#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ০২
তাড়াহুড়ো করে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে আনাবিয়া। আজ ঘুম থেকে দেরিতে উঠার কারণে ভার্সিটিতে আসতেও দেরি হয়ে গেলো! দ্রুত হাঁটায় নেকাব বারে বারে উড়ে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে হাঁটার পথেই একজন অচেনা ছেলে তার সামনে এসে বলে,
-আসসালামু ওলাইকুম ভাবী। যদি কোনোরকম অসুবিধা হয় আমাকে বলবেন।
আনাবিয়া আশেপাশে চোখ বুলিয়ে শান্ত ভণিতায় বলে,
-কোন জন্মের ভাই আপনি আমার?
-আমি আপনার দেবর ভাবী।
-দেবর! আই সি। আপনার ভাইয়ের নাম কী?
-ইসরাফ শেখ।
-উফফ ডিসগাস্টিং!
আনাবিয়া আর কিছু না বলে বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। একমাস ধরে এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে সে। এখন পর্যন্ত কোনো বন্ধু বান্ধবী হয়নি। সে একা থাকতেই পছন্দ করে। আনাবিয়ার পাশে দিলরাবা বসেছে। ক্লাসের সকল ছেলে মেয়েই একটু অন্যরকম চোখে আনাবিয়াকে দেখছে। আনাবিয়া তেমন একটা মাথা ঘামায় নি। কারণ এই একমাস সবাই এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরোক্ষ করে তাকে। এমন পর্দা করা মেয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকাবে এটা স্বাভাবিকই।
দিলরাবা আনাবিয়ার পাশ ঘেঁষে বসে আস্তে আস্তে বলে,
-জানো আনাবিয়া তুমি কিন্তু এখন আমাদের ভার্সিটিতে ফেমাস গার্ল।
-কিভাবে?
-আজ সকালে ইসরাফ ভাই ভার্সিটির সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে তুমি নাকি তার গফ। কেউ যাতে তোমার দিকে চোখ তুলে না তাকায়!
-আজব তো! এ কেমন পাগল।
-তুমি ইসরাফকে চেনো না আনাবিয়া। আমার কাজিনদের ব্যাচে পড়ে সে। অনেক অহংকারী আর নোংরা মস্তিকের মানুষ সে।
নেকাবের আড়ালে মৃদু হাসলো আনাবিয়া। দিলরাবার মতোই আস্তে আস্তে বলে,
-সে যে কেমন টাইপের মানুষ সেটা আমার কালই জানা হয়ে গিয়েছে।
-তুমি একটু ওর থেকে দূরে দূরে থেকো।
-হুম।
-তোমাকে না আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। ফ্রেন্ডশিপ করবে আমার সাথে?
-কেনো নয়?
-ঠিক আছে ফ্রেন্ডস?
-হ্যাঁ ফ্রেন্ডস।
ক্লাস শেষ হলে আনাবিয়া দিলরাবার সাথে ক্যান্টিনে আসে। ইসরাফদের ফ্রেন্ডসার্কেল সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আনাবিয়া আড়চোখে ইসরাফকে দেখে চলে যেতে নেয়। কিন্তু ইসরাফ আচমকা আনাবিয়ার স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ সামনে ইসরাফকে দেখে দু কদম পিছিয়ে যায় আনাবিয়া। সবসময়ের মতো ঠোঁটে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে ইসরাফ বলে,
-আমাকে দেখে পালিয়ে যাচ্ছিলে জানেমান?
-পথ ছাড়ুন।
-কেনো ছাড়বো?
-অসভ্যতামির ফল কিন্তু ভয়ংকর হবে।
-আর কত ভয়ংকর রূপ দেখাবে জান?
আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে ইসরাফকে বলে,
-সমস্যা কী আপনার? সরুন সামনের থেকে।
-শুনো, আমি যা বলি সোজাসুজি বলি এই জীবনে অনেক মেয়ের পিছনে ঘুরেছি। অনেক মেয়ের সাথে রাত্রিযাপনও করেছি! তবে তোমাকে আমার মনে ধরেছে। সব কথার এক কথা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
-একজন চরিত্রহীনকে কোন নারী জীবনসঙ্গী করতে চাইবে?
-তোমার জন্য আমি চরিত্রবান হওয়ার চেষ্টা করব জান।
-ঠিক আছে। চরিত্রবান হন তারপরের টা পরে ভেবে দেখবো।
-ওয়েল। চরিত্রবান হলে তুমি আমার?
-ঠিক আছে।
বিজয় হাসি দিলো ইসরাফ। একটু বেশিই ফর্সা ইসরাফের গায়ের বরণ। কিন্তু মুখে একটা গুন্ডা গুন্ডা ভাব! আনাবিয়া চোখ ছোট ছোট করে ইসরাফকে দেখছে। ইসরাফ আনাবিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-ধরে নেও তুমি আমার হয়ে গিয়েছো। বাই দে ওয়ে, তোমার আঁখিজোড়া কিন্তু একটু অন্যরকম। একদম কুচকুচে কালো!
আনাবিয়া কিছু না বলেই পাশ কেটে চলে যায়। দিলরাবাও দৌড়ে আনাবিয়ার পিছনে পিছনে যায়। ইসরাফ মুচকি হেসে ফ্রেন্ডসদের পাশে এসে বসে পরে। সবাই আশ্চর্য হয়ে ইসরাফকে দেখছে। তানিয়া নামের একজন মেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
-দোস্ত তুই কী সত্যি ঐ ক্ষেত মেয়েকে বিয়ে করবি?
-হ্যাঁ করব।
সবাই একজন আরেকজনের দিকে চাওয়া চাওয়ী করল। ইসরাফের বেস্টফ্রেন্ড ইকরা আর উমৎ অসহায় দৃষ্টিতে ইসরাফের পানে চায়। করুণ কণ্ঠে ইকরা বলে,
-দোস্ত দেখ মেয়েটা কালো। ওর চোখের চামড়া দেখে বুঝাই যায় মেয়েটা তোর মতো না। (ইকরা)
-তার ওপর তুই আজ পর্যন্ত সিরিয়াস রিলেশনশিপ করলি না। সেখানে বিয়ের মতো আরো বড় ভার কেনো মাথায় নিচ্ছিস? জেদে বসে উল্টোপাল্টা কিছু করলে পরে ভীষণ আপসোস করবি বলে দিলাম। (উমৎ)
ইসরাফ ফ্রেন্ডের কথায় একদম মনোযোগ দিলো না। ফোন টিপতে টিপতে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,
-ইসরাফ কাঁচা খেলোয়াড় নয়। তাছাড়াও ঐ মেয়েকে না দেখেই আমার অন্যরকম অনুভূতি হয়েছে। কিছু একটা আছে মেয়েটার মধ্যে! আমি যেহেতু চ্যালেঞ্জ করেছি অবশ্যই জিতে দেখাবো।
-বড় ভাইয়ের আগে বিয়ে করবি তুই? (তানিয়া)
-হ্যাঁ করব। তার মতো সারাজীবন সিঙ্গেল থাকার ইচ্ছে আমার নাই ভাই! যদি বাঁধা দিতে আসে তাহলে সেদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে শেখ বাড়িতে।
-বড় ভাইকে ছাড়া তুই যে অচল সেটা ভুলে যাচ্ছিস তুই? (ইকরা)
দ্রুত পায়ে হাঁটছে আনাবিয়া।এখন জলদি করে বাসায় যেতে পারলেই হলো! দিলরাবা অবাক হয়ে বলে,
-এটা কী করলে তুমি আনাবিয়া? ঐ ইসরাফ এখন তোমার পিছা ছাড়বে না।
-আমি তো এটাই চেয়েছিলাম।
আমাবিয়ার অস্পষ্ট স্বরের কথা বুঝতে পারেনি দিলরাবা। তাই না বুঝার ভান করে বলে,
-কী বললে?
-কিছু না। তুমি চিন্তা করো না কিছু হবে না।
-তুমি ওদের চেনো না আনাবিয়া। ইসরাফ যেমন তেমন ওর বড় ভাই একজন এমপি। ঢাকার অন্যতম ক্ষমতাবান ব্যক্তি সে। আর জানোই তো ক্ষমতা যার মুল্লুক তার!
চলন্ত পা থেমে যায় আনাবিয়ার। একটু চমকে দিলরাবার পানে তাকায়। ইসরাফের বেপারে সে মোটামুটি সবই জানে। কিন্তু ইসরাফের বড় ভাই আছে এটা তার সম্পূর্ণ অজানা। চমকিত হয়ে বলে,
-ইসরাফের বড় ভাই আছে? তার না শুধু বড় বোন তনুসফা শেখ?
-হ্যাঁ তনুসফা শেখ ইসরাফের বড় বোন কিন্তু তারপর একটা ভাইও আছে তার। ইসরাফ হলো তিন নাম্বার।
-তাহলে আমার এখনও অনেক কিছু অজানা!
-কী অজানা?
-কিছু না। আসি আমি কাল দেখা হচ্ছে।
______________________🌸
রাত একটায় পা টিপে টিপে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ইসরাফ। নেশায় একদম বুদ হয়ে আছে। ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না। একবার ডানপাশে পরছে ও আরেকবার বামপশে। হঠাৎই একটা শোপিস্ পরার আওয়াজে পুরো ড্রইংরুম সাদা রঙের আলোতে আলোকিত হয়ে উঠে। বিরক্তিতে ললাটে দুই ভাঁজ পরে ইসরাফের। একজন ভৃত্য এসে মাথা নিচু করে বলে,
-ছোট বাবা ম্যাম আপনাকে ডিনার করে তার কক্ষে যেতে বলেছে।
-কেনো?
-জানি না ছোট বাবা।
ইসরাফ কোনোদিক না তাকিয়ে দুলতে দুলতে নিজ রুমে চলে যায়। এখন তার বড় বোনের সাথে কথা বলার এক বিন্দু পরিমানও ইচ্ছে নেই।সবার জ্ঞান দেওয়া শুনতে শুনতে অস্থির হয়ে উঠেছে সে।
পরেরদিন কিছু জরুরি কেনাকাটা করতে মার্কেট যায় আনাবিয়া আর জয়তি। আজ যেহেতু ফ্রাইডে তাই ভার্সিটি বন্ধ। সব সময়ের মতো কালো রঙে বোরখা জড়িয়ে আছে কায়ায়। হাত-পায়ে মোজা, মুখে নেকাব ও মাথা হেজাব। নেকাবের আড়ালে শ্যামলা বর্ণের চামড়ায় কালো মণির নয়নজোড়া জানো জ্বলজ্বল করছে। আনাবিয়া একটা শপে এসে নিজের জন্য হাত ঘড়ি দেখছে। ঘড়ি ট্রাই করার জন্য শপের সেলার তার হাতে ঘড়িটি পরিয়ে দিচ্ছিলো তখনই একটি সাদা চামড়ার হাত এসে লোকটির হাত দূরে সরিয়ে দেয়। কিঞ্চিৎ ভড়কে গিয়ে কিনারে তাকাতেই দেখে বাঁকা হেসে ইসরাফ দাঁড়িয়ে আছে। ইসরাফ সযত্নে আনাবিয়ার হাত নিজের হাতে নিয়ে ঘড়িটা পরিয়ে দেয়। হাসি দিয়ে বলে,
-বাহ্! ভীষণ সুন্দর লাগছে জানেমান।
আনাবিয়া এক ঝটকায় নিজ হাত ছাড়িয়ে নেয় ইসরাফের হাত থেকে। রাগী চোখে ইসরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
-মেনার্স বলতে কিছু আছে নাকি? এভাবে একজন অচেনা মেয়ের হাত কিভাবে ধরেন?
ইসরাফ অতি পরিচিত হওয়ার ভান করে বলে,
-অচেনা! আমি আমার উল্ড বি ওয়াইফের হাত ধরেছি এতে এতো আহামরির কী হলো?
-এই ছেলে কে রে আনা?
জয়তির কথা শুনে আনাবিয়া একটু হিমশিম খেয়ে যায়। আড়চোখে ইসরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
-ভার্সিটির সিনিয়র ভাই হয় খালামুনি।
-ওহ আচ্ছা।
ইসরাফ একটু চুল ঠিক করার ভান করে আনাবিয়ার খালার পাশে যেয়ে দাঁড়ায়। বড় করে একটি সালাম দেয়। জয়তিও হালকা হেসে সালামের উত্তর দেয়। ভদ্র সেজে ইসরাফ বলে,
-আনু খালামুনির সাথে কী শুধু সিনিয়র ভাই বলেই পরিচয় করিয়ে দেবে?
-মানে?
ইসরাফ একটু সরম পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
-বুঝেছি তুমি সরম পাচ্ছ। আসলে খালামুনি আমি আনুর বফঁ হই। আমরা দুইজন দুইজনকে অনেক বেশি ভালোবাসি। খুবই দ্রুত আমি বিয়ের প্রস্তাব দেবো।
জয়তি একবার আনাবিয়ার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ইসরাফের দিকে। ইসরাফের কথা গুলো তার মাথার ওপর দিয়ে গেলো। জয়তি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আনাবিয়া জয়তিকে নিয়ে দ্রুত শপ থেকে বেরিয়ে যায়। ইসরাফ হাসতে হাসতে পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলে,
-জানু খালামুনিকে বুঝিয়ে আমার কথা বলো।
___________________🌸
এক বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পরেছে আনাবিয়া কিছুদিন ধরে। যেখানে যায় সেখানেই এই ইসরাফ নামের ব্যক্তি হাজির। ভার্সিটিতে সবসময় তার আগে পিছনে ঘুরে। কত মেয়েরা তাকে নিয়ে জেলাসি করে! ইসরাফ কথা রাখছে। আগের ইসরাফ এখন সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। একটি মেয়ের দিকেও বাজে নজরে তাকায় না। কাউকে বিরক্ত করে না। একদম সাদু পুরুষ! আনাবিয়ার এইসব একটুও ভালো লাগছে না। দিলরাবার সাথে এই কয়দিনের আনাবিয়ার ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। কথার মাঝে আনাবিয়ার হঠাৎ হঠাৎ ইংলিশ শুনে অত্যাধিক অবাক হয় দিলরাবা। দিলরাবার মতে আনাবিয়া বিদেশীদের মতো ইংলিশ বলে। ক্যাম্পাসে বসে বই পড়ছে আনাবিয়া। পাশেই দিলরাবা নিজ মতো বক বক করেই যাচ্ছে।
-জানিস আনা আমার না তোকে ভীষণ দেখার ইচ্ছে।
-তাই নাকি?
-কবে দেখাবি তোর ফেইস?
-আমাকে দেখলে ভয় পেয়ে যাবি তাই না দেখাই ভালো।
তাঁদের কথার মাঝে হাজির হয় দিলরাবার কাজিন ও তার ফ্রেন্ডরা। পাশের চেয়ার গুলোতে বসে পরে। দিলরাবার কাজিন আনাবিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-কেমন আছো আনাবিয়া?
-ভালো আপু। আপনি?
-আমি ভালো নেই।
-কেনো?
-আর বলো না, তোমরা তো জানো আমি শৌফকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার পরিবার শৌফকে জামাই হিসেবে মানতে নারাজ। তাই আজ পাত্র আমাকে দেখতে আসবে। অনেক কান্না পাচ্ছে আমার।
আনাবিয়া মাথা ঘুরিয়ে দিলরাবার কাজিনের পাশে বসা ছেলেটির পানে তাকালো। এটাই শৌফ। ক্লাসমেটকে ভালোবাসে দিলরাবার কাজিন। আনাবিয়া কিছু একটা ভেবে বলে,
-পালিয়ে যান নাহয় কোট ম্যারেজ করে ফেলেন।
-তোমার কথায় যুক্তি আছে আমাবিয়া।
-হ্যাঁ। চলো কোট ম্যারেজ করে ফেলি? (শৌফ)
-আপু এটাই করে ফেলো। তোমার ভালোবাসাকেও পেয়ে যাবে কোনো গেঞ্জামও হবে না। (দিলরাবা)
দিলরাবার কাজিন খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে আনাবিয়াকে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে,
-আমরা এটাই ভাবছিলাম। আজ তোমার কথায় এখন এই রাস্তাটাই বেস্ট মনে হচ্ছে। আমার এখনই যাবো কোট ম্যারেজ করতে। তোমরা দুইজনও আমাদের সাথে চলো।
-না আপু আমার তো বাসায় যেতে হবে। (আনাবিয়া)
-চলো না তোমরা গেলে আমি সাহস পাবো।
-চল তাহলে যাই আনা? (দিলরাবা)
-এইযে বড়দের কথা কিন্তু শুনতে হয় ছোট বোন। (দিলরাবার কাজিনের ফ্রেন্ডরা)
-ঠিক আছে চলুন।
আনাবিয়া একবার আশেপাশে চোখ বুলায় দেখার জন্য ইসরাফ আছে না কি। কিন্তু না আজ ইসরাফ ভার্সিটিতে আসেনি। আনাবিয়া আর দিলরাবা দিলরাবার কাজিন ও তার ফ্রেন্ডদের সাথে কাজী অফিসে আসে। এতো মানুষ তাই দিলরাবা আর আনাবিয়া ভিতরে গেলো না। তাঁদের সাথে দিলরাবার কাজিনের একজন ফ্রেন্ডও দাঁড়ায়। সৌরভ নাম ছেলেটার। ইসরাফের অনেক ভালো বন্ধু। এটা সেটা নিয়ে কথা বলতে থাকে। কাজী অফিসে পাশ দিয়ে বাইক নিয়ে যাচ্ছিল ইসরাফ। আনাবিয়াকে দেখে হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায় তার। মুহূর্তেই মেজাজ জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম হয়ে যায়। আনাবিয়ার ঠিক পায়ের সামনে বাইক থামায়। ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে যায় আনাবিয়া। ইসরাফ একবার আনাবিয়ার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার নিজের ক্লাসমেটের দিকে। দিলরাবা ভীত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সৌরভ ইসরাফকে দেখে হাসি মুখে বলে,
-বাডি এখানে কি করছিস?
-আগে তুই বল এখানে কি করছিস?
সৌরভ জানে ইসরাফ আর আনাবিয়ার কথা তাই শয়তানি করে বলে,
-বিয়ে করতে এসেছিলাম আনাবিয়া আর আমি।
-কি?
-দেখ সুন্দর লাগে না আমাদের?
ইসরাফের মুখশ্রী রাগে লাল হয়ে যায়। সৌরভ বুঝতে পারে সে ভুল জায়গায় শয়তানি করে ফেলেছে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ইসরাফ একটা ঘুসি মারে সৌরভের মুখে। তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে নিচে পরে যায় ছেলেটা। আনাবিয়া রেগে বলে,
-কী করলেন এটা? আপনি কী মানুষ!
-কোনো কথা শুনতে ইচ্ছুক না আমি দ্রুত বাইকে বসো।
-বসবো না।
আনাবিয়া দ্রুত পায়ে দিলরাবাকে কিছু বলে একটা রিকশা ডেকে উঠে বসে। চোখের সামনেই উধাও হয়ে যায় আনাবিয়া। ইসরাফ রেগে ফেটে যাচ্ছে। সেও বাইক নিয়ে আমাবিয়ার রিকশাকে ফলো করে। এখন সময় দুপুর তিনটে। আনাবিয়াদের বাড়ির গলি একদম নির্জন। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে আগে বাড়তে নিলেই আচমকা কেউ একজন তার নাকে কিছু একটা চেপে ধরে। সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যায় আনাবিয়া।
🖤বর্তমান—–
-আমি বাড়ি যেতে চাই।
এতক্ষন পর আনাবিয়ার মুখ থেকে কথা শুনে মাথা শান্ত হয় ইসরাফের। গম্ভীর কণ্ঠস্বরে বলে,
-আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
-আমাকে না বলে আমার পরিবারকে বলুন। আর আপনার পরিবারকেও।
-পরিবার যদি বিয়েতে রাজি থাকে তাহলে তুমি রাজি?
-হুম।
-সত্যি?
-হ্যাঁ রাজি।
-ঠিক আছে আমি আজই তোমার বেপারে আমার পরিবারকে বলছিস। খুব জলদি তুমি আমার হবে।
__________________🌸
সন্ধ্যার পর পরই বাসায় আসে আমাবিয়া। জয়তির শুকনো চোখ মুখ। আনাবিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-কোথায় গিয়েছিলি তুই? এতো দেরি করে বাসায় আসলি যে?
-সে বিরাট কাহিনী। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে সব বলছি।
-আচ্ছা যা।
আজ দ্রুত বাসায় ফেরে ইসরাফ। ড্রইংরুমে বসে ফাইল চেক করছিল তনুসফা। ছোট ভাইকে এতো জলদি বাসায় আসতে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে যায় সে। ইসরাফ সোফায় গা এলিয়ে দেয়। তনুসফা ফাইল চেক করতে করতেই শান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-আজ কোনদিকে চাঁদ উঠলো! জনাব ইসরাফ শেখ এতো জলদি বাসায় এলো!
-আপা কিছু জরুরি কথা ছিল আমার।
-জরুরি কথা! তাও তোমার!
-হ্যাঁ। মা কী ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে?
-অসুস্থ শরীর তাই শুয়ে আছে।
-এরফান শেখের কেস কী হলো?
-বাহ্! ইসরাফ তুমি দেখছি পরিবারের বিষয়ক কথা শুনতে আগ্রহী! পরিবর্তন হয়ে গেলে নাকি?
-আসলেই আপা আমি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছি। তাও একটা মেয়ের জন্যে।
ভ্রু কুঁচকে ইসরাফের দিকে তাকায় তনুসফা। গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-মানে?
-আমি বিয়ে করতে চাই আপা।
-বড় ভাইয়ের আগে?
-তার মতো সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। একজনকে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করতে চাই।
-ঐ মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে?
-হ্যাঁ করে।
-স্ট্রেঞ্জ বেপার! ঠিক আছে আমি কাল মেয়েকে দেখতে যাবো। ইরানের জন্য তো আর তোমাকে বসিয়ে রাখবো না!
-থ্যাংক ইউ আপা।
বসা থেকে উঠে চলে যায় ইসরাফ। তনুসফা ফাইলে চোখ রেখে ভাবতে থাকে ইসরাফের বিয়ে একজনের সাথে হলেই হলো। এই ছেলেকে দিয়ে তার বেশি কিছু আশা নেই। তবে ইরান হলো এই বাড়ির বড় ছেলে। বাড়ির আসল উত্তরাধিকারি। তার জন্য ঠিক তার মতোই যোগ্য মেয়ের প্রয়োজন। যেই সেই মেয়ে এই বাড়ির বড় ছেলের বউ হতে পারে না! তাঁদের মতোই উঁচু খানদানি পরিবারের মেয়ে আনবে সে প্রিয় ভাই ইরানের জন্য।
>>>চলবে।