তবে_ভালোবাসো_কী #Mehek_Enayya(লেখিকা) #পর্ব ০৭

0
328

#তবে_ভালোবাসো_কী
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ০৭

আরহাম শশুর মশাইয়ের সাথে ভিতরে চলে যায়। মাহানুর তখনও আহাম্মক বনে তাকিয়ে থাকে আরহামের যাওয়ার দিকে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না আরহাম সত্যি এসেছে। মূর্তির হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে পাশে দাঁড়ানো আবিরকে জিজ্ঞেস করে,

-ছোট ভাই আমি যা দেখেছি তুইও কী তাই দেখেছিস? (মাহানুর)

-কী আপু? (আবির)

-ঐ গন্ডারটা সত্যি এসেছে? (মাহানুর)

-কোন গন্ডার আপু? আমি তো কোনো গন্ডারকে দেখছি না!(আবির)

-আরহাম কী এখন আমাদের বাড়ির ভিতরে গেলো? (মাহানুর)

-হুম, কেনো তুমি জানো না! সকালে বড় বাবা যে বললো আজ সকালে ভাইয়া ঢাকায় আসছে বিকালে আমাদের বাসায় আসবে। (আবির)

-না ভাই আমি জানতাম না। (মাহানুর)

মাহানুর আর দাঁড়ালো না। বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে দ্রুত তার রুমে চলে যায়। ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে আরহাম। বাড়ির সকলে তার সেবাযত্ন করতে ব্যস্ত। ব্যাগ ভরে ভরে ফল, মিষ্টি, দই, রসমালাই নিয়ে এসেছে আরহাম। নতুন জামাই খালি হাতে আসবে নাকি শশুরবাড়ি! বড় টেবিল সাজিয়ে খাবার দেওয়া হয়েছে একমাত্র জামাইজানকে। বেশিরভাগ জিনিসই অত্যাধিক তেলের তৈরি। আরহাম আবার পারফেক্ট শরীরে জন্য ডায়েট করে। এখন প্রথম তো এতো খাবার দেখে ঢোক গিলে বেচারা। সবাই খাবার নেওয়ার জন্য তাড়া দিয়েই চলছে। হামযা জুসের গ্লাস এগিয়ে দেয়। আরহাম হালকা হেসে এক চুমুকে গ্লাস খালি করে দেয়। তারপর টুকটাক খাবার খায়। আরহামের মনে হলো জামাই হওয়াও অনেক মুশকিল একটা কাজ! এই যেমন এখন সে কড়া ভাবে ফেঁসে গিয়েছে।

মাহানুর জামাকাপড় পরিবর্তন করে হালকা পাতলা তৈরি হয়ে নেয়। একবার ভাবলো নিচে যাবে। আবার কী মনে করে বিছানায় গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। কোনো কথা বলবে না আজ আরহামের সাথে। চেহারাও দেখবে না। বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন টিপতে থাকে। তখনই রুমে প্রবেশ করে আরহাম। কোনো কিছু না বলে মাহানুরের পাশে বিছানায় বসে পরে। তার ফেইস দেখে বুঝা যাচ্ছে ভীষণ অস্থিরতা ভোগ করছে। মাহানুর চট করে বিছানায় থেকে নেমে যায়। আরহামকে বলে,

-আপনার কী শরীর অসুস্থ লাগছে? সবাইকে বলবো?

আরহাম চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বসে থাকে। বড় একটি নিঃশাস নিয়ে বলে,

-আমি ঠিক আছি। আমার শশুর, চাচা শশুর ও চাচী শাশুড়িরা এতো খাবার খাইয়েছে আমার মনে হচ্ছে আমি ব্লাস্ট হয়ে যাবো। আমার পেটানো শরীর একদিনেই নষ্ট হয়ে যাবে!

-একদম ভালো হবে।

মাহানুর পুনরায় গোমড়া মুখ করে সোফায় যেয়ে বসে পরে। আরহাম বিষয়টা পরোক্ষ করে। টান টান হয়ে বসে মাহানুরকে জিজ্ঞেস করে,

-কেমন আছো?

-ভালো ছিলাম এখন খারাপ আছি।

-আমাকে দেখে খুশি হও নি?

-জানি না।

আরহাম মাহানুরের তেরা কথা শুনে বুঝে মাহানুর কোনো কারণে রেগে আছে তার ওপর। আরহাম বসে থেকে উঠে মাহানুরের পাশে যেয়ে গা ঘেঁষে বসে পরে। মাহানুর উঠতে নিবে কিন্তু আরহাম মাহানুরের হাত ধরে আটকে দেয়। শান্ত কণ্ঠে বলে,

-কোনো ভুল করেছি আমি?

-না।

-তাহলে শরীর অসুস্থ?

-না।

-তাহলে কেউ বকেছে?

-নাহ।

-তবে হয়েছে টা কী? এইরকম বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে বসে আছ কেনো?

-কিছু হয়নি। কবে ঢাকায় এসেছে আপনি?

-আজ সকালেই।

-কয়দিন থাকবেন?

-এক সপ্তাহ।

-ওহহ! তার মানে এখন বিয়ের অনুষ্ঠান হবে না?

মাহানুরের কথায় মুচকি হাসে আরহাম। একটু দুষ্ট ভঙ্গিতে বলে,

-শশুরবাড়ি যাওয়া ভীষণ তাড়া দেখছি তোমার!

-মোটেও না। আমি জাস্ট আস্ক করেছি।

-ওয়েল। আমার এক কাজিনের বিয়ে দুইদিন পর। অনেক আবদার করেছে তার বিয়েতে যাওয়ার জন্য। এখন মাও জোর করল তাই অনেক কষ্টে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে এসেছি।

-ওহ।

ছোট শব্দে উত্তর দিলো মাহানুর। তার মানে আরহাম তাকে সারপ্রাইস দিতে ঢাকায় আসেনি! মুখ ছোট হয়ে যায় মাহানুরের। আরহাম মাহানুরের হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে কাতর কণ্ঠস্বরে বলে,

-তোমাকে এক নজর দেখার স্পৃহা জেগেছিল মনে। এখন মন জানো তৃপ্তিপূর্ণ হলো। কিছু একটা আছে তোমার মাঝে! তোমার মায়ায় পরে যাচ্ছি প্রগাঢ় ভাবে।

মাহানুর মন পুলকিত হয়ে উঠলো। কয়েক বার চোখের পলক ফেলে। অন্তরে এক শীতল হাওয়া ছেয়ে গেলো। মাহানুরকে চুপ থাকতে দেখে আরহাম আবারও বলে,

-এখন মা চাচ্ছে তোমাকেও সাথে নিয়ে যেতে। দাদাবাড়ির সকলের সাথে পরিচিত করিয়ে দিবে।

-আমি কিভাবে যাই?

-আমার ওয়াইফ হিসেবে যাবে। এমনেও সবাই তোমাকে দেখতে চাচ্ছে।

-বাবা আর চাচ্চুরা আমাকে একা কোথায়ও যেতে দেয় না।

-আমি বলবো তাঁদের। জানো আজ আমি এক অন্য মাহানুরকে দেখছি! তিনমাসে ভালোই পরিবর্তন হয়েছে।

-শুধু মেজাজ গরম করিয়েন না খারাপ হতে সময় লাগবে না।

মাহানুর উঠে দাঁড়ায়। আরহাম একটু মজা করার জন্য মাহানুরকে বলে,

-এই মাহানুর তোমার চুলে তেলাপোকা!

এক চিৎকার করে উঠে মাহানুর। পাগলের মতো মাথা ঘুরাতে থাকে। চুল সব এলোমেলো হয়ে মাহানুরের মুখশ্রী ঢেকে ফেলে। কিন্তু তেলাপোকা পেলো না সে। আরহাম হাসতে হাসতে শেষ। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গিয়েছে হাসতে হাসতে। মাহানুর চোখ মুখ শক্ত করে জিজ্ঞেস করে,

-তেলাপোকা কোথায়?

-ছিল চলে গিয়েছে হয়তো!

কথা বলে আবারও হাসতে থাকে আরহাম। মাহানুর বুঝে যায় আরহাম শয়তানি করছে তার সাথে। মাহানুর চেঁচিয়ে বলে,

-আমার সাথে শয়তানি তাই না চান্দু! তোমাকে আমি বুঝাচ্ছি মজা। জাস্ট ওয়েট।

মাহানুর তেড়ে যায় আরহামের দিকে। আরহামের সেট করা চুলগুলো মুঠি করে ধরে টেনে দেয়। মৃদু আওয়াজ করে আরহাম। সাথে সাথেই মাহানুর ছেড়ে দেয়। মাহানুর দূরে সরে যেতেই আরহাম আবারও হেসে উঠে। বহু কণ্ঠে নিজের হাসি থামায়। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাহানুরকে দেখে আবারও ফিক করে হেসে দেয়। পেটে হাত দিয়ে বলে,

-ইউ লুক সো ফানি ওয়াইফি!

মাহানুর কিছু বললো না। আরহামের পুরো মুখের হাসিটা ভালো লাগছে তার। আসলেই লোকটার গঠন আকর্ষণ করার মতো! মাহানুর আয়নার সামনে যেয়ে চুল ঠিক করে। তারপর আরহামকে জিজ্ঞেস করে,

-বাসায় কখন যাচ্ছেন?

-শশুর আব্বারা তো বললো আজ রাত থেকে যেতে। কিন্তু আমি রাতে চলে যাবো।

-ওহ আচ্ছা। এখন তাহলে আমার সাথে নিচে চলুন।

আরহাম বিছানায় শুতে শুতে নিষ্ক্রিয় ভঙ্গিতে বলে,

-না আমি একটু রেস্ট করি। নিচে গেলে আবার কী না কী খাইয়ে দেয় কে জানে! বাতি বন্ধ করে যেও।

-ঠিক আছে।

আরহামের কথা মতো বাতি নিভিয়ে দেয় মাহানুর। তারপর শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দেয়। সকালে থেকে গোমড়া মুখ্য মাহানুরের মুখে এখন হাসির দেখা মিলছে। গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে নিচে নামছে।
কয়েক শতাংশ জায়গা নিয়ে বিশাল বাড়ি তাঁদের। যেহেতু এটা তার দাদা বানিয়েছিল সেই অনুযায়ী অনেক পুরোনো বাড়িটা। অসুস্থ থাকা কালীন মাহানুরের দাদা বলেছিল বাড়িটা ভেঙে সুন্দর করে বানাতে। কিন্তু তার বাপ চাচারা কিছুই করেনি। তাঁদের মতে এই বাড়িটা তাঁদের বাবা ভীষণ সখ করে বানিয়েছিল এখন কেনো ভাঙবে! একটু রঙ আর রুমগুলো ঠিক করে নিয়েছে এতেই বাড়িটা নতুনের মতো চকচকে। তার দাদার পছন্দ ছিল বলতে হবে! আগের জমানায় বাস করেও অনেক সুন্দর করে বানিয়েছে বাড়িটা। সদর দরজা পেরিয়ে মধ্যে ড্রইংরুম। বড় গোল সোফা ও টেবিল দিয়ে সাজানো সেখানটা। নিচ তালায় পাঁচটা রুম। ড্রইংরুমের ডান সাইড দিয়েই দেওয়া হয়েছে সিঁড়ি। সিঁড়ির নিচের ঐখানটায় একটা সিক্রেট দরজা রয়েছে বাহিরে যাওয়ার। ওপরের তালায় ছয়টা রুম। একদম শেষ প্রান্তে একটি ছাদের মতো খালি জায়গা। সেখানে বিভিন্ন ধরণের ফুল, ফল ও সবজির গাছ লাগানো। এইরকম ডিজাইনের বাড়ি মাহানুরের দাদা তাঁদের সময়ে একটা মুভিতে দেখেছিল। তারপর সে ভাবলো এইরকম ডিজাইনের বাড়িই বানাবে। সবাই তাকিয়ে দেখবে আর প্রশংসাই করবে।

মাহানুর সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখলো সবাই ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে। কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে সবার মাঝে। মাহানুর এগিয়ে গেলো। তাকে দেখে মেহরাব খান বললো,

-মা আরহাম কোথায়? (মেহরাব খান l)

-শুয়ে আছে বাবা। (মাহানুর)

-তাকে বলেছি আজ রাত থেকে যেতে কিন্তু সে নাকি থাকবে না! বিয়ের এতো মাস হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত শশুরবাড়িতে একরাতও থাকলো না!(মেহরাব খান)

-আম্মা আব্বার কী আমাদের আপ্যায়ন ভালো লাগে না? (হামযা খান )

-এইরকম কিছু না বড় বাবা সে এভাবেই থাকতে চায় না। (মাহানুর)

মাহানুর পরে গিয়েছে বড় জ্বালায়। এখন সে সবাইকে কিভাবে বলবে যে আরহাম ফাঙ্কশন করে বিয়ে করার আগে তার সাথে রাত কাটাতে চায় না। অস্বস্তিবোধ করে মাহানুর আশেপাশে চোখ বুলায়।

-মা তুই কী আবার জামাইজানকে কিছু বলেছিস নাকি? (হাজেরা)

-আমি কী বলবো আবার! আরেহ সে নিজ ইচ্ছায়ই থাকতে চায় না। (মাহানুর)

মাহানুর আর দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে হেঁটে আবিরের রুমে চলে যায়। সেখানে বসে সব বাচ্চারা আড্ডা দিচ্ছে। এখানে বড়দের মধ্যে থাকলে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে অজ্ঞান হয়ে যাবে! আবিরের রুমে বসে লুডো আর ক্যারামবোট খেলছে সবাই। মাহানুর বিছানায় যেয়ে বসে পরে। আয়াস, সায়রীন, আবির, সাদী ক্যারামবোট খেলছে। আর আসীন, সামি, ইরা, ইফতি লুডো খেলছে। মাহানুরকে দেখে ফায়াজ লাফ দিয়ে মাহানুরের কোলে যেয়ে বসে পরে। আয়াস আড়চোখে মাহানুরকে দেখে বলে,

-কিরে ছেড়ি, তুই এখানে কেনো? ভাইয়া কোথায়? (আয়াস)

-শুয়ে আছে তোদের ভাইয়া। (মাহানুর

-ভাইয়াকে নিয়ে আসতি দেখতাম আর্মি মানুষের খেলাধুলায় কেমন?(আয়াস)

মাহানুর মুখ লটকিয়ে আয়াসের পানে চায়। বিরক্তিকর কণ্ঠে বলে,

-তুই যেয়ে নিয়ে আয়। ভালোই সবাই আমাকে রেখেই খেলছে! মনে থাকবে। (মাহানুর)

-নে আমার জায়গায় খেল আমি ভাইয়াকে নিয়ে আসি। (আয়াস)

-যা। (মাহানুর)

মাহানুর খেলায় মগ্ন হয়ে পড়লো। সায়রিন এবার আর চিটিং করতে পারলো না মাহানুরের জন্য। মাহানুর বাঁকা হেসে বলে,

-ভাবিজান এবার তোমাকে কে বাঁচাবে!(মাহানুর)

-ননদিনী তুমি নিজেকে বাঁচাও। (সায়রিন)

মাহানুর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে খেলছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আয়াস আরহামকে নিয়ে রুমে উপস্থিত হয়। আরহাম একটু সরম পাচ্ছিলো আসতে কিন্তু আয়াসের টানাটানিতে না এসে পারলো না। এখন রুমে এতো বিচ্ছু দেখে ঢোক গিলে। আসীন বসা থেকে উঠে নিজের জায়গায় আরহামকে বসিয়ে দেয়। সবার সাথে এক এক করে পরিচিত হয় আরহাম। সে জানতো তার ওয়াইফের কোনো ভাইবোন নেই। কিন্তু এখন তো সে দেখে বিচ্ছু শালাদের অভাব নেই! একটার সাথে আরেকটা ফ্রি! ইফতি আর সায়রিন চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছে আরহামের দিকে। সায়রিনের এবারও হিংসা হলো মাহানুরের ওপর। সব বেস্ট জিনিস ও-ই কেনো পায়? ইফতি তখনও অবাক হয়ে তাকিয়েই ছিল। ফায়াজ একবার আরহামকে দেখে মাহানুরকে জিজ্ঞেস করে,

-আপ্পি ঐ লম্বা লোকটা কে? (ফায়াজ)

-ফায়াজ বাবু ঐ লম্বা লোকটা তোমার ভাইয়া হয়। (মাহানুর)

-আসীন আয়াস ভাইয়ার মতো? (ফায়াজ)

-হুমমম। (মাহানুর)

-কিন্তু সে তো আগে আমাদের বাসায় ছিল না! হঠাৎ কিভাবে এলো? (ফারাজ)

-নতুন ভাইয়া সে। (মাহানুর)

-তোমারও ভাইয়া হয়? আয়াস ভাইয়ারও ভাইয়া হয় সে? (ফায়াজ)

মাহানুর এবার ভেবছেঁকা খেয়ে যায়। এখন সবার সামনে কী বলবে ভেবে পেলো না। আসীন ফায়াজকে বলে,

-তোমার নুর আপ্পির জামাই সে। বুঝলে? (আসীন)

-আপ্পি বিয়েও করে ফেলেছে!(ফায়াজ)

এবার ফায়াজের কথা শুনে সকলে একসাথে হেসে দেয়। আরহামও হাসে। মাহানুর মাথা ঘুরিয়ে একবার আরহামের দিকে তাকায়। কোইনসিডেন্টলি আরহামও মাহানুরের দিকে তাকিয়েছিল। দুইজনের চোখাচোখি হতেই মাহানুর দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। তারপর সবাই একসাথে খেলায় মগ্ন হয়। আরহামও সুন্দর ভাবে মিশে যায় মাহানুরের ভাইদের সাথে।

রাতে আর রেস্টুরেন্ট যাওয়া হয় না। বাসায়ই মহাভোজনের আয়োজন করা হয়। রাতে সবার সাথে ডিনার করে বাসায় চলে যায় আরহাম। আরহাম যখন চলে যাচ্ছিল তখন ভীষণ খারাপ লাগে মাহানুরের। তার মন চাচ্ছিল আরহামকে যেতে বারণ করতে। কিন্তু মনের কথা মনেই রেখে দেয়। মন খারাপ করে বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে আছে মাহানুর। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না তার। সব বিরক্তিকর।

-মা ঘুমিয়ে পড়েছিস? (হাজেরা)

হাজেরার ডাক শুনতেই উঠে বসে মাহানুর। জামা ঠিক করে দরজা খুলে দেয়। সাথে সাথেই হাজেরা, রামিশা আর লুৎফা মাহানুরের রুমে ঢুকে পরে। হঠাৎ এইসময় তিন চাচীর একসাথে আগমনের কারণ খুঁজে পেলো না মাহানুর। হাজেরা মাহানুরের হাত ধরে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দেয়। রামিশা লুৎফাও বসে।

-এমন দেখাচ্ছে কেনো শরীর ভালো লাগছে না? (রামিশা)

-না ঠিক আছি মেজো চাচী। (মাহানুর)

-আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পর আমি বিলি কেটে দেই। (হাজেরা)

মাহানুর একটুও সময় ব্যয় করল না। ঝটপট হাজেরার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে। চোখ বন্ধ করে মা মা অনুভব করতে থাকে। আপন মা নেই তবে সৃষ্টিকর্তা তাকে একসাথে তিন তিনটে মা দিয়েছে। এই তিনজনের চোখে মণি সে। হাজেরা মাথা বিলি কেটে দিতে দিতে বলে,

-মা আরহামকে কী তোর কোনো কারণে অপছন্দ? (হাজেরা)

-না বড় মা। (মাহানুর)

-তাহলে কোনো ঝগড়া হয়েছে তোদের মধ্যে? (লুৎফা)

-না ছোট চাচী সব ঠিক আছে। (মাহানুর)

-তাহলে আরহাম থাকতে চাইলো না কেন? (হাজেরা)

-ফাঙ্কশন করে বিয়ে করার আগে সে আমার সাথে রাত কাটাতে চায় না বড় মা। এখন এই কথাটা কী সবার সামনে বলা যায়?(মাহানুর)

-এই কথা! আমরা আরো কত কী ভাবলাম! তোর চাচারা ছেলে মাশাআল্লাহ চয়েস করেছে তোর জন্য। (রামিশা)

-ঠিক বলেছো মেজো চাচী। সে অনেক ভালো। তার কথাবার্তা, চালচলনও সুন্দর। (মাহানুর)

হাজেরা মাহানুরের কথা শুনে খুশি হয়। আমতা আমতা করে বলে,

-দেখ মা এখন আমরা তোর চাচী না তোর বান্ধবী। তাই আমরা যা বলবো চুপচাপ শুনবি। বুঝলি? (হাজেরা)

-হুম বলো? (মাহানুর )

-মা তুই নিশ্চই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের কথা জানিস? আরহাম আর তোর বিয়ে হয়েছে সব নিয়ম অনুযায়ীই। এখন শুধু অনুষ্ঠান করে তারা তোকে নিয়ে যাবে। আরহাম যদি রাতে থাকতে চায় তাহলে না করবি না কারণ ও তোর স্বামী। আর ও যা যা বলবে করার চেষ্টা করবি। (হাজেরা)

-হুম। (মাহানুর)

-আরেকটা কথা, তোরও বয়স হচ্ছে ওর ও হচ্ছে। এখন তোদের দুইজনের উচিত দ্রুত একটা বাচ্চা নিয়ে ফেলা। বর্তমান যুগে মেয়েদের বেশি বয়স হয়ে গেলেই আর বাচ্চা কাচ্চা হয় না। (হাজেরা)

মাহানুরের এবার হাসি পেলো হাজেরার কথা শুনে। এখন পর্যন্ত তারা দুইজন দুইজনের হাতই ধরলো না রোমান্টিক ভাবে আর বাচ্চা! আরহাম আর তার মধ্যে আদৌ কী ঐরকম সম্পর্ক হবে! হ্যাঁ স্বপ্নে হতে পারে। এইসব ভেবে একা একাই হাসতে লাগলো মাহানুর।

>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here