের পর থেকে আমি প্রায় প্রতিদিনই আপনার সাথে , আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি। কিন্তু আপনি সারাদিনের খাটুনিতে এতোটা ক্লান্ত থাকেন যে আপনি টের ও পান না আমি আপনার সাথে থাকি। আপনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রোজ রাতে আমি আপনার কাছে আসি আর সকাল হবার আগেই আমার রুমে চলে যাই। ব্যাস আপনি কিচ্ছু টের ও পান না। কিন্তু আজ রাতে ঘুম হয় নি,তাই আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে বিধায় আপনি জেনে গেলেন। কিন্তু সমস্যা নেই। বরং ভালোই হয়েছে। আপনার ও জানা উচিত আপনার বউ আপনাকে ছাড়া ঘুমোতে পারে না।”( লেখিকা নূন মাহবুব )
-” দয়া করে তোর নাটক বন্ধ কর শিক্ষা।আমাকে মা’রা’র প্ল্যান করেছিস তুই তাই না?আমাকে মা’রা’র জন্য তোর এই নাটক সাজিয়েছিস?”
-” আশ্চর্য ! আমি আপনাকে মা’রতে যাবো কেন? বরং আমি আপনাকে বাঁচিয়েছি।না হলে এতোক্ষণে পটল ক্ষেতে গিয়ে পটল তুলতেন ।এজন্য আমাকে আপনার ভালোবেসে চুমা টুমা দেওয়া উচিত।”
-” আমাকে বাঁচিয়েছিস মানে কি বলতে চায়ছিস তুই?”
-” রাতে যখন আপনি বাড়ি ফিরলেন তখনি আপনাকে কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছিলো। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কাজের প্রেশারে এমন হয়েছে।দশ মিনিট বাদে আমি আপনার রুমে খাবার নিয়ে গিয়ে দেখি আপনি চেঞ্জ না করে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তৎক্ষণাৎ আপনার গায়ে হাত দিয়ে দেখি আপনার প্রচন্ড জ্বর। প্রচন্ড জ্বরে হুঁশে ছিলেন না আপনি।নিজে না ঘুমিয়ে সারারাত জেগে আপনার সেবা শুশ্রূষা করেছি। আপনার মাথায় জলপট্টি দিয়েছি, রাত বারোটার সময় স্যুপ করে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দিয়ে যেই না একটু চোখ বুঁজেছি তখনই আপনার শিক্ষা শিক্ষা বলে চিৎকারের আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যাই।মনে হয় আপনি আমাকে নিয়ে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলেন।হয়তো দেখেছিলেন আমি আপনাকে মে’রে দিয়েছি।তাই তো ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখা মাত্রই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। অবশ্য চাইলে আপনার করা প্রত্যেক টা আঘাত আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারি। কিন্তু যেদিন তিন কবুল বলে আপনাকে বিয়ে করছি , সেদিন থেকেই আপনাকে মনে প্রাণে স্বামী বলে মেনে নিয়েছি। আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে আপনার ছবি এঁকেছি।ভালো নাই বা বাসেন অন্তত পক্ষে যোগ্য সম্মান টুকু তো দিতে পারেন।”
-” মানে?”
-” মানে টা আমি বলছি ভাইয়া। শিক্ষা তোমার জীবনসঙ্গী, তোমার অর্ধাঙ্গিনী । এবার অন্তত শিক্ষা কে সন্দেহ করা বন্ধ করো। তুমি একবার ভেবে দেখো তো যে মানুষ টা নিজের জীবনের পরোয়া না করে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে,সে কিভাবে একজন ক্রি’মি’না’ল,খু’নি হতে পারে? তাছাড়া শিক্ষার বিরুদ্ধে তোমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।যার জন্য তুমি শিক্ষা কে ক্রি’মি’না’ল,খু’নি বলতে পারো। তুমি একটা আইনের লোক হয়ে নিজে আইন ভঙ্গ করেছো।বউয়ের গায়ে হাত তুলেছো তুমি। তুমি আসলে…
-” শিক্ষা আবৃত্তি কে থামিয়ে দিয়ে বললো, থাক না আপু।কথায় কথা বাড়ে।কি দরকার শুধু শুধু কথা বাড়ানোর? তুমি নিচে চলো তো।আজ আমি ব্রেকফাস্ট তৈরি করবো।আর তুমি আমাকে হেল্প করবে।কি করবে তো?”
-” অবশ্যই । আমার দশ টা না পাঁচ টা একটা মাত্র কিউট ভাবী বলছে। আমি না করে থাকতে পারি বল?”
-” ঠিক আছে চলো। শিক্ষা আবৃত্তি দুজনে মিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করেছে। শিক্ষা খাবার ডাইনিং টেবিলে রেখে সাহিত্য কে ডাকার জন্য তার রুমে এসে দেখে সাহিত্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়েছে।যা দেখে শিক্ষা কর্কশ গলায় বললো, ব্রেকফাস্ট না করে কোথায় যাচ্ছেন?”
-” এসিপি স্যার জরুরি তলব করেছেন। এক্ষুনি যেতে হবে।”
-” অল্প কিছু মুখে দিয়ে যান। আমি কষ্ট করে আপনার কথা ভেবে তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট রেডি করেছি।”
-“আমার কথা ভাবতে তোকে কে বলেছে?।তোর ভাবার জন্য অনেক মানুষ রয়েছে। তাদের কে নিয়ে ভাব।আমাকে নিয়ে তোর না ভাবলে ও চলবে। আমি ক্যান্টিনে খেয়ে নিবো।”
-” সাহিত্যের যাওয়ার পানে তাকিয়ে শিক্ষা বললো, সাহেবের আবার হলো টা কি? আমি আবার কাকে নিয়ে ভাবলাম? এমন ভাব করছে যেন আমার আরো দশটা বর রয়েছে।আমি তাদেরকে নিয়ে ভেবেছি। আজব ক্যারেক্টার!”
__________________________________
-” দেখো সাহিত্য আমরা অনেক চেষ্টা করে ও খু’নি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছি না। কিন্তু আমাদের এইভাবে লেজ গুটিয়ে বসে থাকলে খু’নে’র সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে। উপরমহল থেকে বার বার ওয়ানিং আসছে।এই খু’নি অনেক চালাক চতুর।তাকে ধরতে হলে আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।প্রথমত খু’নি কে আমাদের থামাতে হবে।আর খু’নি কে থামানোর জন্য আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।”
-” কি আইডিয়া স্যার?”
-” আমরা এই খু’নে’র পেছনে মূলত দুটো উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছি।প্রথমত কেউ এসিপি স্যারের মেয়ে উষ্ণতা কে মা’র’তে চায়ছে। উষ্ণতা পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য এই খু’ন গুলো করছে।আর দ্বিতীয়ত উষ্ণতা নিজে এই খু’ন গুলো করছে তার বাবা মায়ের মৃ’ত্যু’র প্রতিশোধ নিতে। এখন প্রথমে আমরা প্রথম স্টেপ ফলো করবো। অর্থাৎ খু’নি যদি উষ্ণতা কে মা’র’তে চায়, তাহলে খু’নি নিশ্চয় উষ্ণতা পর্যন্ত পৌঁছাতে চায়বে। এখন আমাদের প্রেস , মিডিয়া , সংবাদপত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে যে দশ বছর আগে এসিপি রায়হান মীরের নিখোঁজ হওয়া মেয়ে উষ্ণতা মীরের সন্ধান পাওয়া গেছে।সে এখন সিআইডির হেফাজতে আছে। ব্যাস তাহলে খু’নি তার খু’ন করা বন্ধ করে উষ্ণতা কে পেতে চায়বে।আর আমরা খুব সহজেই খু’নি অব্দি পৌঁছে যেতে পারবো।”
-” হোয়াট অ্যান আইডিয়া স্যার? কিন্তু স্যার একটা সমস্যা আছে?”
-” কি?”
-” মিডিয়ার লোকেরা যদি এসিপি স্যারের মেয়েকে দেখতে চায় , তখন আমরা কি করবো?”
-” আমি যতটুকু জেনেছি এসিপির মনে সন্দেহ ছিলো কেউ তার মেয়েকে মে’রে ফেলতে চায়। সেজন্য এসিপি কখনো তার মেয়ে কে মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসে নি। ইনফ্যাক্ট তার মেয়েকে নিজেদের কাছের লোক ছাড়া কেউ কখনো দেখেও নি।তাই আমরা যদি অন্য কাউকে উষ্ণতা সাজিয়ে মিডিয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে দেই,কেউ তাতে কোনো সন্দেহ করবে না।”
-” কিন্তু স্যার এই কাজে মেয়েটার নিজের জীবনের রিস্ক থাকবে।”
-” হ্যাঁ আমি জানি সেটা। এজন্যই আমাদের এমন কাউকে প্রয়োজন যে নিজের প্রোটেক্ট নিজে করতে পারবে।”
-” এসিপি সাইফুজ্জামানের কথা শুনে নির্জন ফান করে বলে উঠলো, স্যার তাহলে আমাদের অফিসার নম্রতা মির্জা কে আমরা কিছুদিনের জন্য উষ্ণতা বানিয়ে দেই?”
-” নির্জনের কথায় নম্রতা বললো, না না স্যার। আমি এই ধরনের রিস্ক নিতে পারবো।কখন কে এসে আমাকে শুট করে দিবে আর আমি অকালে মা’রা যাবো। আমি বিনা কারণে এতো তাড়াতাড়ি ম’র’তে চাই না। আমি সাহিত্য স্যারের সাথে ম’র’তে চাই।”
-” নম্রতার কথা শুনে সাইফুজ্জামান রাগান্বিত হয়ে বললো, এই না হলে তুমি সিআইডি অফিসার? যে মৃ’ত্যু কে ভয় পায় তার সিআইডি অফিসার হবার কোনো যোগ্যতা নেই। তোমার বাবা একজন মন্ত্রী । টাকার কোনো অভাব নেই তোমার। আমার মনে হয় না সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য তোমার সিআইডি তে থাকা উচিত।”
-” সরি স্যার।আপনি ভুল ভাবছেন।আমি আসলে এইভাবে বলতে চাই নি। আপনি যা করতে বলবেন আমি তাই করবো। আমি এই কাজের জন্য প্রস্তুত আছি।”
-” তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি অলরেডি এই কাজের জন্য একটা মেয়ে কে ডেকেছি।যে আইনের কোনো লোক না হয়েও আমাদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছে।বাচ্চু বিল্লার মতো একজন অপরাধী কে ধরতে সহযোগিতা করছে।”
-” আপনি কার কথা বলছেন স্যার?”
-” মেয়েটিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ইন্সপেক্টর নিতুর মাধ্যমে মেয়েটার খোঁজ পেয়েছি আমি।মেয়াটার সাহসিকতার অনেক গল্প শুনেছি। হয়তো আগামীকাল বাস্তবে দেখতে পারবো।”
-“এরই মধ্যে সাহিত্য বলে উঠলো , স্যার আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কোন মেয়ের কথা বলছেন। মেয়েটা সত্যিই আমাদের অনেক উপকার করেছে।ও আগামীকাল আমাদের এইখানে আসলে আমি অবশ্যই তাকে স্পেশাল ভাবে থ্যাংকস জানাবো।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।।