স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত #পর্ব_৯ #মুসফিরাত_জান্নাত

0
719

#স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_৯
#মুসফিরাত_জান্নাত

আরও একটি নতুন দিনের আগমন হয় ধরনীর বুকজুরে।রবির সোনালী ছটা খেলা করে আনাচে কানাচে।সেই দ্যুতি এসে নিঙরে পড়ছে পলাশ গাছের ফাঁকে।কলেজ গেটের একটু অভ্যন্তরে দাঁড়ানো পলাশ গাছটাতে ফুলের কলি ধড়েছে কিছুদিন হলো।দুই একটা কলির কমলা রঙা অগ্রভাগ সোনালী রৌদ্রের ছোঁয়ায় আরও সুদর্শনীয় লাগছে।একজোড়া শালিক এসে বসেছে সেই গাছের একটি ডালে।কোনো এক অজানা কারণে তাদের ভিতরে মান অভিমান চলছে।পুরুষ শালিকটি তার কোনাকার চঞ্চু দিয়ে ছোট ছোট স্পর্শ দিচ্ছে তার পাশের পাখিটিকে।অভিমানে দুই কদম সড়ে যাচ্ছে অপর শালিকটি।পুরুষ শালিকটি আরও একটু এগিয়ে যাচ্ছে।ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বেশ খানিকটা সময় ধরে।মেয়ে পাখিটির রাগ পড়ছে না।আবার স্থান ত্যাগ করে উড়েও যাচ্ছে না ।সে খুব করে চাইছে হয়তো পুরুষ শালিকটি তার অভিমান মিলিয়ে দিক।অফিস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে এই মনকাড়া দৃশ্য উপভোগ করে চলেছে ঐশী।জোড়া শালিকের মিষ্টি মুহুর্ত ঠোঁটের কোণ প্রশস্ত করে তার।গাল দুটিতে ক্ষুদ্র ডিম্পল ছড়িয়ে যায়।ক্রমেই সে ভুলে বসে তার উদ্দেশ্য।অফিসরুমে উঁকিঝুকি মা’রতে এদিকটায় এসেছিলো সে।সাদাত কলেজে উপস্থিত হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জরুরী।রুটিন অনুযায়ী গতদিনের ন্যায় আজকেরও প্রথম ক্লাস সাদাতের।কিন্তু ক্লাস করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।গতদিনে সাদাতের পাঠানো বার্তার দরুন তার সামনে উপস্থিত হওয়ার মতো অবস্থান অবশিষ্ট নেই।কিন্তু বন্ধুমহলের কেও এখনো কলেজে উপস্থিত হয় নি বলে ডিপার্টমেন্টের সামনে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাকে।কেননা কলেজে এসে সর্বপ্রথম ডিপার্টমেন্টের সামনেই জড়ো হয় ওরা।ক্লাস শুরু হওয়ার আর ত্রিশ মিনিট বাকি।একটু পরেই কলেজে আসে সাদাত।সিঁড়ি মাড়িয়ে অফিস রুমের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে ঐশীকে এক ধ্যানে দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ায়।উঁকি দিয়ে এক পলক সেদিকে তাকায় সে।ঐশীর দৃষ্টি অনুসরণ করে মেয়েটিকে জোড় শালিকের মিষ্টি মুহুর্ত উপভোগ করতে দেখে সে।আশেপাশে তাকিয়ে জনশূন্য দেখে স্মিত হাসে।খানিকটা কাছে এগিয়ে গিয়ে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,

“কোথাও কেও নয়া নয়া প্রেমে পরেছে নাকি?বাতাসে কেমন প্রেম প্রেম গন্ধ ভাসছে।”

হটাৎ কারো কণ্ঠ শুনে চমকে ওঠে ঐশী।তার মনোযোগে ছেদ ঘটে।ঘার ঘুরিয়ে ডান পাশে তাকায় সে।দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে সাদাতের রসিকতাপূর্ণ চেহারা।মিট মিট করছে হাসছে ছেলেটি।বিষ্মিত হয় ঐশী।সাদাত যে হুট করে এমন কথা বলবে কল্পনাতীত ছিলো তার।লোকটা তবে রসিকতাও করতে জানে?

পরক্ষণেই কথাগুলো মস্তিষ্কে জায়গা করে নেয়। লজ্জায় মিইয়ে যায় সে।মনে মনে নিজেকে শ খানেক বকা দেয়।কেনো সে এসব দেখতে গিয়েছিলো?তার বাকি বকা পড়ে সাদাতের উপর।কত বদ এই লোকটা।হুটহাট লজ্জা দিয়ে বসে তাকে।বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়ে হাঁসফাঁস করে ঐশী।দেয়ার মতো কোনো জবাব খুজে পায় না।মিনমিন করে বলে,

“আপনি যা ভাবছেন বিষয়টা এমন নয়।”

স্মিত হাসে সাদাত।মেয়েটির লজ্জামিশ্রিত চালচলন বেশ উপভোগ করে সে।তাকে আরও খানিকটা বিব্রত করতে সে বলে,

“কি ভাবছি আমি?আর বিষয়টাই বা কেমন?”

সাদাতের উদ্দেশ্য সফল হয়।বেশ ভড়কে যায় ঐশী।কিছু সময় হাঁসফাঁস করে বলে,

“কোনো রকমই না।এমনি ওদিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি।চলি।”

কথাগুলো বলে সাদাতকে অতিক্রম করে চলে যেতে নেয় ঐশী।কান স্পর্শ করে সাদাতের স্পষ্ট ও মোহনীয় কণ্ঠস্বর।যা থমকাতে বাধ্য করে তাকে।

“আমি মানুষটা কিন্তু অতোটা খারাপও নই।আমাকে নিয়ে এক সন্ধ্যা ভেবে দেখতে পারো।কে জানে প্রেমের গন্ধ বাতাসে ভাসতেও পারে।”

আড়ষ্ট হয় ঐশী।তড়িৎ হৃদপিন্ড লাফিয়ে ওঠে। সাত সকালের এই বেলায় পুরুষটির পরোক্ষ প্রেম নিবেদনে তড়িৎ লজ্জারা ভীর জমায়।শব্দরা হরতাল পাকায়।কন্ঠ নালী রোধ হয়ে আসে।অস্বস্তিতে মাথা ফাঁকা হয়ে যায়।শরীর অসাড় হয়ে আসে যেন।পদ ফেলতে পারছে না আর।ঘার ফিরিয়ে তাকানোর শক্তিও হারিয়ে ফেলে। চোখ প্রশস্ত করে ফেলে সে।এসব কি বলছে লোকটা।আদৌ কি ওনার মাথা ঠিক আছে?আড় চোখে এক পলক সাদাতকে দেখার চেষ্টা করে সে।সাদাতের দৃষ্টি তার মাঝেই নিবদ্ধ।দ্রুত মাথা নত করে ঐশী।এ কেমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লো সে?মনে মনে দোয়া করে,

“ইয়া মাবুদ,মাটি সাড়ে তিন হাত ফাঁক করে দাও।আমি ঢুকে যাই।”

তার দোয়া কবুল হলো না।কিন্তু মেয়েটির অস্বস্তি কাটাতে সৃষ্টিকর্তা অন্য এক অস্ত্র পাঠালেন। একটু পর হই হই শব্দ শুনতে পায় সে।সামনে তাকিয়ে তার বন্ধু মহলকে এগিয়ে আসতে দেখে ঐশী।চলতি পথে ঐশীর কাছে এসে সাদাতের সম্মুখীন হলো সবাই।স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে যায় ওরা।সাদাতকে একযোগে সালাম দেয় সকলে।শুধু বাকি থাকে ঐশী।অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে সে।তার অস্বস্তিকে আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়ে সরু চোখে তার দিকে তাকায় সাদাত।সিন্থিয়া কনুই দিয়ে গুঁতো মে’রে সালাম দিতে ইশারা করে।লজ্জায়,অস্বস্তিতে ও বিহ্বলতার দরুন মুখের খেই হারিয়ে ফেলেছে ঐশী। ভুলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ এর স্থলে অস্ফুটস্বরে বলে ,

“আউজুবিল্লাহি মিনাস শাইতনির রজিম।”

হতবাক হয়ে যায় সবাই।এটা তো সয়তানকে বিতারিত করার দোয়া।ভ্রু কুটি করে সাদাত।তার রোম্যাঞ্চকর নিবেদন শুনে মেয়েটি কি তাকে সয়তান ভেবে বসল?

সালামের বিপরীত জবাব জানা থাকলেও সয়তান তাড়ানোর দোয়ার বিপরীত জবাব জানা নেই তার।ভ্রু কুটি করে কিছু সময় নিরব থাকে সে।নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি,যার দরুন সে যে থতমত খেয়েছে তা বুঝতে সক্ষম হলো না কেও।অতপর কিছু না বলে নিজের পথে হাঁটা দিয়ে চলে যায় সাদাত।যাত্রাপথে ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক প্রেয়সীকে দেখতে ভুললো না সে।

সাদাত চলে যেতেই ঐশীকে ঘিরে ধরে সবাই।সিন্থিয়া চিন্তিত হয়ে বলে,

“তোর শরীরটা খারাপ নাকি দোস্ত?এমন ভ্যাবলাকান্ত মার্কা কান্ড করলি কেমনে?স্যারকে তোর সয়তান মনে হয়?”

সম্বিৎ ফিরতেই দাঁত দিয়ে জিভ কা’টে ঐশী।কিছু সময় কাঁচুমাচু করে সে।আমতা আমতা করে বলে,

“ওই জাদরেল স্যারকে দেখলে আমার অন্তরাত্মা বহিরাত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় দোস্ত।একটু আগে একা পেয়ে জেঁকে ধরেছিলো আমাকে।মনে হচ্ছিলো খা খা মরুভুমির তপ্ত বালুতে কেও ছেড়ে দিয়েছে আমাকে।দৌড়ে গিয়ে পানির টাঙ্কিতে ডুব দেই।তারে সামনে সজ্ঞানে কেমনে থাকমু ক?সালাম তো বহু দূরের কথা।”

বিড়বিড় শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সাদাত।শব্দের উৎস তার অর্ধাঙ্গী ঐশী।পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সে।মেয়েটি তাকে এতো ভয় পায়?কিছু একটা ভেবে অফিস রুমে ঢুকে পড়ে।

জেবা বিষ্মিত হয়ে বলে,

“কেন এই জাদরেল কি বলছে তোকে?আর এইখানে তুই একা একা কিই বা করতেছিলি?”

প্রথম প্রশ্নে আড়ষ্ট হয় ঐশী।দ্বিতীয় প্রশ্নটা মুহুর্তেই প্রতিক্রিয়া বদলে দেয়।কপট রাগ দেখিয়ে সে বলে,

“এতোক্ষণে আসার সময় হলো তোদের?সেই কখন থেকে তোদের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।”

জেবা মুখ বাকিয়ে বলে,

“তোমার বাড়ির কাছে কলেজ তো ফট করে আসতে পারো।আমাগো আবার রিকশার জন্য ধরনা ধরা লাগে।শা* রিকশাওয়ালাগো যা ভাব।যেদিন বাড়ি থেকে বের হতে দেরি হয় সেদিন আর ওদের সার্চ লাইট দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না।”

জেবার বাড়ি যে কলেজ থেকে খানিকটা দূরে তা ওদের সবারই জানা।তাসনিম রগড় করে বলে,

“গাধার মতো রিকশার জন্য দাঁড়ায়া ছিলি কেন?আমার মতো দৌড়াইয়া আসতি।”

মুখ ভেংচি কাটে জেবা।

“দৌড়াইয়া কি লাভ?আমার আগে তো আর আসতে পারস নাই।”

মুখ বাকায় তাসনিম।আহ্লাদী কণ্ঠে বলে,

“আমি হলো ঘুমাইলে কোনো পথ চোখে দেখি না।ঘুম থেকে উঠছি বেলা করে।এইজন্য লেট হয়ে গেছে।”

এর মাঝে অর্ক ও সায়ান আসে।ওদের কথা কাটাকাটি থামিয়ে একটু আগে ঘটা ঘটনা শোনে।একযোগে হাসে সকলে।অর্ক বলে,

“তোর সয়তান তাড়ানোর দোয়ার কোনো প্রয়োজন ছিলো না দোস্ত।স্যার যেই জাঁদরেল,ওনাকে দেখলে সয়তানের এমনি পালানো উচিৎ।”

হেসে ওঠে সবাই।কথা মন্দ বলেনি।এমন কঠোর মানবের ধারে যে কেওই আসতে চাইবে না।একটু পরেই চিন্তিত হয় ওরা।ভাবুক কণ্ঠে সায়ান বলে,

“ফিরতি পথ ধরি চল।এই জাদরেল ব্যাটার ক্লাস আজ করুম না।নদীর ধারে ঘুরতে যামু।”

হুট করে সায়ানের এমন কথা শুনে চমকানোর কথা থাকলেও চমকায় না কেও।প্রায়ই এমন হুটহাট ক্লাস বাঙ্ক মা’রে ওরা।অর্ক চারিদিকে তাকিয়ে বলে,

“হ ঠিক কইসছ তুই।আজকের ওয়েদারটা জোশ।ঘুরলে সেই মজা হইবো।”

সবাই সায় দেয় ওদের কথায়।শুধু বেঁকে বসে একটি প্রাণ,সিন্থিয়া।ক্লাস বাঙ্ক মে’রে ঘোরাঘুরি ভিষণ অপছন্দ সাদাতের।এদের পাল্লায় পড়ে যে কয়দিন ক্লাস বাঙ্ক মে’রেছে প্রত্যেকবারই কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছে তাকে।কিছুটা আমতা আমতা করে সে বলে,

“তোরা যা।আমার ভালো লাগছে না।আমি যাব না।”

সিন্থিয়া যে ক্লাস করার জন্য এমনটা বলছে তা বোঝে সবাই।জেবা ওর হাত টেনে ধরে বলে,

“ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যানদী জীবনে বহুত ক্লাস করছু।আজকে চল।এই মুহুর্তে ঐশীর ব্রেইনে রিফ্রেশমেন্ট দরকার।এমন করে মুড অফ করিস না কারো।”

অগত্যা রাজি হয় ও।চলতি পথে পা বাড়ায় সবাই।ঐশীর মন প্রশান্তিতে ভরে যায়।কপাল করে এমন একটা বন্ধুমহল জুটেছে ওর।ওর একটু বেখেয়াল আচরণকেও কতোটা প্রাধান্য দেয় এরা।মন্দ নয় ব্যাপারটা।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তার।

_________
রুক্ষ শীতের বিদায় ও ফুরফুরে বসন্তের আগমনের আগ মুহুর্তে ধরনীর বুকে অন্য রকম এক মাধুর্য বিরাজ করে।বসন্ত বাতাসের প্রবাহমানতা স্বল্প পরিসরে এখনই বয়ে যাওয়া শুরু করেছে।স্নিগ্ন পবনের স্পর্শ গায়ে মেখে আড্ডায় মেতে উঠেছে ছয় জনের গ্রুপ।নদীর পাড়ে এসে একটা নৌকা ভাড়া করেছে তারা।নদীতে পানির প্রবাহ কম।তবুও মন্দ লাগছে না তাদের।বরং দীর্ঘদিন পর এদিকটায় আসায় বেশ ভালোই অনুভুত হচ্ছে।একেকজন একেক ঢঙে ছবি উঠছে।তাদের ছবি ওঠার ধরনই বলে দিচ্ছে আজকে ছয়জনের ফেসবুক ওয়ালেই ছবিগুলো আপলোড করা হবে।ছবি উঠানোতে সায়ান বেশ দক্ষ।তার ক্যাপচারে বেশ কিছু ক্যান্ডিড পিকচারও উঠেছে।যার মাঝে একটি বাছাই করা হয় সবার কভার ফটো দেয়ার জন্য।সবার ছবি ওঠা শেষে কে কোনটা ফেবুতে দিবে এসব নিয়েই আলোচনা করছিলো তারা।এর মাঝে ঐশীর ফোনে ছোট্ট একটি নোটিফিকেশন আসে।কেও বার্তা দিয়েছে।সবার থেকে একটু সাইডে গিয়ে বার্তাটি চেক করে ঐশী।সাদাতের মেসেজ এসেছে।

“কোথায় আছো তুমি?ক্লাসে দেখলাম না যে।”

ফিরতি বার্তা না পাঠিয়ে ফোনটা ব্যাগে পুড়তে যায় ঐশী।এর মাঝেই আবারও ফোন বেজে ওঠে।আরেকটি বার্তা পাঠিয়েছে সে।

“যেখানেই থাকো না কেনো আমার সাথে দেখা না করে বাড়ি ফিরো না যেন।সোজা কলেজ এসে আমার গাড়িতে বসবে।কিছু কথা আছে তোমার সাথে।”

বার্তাটি চোখে পড়তে হতবিহ্বল হয় ঐশী।চোখ বড় বড় হয়।লোকটি কি বলতে চায় তাকে?আবারও কি লজ্জা দেওয়ার সাধ জেগেছে তার?ঐশী একবার ভাবে সাদাতের সামনে আর যাবে না।পরক্ষণেই মন কেমন করে ওঠে।সে ঠাহর করতে পারে, লোকটির আদেশ অবজ্ঞা করার ক্ষমতা তার নেই।তাকে যেতেই হবে সেই পুরুষের কাছে।যে পুরুষের মাঝে না চাইতেই আবদ্ধ হয়েছে সে।
_________
ক্লান্ত দুপুরে অলসতা জেঁকে ধরেছে।সাথে অলস হয়েছে ঐশী।এক বেলার ঘুরাঘুরিতে মনটা চাঙা হলেও শরীরটা ক্লান্ত তার।বন্ধুদের সাথে আরও একটু সময় কাটানোর ইচ্ছে থাকলেও মাঝপথেই ভেঙে পড়েছে তাদের আসর।ঐশী জরুরী দরকার আছে বলার পর পরই সবাই চলে যায় যার যার বাড়ি।সে সোজা চলে এসেছে কলেজে।সাদাতের গাড়ির সিটে গা এলিয়ে বসে রয়েছে মিনিট পাঁচেক হলো।ছোট্ট একটি বার্তাও পাঠিয়েছে তার আগমনের খবর দিয়ে।রয়ে সয়ে নয়, একটু দ্রুতই নিজের হাতের কাজের সমাপ্তি টানে সাদাত।অল্প সময়ের ব্যবধানেই এসে পৌঁছায় পার্কিং স্পটে।দরজা খুলতেই চোখে পড়ে ঘর্মাক্ত শরীরে নেতিয়ে পড়া ক্লান্ত রমনীকে।দ্রুত গাড়ির এসি অন করে সে।কারো উপস্থিতি অনুভব করতেই দু চোখের পাতা আলাদা করে তাকায় ঐশী।সাদাতের মুখশ্রী পাণে তাকাতেই প্রশান্তি খেলে যায়।তার অপেক্ষার অবসান হলো তবে।বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠে শুধায়,

“কি যেন বলতে চেয়েছিলেন।বলেন?”

“সব কথা কি গাড়িতেই বলতে হবে?কিছু কথা না হয় কিছু নির্ধারিত স্থানেই বলা যাক।আমার সাথে সেখানে যেতে কোনো আপত্তি আছে তোমার?”

মোহগ্রস্ত কণ্ঠে প্রশ্ন তার।বিষ্মিত হয় ঐশী।অক্ষি কোটর থেকে বেড়িয়ে আসতে চায়।সব সময় গভীর্যতার প্রলেপ এঁটে থাকা লোকটা এভাবেও কথা বলতে পারে?মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় সে।সে মানুক আর না মানুক নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ সাদাত।তার সাথে কোথাও যেতে আর যাই হোক আপত্তি থাকার প্রশ্ন আসে না।

অর্ধাঙ্গিনীর সায় পেতেই গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দেয় সাদাত।সাঁই সাঁই করে গাড়ি চলে।অপেক্ষার অবসান ঘটায় বেশ প্রশান্তি অনুভব করে ঐশী।দু চোখের পাতা এক করে গা এলিয়ে দেয় গাড়ির সিটে।ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক অর্ধাঙ্গিনীকে পর্যবেক্ষণ করে সাদাত।মাথায় ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে হিজাব পড়েছে সে।সাদাতের আদেশটা ঐশী কড়াই গণ্ডায় আমুলে নিয়েছে দেখে আপনাআপনি তার ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হয়।আরও এক পলক তাকিয়ে দেখে হিজাবে আবৃত মেয়েটিকে।গৌড় বর্ণ গায়ের রঙে গাঢ় মেরুন রঙা হিজাবে অপ্সরা লাগছে মেয়েটিকে।মেয়েটির এই রুপে থমকে যায় সাদাত।আনমনেই বলে,

“হিজাবেও তাহলে সৌন্দর্য ঢাকতে পারে নি!”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here