“শে*য়া*লে*র কাছে মু*র*গি বা*গ দেবো?”
কথাটা শোনামাত্র সেখানে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে গেলো।মেয়ের খালাতো বোনের মুখে এমন এক কথা শুনে রীতিমতো চমকে গেলো বরপক্ষের সবাই।ছেলের ছোট ভাই সামনে এসে বললো,
“এ কথা কেনো বলছেন আপু?”
“কারণ ঐ ছেলের কাছে আমার বোন কখনোই সুখে থাকবেনা।”
মেয়েটার খালা সামনে এসে বললেন,
“কিসব বলছিস?ছেলে নামকরা ডাক্তার।তার কাছে অমৃতা কেনো ভালো থাকবেনা?”
“ডাক্তার হলেই যে ছেলেও ভালোই হবে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত খালামনি?”
মেয়েটার মা মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দাতে দাত চেপে বলছেন,
“এসব কি চাঁদ?বিয়ের এমন ভরা মজলিশে কী তা*মা*শা শুরু করেছিস?”
“তোমরা কি করে অমির বিয়ে এই লোকের সাথে দিতে চাচ্ছো আম্মু?”
চাঁদের খালা সামনে এসে বললেন,
“এগুলো কী বলছিস চাঁদ?কেনো এমন করছিস?ছেলেতে সমস্যা কী?আর সমস্যা থাকলেও আগে কেনো বলিস নি?বিয়ের দিন এসে এমন করছিস কেনো?”
“আগে বলবো কী করে খালামনি?আমি তো আজ ই তাকে দেখলাম!”
“আজ দেখে আজ ই কি করে কারো নামে এসব বলতে পারিস তুই?”
“পারি কারন!…..”
বাকিটুকু আর বলতে পারলোনা চাঁদ।থেমে যেতেই তার খালা তাকে আবারও বললেন,
“কারন?”
“অতো কিছু আমি বলতে পারবোনা।আমি শুধু এইটুকু জানি যে আমার বোনের বিয়ে আমি তার সাথে দেবোনা ব্যাস!”
চাঁদের বাবা বললেন,
“ছেলের সম্পর্কে আমরা সব জেনেশুনেই বিয়েটা ঠিক করেছি চাঁদ”
“কী জেনেছো আব্বু?তোমরা কিছুই জানোনা।জানলে কখনোই এমনটা করতে না।অন্তত আমায় জানাতে পারতে”
চাঁদের মা বললেন,
“তোকেতো সবই বলেছিলাম।ছেলে ঢাকার নামকরা ডাক্তার।দেখতে শুনতেও বেশ।বাবা ব্যবসায়ী।পরিবারের সবাই ভালো।শুধু একটা ছোট ভাই,মা আর বাবা।আর এই ছেলে যে যেকোনো মেয়ের জন্যই পার্ফেক্ট তা সচক্ষে না দেখলে আমি বিশ্বাস ই করতে পারতাম না”
“সবই বলেছো তবে ছেলের নাম কেনো বলোনি?”
“ফোনে বলেছিলাম আমি”
“বলেছিলে?”
ছেলের ফুপি বিরক্ত হয়ে সামনে এসে বললেন,
“আমার ভাতিজার সম্পর্কে আর একটাও বা*জে কথা শুনবোনা মেয়ে।কী শুরু করেছো?আর কী ই বুঝাতে চাচ্ছো?আমাদের ছেলেতে সমস্যা কী?আর এমনও নয় যে তোমার বোন কোনো হুরপরী।যার সাথে বিয়ে না হলে আমাদের ছেলে ম*রে যাবে!”
চাঁদ মহিলাটার সামনে এসে আস্তেসুরে বললো,
“দেখুন ফুপ…আন্টি আমি জানি কোনো ছেলেই কোনো মা বা পরিবারের কাছে খারাপ হয়না।আর আমি বলছিওনা আপনাদের ছেলে খারাপ।তবে আমি চাইনা আমার বোনের আপনাদের ছেলের সাথে বিয়ে হোক!সে বাকি অন্য যেই মেয়ের সাথেই বিয়ে দিন না কেনো আমার কোনো আ*প*ত্তি নেই”
মহিলা গ*র্জে উঠে বললেন,
“তোমার আ*প*ত্তি তে আমাদের বয়েই গেছে?”
চাঁদের কিছু বলার আগেই ছেলে সামনে এসে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“ফুপি সিনক্রিয়েট করছো কেনো?”
“আমি সিনক্রিয়েট করছি?আর এই মেয়েটা কী করছে?”
“তুমি প্লিজ হাইপার হয়োনা।তার যদি এতোই সমস্যা হয় আমায় নিয়ে আমি বিয়েটা করবোনা ইটস ওকে।কিন্তু কী সমস্যা সেটা তাকে অবশ্যই বলতে হবে”
“আমি কাউকে কৈ*ফি*য়*ত দিতে বাধ্য নই!”
চাঁদের খালা চাঁদকে টে*নে স্টেজ থেকে নামিয়ে ক্রো*ধে ফে*টে পড়ে বললেন,
“অনেক হয়েছে চাঁদ অনেক!আমার মেয়ের এমন ভালো পাত্র জুটেছে বলে তুই হিংসে করে এমনটা কি করে করছিস আমি কল্পনাও করতে পারছিনা!”
চাঁদ এরূপ বাক্যের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।তার কান দিয়ে যেনো ধো*য়া বেরুচ্ছে।চোখ জ্বা*লা*পো*ড়া করছে হঠাৎ করেই।দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে তার।স্ত*ব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে।নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা যে তার খালামনি তাকে এমন কিছু আদৌ বলতে পারেন?খালার দিকে তাকাতে দেখতে পায় তার চোখও পানিতে টইটম্বুর!দৃষ্টি নত করে আটকে আটকে বলছেন,
“তুই প্লিজ আর কো…কোনো তা*মা*শা করিস না চাঁদ।বিয়েটা হতে দে!নাহলে আমার মেয়ে..মেয়েটার সম্মান ধু*লি*সা*ৎ হয়ে যাবে যে!”
বলেই হাত জোর করলেন চাঁদের সামনে।চাঁদ সাথে সাথে খালার হাত ধরে ফেলে বলে,
“আম…আমি দুঃখিত খালামনি”
বলেই সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসে।পিছু নেয় তার খালাতো বোন অমৃতাও।অমৃতাকে সকলে ডাকলেও সেদিকে ভ্রু*ক্ষে*প না করে চাঁদ কোথায় গেলো সেদিকে যেতে লাগে সে।
কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা ছেয়ে যেতেই ছেলের মা অমৃতার মাকে বললেন,
“বেয়াইন সাহেবা মেয়েকে আনুন।বিয়েটা পড়িয়ে নিয়ে যাই।যেতেওতো প্রায় পুরোটা দিন লেগে যাবে।এমনিতেও অনেক সময় নষ্ট হলো।”
“জ্বি…জ্বি বেয়াইন।আনছি।শর্মিতা যা অমৃতাকে নিয়ে আয়”
“ঠিক আছে মা”
প্রায় মিনিট বিশেক হয়ে এলো অথচ শর্মিতা এখনো আসছেনা দেখে অমৃতার মা মেয়েদের দেখতে গেলেন।তারও আসার নাম-গন্ধ নেই।প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে এলো কেউই আসছেনা দেখে বিরক্ত হয়ে ছেলের চাচি বললেন,
“কি সমস্যা?কেউ আসছেনা কেনো?নাকি বিয়েটা দিতে চাচ্ছেন না আপনারা?”
চাঁদের মা বললেন,
“না না বেয়াইন।এমনটা না।আমি গিয়ে দেখছি হলোটা কী!”
ছেলের ফুপি বললেন,
“হ্যা আপনিও যান আর আসার প্রয়োজন ই নেই।সেখানেই থেকে যেয়েন আপনার বোন আর বোনঝিদের মতো!”
অ*প*মা*নি*ত হয়ে চুপ করে গেলেন তিনি।কোনো প্রতিবাদ করতে পারলেন না কেনোনা দো*ষ টা আজ তার মেয়ের।
চাঁদের দোষের জন্যই আজ তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো।এমনটা না হলেওতো পারতো?সেতো চায়নি এভাবে কিছু করতে?তারও তো ইচ্ছে ছিলো খুব ধুমধাম করে বিয়ে করবে।বর্তমানে তার পাশে যেই লোকটা বসে আছে এই মানবকেইতো সে তার পাশে সর্বদা কল্পনা করেছে।তবে আজ কেনো এতোটা কাছে থেকেও এতো দূরত্ব?কেনোই বা ভাগ্য তার সাথে এতোটা নি*র্ম*ম হলো?কেনো সবটা সুন্দরভাবে হতে পারলোনা?সে ভাবছে সে যদি ওভাবে তাকে অ*প*মা*ন না করতো আজ তার পাশে বউবেশে তাকে এভাবে বসে থাকতে হতোনা।যার থেকে দূরে থাকার জন্য বছরের পর বছর দূরত্বকে বাড়িয়েছিলো কয়েক শত কিলোমিটার অব্দি!তারই কাছে নাটকীয়ভাবে ভাগ্য কেনোই বা তাকে ফিরিয়ে দিলো?দিলো তো দিলো দুজনের মনে কেনো এতো দূরত্ব তবে?কেনোইবা দুজনের সম্পর্ক সা*পে-নে*উ*লে*র চাইতেও বি*ষা*ক্ত?যারা একে অপরের ছায়াটুকুও মারাতে চায়না কি করেইবা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনকে সুদৃঢ় করবে তারা?
চাঁদের ভাবনার মাঝে ছে*দ ঘটে ছেলের ছোট ভাইয়ের কন্ঠস্বরে,
“ভাবি তোমাকে কিন্তু আমার সেই পছন্দ হয়েছে!মানে অমৃতা আপুও ভালোই ছিলো তবে তুমি বেস্ট!তোমাকে আমার জাস্ট অসাধারণ লেগেছে।ভাই তোমায় বিয়ে না করলে আমি ই প্রস্তাব দিয়ে দিতাম।তোমার উপর কিন্তু ক্রাশ খেয়েছি”
চাঁদ সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলে,
“আর তুমি কী করে ভাবলে আমি আমার জুনিয়রকে বিয়ে করতে রাজি হতাম?”
“জুনিয়র মানে?”
“মানে হলো আমি তোমার সিনিয়র”
“দেখে কিন্তু তোমাকে আমার ছোটই লাগে ভাবি!”
“লাগতেই পারে তবে আমি তোমার বড় ই”
“কিসে পড়ো তুমি?”
“ইন্টার্নি করছি”
চোখ বড় বড় করে ছেলের ভাই বোনেরা বললো,
“হোয়াট!”
ছেলের ফুপাতো বোন বললো,
“ভাবি তুমিও ডাক্তার?”
“এখনো হইনি”
“হবেতো”
“আল্লাহ চাইলে অবশ্যই”
ছেলের ভাই বললো,
“ও মাই গড!শি*ট!এক ব্যাচ সিনিয়র হয়ে গেলে।ব্যাপার না।সিনিয়র ক্রাশ লাইফে একটা থাকতে হয়।আমার ক্রাশ নাহয় আমার ভাবি ই হলো!কি বলিস তোরা?”
হঠাৎ করেই ছেলের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“তোদের ভাবি মেডি লাইফে সিনিয়র,জুনিয়র,সেম ক্লাস প্রায় সবারই ক্রাশ হয়ে এসেছে।কারো কারোতো আবার ডেডিকেটেড লাভ!”
শেষের কথাটা যে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে বলা হয়েছে এটা চাঁদ ব্যতীত আর কেউই বুঝতে সক্ষম হলোনা।
ছেলের ভাই বললো,
“তার মানে তোরা সেম মেডি?কিন্তু কিভাবে?”
আঁড়চোখে চাঁদের দিকে তাকালো সে।তাকিয়ে থেকেই বললো,
“সে বিরাট লম্বা কাহিনী!”
To be continued…
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
#সূচনা_পর্ব