#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ০৮
গম্ভীর মুখে বসে আছে আনাবিয়া। তার ঠিক সামনেই ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জেসিকা। সে কানাডা থেকে এসেছে। অনেক বিদেশী মেয়ের সাথেই পরিচয় তার। কিন্তু এইরকম বিদেশী মোমের পুতুল এই প্রথমই দেখলো। গদগদ করতে করতে বললো,
-হোয়াট আর ইউ ডুইং মামী?
আনাবিয়া বিরক্তকর চাহনিতে জেসিকার দিকে তাকালো। শান্ত স্বরে বললো,
-আমি বাংলা পারি।
জেসিকা আহাম্মক হয়ে যায়। মেকি হেসে বলে,
-ওহ হ্যাঁ, আমি জেসিকা ইরান মামুর একমাত্র ভাগ্নি।
-ওহ।
-আপনি বাংলা কিভাবে জানেন?
-আমার মা শিখিয়েছে।
-ওওও।
আনাবিয়া জেসিকাকে দেখে বলে,
-এই বাসায় আর কে কে থাকে?
-এই পর্যন্ত যে কয়জনকে দেখেছেন সে কয়জনই থাকে।
জেসিকার কথায় অসন্তুষ্ট হয় আনাবিয়া। জেসিকার ফোন বাজতেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় সে। একটু ব্যস্ত হওয়ার ভান করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আনাবিয়া বড় একটি নিঃশাস ছাড়লো। ব্রেকফাস্ট করার পর থেকে এই জেসিকা নামক মেয়ে তার পিছাই ছাড়ছে। ইরান তাকে শপিং করতে যাওয়ার জন্য জোর করেছিল কিন্তু সে যায়নি। রুমের দরজাটা লক করে জয়তিকে কল দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই জয়তি কল রিসিভ করে। চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,
-মা কেমন আছি?
-আই এম ওকে খালামুনি। এখন শুনো এরফান শেখ যে মারা গিয়েছে এটা আমাকে কেনো বলোনি?
-এরফান শেখ কবে মারা গেলো!
-উফফ ডিসগাস্টিং! কিছুদিন আগেই নাকি মারা গেলো!
-ব্যস্ত থাকায় হয়তো নিউজ দেখা হয়নি! আমি এখনই দেখছি।
-আচ্ছা শোনো পরে দেখো আগে বলো আমি এখন কী করব? ইসরাফকে মারা এখন আর বড় বিষয় নয় কিন্তু ইরান শুধু শুধু মধ্যে এসে পরলো!
-সেটাই তো। এখন ইরান তো নির্দোষ।
-কে নির্দোষ আর কে দোষী এতো কিছু আমি জানি না। হ্যাঁ আমি ইরানকে সেইরকম ভাবে আঘাত করব না তবে সেও শাস্তি পাবে। এই বাড়ির সকলকে আমার আঙুলে নাচিয়েছি ছাড়বো। ঐ তনুসফা শেখ ব্লা*ডি ওম্যান! শি ডোন্ট লাইক মি এন্ড আই অল্সো ডোন্ট লাইক হার।
-আচ্ছা যা করবি ভেবে চিন্তে করবি। নিজের খেয়াল রাখবি।
-হুম, তুমিও।
ফোনটা বিছানায় ফেলে দেয় আনাবিয়া। বাড়িতে এখন সে, জেসিকা আর ভৃত্য ছাড়া কেউ নেই। আনাবিয়া দরজা খুলে ধীরে ধীরে পা ফেলে রুমের বাহিরে আসে। ভুতের মতো পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। ড্রইংরুমে আসতেই অচেনা একটি চেহারার দেখা পায়। কপালে ভাঁজ পরে আনাবিয়ার। পরিহিত টি-শার্টটা টেনে-টুনে নিচে নামিয়ে নেয়।
তাজীব সোফায় বসে একমনে কাজ করছিল। আনাবিয়াকে সে খেয়াল করেনি। একজন ভৃত্য আনাবিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
-ম্যাম কিছু লাগবে?
তাজীব পাশে তাকায়। কৌতূহল দৃষ্টিতে আনাবিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেও বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। আনাবিয়া বললো,
-হু আর ইউ?
চোখ মেঝেতে স্থির তাজীবের। থমথমে গলায় বলে,
-ম্যাম আমি ইরান স্যারের পার্সোনাল পিএ।
-ইউ মিন অ্যাসিস্ট্যান্ট?
-ইয়েস ম্যাম।
আনাবিয়া পায়ের ওপর পা তুলে কোমল সোফায়
বসে পরে। তার ভাবভঙ্গি জানো কুইন এলিজাব্যথা! তাজীব মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আনাবিয়া একটু বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-হোয়ার ইস ইউর স্যার?
-ম্যাম স্যা,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।
-কিছুক্ষন আমাকে না দেখেই এতো বিচলিত হচ্ছেন আনাবিয়া সাবরিন! তাহলে কী ধরে নেবো এক রাতেই আপনার মন জুড়ে বিচরণ করছে ইরান শেখ?
ইরানের কণ্ঠস্বর শুনে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকায় আনাবিয়া। দুই হাত ভরে শপিং ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে আসছে ইরান। মুখে তার অদ্ভুত হাসি। আনাবিয়ার সামনে এসে ব্যাগগুলো সোফায় রাখে। তাজীবকে বলে অফিসে চলে যেতে। বসা থেকে উঠতে নেয় আনাবিয়া। ইরান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-এই ব্যাগ গুলো নিয়ে যাও কিছু ড্রেস আছে। ট্রাই করে দেখো।
আনাবিয়া বিমূর্ত হয়ে তাকায় ইরানের পানে। ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে,
-আপনি শপিং করেছেন তাও আমার জন্য?
-আমার অফিসের একজন মেয়ে স্টাফ করে দিয়েছে। আমি জাস্ট নিয়ে এসেছি।
-ওহ।
ইরান এক পা আগে বাড়ায়। ধীরে ধীরে আনাবিয়ার কানের সামনের থেকে চুল সরিয়ে দেয়। কানের লতিতে ঠোঁট লাগিয়ে বলে,
-আমি করলে খুশি হতে?
কোনোকিছু না ভেবেই আচমকা আনাবিয়া নিজের মাথা দিয়ে ইরানের থুতনিতে বারি দেয়। দু পা পিছিয়ে যায় ইরান। বারি থুতনিতে দিলেও লেগেছে ঠোঁটের নিচের অংশে। আঘাতে হাত বুলাতে বুলাতে কঠিন চাহনি নিক্ষেপ করে আনাবিয়ার দিকে।
আনাবিয়া দুঃখী দুঃখী ভাব করে বলে,
-ওওও ডিয়ার, বেশি পেইন করছে?
-একদমই না। এসো তোমাকে একটা দিয়ে বুঝিয়ে দেই পেইন করছে কি না?
-নো থাঙ্কস। বুঝলে ডিয়ার, আমার সনিকট আসার চেষ্টা করবে আর এভাবেই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারবে।
আনাবিয়া চলে যায়। ইরান আনমনে হাসে। ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে পাগলদের মতো হাসতে থাকে।
-অনিচ্ছাকৃত ভাবে তো জীবনে অনেক সর্বনাশই করেছি এবার নাহয় ইচ্ছেকৃত ভাবে পুরো জীবন বরবাদ করলাম। এই আঘাত দিয়েই তবে নতুন কিছুর সূচনা হলো!
_____________________🖤
দুই সপ্তাহ পর। সময় নদীর স্রোতের মতো প্রবহমান। পৃথিবীর এতশত শক্তি ব্যর্থ সময়ের এই গতিশীলতাকে রোধ করতে। জীবন থেকে অতিবাহিত সময় পুনরায় ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। শ্রাবন মাস চলছে এখন। এই রোদ তো এই গগন কাঁপিয়ে বৃষ্টি। আজও সকাল থেকে আকাশে মেঘের আনাগোন দেখা যাচ্ছে। যেকোনো সময়ই তুমুল ঝড় শুরু হয়ে যেতে পারে। বেশ আরাম আয়েস করে দিন যাচ্ছে আনাবিয়ার। এতদিনে এখন পর্যন্ত তনুসফা শেখ তার সাথে ভালোভাবে কথা বলেনি। অতি প্রয়োজন ছাড়া আনাবিয়ার সামনেও সে আসে না। জেসিকা মেয়েটা আনাবিয়া ডান হাত হয়ে গিয়েছে। গলায় গলায় ভাব দুইজনের। ইসরাফের অসুস্থতার কারণে জেসিকার বিয়েটাও মাঝ পথে আটকে আছে। ইরানকে নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে ভীষণ অস্বস্তিতে আছে আনাবিয়া। প্রথম এক সপ্তাহ সে ইচ্ছে মতো জ্বালিয়েছে ইরানকে কিন্তু এখন ইরান তাকে জ্বালাচ্ছে। বিয়ের পর পর সে এক ভদ্র, সুশীল ইরানের সাথে পরিচিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান ইরান রাস্তার লা*ম্পো*স্ট, বখাটেদের থেকেও ভয়ংকর। আনাবিয়ার মাঝে মাঝে মনে হয়, সে হলো এক সুন্দরী রমণী আর ইরান হলো এক নেশা*খোর, লু*চ্চা, বদমাইশ গুন্ডা।
ইসরাফ এখন আগের থেকে ভালো আছে। ওপরের ফুল বডি ঠিক শুধু এক পা সারাজীবনের জন্য অকেজো হয়ে গিয়েছে। জ্ঞান ফেরার পর ইসরাফ সর্বপ্রথম আনাবিয়ার কথা জিজ্ঞেস করেছিল। তনুসফা কিছু বলেনি। ইরানের বিয়ের বেপারেও জানে না ইসরাফ। একমাসের মতো হসপিটালে থাকতে হবে তার। সম্পূর্ণ বেড রেস্টে। আজ বাদে কাল ভোট। এলাকার চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে। ভোটে দাঁড়িয়েছে তনুসফা শেখ। মহিলা সদস্যে কয়েক বছর ধরে সেই বিজয়ী হয়েছে আসছে। তার ধারণা এবারও তিনিই জিতবেন। ইরান এখন বাসায় কম থাকে। অফিসের কাজ ও ভোটের কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছে সে। এতে অবশ্য আনাবিয়া মহাখুশি।
মিটিং রুমে বসে কাজ নিয়ে ডিসকাস্ট করছে ইরান ও অন্য পার্টির লোকেরা। ইরান শুধু শুনছে কিছু বলছে না। তার মন মস্তিক কিছুদিন ধরে কাজের মধ্যে নেই। সবসময় আনাবিয়ার কথাই তার মস্তিকে ঘুরাঘুরি করে। আজ সকালে অফিসে আসার সময়ও আনাবিয়ার সাথে তার ঝগড়া হয়েছে। মেয়েটা একটু বেশিই ঝগড়াটে! সবসময় নিজের খাড়া নাকের ডগায় জেদ নিয়ে ঘুরে। কিন্তু যখন রাগের কারণে মুখশ্রী লাল হয়ে, দু’গাল ফুলে টমেটো হয়ে থাকে তখন সত্যিই পুতুল পুতুল লাগে আনাবিয়াকে ইরানের চোখে। নিজ চিন্তায় বিভোর ইরান একা একাই মুচকি মুচকি হাসছে।
পাশে বসা অন্য কোম্পানির ম্যানেজার আড়চোখে ইরানকে দেখছে। সবসময় তারা দেখে আসছে কাজের বেপারে ইরান শেখ অত্যান্ত সিরিয়াস। কাজের সময় হাসি ঠাট্টা একদম অপছন্দ তার। কিন্তু আজ অকারণে সে একাই একাই পাগলের মতো কেনো হাসছে! তাজীবও কিছু বুঝতে পারছে। হঠাৎ তার স্যারের হলো টা কী!
একটু শব্দ করে কেশে তাজীব ইরানের উদ্দেশ্য বলে,
-স্যার,
ইরান চুপ। থুতনির নিচে হাত দিয়ে একমনে কিছু ভেবে চলছে সে। তাজীব এবার একটু উঁচু স্বরে বলে,
-স্যার,
এতো জোরে ডাকায় ভড়কে যায় ইরান। কোনোরকম নিজেকে সামলে বাস্তবে ফিরে আসে। কী সুন্দর একটা কল্পনা করছিল সে। কিন্তু এই তাজীবের জন্য পুরো কল্পনাটা সমাপ্ত হলো না! ইরান কটমট দৃষ্টিতে তাজীবের পানে তাকায়। পারে না চোখ দিয়েই তাজীবকে গিলে খেয়ে ফেলে!
-স্যার তাহলে কী ডিল ওকে করবেন?
-ক্যানসেল দা মিটিং।
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ইরান। ইরানের সাথে উপস্থিত সবাই উঠে দাঁড়ায়। একজন বিরক্ত হয়ে বলে,
-এমপি সাহেব এভাবেই যদি মিটিং ক্যানসেল করার ছিল তাহলে আগেই বলে দিতেন। শুধু শুধু আমাদের টাইম ওয়েস্ট হতো না।
-ডিল ওকে যেহেতু আমি করব তাই আমার মন মতোই আপনাদের আসতে হবে এবং যেতে হবে।
গম্ভীর কণ্ঠে উক্ত উক্তিটি বলে গটগট করে বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ইরান। তাজীব পিছনে পিছনে আসতে আসতে বলে,
-স্যার, স্যার হঠাৎ কোথায় যাচ্ছেন আপনি? এখন তো আপনার আরেকটা মিটিং।
-উম তাজীব এক কাজ করো আজকের সব মিটিং ক্যানসেল করে দেও।
-কিন্তু স্যার মিটিং গুলো ইম্পরট্যান্ট ছিল! আবার মন্ত্রী সাহেব আসতো আজ আপনার সাথে দেখা করতে।
-স্যার আমি নাকি তুমি?
ভেবছেঁকা খেয়ে যায় তাজীব। ভীত হয়ে বলে,
-অবশ্যই স্যার আপনি।
-সো যেটা বললাম সেটা করো। আর মিনিস্টারকে আমি বুঝিয়ে বলবো নে।
-ঠিক আছে স্যার। কিন্তু আপনি এখন কোথায় যাবেন?
ইরান সোজা হয়ে দাঁড়ালো তাজীবের সামনে। পরিহিত কোট টান দিয়ে ঠিক করে নেয়। হাতের সাহায্যে মাথার কেশ গুলো সেট করে বলে,
-আচ্ছা তাজীব, আমাকে ভালো লাগছে তো?
ইরানের প্রশ্ন তাজীবের মাথার ওপর দিয়ে গেলো। এই প্রথম ইরান তাকে এইরকম অদ্ভুত কথা জিজ্ঞেস করছে। এখন কী বলা উচিত ভেবে পেলো না তাজীব। ইরান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাজীব মেকি হেসে বলে,
-সবসময়ই আপনাকে ভালো লাগে স্যার। দেখেন না অফিসের মেয়ে স্টাফরা আপনার জন্য পাগল!
-বুড়ো বুড়ো লাগছে নাতো?
-একদমই না।
-ভাবছি খুব জলদি একটা পার্সোনাল জিম সেন্টার খুলবো। শুধুই আমার জন্য।
-কিন্তু স্যার আপনি তো চিকনই আবার বডিও আছে আপনার!
-আরো ফিট হতে হবে। এখন বিদেশীনিকে ইমপ্রেস করতে হলে আগে তার মন মতো নিজেকে তৈরি করতে হবে তো।
-বুঝলাম না স্যার?
-বেশি বুঝা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
লিফটে দাঁড়িয়ে ইরান হাত ঘড়িতে সময় দেখছে আর তাজীব ভুতের মতো ইরানকে দেখছে। আহাম্মকের মতো আবারও প্রশ্ন করে,
-স্যার বললেন না কোথায় যাচ্ছেন?
-আমার এখন মানসিক শান্তির ভীষণ প্রয়োজন তাজীব। তাই আমার মানসিক শান্তির কাছে যাচ্ছি।
____________________
ইরানের রুমে বিছানায় বসে ফোন টিপছে আনাবিয়া। কতদিন ধরে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা হয় না। আনাবিয়া মনে মনে ভাবলো ইরান বাসায় আসলে রাশিয়া যাওয়ার কথা বলবে তাকে। যদি ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে যায় তাহলে তো হলোই। আর যদি না হয় তাহলে বিনা অনুমতি নিয়ে চলে যাবে। মুড ভালো করার জন্য আনাবিয়া লিলিকে কল দেয়। কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই কল রিসিভ করে লিলি।
-হেই আনাবেবি, হাও আর ইউ?
-ফাইন। হোয়াট এবাউট ইউ?
-আই এম গুড। এতদিন পর কল দিলি যে?
-আর বলিস দুঃখের কথা কাকে বলি! অনেক পেরায় আছি বুঝলি।
-ওওও! কাম ব্যাক আনা উই মিস ইউ সো মাচ।
-ইয়েস। সুন।
-আমরা বাংলাদেশ যেতে চাই। কাল সবাই মিলে প্ল্যান করছিলাম।
আনাবিয়া আগ্রহ নিয়ে বলে,
-আসবি তোরা?
-সিউর না বাট দেখি।
-আসলে আয়। ভীষণ মজা হবে।
-ওকে আমরা ভিসা পাসপোর্ট এর ব্যবস্থা করি।
-ঠিক আছে। রাখি তাহলে?
-হুম বাই।
কল কেটে ফোন বিছানায় রাখে আনাবিয়া। খুশি খুশি মনে সামনে তাকাতেই তার খুশি জানো উধাও হয়ে যায়। দরজার সাথে লেগে দু’হাত বুকে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে ইরান। ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলে,
-এই ভাষাটা আমি আগেও তোমার মুখে শুনেছি।
-এটাই আমাদের নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ।
হঠাৎ কিছু মনে পরতেই দাঁড়িয়ে যায় আনাবিয়া। চোরা চোখে ইরানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-কয়টা বাজে এখন? এতো জলদি কেনো এসেছেন?
ইরান আনাবিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিলো না। গায়ের কোট খুলতে খুলতে আলমিরার দিকে এগিয়ে যায়। আনাবিয়া মুখ বাংলা পাঁচের মতো করে রাখে। শান্ত কণ্ঠে বলে,
-আমি রাশিয়া যেতে চাই।
-এখন যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
আনাবিয়া রেগে যায়। চোখ মুখ কুঁচকে চেঁচিয়ে বলে,
-আই ডোন্ট নিড ইউর পারমিশন ওকে। আই জাস্ট আস্ক ইউ।
ইরান আবারও নিশ্চুপ হয়ে যায়। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে কয়েক মিনিট তাকিয়ে থাকে। আনাবিয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক পরোক্ষ করে চোখ ঘুরিয়ে ফেলে। নিশ্চিত ভঙ্গিতে আলমিরা খুলে জামা নিতে নিতে বলে,
-একটু কষ্ট করে আমার ড্রেসও ব্যাগে ভরে দিও।
আনাবিয়া ইরানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে,
-হোয়ায়?
-আমরা তো হনিমুনে যাচ্ছি তাই।
-হনিমুন কে যাচ্ছে?
-রাশিয়া যাবে না?
-আপনাকে কে নিয়ে যাবে রাশিয়া! আমি একা যাবো।
-উম ইউ ডোন্ট নো ডার্লিং? যেখানে ওয়াইফ সেখানেই হাসব্যান্ড।
>>>চলবে।