#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_১৭
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-“আই ওয়ান্ট মোর এন্ড মোর বেবি সাহিত্য বলে শিক্ষা লাজুক হেসে সাহিত্যের কপালে চুমু দিয়ে দেয়।”
-” সাহিত্য সবেমাত্র অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে এক লোকমা খাবার মুখে দিয়েছে এমন সেই সময় শিক্ষার এমন বেপরোয়া কথা আর তার কাজ দেখে সাহিত্যের গলায় ভাত আটকে যায়। সাহিত্যের অবস্থা বেগতিক দেখে শিক্ষা দৌড়ে এসে সাহিত্যের পিঠে দড়াম দড়াম করে কিল বসিয়ে দিয়ে বলে,বালাই ষাট বালাই ষাট আমার স্বামীর থেকে সব আপদ দূর হয়ে যাক।”
-” তুই যেভাবে কিল বসিয়ে দিলি মনে হচ্ছে আপদ তাড়াতে নয়,আপদ ডেকে আনতে চায়ছিস। হাত তো নয় , যেন হাতুড়ি। মেয়েদের হাত হবে তুলার মতো।না জানি ঐ বাচ্চু বিল্লার কি অবস্থা হয়েছিলো তোর হাতের মা’র খেয়ে।”
-” দেখতে হবে না বউ টা কার? যেমন বর তেমন বউ। একদম পারফেক্ট কাপল।এখন গুটিকয়েক ছেলেমেয়ে হলেই আমাদের সংসার টা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।আমি ঠিক করে নিয়েছি আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে ও দেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত করবো। একটা হবে পুলিশ,একটা সিআইডি,একটা সেনাবাহিনী ,একটা নৌবাহিনী,একটা বিমান বাহিনী,একটা …
-” আবারো ছেলেমেয়ে? হঠাৎ ছেলেমেয়ের ভূত চেপেছে কেন তোর মাথায়? খুব তো বলিস আপনার প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নেই, ইন্টারেস্ট নেই । কিন্তু হঠাৎ করে তোর আমার প্রতি এতো ইন্টারেস্ট উদয় হলো যে একেবারে ছেলেমেয়ে পর্যন্ত পৌঁছে গেছিস। বাহ্ শিক্ষা বাহ্।”
-” আমি এতো কিছু শুনতে চাইছি না। আমার বেবি লাগবে মানে লাগবে ব্যাস বলে শিক্ষা ফুলদানির মধ্যে থেকে ক্যামেরা অন করা ফোন টা বের করে নিয়ে এলো।যা দেখে সাহিত্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে শিক্ষা? নিজেদের পার্সোনাল কথাবার্তা ভিডিও করে রেখেছিস তুই? ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুই আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিবি।”
-” হ্যাঁ আমাদের কথোপকথন ভিডিও করেছি।তবে সেটা বাইরের মানুষ কে দেখানোর জন্য না। জাকিয়া বুড়ির জন্য।এই ভিডিও তাকে না দেখালে সে কিছুতেয় বিশ্বাস করবে না যে আমি আপনাকে বাচ্চার ব্যাপারে কিছু বলেছি।ম’রা’র নাটক আপনার মতো নিরামিষের সাথে বিয়ে দিয়েছে এখন আবার ম’রা’র নাটক শুরু করছে ছেলেমেয়ের জন্য।”
-” সাহিত্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই জাকিয়া জেসমিন সেখানে উপস্থিত হয়। জাকিয়া জেসমিন কে দেখে সাহিত্য বললো, তুমি এখনো ঘুমোতে যাও নি দাদু? রাত এগারোটা বাজে।এখনো না ঘুমিয়ে টইটই করে বেড়াচ্ছো?”
-” আমি তোর অপেক্ষাতে ছিলাম দাদুভাই। তুই সকাল সকাল অফিস চলে যাস । আবার অনেক রাত করে ফিরিস। আমার কথা একটু ও মনে পড়ে না তোর?।এখন তো আবার সুন্দরী বউ পেয়েছিস।বউ থাকতে এই বুড়ির দিকে নজর দেওয়ার সময় আছে নাকি তোর?তাই তো আজ রাত জেগে বসে রয়েছি তোর সাথে কথা বলার জন্য।”
-” সাহিত্য জাকিয়া কে জড়িয়ে ধরে বললো, একটা কেস নিয়ে ফেঁসে গিয়েছি। কাজের প্রচুর প্রেশার রয়েছে।আমি কথা দিচ্ছি দাদু এই কেসের ইনভেস্টিগেশন শেষ হলে আমি তোমাকে নিয়ে ড্রিম পার্কে ঘুরতে যাবো।”
-” দেখ দাদুভাই ইদানিং আমার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না।কখন কি হবে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ জানে না। এখন আমারো তো একটু শখ আহ্লাদ জাগে পুতি পুতনির মুখ দেখতে। তাদের মুখে বড় মা ডাক শুনতে। কিন্তু আমার শখ আহ্লাদের দাম কে দিবে? আমি তো অপ্রয়োজনীয় হয়ে গিয়েছি।ভাবছি খোকা কে বলবো আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে।বাকি জীবন টা আমি বৃদ্ধাশ্রমে কাটিয়ে দিবো বলে হু হু করে কেঁদে উঠলো জাকিয়া জেসমিন।”
-” আহ্ দাদু! ছেলেমানুষী কেন করছো তুমি? আমরা কখনো বলেছি তুমি অপ্রয়োজনীয় হয়ে গিয়েছো। তোমার ছেলের কিছু কম নেই যাতে করে তোমাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে।আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসি। শুধু মাত্র তোমার কথায় আমি শিক্ষা কে বিয়ে করেছি।যাতে তুমি কষ্ট না পাও।”
-” এবার আমার কথাতেই পুতি পুতনির মুখ দেখা দাদুভাই। তবেই তো বুঝবো তুই আমাকে কত্তো ভালোবাসিস?”
-” লিসেন দাদুভাই ছেলেমেয়ে কোনো হাতের মোয়া না যে যখন চায়বে তখন দিয়ে দিবো। ছেলেমেয়ে আল্লাহর দান। আল্লাহ যখন চান তখন ঠিক দেখতে পাবে। এখন যাও তো অনেক রাত হয়েছে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। গুড নাইট।”
-“যাচ্ছি তবে বিষয়টা মাথায় রাখিস।এমন যেন না হয় যে আমি ম’রা’র পরে আফসোস করলি বলে জাকিয়া জেসমিন রুম থেকে বেরিয়ে এলো। জাকিয়া জেসমিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে শিক্ষা বললো,বলি কি বয়স তো আর কম হচ্ছে না আপনার।দিন দিন বুড়ো হচ্ছেন,ভুরি বাড়ছে। আমার মনে হয় না জাকিয়া বুড়ি খুব একটা খারাপ কথা বলেছে।এখন যদি আমরা বাচ্চাকাচ্চার প্ল্যান না করি তাহলে বুড়ো …. বাকিটা বলার আগেই সাহিত্য শিক্ষা কে রুমের বাইরে বের করে দিয়ে বললো, আমাকে মাপ কর বইন ।”
-” এইভাবে বোন বলবেন না প্লিজ।আমি আপনার বউ লাগি , বোন না।”
-“মনে হয় ঐ বুড়ি তোর খাবারে নেশা জাতীয় কিছু মিশিয়ে দিয়েছে।যার জন্য তুই নির্লজ্জের মতো উল্টো পাল্টা কথা বলছিস।এখন যা বুড়ির রুমে গিয়ে দুইজনে বসে বসে বাচ্চাকাচ্চার প্ল্যান কর বলে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো সাহিত্য।”
-” শিক্ষা মুচকি হেসে বললো, যতোই তুমি দরজা বন্ধ করে দাও ,আমি তো ঠিকই তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোবো।হা হা হা।”
___________________________________
-” কি হয়েছে আপু? এতো জরুরী তলব করলে যে? তোমার ফোন পেয়ে আমি ক্লাস না করে সোজা থানায় চলে এসেছি।এখন তাড়াতাড়ি বলো কি হয়েছে। আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী মিতু ঠিক আছে তো ? যার সূত্র ধরে তোমাকে আমি চিনেছি।”
-” হ্যাঁ রে বাবা তোর মিতু ঠিক আছে।”
-” তাহলে আমাকে ডাকলে কেন?”
-” তোকে চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াবো তাই।”
-” আরে আপু ফাজলামি করো না। আমি হিসাববিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাস বাদ দিয়ে তোমার ডাকে ছুটে এসেছি।আর তুমি আসল কারণ না বলে আমার সাথে মজা করছো? তুমি বলবে নাকি আমি চলে যাবো?”
-” আরে বাবা বলছি তো।তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।তোর অনেক ভালো লাগবে সেখানে গেলে।”
-” কোথায় যাবে আপু?”
-” আগে চল তো। তারপর না হয় নিজে চোখে দেখিস।”
-” ঠিক আছে চলো।”
___________________________________
-” এসিপি স্যার আপনার কথা মতো প্রেস , মিডিয়া , পত্রিকা সব জায়গায় পূর্বের এসিপি রায়হান মীরের মেয়ে উষ্ণতা মীরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে এমন টা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো এই খবর টা ব্রেকিং নিউজে চলে আসবে। আর আমাদের প্ল্যান ও সাকসেসফুল হবে।”
-” আমি ও এটাই চাই। যতো তাড়াতাড়ি এমন খবর খু’নির কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে,আমরা ততো তাড়াতাড়ি তাকে ধরতে পারবো। এবার জমবে আসল মজা।সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে নিজে সাপুড়ের হাতে ধরা দিবে।’
-” কিন্তু স্যার ঐ মেয়েটা?যার কথা গতকাল বলেছিলেন সে তো এখনো এলো না চিন্তিত হয়ে বললো সাহিত্য।”
-” এসিপি সাইফুজ্জামান কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েলী কণ্ঠে ভেসে আসে,আসবো স্যার।”
-” আরে নিতু! আসো আসো আমরা সবাই তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু তুমি একা কেন? সেই মেয়েটা কোথায়? যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।”
-” ও বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।এক মিনিট স্যার। আমি ওকে নিয়ে আসছি বলে নিতু বাইরে এসে একটা মেয়ে কে ভেতরে নিয়ে যায়।যাকে দেখে উপস্থিত সবাই অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।