তবে_ভালোবাসো_কী #Mehek_Enayya(লেখিকা) #পর্ব_১০_১১

0
323

#তবে_ভালোবাসো_কী
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_১০_১১

#পর্ব ১০

বিকেল পাঁচটায় ঘুম ভেঙে যায় মাহানুরের। আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে বিছানায়। পিঠ সমান চুল গুলো হাত খোঁপা করে নেয়। ওড়নাটা সুন্দর করে নিয়ে কিনারে তাকাতেই ভুত দেখার চমকে যায় মাহানুর। বুকে তিনবার ফুঁ দিয়ে ছোট ছোট চোখ করে বলে,

-এভাবে ভুতের মতো বসে আছেন কেনো হুম? নাকি আমার ঘুমের ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন? কোনটা?

আরহাম বিরক্তিকর দৃষ্টিতে মাহানুরের পানে তাকায়। কাজ করতে করতে অসাবধানতায় শার্ট এর ওপর ময়লা পরায় শার্ট পরিবর্তন করতে এসেছিল আরহাম। মাহানুরের ঘুমন্ত মুখ দেখে বিমোহিত হয়ে যায়। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিনকে। ঘোরের মধ্যে সোফায় বসে পরে। আর তখনই ঘুম ভাঙে মাহানুরের। আরহাম পূর ঠোঁটের ওপরে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলে,

-না মানে তোমার মাথায় কী ভালো কোনো ভাবনা আসে না? সবসময় উল্টোপাল্টা কথাই কেনো বলো?

-না ভালো কথা বলতে পারি না আমি।

-হ্যাঁ প্রথমদিনই বুঝতে পেরেছি আমি!

মাহানুর কিছু বললো না। বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখে ওয়াশরুমে যেতে নেবে তখনই আরহাম বসা থেকে দাঁড়িয়ে মজার ছলে বলে,

-ঘুমালে তোমাকে পেত্নীর থেকে কম লাগে না কিন্তু! শেষমেষ আমাকে একটা পেত্নী ধরিয়ে দিলো!

মাহানুর যেখানে ছিল সেখানেই কোমরে হাত দিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে। আরহাম মাহানুরকে শান্ত দেখে ভ্রু কুঁচকায়। মাহানুর পাশ কেটে যেতে যেতে বলে,

“উগান্ডার গন্ডার!

আরহাম শুনে মাহানুরের হাত আঁকড়ে ধরে থামিয়ে দেয় তাকে। মাহানুর একবার আরহামের হাতের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আরহামের মুখের দিকে।

-সমস্যা কী ঘেঁষা-ঘেঁষী করতে মন চায়? উইযে কোলবালিশ আছে তার সাথে যেয়ে করুন।

– এতো সুন্দর বউ স্মুখীন থাকতে কোলবালিশের সাথে কেনো ঘেঁষা-ঘেঁষী করব!

-খারাপ ছিল ফ্ল্যার্টিং লেভেল! আপনার থেকে ভালো আমি ফ্ল্যার্ট করতে পারি।

-তাই নাকি! কয়টার সাথে করেছো?

-অনেক। কখন গোনা প্রয়োজন বলে মনে করিনি।

আরহাম বাঁকা হাসে। দুষ্ট ভঙ্গিতে বলে,

-আমাকে তুমি এখনও চিনতে পারনি মাহানুর খান! জাস্ট সম্পূর্ণ রূপে তোমাকে নিজের ওয়াইফ করার আগে নিজের চরিত্রে দাগ লাগাতে চাচ্ছি না।

-বেশ ভালো।

-শুনো সাজিয়ার সাথে একটু বুঝে শুনে কথা বলো। আর সাজিয়া উল্টোপাল্টা কিছু বললে আগে আমাকে জিজ্ঞেস করবে তারপর বিশ্বাস করবে। বুঝলে?

-হুম। কিন্তু কেনো?

-এভাবেই।

-আপনাদের ভাই-বোনদের সম্পর্ক এইরকম কেনো? আজব! আমি দেখি আমার চাচাতো ভাইদের সাথে একদম ফ্রি।

-সব বোনরা তোমার মতো সাদা মনের হয় না! অনেকের মনেই কাদা থাকে বুঝলে?

-হুমম।

-বাই দে ওয়ে, আজ কিন্ত আমাদের ফাস্ট নাইট।

মাহানুরের মুখে পরিবর্তন আসে। না বুঝার ভান করে জিজ্ঞেস করে,

-মানে?

-আমরা একসাথে থাকছি।

একটু ভীত হয়ে গেলো মাহানুরের মুখশ্রী। ছোট ছোট আঁখিজোড়া সরিয়ে ফেলে আরহামের চোখের থেকে। আরহামও হাত ছেড়ে দেয়। মাহানুর কিঞ্চিৎ সময় ব্যয় না করে ওয়াশরুম চলে যায়। মাহানুরের রিঅ্যাকশন দেখে একা একাই হাসে আরহাম। তারপর রুমের বাহিরে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে মাহানুর। আয়াসকে ভিডিও কল দিয়ে কথা বলতে থাকে। তখনই রুমে প্রবেশ করে সুনহেরা আর সনিয়া। তাঁদের দেখে মাহানুর মৃদু হেসে ফোন রেখে দেয়। সনিয়া এসে বিছানায় শুয়ে পরে। সুনহেরা ধীরে সুস্থে বসে। ছয় মাসের অন্তসত্তা সুনহেরা। স্বামী কানাডায় থাকে। শশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতেই বেশি থাকে। মাহানুরের দিকে তাকিয়ে বলে,

-ভাবি কী করছো? (সুনহেরা)

-এইতো বসেই ছিলাম আপু। বোরিং লাগছিলো অনেক। (মাহানুর)

-হুম আমাদেরও বোরিং লাগছে তাই তোমার সাথে কথা বলতে এলাম। শরীরটাও ভালো লাগছে না। (সুনহেরা)

-পেইন করছে কী? (মাহানুর)

-না পেইন করছে না এমনেই একটু অস্থির লাগছে। (সুনহেরা)

-বসে না থেকে শুয়ে পরো আপু ভালো লাগবে। (মাহানুর)

-শুয়েই ছিলাম এতক্ষন। আচ্ছা তুমি রাতে কী পরবে ভাবি? (সুনহেরা)

-হ্যাঁ ভাবি কী পরবে তুমি? (সনিয়া)

-তোমরা কী পরবে? (মাহানুর)

-আমি শাড়ী পরব আর আপু থ্রি পিস পরবে। (সনিয়া)

-তাহলে আমিও থ্রি পিসই পরব। (মাহানুর)

-একদমই না ভাবি শাড়ী পরবে। আমি অসুস্থ তাই শাড়ী পরব না তুমি কেন পরবে না? (সুনহেরা)

-শাড়ী পরতে কেমন জানো লাগে!(মাহানুর)

-না শাড়ীই পরবে প্লিজ ভাবি? তুমি যদি শাড়ী না এনে থাকো তাহলে সমস্যা নেই আমাদের কাছে আছে। (সনিয়া)

-না আমি এনেছি।(মাহানুর)

-তাহলে তো হলোই। শাড়ীই পরবে ভাবি ডেটস ফাইনাল। (সনিয়া)

-ঠিক আছে। (মাহানুর)

এটা সেটা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা তিনজন কথা বলতে থাকে। মাহানুর আর সনিয়া কিছুক্ষন পর পরই শব্দ করে হেসে উঠছে। দরজা ফাঁক করে রুমে ঢুকে সাজিয়া। মাহানুরকে এভাবে হাসতে দেখে তার মন ক্ষুন্ন হয়। মুখে নকল হাসির রেখা টেনে বলে,

-বাহ্! ভাবি ননদদের মুখ থেকে হাসি জানো সরছেই না!(সাজিয়া)

মাহানুর সাজিয়ার দিকে তাকায়। সনিয়া ও সুনহেরা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে সাজিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে। সাজিয়া ভিতরে আসতে আসতে বলে,

-ভাবি পার্লার যাচ্ছিলাম আমরা। আপনি যাবেন? (সাজিয়া )

-না আমি নিজে নিজে তৈরি হতেই পছন্দ করি। (মাহানুর)

-ভালোই তো তাহলে। আপু তোমরা যাবে? (সাজিয়া)

-আমি কোনো সাজগোজ করব না আজ। শরীর ভালো লাগছে না। (সুনহেরা)

-আর আমি ভাবির সাথেই তৈরি হবো। তোরা চলে যা। (সনিয়া)

-ঠিক আছে। আমরা যাই তাহলে। (সাজিয়া)

কথা শেষ করে চলে যায় সাজিয়া। মাহানুর একটু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-আপু তোমাদের সাথে হয়তো সাজিয়ার সম্পর্ক ততো একটা ভালো না রাইট? (মাহানুর)

-হুম রাইট। (সুনহেরা)

-দুই চোখে বিষ আমার। ডিসগাস্টিং মেয়ে একটা!(সনিয়া)

-কেনো কী করেছিল সে?(মাহানুর)

-সে বিরাট কাহিনী ভাবি। (সনিয়া)

-বলো তো শুনি? (মাহানুর)

-সাজিয়া পিচ্চিকাল থেকে আরহাম ভাইকে পছন্দ করে। চাচাতো ভাই হওয়ার সর্তেও সে ভাইয়াকে নিয়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু আমাদের ফ্যামিলিতে কাজিন বিয়ে কেউ পছন্দ করে না। তার ওপর ভাইয়া সাজিয়াকে বোন ছাড়া অন্য কোনো নজরে দেখেনি। তাও তোমাদের বিয়ে কয়েকমাস আগে দাদিমা ভাইয়ার জন্য সাজিয়ার কথা বলে। আম্মুর কিছু বলার আগে ভাইয়া সাফ মানা করে দিয়েছিল। সেদিন রাতে সাজিয়া আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। দাদিমা থেকে শুরু করে সবাই ভাইয়াকে বিয়ে করে নিতে বলে। আমার ভাই ছিল তার কথায় অটল! সে বিয়ে করবে না মানে করবেই না।

থেমে নিঃশাস নেয় সুনহেরা। মাহানুর আগ্রহ নিয়ে বলে,

-তারপর?

-তারপর আর কী ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে হয়ে গেলো। সাজিয়া মেয়েটা ছিল সাইকোর মতো। ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে পরিবর্তন হয়ে গেলো ও। (সুনহেরা)

-তোমাদের ভাই যেহেতু বিয়ে করতে চায়নি তাহলে আমার সময় এতো সহজেই রাজি কেনো হয়ে গেলো?(মাহানুর)

-বিয়ে করতে চায়নি এমনটা নয়। ভাইয়া শুধু কোনো কাজিনকে বিয়ে করতে চায়নি না। ভীষণ ঘাড়তেড়া আর বদমেজাজের মানুষ হলো আমার ভাই। একবার একটা জিনিসের জন্য না করলে সেটা না-ই কেউ আর হ্যাঁ তে পরিবর্তন করতে পারে না! তবে এটা সত্যি তোমাকে হঠাৎ বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাওয়া এটা অবিশ্বাস ছিল! ভাইয়া যে সত্যি তোমাকে বিয়ে করে ফেলবে আমরা কেউই ভাবতে পারিনি। (সুনহেরা)

মাহানুর কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। সনিয়া শয়তানি করে বলে,

-আরেহ আপু বুঝো না ভাইয়া প্রথম দেখায় প্রেমে পরে গিয়েছিল ভাবির। (সনিয়া)

মাহানুর হাসে সনিয়ার কথা শুনে। সুনহেরা হাসি থামিয়ে বলে,

-হ্যাঁ তবে এটা সত্যি ভাইয়ার মনে তোমার জন্য ফিলিংস আছে ভাবি। ভীষণ ক্যারিয়িং তোমার প্রতি ভাইয়া!(সুনহেরা )

-এইরকম কিছুই না আপু। (মাহানুর)

-আছে আছে। তুমি জাস্ট ফীল করবে তাহলে নিজেই বুঝতে পারবে। (সনিয়া)

_________________🖤

সন্ধ্যার পর তারা তিনজন একসাথে তৈরি হয়। কালো রঙের ব্লাউজের সাথে গাঢ় লাল রঙের শাড়ী পড়েছে মাহানুর। মুখে সাজসজ্জা একদম কম। হাতে লাল রঙের চুড়ি, অধরে লাল লিপস্টিক, মাথায় হেজাব বাঁধছে। সনিয়া মাহানুরকে অনেক বলেছিল হেজাব বাধঁতে না। কিন্তু মাহানুর হেজাব বাঁধা ছাড়া বাহিরে যাবে না। সনিয়া আর সুনহেরা তৈরি হয়ে বেরিয়ে যায়। মাহানুর হেজাব ঠিক করছে। কপাল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে আরহাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় সে। পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে নজর বুলাতে থাকে মাহানুরের ওপর। দুইজনের চোখাচোখি হতেই আরহাম দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। মাহানুর ঠাট্টা স্বরে বলে,

-আমি জানি আমাকে সুন্দর লাগছে তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন! দেৎ নজর লাগিয়ে দিলেন তো!

আরহাম হালকা হেসে ব্যাগ থেকে পাঞ্জাবী বের করে ওয়াশরুম চলে যায়। মাহানুর এবার শাড়ীর কুচি ঠিক করে সোফায় বসে পরে। পাঞ্জাবীর বোতাম লাগাতে লাগাতে আরহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়। হলুদ রঙের পাঞ্জাবী আর সাদা রঙের পায়জামা পড়েছে আরহাম। এই কেটকেটে হলুদ রঙটা পছন্দ হলো না মাহানুরের। মনে মনে ভাবতে লাগলো আরহাম যদি কালো রঙের পাঞ্জাবী পরে তাহলে কেমন দেখাবে তাকে। ইসস মাহানুর তো পুরো ফিদা হয়ে যাবে!

মাহানুর বসে বসে লক্ষ্য করছে আরহামকে। মুখে কিছু একটা দিলো আরহাম তারপর চুলগুলো সেট করে নিলো। শেষে বডি স্প্রে দিয়ে তৈরি হয়ে গেলো। কিছু দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজেই আয়নায় দেখলো। মাহানুর মুচকি মুচকি হাসছে আরহামের কান্ড দেখে।

-চলো তাহলে এবার?

-হুম চলুন।

জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে উঠানে। অনেক মানুষই এসে পড়েছে। বউকে বসানো হয়েছে স্টেজের মধ্যখানে। যেহেতু বাড়ির পাশেই মসজিদ সেহেতু গান বাজানো নিষেধ। জিয়া মেহমানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে মাহানুরকে। সকলেই মাহানুরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আরহাম মাহানুরের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

-হলুদ দিবে না?

-হ্যাঁ দেবো তো। স্টেজে চলুন এখন ফাঁকা আছে।

-হুম এসো। শাড়ী ভালো করে ধরিও পরে গেলে তখন আমার মানসম্মান ধুলোয় মিলে যাবে!

-বেশি বলছেন কিন্তু!

-আরো বলবো।

-মাথা ফাঁটিয়ে দেবো একদম!

আরহাম হাসলো। স্টেজে উঠে সাজিয়ার পাশে বসে মাহানুর। অত্যাধিক সুন্দর লাগছে সাজিয়াকে। একটু হলুদ তুলে ছুঁয়ে দেয় সাজিয়ার গালে। সাজিয়া বেশরমের মতো আরহামের দিকে তাকিয়ে ছিল। যেটা মাহানুরের ভালো লাগলো না। নিজের ভিতরে জেলাসি অনুভব করল মাহানুর। হলুদ দিয়ে নিচে নেমে যায় দু’জন। এক এক করে সবার হলুদ দেওয়া শেষ হলে খাবার পরিবেশন করা হলো। এভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়। পুরোটা সময় সাজিয়া আরহামের দিকেই করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তার
চোখ জানো সরেই না!

#পর্ব ১১

বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে মাহানুর। বাহিরে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। জালানা দিয়ে বাতাসের তান্ডব দেখা যাচ্ছে। আরহাম বাহিরে গিয়েছে সব কিছু গুছিয়ে রাখতে। মাহানুর জামাকাপড় পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখানে নেট বেশি একটা ভালো না। মাহানুর চোখ মুখ কুঁচকে ফোনটা বিছানায় আছাড় মারে। সত্যি কী সে নেটের জন্য রেগে আছে নাকি নিজের স্বামীর ওপর অন্য মেয়ে নজর দেওয়ায়? কাঁকভেজা হয়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় আরহাম। পাঞ্জাবী ভিজে চুবচুব।

মাহানুর আরহামের দিকে তাকিয়েও তাকালো না। আরহাম ব্যাগ থেকে পেন্ট টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। মাহানুর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিছানায় থেকে নেমে জালানার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। কী সুন্দর রোমাঞ্চর পরিবেশ! বৃষ্টি মাহানুরের পছন্দ তবে এখন এই বৃষ্টিও মাহানুরের কাছে পাংসুটে লাগছে। আরহাম চুল মুছতে মুছতে মাহানুরকে বলে,

-জালানা লাগিয়ে দেও এই রাতের বেলা কিন্তু সেখানে শিয়াল থাকে।

মাহানুর জালানা লাগিয়ে দিলো। গোমড়া মুখে বিছানায় বসে পরলো। আরহাম সোফায় বসে শান্ত স্বরে বলে,

-কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?

-না কিছু হয়নি।

-তাহলে এমন গোমড়া মুখ করে আছ কেনো?

-তো নাচবো?

-নাচতে পারো। অনেক এনজয়বেল হবে কিন্তু বেপারট!

-আপনিই নাচুন মনের খুশিতে।

কিছুক্ষন আগেই আরহাম ভেজা শরীরে রুমে প্রবেশ করায় ফ্লোর ভিজে আছে এখন। জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে। আরহাম সেটা খেয়াল না করেই বসা থেকে উঠে এগিয়ে বিছানায় যেতে নেবে তখনই স্লিপ খেয়ে মাহানুরকে নিয়ে বিছানায় পরে যায়। ক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ এইরকম কাণ্ডে হতবাক হয়ে যায় মাহানুর। আরহাম নিজেও মাহানুরকে এতো সামনের থেকে দেখে একটা অন্যরকম ঘোরের মধ্যে চলে যায়। অকস্মাৎ তখনই জোরে বজ্রপাত হয়ে বিদ্যুৎ চলে যায়। দু’জনই ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। অন্ধকারে ছেয়ে যায় চারপাশ। দুইজন দুইজনকেও দেখতে পারছে না। মাহানুর একটু ভীত হয়ে আরহামের টি-শার্ট এর কলার খামচে ধরে। আরহাম চোখ বন্ধ করে বড় একটি নিঃশাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে। আরহামের নিঃশাস সম্পূর্ণ মাহানুরের চোখ মুখের ওপর পরলো। মাহানুর আরহামের টি শার্ট ছেড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত উঠে বসে আরহাম। মাহানুর নিজেও উঠে বসে। মাহানুর বিছানায় হাতড়ে নিজের সেলফোন পেয়ে যায়। সেটা দিয়ে ফ্ল্যাশ লাইট অন করে। মুহূর্তেই আলোকিত হয়ে উঠে রুম। আরহাম বসা থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়। একজন কাজের লোক দুইটা জ্বলন্ত মোম নিয়ে এসেছে। আরহাম মোম দুটো টেবিলের ওপরে রাখে। পুনরায় দরজা বন্ধ করে দেয়।

মাহানুর নিজেকে স্বাভাবিক করে বিছানার এক কিনারে যেয়ে বসে। আরহাম বিছানায় যায় না সোফায়ই বসে পরে। কী ভয়ংকর এক অনুভূতি! বাহিরে বৃষ্টির তান্ডব, রুমে বিদ্যুৎ নেই, মোমের হলুদ লালচে আলোয় ছেয়ে আছে চারপাশ। বন্ধ এক রুমে দুইজন মানব ও মানবী, যাদের মনে চলছে আন্দোলন। সদ্য জন্ম নেওয়া একে অপরের প্রতি অনুভূতি গুলোর আন্দোলন! মাহানুর হাত মুঠিবদ্ধ করে বসে আছে। আরহাম নীরবতা কাটিয়ে বলে,

-তুমি শুয়ে পরো।

-আপনি কী বাহিরে শিয়ালদের পাহারা দিতে যাবেন?

এইরকম দমবন্ধকর মুহূর্তে একমাত্র মাহানুরই পারে তেড়া কথা বলতে! আরহাম ভড়কে মাথা তুলে মাহানুরের পানে তাকায়। রুক্ষ কণ্ঠস্বরে বলে,

-হ্যাঁ, তুমি যাবে?

-না আমি রুমেই ভালো আছি।

-ঘুমিয়ে পরো রাত হয়েছে।

-হুম, আর শুনুন আপনিও আর মেয়েদের মতো সরম পেয়েন না! আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ুন অতি ন্যাকা ছেলে আমার পছন্দ না।

আরহাম অবাক হয়ে বলে,

-তুমি বললেও আমি তোমার পাশে শুতাম না বললেও শুতাম ওকে। উইযে হাফ লেডিস টাইপ পুরুষ আমি নই।

মাহানুর ভেবছেঁকা খেয়ে যায়। কিছু না বলে কিনারে শুয়ে পরে। আরহামও মোম নিভিয়ে মাহানুরের পাশে এসে শুয়ে পরে। কিছুক্ষনের মধ্যেই দু’জন ঘুমিয়ে তলিয়ে যায়।

রাত কয়টা অনিশ্চিত। মশার কামড়ে ঘুম ভেঙে যায় আরহামের। বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করেই মশাদের মারতে থাকে। পাশে হাতড়ে দেখে খালি মাহানুর নেই। ঘুম উড়ে যায় আরহামের। এতো রাতে মাহানুর কোথায় গেলো! ওয়াশরুমে কী? বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে লাইট জ্বালিয়ে অন্যপাশে ফিরতেই আতঙ্ককে উঠে আরহাম। শোয়া থেকে উঠে বসে আরহাম। মাহানুর নিচে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে ভুতের মতো। চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারপাশ। আরহাম ভরাট কণ্ঠে বলে,

-মাহানুর না ঘুমিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী করছো? জলদি ঘুমোতে আসো রাতে এইরকম শয়তানি ভালো লাগে না কিন্তু।

কোনো প্রতিক্রিয়া করল না মাহানুর। একই ভঙ্গিতে পিছনে ফিরে দাঁড়িয়ে রইলো। আরহাম এবার বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে নামে। মাহানুরকে নিজের দিকে ঘুরাতেই দেখে মাহানুর ঘুমের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে। আরহামের কপালে হাত! বিড়বিড় করে বলে,

-এই মেয়ের আবার ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাসও আছে! আর যে কত গুন আছে মহারানীর মধ্যে!

আরহাম মাহানুরকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়। নিজেও শুয়ে পরে। এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। এপাশ ওপাশ করছে তবুও ঘুম আসছে না আরহামের। হঠাৎই মাহানুর বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে আরহামের কোমরে জোরে একটা লা*ত্থি দেয়। বেচারা আরহাম মাত্রই ঘুমের দেশে পারি জমিয়েছিল আচমকা লাত্থি খেয়ে ঘুম উদাও হয়ে যায় তার। রাগী চোখে মাহানুরের দিকে তাকায়। মাহানুর ঘুমের মধ্যেই বলে,

-তুজকো মে নেহি চড়ুঙ্গা চূড়েল।

বলেই আরেকটা লাত্থি দেয় আরহামকে। এবারের লাত্থিটা জোরে ছিল। আরহাম অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো মাহানুরের দিকে। মনে মনে বললো, “এই মেয়ের মধ্যে কোনো খারাপ জীন আছে!” মাহানুর এবার স্থির হয়ে যায়। আরহাম ভাবে হয়তো এখন আর আক্রমণ করবে না। কিন্তু তখনই মাহানুর ঘুমের মধ্যেই শোয়া থেকে উঠে বিছানায় বসে কুমফুকারাঠে করতে থাকে। মুখ দিয়ে চাইনিজ নাকি কোন দেশের ভাষায় কিছু একটা বলছে। ইচ্ছে মতো মারে আরহামকে। সর্বশেষে আরহামের রাগ উঠে যায়। নিজের শক্তি দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাহানুরকে। ধীরে ধীরে আরহামের বুকে ঘুমিয়ে পরে মাহানুর। আরহাম মাহানুরকে বিছানায় শুয়ে দেয়। এখন আর কোনো রিক্স নিতে চায় না সে। তাই শয়তানি হাসি দিয়ে মাহানুরের ওড়নার দিকে তাকায়।

__________________🖤

কারো উপ্ত নিঃশাসের আওয়াজ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় মাহানুরের। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই আরহামের ঘুমন্ত মুখ দেখতে পায়। একটু নড়াচড়া করতে নেবে তখনই দেখতে পায় তার হাত পা বাঁধা। কপাল বিরক্তিতে দুই ভাঁজ পরে। অনেক ভাবে উঠার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে আরহামকে ডাক দেয়। কয়েকবার ডাক দিতেই চোখ খুলে আরহাম। বিরক্ত হয়ে বলে,

-কী হয়েছে? সকাল সকালই গলা ফারছো কেন?

-আপনি কী করেছেন রাতে? আমার হাত পা বাঁধা কেনো?

আরহাম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উঠে বসে। মাহানুরের হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। মাহানুর ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথেই আরহামের গলা ধরে বলে,

-সত্যি বলুন কী করেছেন?

হঠাৎই আরহামের মনে একটা দুষ্ট বুদ্ধি জাগে। অসহায় ভঙ্গিতে বলে,

-যা করার তুমিই তো করলে! আমার মতো অবলা পুরুষ পেয়ে একদম ইজ্জত লুটে নিলে। এখন আমি সবাইকে মুখ দেখাবো কিভাবে!

-শয়তানি করছেন? আমি জানি ঐরকম কিছু হয়নি।

-সব কিছুই হয়েছে। ছি মাহানুর খান, ছি! শেষমেষ নিজের স্বামীর সাথেই জোর-জবরদস্তি করলে!

এবার আর সহ্য করতে পারলো না মাহানুর। এমনেই তো অস্বাভাবিক ভাবে তার শরীর ব্যাথা করছে তার ওপর আরহাম আবার উল্টোপাল্টা কথা শুরু করেছে! মাহানুর নিজের দুইহাত দিয়ে আরহামের গলা চেপে ধরে। আরহাম ভড়কে গিয়ে বলে,

-মেয়ে বিধবা হওয়ার সখ জেগেছে নাকি!

-মেরেই ফেলবো একদম!

আরহাম যুদ্ধ করে মাহানুরকে দূরে সরিয়ে দেয়। মেয়ে হলেও এই মেয়ের শক্তি একটু বেশিই! আরহাম নিজের গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

-এমনেই রাতে ঘুমের মধ্যে মেরে আলু ভর্তা বানিয়েছ! এখন কী সেই ভর্তার জুস বানাতে চাও?

-আসলে কী হয়েছিল রাতে?

-তোমার কী ঘুমের মধ্যে চলাফেরার অভ্যাস আছে? বা কথা বলা, মারামারি করার?

মাহানুর নবজাতক হয়ে যায়। সামনে চুলগুলো পিছনে নিয়ে মেকি হেসে বলে,

-ঐ আর কী হালকা পাতলা আছে।

-হালকা পাতলা! আমাকে মেরে মেরে কালকে কী অবস্থা যে করেছ! পরে উপায় না পেয়ে ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখেছিলাম।

-আপনি আর্মি মানুষ হয়ে একজন মেয়ের সাথে পারেন না?

-ছেলে হলে তার হাত পা ভেঙে ফেলতাম। কিন্তু তুমি মেয়ে। তার ওপর আবার আমার মতো অসহায় মানুষের ওয়াইফ তাই কোনো আক্রমণ করিনি।

মাহানুর মুখ ভেংচি দিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়। আরহাম শুধুই মুচকি হাসে। এক রাত থেকেই এই অবস্থা না জানে প্রতিরাত থাকার সময় কী অবস্থা হবে!

দুপুরে বরযাত্রী আসে। বরকে দেখে মাহানুরের মনে হলো বরের বয়স একটু বেশিই! বিয়ে পড়ানো হলো। মুহূর্তের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায়। আরহাম মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত। মাহানুর সনিয়া আর সুনহেরার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আরহামের দাদি একবারও তার সাথে ভালোভাবে কথা বলেনি। আর কেন বলেনি সেটাও মাহানুর বুঝতে পেরেছে। প্রথমে বরযাত্রীর লোকেরা খেতে বসে তারপর বাড়ির সদস্যরা। মাহানুর সনিয়ার সাথে বসেছে। পাশে আরহামের আরো কাজিনরা আছে। টুকটাক কথা বলছে সবাই। মাহানুরের অন্যপাশের চেয়ারে আরহাম এসে বসে পরে। খাওয়ার পর্ব ঠুকিয়ে এবার বিদায়ের পালা। বাড়ির সদর দরকার সামনে সকলে দাঁড়িয়ে আছে। সাজিয়ার মা আর দাদি কান্না করছে। কিন্তু সাজিয়ার চোখে এক ফোটা অশ্রুও নেই। সে জানো পাথরের মূর্তি! অতি কষ্টেই বুঝি মানুষ এইরকম হয়ে যায়? সাজিয়া বিদায় বেলা সবাইকে অবাক করে দিয়ে আচমকা আরহামকে জড়িয়ে ধরে। আরহাম কোনো খারাপ আচরণ করল না বোনের মতোই জড়িয়ে ধরলো। বরযাত্রীরাও খারাপ কিছু ভাবে নি। চাচাতো ভাই, স্বাভাবিক জড়িয়ে ধরতেই পারে। সাজিয়া ছেড়ে দেয় আরহামকে। মাহানুরের সামনে যেয়ে জড়িয়ে ধরার ভান করে বলে,

-আমার মহা মূল্যবান রত্ন এখন আপনার নিকট। ভালো করে যত্ন নিয়েন তার। তবে আপনার থেকে বেশি আমি তাকে ভালোবাসতাম আর সারাজীবন বাসবো। খেয়াল রাখবেন।

__________________🖤

সময় এখন ছয়টা বাজে। গাড়িতে বসে আছে মাহানুর ও আরহাম। দুইজনই নিশ্চুপ। ভেবেছিল কাল বিকেলে ঢাকায় যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে আরহামকে ইমার্জেন্সি তার ক্যানন্টমেন্টে যেতে হবে। আরহাম মাহানুরকে বলেছিল থাকতে। মা বাবার সাথে কাল চলে আসতে। কিন্তু মাহানুর সেই সময় এমনেই উদাসীন ছিল। আবার আরহামের চলে যাওয়ার কথা শুনে আরো মন খারাপ হয়ে যায় তার। তাই সন্ধ্যার সময়ই সবার থেকে বিদায় নিয়ে আরহামের সাথে বেরিয়ে পরে।

শান্ত ভঙ্গিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে মাহানুর। এই পর্যন্ত একবারও আরহামের দিকে তাকাচ্ছে না বা কথাও বলছে না। সাজিয়ার বলা কথা গুলোই তার মস্তিকে ঘুরছে। সে আরহামকে ভালোবাসে। ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে সে আরহামকে। অবশেষে নীরবতা কাটিয়ে আরহাম বলে,

-কী হলো ভাই! রেডিও আজ বন্ধ যে!

কোনো প্রতিউত্তর দিলো না মাহানুর। আগের ভঙ্গিতেই বসে রইলো। আরহাম একটু কাশি দিয়ে মাহানুরের এটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করে। মাহানুরের এইরকম চুপ থাকা, উদাসীন হয়ে বসে থাকা ভালো লাগছে না আরহামের। মাহানুরকে সে সবসময় হাসিখুশি দেখতে চায়। আরহাম নিজের আঙ্গুল দিয়ে মৃদু টোকা দেয় মাহানুরের মাথায়। মাহানুর বিরক্ত হয়ে বলে,

-সমস্যা কী আপনার? বেশি কথা বললেও বিরক্ত হন, এখন যখন চুপ করে আছি এখনও বিরক্ত হচ্ছেন! আপনার কী এখন আপসোস হচ্ছে আমাকে বিয়ে করে? অনেক জ্বালাতন করছি আমি? তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েন। আর আসবো না আপনার জীবনে।

আরহাম বুঝলো না মাহানুরের হলোটা কী! মাহানুরের প্রত্যেকটি বাক্য তার মাথার ওপর দিয়ে যায়। নিজেকে শান্ত রেখে বলে,

-তোমাকে এইরকম চুপচাপ দেখে ভালো লাগছে না। কথা বলো, আমার মাথা খাও। আমার ঐ বাঁচাল মাহানুরকেই লাগবে।

মাহানুর কিছু বললো না। জালানার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিছু মানুষ আছে না যারা অত্যাধিক রেগে গেলে কান্না করে দেয় মাহানুর তাঁদের মধ্যেই পরে। এখনও অন্যদিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। যেহেতু বোরখা পড়েনি তাই আরহামও সেটা লক্ষ্য করে। নির্জন রাস্তার এক কিনারে গাড়ি থামায়। মাহানুরকে জিজ্ঞেস করে,

-হয়েছে কী বলবে? কান্না করছো কেনো? আমার কিন্তু সহ্য হচ্ছে না তোমার চোখের পানি।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

এবারও মাহানুরকে চুপ থাকতে দেখে রেগে যায় আরহাম। ভীষণ রেগে যায়। মাহানুরের সিটবেল খুলে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়। চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে মাহানুর। বার বার নাক টানছে। আরহাম ব্যাকুল হয়ে মাহানুরের গালে হাত দিয়ে বলে,

-দেখো মাহানুর বলো কী হয়েছে? প্লিজ বলো?

মাহানুর চোখ খুলে। মাহানুরের ভেজা আঁখিজোড়া দেখে বুকে ব্যাথা অনুভব করে আরহাম। কাতর হয়ে পরে সে। মাহানুর কান্নারত্ব কণ্ঠে বলে,

-সাজিয়ার সাথে আপনার কী কোনো সম্পর্ক ছিল?

-যা বলবো বিশ্বাস করবে?

মাহানুর হ্যাঁ বোধক মাথা নারায়। আরহাম শান্ত কণ্ঠে বলে,

-ওকে আমি বোন ছাড়া কিছুই ভাবতাম না।

-সুনহেরা আপু আমাকে বলেছিল কিন্তু আমি আপনার মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম।

-এটার জন্যই এতো কান্না?

-না।

-তাহলে?

মাহানুর চুপ হয়ে যায়। একবার আরহামের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার নিচের দিকে। চোখ বন্ধ করে কণ্ঠস্বর খাঁদে ফেলে বলে,

-না চাওয়ার সর্তেও আমি দ্বিতীয়বার ভালোবেসে ফেলেছি। আপনার প্রতি আমার জেলাসি ফীল হয়, আপনাকে দেখলে অস্বাভাবিক ভাবে বুক লাফায়, আপনি সামনে থাকলে নিজেকে অনেক হাসিখুশি ও সুখী মানুষ মনে হয়। এখন এটা কী সত্যিই ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু আমি কনফিউসড! এখন যখন আপনি চলে যাচ্ছেন ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।

আরহামের মুখ খুশিতে চকচক হয়ে উঠে। প্রাপ্তির হাওয়ায় তার সর্বাঙ্গ শীতল করে দেয়। একজন আর্মিও তাহলে কাঁপে! যেমন এখন খুশিতে আরহাম কাঁপছে। মনে এক বাসনা জাগে তার। আজ আর কোনোকিছু ভাবলো না। নিজের বাসনা পূরণ করেই ছাড়লো। মাহানুরের ভেজা অধরে নিজের পুরুষলী ওষ্ঠাধর চেপে ধরে। আজ গাড়িতে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হলো মাহানুর খান।

>>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here