#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৫৫.
সূর্যের তেজ কমেছে অনেকখানি।নীলচে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে শুভ্র মেঘেদের ভেলা।বৃষ্টি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই,না আছে তেজী উষ্ণতা।মৃদুমন্দ বাতাস বইছে চারিপাশে।গাছের পাতাগুলো কিঞ্চিৎ নড়েচড়ে উঠছে।মাঝেমাঝে নীলাভ গগণে দেখা মিলছে সূর্যের হালকা সোনালি কিরণের রেখাও।যা স্পষ্টত চাঁদের চশমা বরাবর পড়ায় প্রতিফলিত হচ্ছে উদ্যান মাঠের ঘাসগুলোতে।বর্তমানে চাঁদ আর অরণ বসে আছে উদ্যানের ভেতরে একপাশের মাঠের দিকটায়।তাদের সাথে আছে আহিনও।তবে তার মুখশ্রী স্পষ্ট নয়।সে পরিধান করে আছে কালো রঙের এক পাতলা মাস্ক।গলা পরিষ্কার করে সে ই শুরু করে,
“হঠাৎ দেখা করার কথা বললে যে?”
লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদ উত্তর দেয়,
“জ্বি”
আহিনের প্রশ্ন,
“অরণও আছে।কোনো গুরুগম্ভীর বিষয় কিনা?”
চাঁদ আবারও জবাব দেয়,
“হ্যা অনেকটা তেমনই”
“তা অরণ তুমিই বলবে নাকি চাঁদ থেকেই শুনবো?”
অরণ জবাব দেয়,
“চাঁদই বলুক”
“বলছি তবে।আসলে আহিন আপনার একটা হেল্পের খুব দরকার ছিলো”
“সেটাতো শুনেছিই কী হেল্প এবং কাহিনী কী তা বললে উপকৃত হতাম”
“হ্যা বলছি।আপনায় বলেছিলাম না?আপনার বাবার কথা?আপনি কাইন্ডলি ওনাকে এখন কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারবেন?”
ভ্রুযুগোল কুঞ্চিত করে আহিন বলে,
“এখন?কিন্তু কেনো?”
অসহায় দৃষ্টি দিয়ে চাঁদ বলে,
“প্লিজ?”
“আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু কল দিয়ে বলবো কী?”
অরণ বলে,
“তুমি আংকেল কে বলবে আমাদের মেডিকেলের ভেতরের বাগান টা তোমার ভালো লেগেছে তুমি ঘুরে দেখতে চাও কোনো সুযোগ হবে কিনা?”
“কিন্তু মেডিকেলের বাগানে কী আছে অরণ?”
“কিছুতো অবশ্যই আছে।আমাদের উপর ভরসা রাখো আহিন,খারাপ কিছুই করবোনা”
“আহা!তা জানি।তবে বাগানে আমি কেনো যাবো বুঝছি না”
চাঁদ প্রতিত্তোর করে,
“আপনি না গেলে আমরাতো যেতে পারবোনা।আর আপনিতো একা ভেতরে যাবেন না।ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকে থাকবে,থাকবো আমি আর অরণও”
“তাহলেতো তোমরা এমনিতেই যেতে পারো।তোমাদেরই তো মেডিকেল”
চাঁদ বলে,
“তা পারি তবে পুরোটাতো ঘুরে দেখতে পারবোনা।এজন্যই আপনাকে বলা”
“কিন্তু…”
আহিনের কিছু বলার পূর্বে অরণ বলে,
“প্লিজ আহিন আংকেল কে কল দিয়ে বিষয়টা বলো।আর হ্যা আমার অথবা চাঁদের কথা বলোও না কিছু”
“বলবোনা তবে এখনই কি করতে হবে?”
“হ্যা আর একটু প্লিজ স্পিকারে রেখো”
কপাল কুচকে নিয়ে অরণের পানে চেয়ে আহিন বলে,
“ঠিক আছে”
অতঃপর তার বাবা অধিরাজ মোহাম্মদ শেখের নম্বরে ডায়াল করে ফোন স্পিকারে রাখে সে।দু’বার রিং হতেই কল রিসিভ করেন তিনি আর বলেন,
“হ্যালো”
“হ্যালো বাবা?”
“হ্যা বলো”
“কোথায় আছো তুমি?”
“তোমার বোনের সাথে আছি।একটু পরে কল দেই?”
“কী!অহনা এসেছে?ও বাংলাদেশে কবে এসেছে?আমার সাথে দেখা করলোনা?এবারও কি না দেখা করেই চলে যাবে নাকি?দেখি ওর কাছে ফোন দাওতো”
“কিরে শুনলাম তুই নাকি কোন মেয়ের জন্য দেবদাস হয়ে বসে আছিস”
থতমত খেয়ে চাঁদের পানে চেয়ে আহিন খানিকটা কেশে বলে,
“সেসব রাখ।তুই বল বিডিতে এসেছিস দেখা না করে চলে যাবি?একবারও কিন্তু দেখা করিস না আমার সাথে।সেই বারো বছর আগে তোকে দেখেছি আমি”
আহিনের বোন অহনা খানিকটা হেসে বলে,
“চিল ম্যান!দেখাসাক্ষাৎ তো হতে থাকবে।অ্যান্ড আই গেস এবারও তোর সাথে আমার দেখা হচ্ছেনা।আয় উইল গো সুন”
“অহনা!”
“ফুলিশ আহিন!রাজনীতি করছিস অথচ নিজের প্রফিট দেখছিস না তুই?এভাবে জনসেবা করলে কি আদোতে তুই তোর দাপট দেখাতে পারবি?”
“লোকে আমায় ভালোবাসে আমিও বাসি।আর আমার বিশ্বাস ভালোবাসার মাধ্যমেই তাদের মনে জয় করবো আমি”
“অথচ সেই মেয়ের মন জয় করতে পারিস নি কেনো?”
প্রসঙ্গ এড়াতে আহিন বলে,
“বাবাকে ফোন দে।কথা আছে তার সাথে আমার”
“বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছিস?ওয়েল,গুড।নাও ড্যাড কথা বলো তোমার মানবসেবক ছেলের সাথে”
ফোন কানে লাগিয়েই অধিরাজ শেখ বলেন,
“যা বলবে তাড়াতাড়ি বলবে আমার কাজ আছে”
“আসলে বাবা ডিএমসিতে যেই বাগান টা আছে না?সেখানে গিয়েছিলাম”
অধিরাজ শেখ চেচিয়ে বলেন,
“কী!ওখানে গিয়েছো!কেনো গিয়েছো?”
কপাল কুচকে আহিন বলে,
“চেচাচ্ছো কেনো?বাগানটা ভালো লেগেছে তাই গিয়েছি”
“কাকে বলে গিয়েছো?”
“আমার বাবা যেখানে সভাপতি আমি নেক্সট কাউন্সিলর পদে দাড়াবো সেখানে ঐ বাগানে যেতে আমার পার্মিশন নিতে হবে বাবা?সিরিয়াসলি?”
“না আমি সেভাবে বলিনি।ওখানে যাওয়ার বিশেষ কারণ?”
“আসলে চাচ্ছিলাম ওখানের ভিউ টা বেশ ভালোতো সেখানে একটা সমাবেশ ডাকাতাম।তাই ঘুরে দেখতে চাচ্ছিলাম পুরোটা।তোমার কি কোনো সমস্যা আছে?”
“কী!পুরোটা কেনো ঘুরতে চাচ্ছো?আর ঐ বাগানে সমাবেশ ডাকানোর প্রয়োজন টা কী?তুমি যেখানে সেখানে চাইলেই সমাবেশ হয়ে যাবে।ঐ বাগানের প্রতি আগ্রহ কেনো তোমার?”
“আমার তুলনায় তোমার আগ্রহ বেশি দেখছি বাবা”
ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে আহিনের বোনের,
“ড্যাডের মুখে মুখে কথা বলিস তুই আহিন?অভদ্র হয়ে গেছিস?”
“আমি অভদ্র হইনি।আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করছি।এখন বাবার ভালো না লাগলে ইটস ওকে।পড়ে থাকো তোমরা তোমাদের বাগান নিয়ে।ডিজগাস্টিং!”
বলেই কল কাটতে নিলে অধিরাজ শেখ বলেন,
“কল কাটবেনা।বলো কবে সমাবেশ করবে?”
“সমাবেশের আগে পুরোটা দেখতে চাই।কোন জায়গা পার্ফেক্ট হবে সেটা আমায় দেখতে হবে”
বলেই চাঁদের দিকে চোখের ইশারায় জানতে চায় কবে দেখতে যাবে তারা।চাঁদ আঙুলের ইশারায় আরও তিনদিন পরের কথা বুঝায়।ইশারায় ইশারায় কথা বলতে বলতে অধিরাজ শেখের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“কবে দেখতে চাচ্ছো?”
“এই তো বাবা তিনদিন পরই”
“সোমবারে?”
কথাটা শুনেই চাঁদের দিকে তাকাতে চাঁদ হ্যা বোধক মাথা নাড়ে।অতঃপর আহিন তার বাবাকে বলে,
“ইম….হ্যা সোমবারই”
“ঠিক আছে রাখছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অরণ আর চাঁদ লুকিয়ে চুরিয়ে কলেজে প্রবেশ করেছে।বর্তমানে তারা আছে দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসের পেছন দিকটায়।সেখানকার পাইপ বেয়ে দেয়াল টপকে ক্লাসের শেষ মাথায় আসতে হবে যেনো কেউ দেখতে না পায়।সেখানে দাড়িয়েই উপরের দিকে চেয়ে চাঁদ অরণকে বলে,
“আপনি আগে উঠুন তারপর আমি উঠছি”
অরণের অসহায় মুখভঙ্গি দেখে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে?”
“এসব কখনো করিনি আমি,পারিনা।তুমি কী করে উঠবে?”
খানিকটা হেসে চাঁদ বলে,
“স্কুল থেকে এমন কত পালিয়েছি!এগুলো কোনো ব্যাপার না।আমি আগে উঠছি।আমায় ফলো করে উঠবেন,বুঝেছেন?”
“আমি পড়ে যাবো চাঁদ।তুমি বরং এখান দিয়ে উঠো আমি সিড়ি বেয়ে উঠছি”
“আরে!সিড়ি দিয়ে কেউ দেখে ফেলবে।দারোয়ান মামা আছেনা?এখান দিয়েই উঠা লাগবে।আপনি পারবেন চিন্তা করছেন কেনো?খুব সহজ।আমি যেভাবে উঠবো ঠিক সেভাবেই উঠবেন”
“ব্যথা পাবোতো”
কপাল কুচকে চাঁদ বলে,
“সেদিন লা*শ দেখে ভয় পাননি আজ ব্যথার ভয় পাচ্ছেন?”
চাঁদের ঠোটে আলতোভাবে হাত রেখে অরণ ফিসফিসায়,
“হিশ!আস্তে কথা বলো শুনে ফেলবে কেউ”
বলেই হাত সরিয়ে নেয় সে।হাত সরাতেই চাঁদ বলে,
“আচ্ছা এখন চলুন”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঘন্টা দুয়েক পরে অরণের বাসার গ্যারেজের সামনে অরণ তার গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ে।অতঃপর ভেতরটায় গিয়ে গাড়ি থেকে বের হয় অরণ আর চাঁদ।গাড়ির ডিকি হতে এক বস্তা বের করে কাধে তুলে নেয় অরণ।চাঁদকে ইশারায় তার পিছু আসতে বললে দুজনে হাটা ধরে সামনের দিকে।খানিকটা ভেতরে যেতেই একটা দরজা দেখতে পায় চাঁদ।অরণ সেটা খুলতে বললে চাঁদ তা খুলে ভেতরে ঢুকে।ভেতরে এসে দুজন ধরাধরি করে বস্তাটা নামায়।নামিয়েই বস্তা হতে একটা মেয়েকে বের করে তারা।অতঃপর অরণ গিয়ে দরজা আটকে দেয়।দরজা আটকাতেই চাঁদ মেয়েটার মুখে লাগানো কস্টেপ খুলে দিয়ে তার দিকে পানি এগিয়ে দেয়।মেয়েটাকে পানি খাইয়ে তার সামনে বসে চাঁদ,পাশে বসে অরণও।দুজনকে বসতে দেখেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে মেয়েটা বলে,
“চাঁদ আপু তুমি?আর ওনি ফাইনাল ইয়ারের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন ছিলো না?তোমরা আমায় এভাবে ধরে এনেছো কেনো?প্লিজ আমাকে যেতে দাও আপু”
চাঁদ তাকে আশ্বস্ত করে বলে,
“টেনশন নিওনা।আমরা তোমার কিছু করবোনা।শুধু কিছু জিনিস জানতে চাই।এবং সত্যিটাই জানতে চাই।হয়তো খারাপ কিছুই করবোনা তবে মিথ্যা বললে হতেও পারে তোমার সাথে খারাপ কিছু হয়ে গেলো?”
মেয়েটা ঢোক গিলে বলে,
“কী জানতে চাও?”
চাঁদ সোজাসাপটা বলে,
“ইনিয়ে বিনিয়ে কথা আমি পছন্দ করিনা।তাই সরাসরি জিজ্ঞেস করছি।আর মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেনা কারণ সত্যি ঘটনার অনেকাংশ আমরা জানি।সো যা বলবে সত্যিটাই বলবে বুঝেছো?”
“বু…বুঝেছি।বলো”
“আমার জানামতে যেদিন ফাইনাল ইয়ারের ফেয়ারওয়েল হলো তার আয়জনের জন্য এর আগের দিন আমিসহ আমার সাত ফ্রেন্ড কলেজে ছিলাম।এবং সেদিন তোমাদের সবাইকে চলে যেতে বলা হয়েছিলো।কিন্তু সেদিন তুমি যেতে পারোনি।কিডন্যা!পড হয়েছিলে এবং শুধু তুমি না তোমার ক্লাসের আরও একটা মেয়েসহ আমার এক ক্লাসমেটও”
অরণ খানিকটা কেশে বলে,
“আর তোমাদের রাখা হয়েছিলো মেডিকেলের ভেতরের বাগান টায়।ঠিক কিনা?”
মেয়েটা তোতলিয়ে বলে,
“তো….তো..তোমরা জানো কী করে?”
অরণের জবাব,
“আমরা আরও অনেককিছুই জানি।কিন্তু যেটা জানিনা সেটাই তোমার থেকে জানতে চাচ্ছি”
“কা….কী জানতে চাচ্ছেন ভাইয়া?”
চাঁদ বলে,
“আমাদের জানামতে যারাই গায়েব হয়েছে বেশিরভাগই রে!পড হয়েছে।সেই দরুন অনেকে সু!ই!সাই!ডও করেছে।তবে তোমাদের ব্যাপারে আমি জানিনা।সেদিন আমি শুধু কোনো কিছু পড়ার আওয়াজ শুনেছিলাম।তোমাদেরই যে ধ!রেবে!ধে নেওয়া হয়েছিলো তা জানি।তবে বাগানে নিয়ে কী করেছিলো?কিভাবে আবার ফেরত আসলে?নিয়েছিলোই যখন ফেরত পাঠালো কেনো?”
অরণের প্রশ্ন,
“মেয়েগুলোকে নিয়ে ওরা কী করেছে?আর কয়জন শামিল এসবে?কেনো করছে এসব?কারা করছে?”
আবারও চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“মাস্টারমাইন্ড কে তা কি জানো?”
ঘনঘন শ্বাস নিয়ে মেয়েটা বলে,
“মাস্টারমাইন্ড সম্পর্কে জানিনা।বা এসব কেনো করছে তাও জানিনা।তবে ওখানে কী করেছে সেটা বলতে পারি”
অরণ বলে,
“বলো”
চাঁদের বুকের ধুকপুকানি বেড়েছে।সেইসাথে চোখের সামনে আম্বিয়ার লা*শসহ সেদিনের সেই মেয়েটার আহাজারি কানে ভাসছে।তবে নিজেকে যথেষ্ট সামলে উৎসুক হয়ে আছে সবটা জানতে।
মেয়েটা ঢোক গিলে বলে,
“সেদিন সকালে যখন আসি হঠাৎ করেই বলা হয় আজ ক্লাস হবেনা,বাড়ি চলে যেতে।প্রথমে বুঝিনি তবে পরে বুঝেছিলাম এটা করা হয়েছিলো মেয়েদেরকে ধরে নেয়ার জন্য।ভীড়ের মাঝেই কে যেনো মুখ চে!পে ধরে আড়াল করে নিয়ে যায় আমায়।এরপর আর মনে নেই।পরে যখন চোখ খুলি দেখি কোনো জঙ্গলের ভেতরে আছি।কিন্তু আমি একা না আরও চার-পাঁচটা মেয়ে ছিলো।আমাদের বেঁ!ধে রাখা হয়েছিলো।তিনজন পুরুষও ছিলো”
মেয়েটা থামতেই অরণ বলে,
“কারা ছিলো?”
“সে আমি বলতে পারবোনা ভাইয়া”
চাঁদ গম্ভীরভাবে বলে,
“বলতে হবেনা।আমরা জানি।অনিন্দ্য স্যার যে মেয়েদের অ*পব্যবহার করেন তা জানি আমরা।আর সে যে ধ….ধ!র্ষ!ণেও শামিল আছেন তাও জানি”
মেয়েটার চোখে অশ্রুরা এসে ভীড় জমায়।সে নাক টেনে বলে,
“তাহলেতো জানোই।আমরা তখন চেচাতে গেলে আমাদের সামনে আমাদের সামনেই!……”
মেয়েটা ইতস্তত করছে দেখে চাঁদ বলে,
“বলো সমস্যা নেই।অরণ সবই জানে।তুমি দ্বিধাহীনভাবে বলো।বড় ভাইয়ের ন্যায় তোমার সাহায্য করবে”
মেয়েটা খানিকটা হেসে বলে,
“ধ!র্ষি!তাকে আর কীই বা সাহায্য করবে আপু?”
কপাল কুচকে চাঁদ বলে,
“তুমি!”
“হ্যা আপু।আমিও বাদ যাইনি।এমনকি কেউই বাদ যায়নি।যারা ফেরত এসেছে সবাই ই ধ!র্ষি!তা ট্যাগ লাগিয়েই এসেছে।ফেরত আসার যেমন কারণ আছে তেমনি আমাদের ফেরত পাঠানোরও কারণ আছে”
“সবটা বুঝিয়ে বলো”
“সবকিছু নিঁখুতভাবে বলতে পারবোনা আপু।বাধ্যবাধকতা আছে।পরিবারের ক্ষ*তি করতে পারবোনা যে!”
অরণ শান্তকন্ঠে মেয়েটাকে বলে,
“চিন্তা করোনা।যতটুকু বলা যায় ততটুকুই বলো।তবুও বলো”
“বলছি ভাইয়া।সেদিন আমাদের সামনেই আমাদের মনে ভয় ঢুকানোর জন্য অনিন্দ্য স্যার আর মাহতিম স্যার মিলে!একটা মেয়েকে…. একটা মেয়েকে…..আমাদের সামনেই…..আমাদের সামনেই ব….ব*স্ত্রহী*ন করে আপু!তারপর তারপর….”
অরণ কিছু বলতে নিলে চাঁদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“বুঝেছি।এরপর কী হয়েছে তা বলো”
“আমাদের সামনেই কাশেম মামা মেয়েটাকে!”
অরণের প্রশ্ন,
“আবার কী করেছে?”
“মেয়েটাকে মে!রে ফেলে”
বলেই লম্বা শ্বাস নেয় মেয়েটা।চাঁদ কপাল কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করে,
“কাশেম মামা কি ক্যান্টিনের কাশেম মামা?”
“হ্যা আপু”
“ওনি এতো নি!কৃ!ষ্ট!”
মেয়েটা হেসে বলে,
“নি!কৃ!ষ্টতার এখনো কিছুই শোনাইনি আপু”
চাঁদ বলে,
“বলো শুনছি”
“তুমি শুনে অবাক হবে।ফাইনাল ইয়ারের এক আপু লিডার এসবের।সেইসাথে মাহতিম স্যারের গার্লফ্রেন্ডও।নামটা যেনো কী!”
তৎক্ষনাৎ অরণ বলে,
“আম্বিয়া?”
“হ্যা হ্যা আম্বিয়া।আপুটা জানো আমাদের কী বলে?”
অরণ জিজ্ঞেস করে,
“কী বলে?”
“আমরা যেনো এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাই।এগুলোই নাকি আমাদের করতে হবে।তারা নাকি ট্রেনিং দিচ্ছে”
কপাল কুচকে চাঁদ বলে,
“বাগানেই এসব করা হয়?”
“না।বাগানের দিক দিয়ে একটা পেছন দিকে রাস্তা আছে।ওখান থেকে আজিমপুর যাওয়া যায়।আজিমপুরের কোথায় যেনো আমাদের আ*টকে রাখা হয়েছিলো।বাড়িটা বেশ বড়।কেউ থাকেনা।সেখানেই আমরা ছিলাম।শুধু আমরা না।পথ শিশু।ভিখারি মেয়ে,বড় ছোট সব মেয়েই ছিলো।এমনকি নয়-দশ বছরের বাচ্চা মেয়েদেরও বাদ দেয়নি আপু!”
“আজিমপুরের বিষয়টা তুমি বুঝলে কী করে?”
“একদিন জানালা দিয়ে লুকিয়ে বাইরে দেখেছিলাম।আমার বাসা আজিমপুরেই সেই দরুন এখানের সব চিনি।আজিমপুরেই ছিলাম অথচ দেখো নিজের বাসায় যেতে পারিনি!”
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটা।অরণ জিজ্ঞেস করে,
“তারপর কী হলো?তোমাদের দিয়ে করানোটা কী হয়েছে?”
“সেসব বলা আমার পক্ষে সম্ভব না ভাইয়া!আপনারা আর জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ”
“কিন্তু তোমরা ফেরত কেনো এসেছো?কেনো পাঠিয়েছে?”
“না এসেতো উপায় নেই ভাইয়া।আমাদের হু!মকি দেয়া হয়েছে যদি ফেরত এসে নতুন মেয়েদের নিজ ইচ্ছায় না নেই তবে আমাদের ফ্যামিলির ক্ষ*তি করবে।আমাদের পাঠানোর এটাই কারণ যাতে করে কেউ সন্দেহ না করে আর যেনো নতুন মেয়ে নিতে পারি আর নিজ ইচ্ছায় রোজ তাদের ওখানে গিয়ে…..”
বলতে বলতে থেমে যায় মেয়েটা।তা দেখে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“গিয়ে?”
“না আপু বলতে পারবোনা আমি!”
চাঁদ মেয়েটার হাতের বাধন খুলে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“বিশ্বাস করো আমায়।কাউকে কিচ্ছুটি বলবোনা।আমাদের তিনজনের মাঝেই থাকবে।তুমি বলো প্লিজ!জানাটা জরুরী”
“আমি বলতে পারবোনা আপু!”
অরণ গম্ভীরভাবে বলে,
“তুমি কি চাওনা আর কোনো মেয়ে সেই পথে যাওয়া থেকে বেঁচে যাক?একটা মেয়ের জীবন আর সম্ভ্রম বেঁচে যাক?কী?চাওনা তুমি?”
মেয়েটা চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলে,
“চাই ভাইয়া চাই!খুব করে চাই।তবে আমার পরিবার!”
অরণ ভরসা দিয়ে বলে,
“তোমার পরিবারের কিছু হবেনা।কেউ জানবেনা তোমার ব্যাপারে।আমরা কাউকে বলবোনা।তোমার থেকে এতোকিছু জেনেছি তাও কেউ কখনো জানবেনা।আমারও একটা ছোট বোন আছে।একদম তোমার মতো।আমি অবশ্যই চাইবোনা আমার বোনের মতোই নিষ্পাপ কোনো মেয়ের কিছু হোক!”
মেয়েটা ঢোক গিলে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে,
“আমাদের সন্ধ্যার দিকে সেখানটায় যেতে হয় ভাইয়া।কলেজ শেষ করে আমরা সেখানেই যাই।আর কিছু বলতে পারবোনা।প্লিজ জিজ্ঞেস করবেন না,প্লিজ!দোহাই লাগে!”
চাঁদ বলে,
“শুধু শেষ একটা প্রশ্ন”
“বলো”
“মাহতিম স্যার,অনিন্দ্য স্যার আর কাশেম মামা বাদে আর কে কে আছে এসবে?”
“সেটা আমি বলতে পারবোনা আপু।আমায় মাফ করে দাও প্লিজ!”
“তুমি জানো?চেনো তাদের?”
“বেশি কিছু বলতে পারবোনা তবে এটা বলতে পারি যে এটায় কয়েকজন না অনেকজন শামিল আর যে মাস্টারমাইন্ড সে খুব প্রভাবশালী”
“মাস্টারমাইন্ড কে দেখেছো?চেনো?”
“না কখনো আমাদের সামনে আসেনা।তবে আম্বিয়া আপুর সাথে তার বেশ ঘনিষ্ঠতা।সম্ভবত আম্বিয়া আপু মাস্টারমাইন্ডের কিছু হয়”
“প্রেমিকা টাইপ?”
“না তেমন না।এমনকিছু দেখিনি,শুনিওনি।আম্বিয়া আপুতো মাহতিম স্যারের গার্লফ্রেন্ড।একবার তো আমাদের সামনেই তারা!”
“কী?”
“কিছুনা।আমি জানিনা তোমরা এসব কেনো জানতে চেয়েছো,জেনে কী ই বা করবে তবে ভাইয়া,আপু প্লিজ তোমরা কাউকে কিছু বলোওনা।আমার নামটা কখনোই নিও না প্লিজ।দোহাই তোমাদের!আমার উপর রহম করোও।যদি আমার ব্যাপারে জেনে যায় আমার ছোট বোনটাকে তারা ছাড়বেনা গো!”
চাঁদ মেয়েটার বাহুতে হাত রেখে বলে,
“ভরসা রাখো কেউ জানবেনা।তবে আমাদের ব্যাপারেও যেনো ঘুনাক্ষরে কেউ টের না পায়।যদি জানে বুঝে নেবো তুমি বলেছো আর তুমি অবশ্যই চাইবে না তোমার জন্য আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট হোক?”
“না আপু কখনোই না।আমি চাইনা তোমার অথবা ভাইয়ার কোনো সমস্যা হোক।কেউ এসব জানবেনা।আমাদের যে দেখা হয়েছে সেটাই আমি এখান থেকে গেলে ভুলে যাবো।তোমরাও মনে রাখবেনা কিছু”
অরণ লম্বা শ্বাস ফেলে বলে,
“চিন্তা করোনা।দ্যা চ্যাপ্টার ইজ ক্লোজড হেয়ার”
চাঁদ মেয়েটাকে ছাড়াতে ছাড়াতে অরণকে বলে,
“লিমাকে একটু ফ্রেশ হতে দিলে ভালো হয়না অরণ?”
“না না আপু।আমায় ছেড়ে দাও আমি চলে যাবো এভাবেই”
“এভাবে গেলে সন্দেহ করবে।আর তুমি ই তো বললে কলেজ থেকে সেখানে যাও।তাহলে বুঝে যাবেনা?তোমার কিছু হয়েছে?আর নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখবে।কাউকে বুঝতে দেবেনা তোমার মনে লুকানো কথা অন্যরা জানে”
“না আপু বুঝবেনা কেউ”
“তাহলে চলো আমার সাথে?”
“ঠিক আছে চলো”
চাঁদ অরণকে বলে,
“অরণ?”
“হ্যা চলো।আমার রুমে নিয়ে যাই সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে তারপর যাবে”
“ঠিক আছে চলুন”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
লিমা নামক মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে হলরুমে বসে থাকা অরণের কাছে এসে চাঁদ বলে,
“লিমা গেছে আমারও যাওয়া উচিত অরণ”
“চলো দিয়ে আসি”
“সমস্যা নেই যেতে পারবো আমি”
“সমস্যা তোমার নাইবা থাকতে পারে তবে আমার আছে।আমিই দিয়ে আসবো তবে কিছুইতো খেলেনা দাড়াও আমি আসছি”
“না না কিছু লাগবেনা অরণ।আপনি বরং…..”
চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই অরণের বোন অরিন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে হলরুমে আসতে আসতে বলে,
“মেয়েটা কে রে ভাই?আমার হবু ভাবি নাকি হা?”
নাকমুখ কুচকে বোনের দিকে চেয়ে অরণ বলে,
“থা!প্প!ড় দেবো বেয়াদব কোথাকার”
“মাহ কী করলাম আমি?”
চাঁদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
“কী করছেন অরণ?এভাবে কেনো বলছেন?আপনার বোন হয় কি?”
“হ্যা”
“দেখুন আপু আপনার কোথাও সমস্যা হচ্ছে।অরণ আমার সিনিয়র ভাই হয়”
অরণ বলে,
“অরিন তোমার ছোটই চাঁদ”
অরণের মুখে ‘চাঁদ’ শুনে মেয়েটা জিজ্ঞেস করে,
“আপু আপনার নাম কি চাঁদ?”
“হ্যা”
“আপনি কি ঢামেকের?”
“হ্যা,এখনই না বললাম অরণের জুনিয়র আমি?”
অরণের পানে চেয়ে অরিন বলে,
“এই চাঁদই কি?”
অরণ গম্ভীরভাবে বলে,
“হিম”
কথাটা শোনামাত্র অরিন চাঁদের সামনে এসে চাঁদের দিকে পলকহীন তাকিয়ে বলে,
“আপনার সাথে সত্যিই কারো তুলনা হয়না আপু।আপনি সাধারণের মাঝেও অসাধারণ একজন!”
অরিনের গালে হাত রেখে চাঁদ বলে,
“তুমিও ভারী মিষ্টি মেয়ে অরিন”
“তবে আপনার সামনে কেবলই ফিকে পড়ে যাওয়া সামান্য এক মিষ্টি মেয়ে বোধহয়।আর আপনি হলেন অমৃতরূপী অসাধারণ এক নারী।এজন্যই বুঝি প্র…..”
অরিনকে থামিয়ে দিয়ে অরণ বলে,
“স্টপ অরিন।যা চাঁদের জন্য শরবত করে আন”
“যাচ্ছি ভাইয়া”
“না না অরিন যেতে হবেনা।আমি এখন বাসায় যাবো”
“কিন্তু আপু….”
“অন্য একদিন হা?”
“ঠিক আছে।তবে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম আপু”
“হ্যা অবশ্যই”
“আপনি কি খুব দুঃসাহসী?”
“মানে?”
“কেউ একজন বলেছিলো আপনি নাকি ভীষণ দুঃসাহসী এক নারী।আপনার মাঝে যেই দুঃসাহসিকতা আছে অন্য কারো মাঝে তা নেই।কেবল আপনাতেই নাকি সেই দুঃসাহসিকতা বিদ্যমান”
“কে বলেছে?”
“কোনো…”
অরিনের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই অরণ বলে,
“চলো চাঁদ তোমায় বাসায় পৌঁছে দেই”
“ইম…হ্যা।আচ্ছা অরিন আসি ভালো থেকো”
“তুমিও ভালো থেকো”
চাঁদ দূরে চলে যাচ্ছে আর সে পানে তাকিয়েই আস্তেসুরে অরিন বলে,
“আর আমার ভালোবাসাকে ভালো রেখো”
অতঃপর চেচিয়ে বলে,
“চাঁদ আপু!আকাশের চাঁদও তোমায় দেখলে ভীষনভাবে শরমে যাবে!”
অরিনের ডাক শুনে তার পানে ঘুরে কেবলই একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয় চাঁদ।তা দেখে সে পানে তাকিয়েই বিড়বিড় করে অরিন বলে,
“এজন্যই বুঝি প্রণয় বলেছিলো? ‘প্রণয়কে পাওয়ার দুঃসাহসিকতা কেবল চাঁদেতেই বিদ্যমান?”
To be continued….
[বিঃদ্রঃসম্ভবত কাল গল্প দেয়া হবেনা।খানিকটা অসুস্থ।তবে আমি চেষ্টা করবো দেয়ার।কিন্তু কেউ অপেক্ষা করবেন না।না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।আর গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।তাই কাল্পনিকভাবেই নেওয়ার অনুরোধ রইলো]