বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ৭) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
376

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

গালে হাত দিয়ে থমথমে দৃষ্টিতে রিদের দিকে চেয়ে আছে ফারুক। একপাশে চোখ দু’টো বুঁজে দাড়িয়ে আছে আরশি। এমন পরিস্থিতিতে সারা শরির কাঁপছে তার। মন যেন বারংবার একটাই পার্থনা করছে, কোনো ঝামেলা যেন না বেধে যায়।

রিদ এক হাতে কাধ চেপে ধরতেই শরির ঝাঁকুনি দেওয়ার মতো কেঁপে উঠে আরশি। রিদ তার কাধ শক্ত হাতে ধরে কিছুটা কাছে টেনে নিয়ে ফারুকের দিকে চেয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
“এতদিন কিছু বলিনি দেখে এই নয়, যা ইচ্ছে তাই করবে। দ্বিতীয় বার আমার মানুষের দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করলে সে হাত আস্ত রাখবো না আমি।”

আশপাশ থেকে আরো কয়েকজন উপস্থিত হলো সেখানে। তাদের মাঝে পর্দার আড়াল থেকে মামার কণ্ঠ শুনে এবার যেন কান্না পাচ্ছে আরশির। এমনিতেও মামা গম্ভির প্রকৃতির লোক দেখে ভয় হয় তাকে। এর মাঝে আরশিকে ঘিরে এমন একটা বিশ্রি কাহিনি ঘটে যাওয়ার কারণে ভয়টা কয়েক গুন বেড়ে গেলো তার। তাছাড়া রিদ তাকে এক হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে আছে। মামার কণ্ঠ শুনে আরশি নিজেকে ছাড়াতে চাইতেই তাকে ছেড়ে দিল রিদ। হয়তো আরশি ভয়ের কারণটা বুঝতে পেরেছে। মুহুর্তেই এক দৌড়ে ঘরের ভেতর চলে গেলো সে।

সেখানে এসে উপস্থিত হলো দু’পক্ষের অভিবাবকরা। রিদের বাবা গম্ভির ভাবে তাদের দিকে চেয়ে চেয়ে বলে,
“কি হচ্ছে এখানে?”
রিদ কিছু বলার আগেই ফারুক নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে,
“তেমন কিছু না আঙ্কেল এমনি হোচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম তাই।”

বলেই ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে ফারুক। উপস্থিত কেউ কেউ বিষয়টা বুঝতে পারলেও চুপ রইল ঐ সময়। সবার নিরবতা দেখে বিষয়টা সহজ ভাবে নিয়ে সবাইকে যার যার মত ইনজয় করতে বললো রুদ্র চৌধুরী। অতঃপর বেয়াইদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি।

একটা ছেলের থেকে বাইকের চাবি নিয়ে কাউকে না বলেই চুপচাপ গেট পেরিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো ফারুক। সম্ভবত ছেলেটা বন্ধু হবে তার। রাস্তার পাশ ধরে বাইক নিয়ে ছুটে চলছে ফারুক। রাগে চোখ দুটো রক্তিম হয়ে উঠেছে তার। নিরবতার ভেতর থেকে তার বিদ্রোহি মন চিৎকার করে বলছে,
‘আমি এর শোধ নিয়ে ছাড়বো। খুব বাজে ভাবেই নিব এই অপমানের প্রতিশোধ।’
,,

বিয়ে পরানো সম্পন্ন হলো একটু আগে। আরশি এখনো রুমকির রুমে এসে বসে আছে চুপচাপ। রুমকি পাশে এসে বসতেই আরশি ক্ষনিকটা উত্তেজিত হয়ে বলে,
“বিশ্বাস কর রুমকি আমার কোনো দোষ নেই। আমি বুঝতেও পারছি না কি থেকে কি হয়ে গেলো। সবাই এখন আমাকে দোষী ভাববে তাই না?”

রুমকি আরশির পিঠে হাত রেখে শান্তনা দিয়ে বলে,
“এতে তোর একটুকুও দোষ নেই। তুই হোচট খাওয়ার জন্য ছেলেটা ইচ্ছে করেই পা দিয়েছে তোর সামনে। যা নিজ চোখে দেখেছি আমি। এমনকি ভাইয়াও দেখেছে সেটা। তাইতো ভাইয়া ক্ষেপে গিয়ে কোনো প্রশ্ন না করেই থা’প্পর মে’রে বসলো ছেলেটাকে। আমার মতে ভাইয়া ঠিক কাজটাই করেছে। এসব ছেলেদের সাথে এমনই করা উচিৎ।”

কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইল আরশি। যেন এখনো সব কিছুর জন্য নিজেকেই দোষী মনে করছে সে।

বিয়ের মুহুর্ত গুলো ছবি তোলার জন্য ফারুককে খুঁজছিল ফাহিম। কারণ ফারুকের কাছে ভালো ক্যামেরা আছে। যা দিয়ে মাঝে মাঝে ফটোগ্রাফি করে সে। এখানেও ক্যামেরা নিয়ে এসেছিল ছবি তোলার জন্য।

ফারুককে খুঁজতে দেখে ফারুকের বন্ধু এসে তাকে জানায়, ফারুক একটু আগে আসছি বলে বাইক নিয়ে বাইরের দিকে গিয়েছে এখনো ফিরেনি। দুই বার ফোন দিলেও রিসিভ করেনি। তৎক্ষনাৎ ফারুককে ফোন দেয় ফাহিম। ওপাশ থেকে রিসিভ হলেই ফোন ও মুখের সামনে এক হাত রেখে লুকানোর ভঙ্গিতে নিচু স্বরে বলে,
“কোথায় তুই?”
“বাসায়।”

ফারুকের সহজ উত্তরে ক্ষনিকটা অবাক হলো ফাহিম। আশে পাশে একবার তাকিয়ে পূনরায় নিচু স্বরে বলে,
“বাসায় মানে! কোন বাসায়?”
“আমাদের বাসায়।”
“মানে কি!”
“এমনি ভালো লাগছিল না।”

বলেই ফোন রেখে দিল ফারুক। এবার অনেকটাই অবাক হলো ফাহিম। ফারুক কাউকে কিছু না বলে এভাবে চলে গেলো কেন? কারণ টা কি? সে’ই তো এই বিয়ে নিয়ে বেশি উত্তেজিত ছিল।

সবার কানে চলে যায় বরের ছোট ভাই কাউকে কিছু না বলে খাওয়াদাওয়া না করেই চলে গেলো। কারণ খুঁজতে গিয়ে কয়েকজনের কাছে শুনতে পায় কাহিনিটা।
রুদ্র চৌধুরী থমথমে ভাব নিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইল সেখানে। অতঃপর রিদকে ডেকে কারণ জিজ্ঞেস করলে রিদ স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
“বেয়াদবি করেছে ফল পেয়েছে। এতে আর কিছু বলার নেই আমার।”

বর পক্ষের দুয়েকজন চেঁচিয়ে উঠতে চাইলো। তখন শুনতে পায় মেয়েদের সাথে বাজে আচরণের জন্য থাপ্পড় খেয়েছে। যেটা তার প্রপ্য ছিল। আশে পাশের কয়েকজনও তাল মিলিয়ে বলে,
“হ্যাঁ আমরাও দেখেছি সেটা। দোষ ঐ ছেলেটারই ছিল।”

রুমকি সেখানে আসতেই রিদের মা মাঈমুনা চৌধুরী তাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছিল তখন? রুমকি চাচির দিকেয়ে চেয়ে শান্ত গলায় পুরোটা খুলে বলে। যে আরশির সাথে খারাপ আচরণ করার কারণে ভাইয়া মে’রেছে তাকে। পুরোটা শুনে তিনি নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।

ছেলে পক্ষের লোকেরা আর কিছু না বলে একজন ফারুকের হয়ে ক্ষমা চেয়ে আপাতত ঝামেলার ইতি টানলো। কিছুক্ষণ পর সব ঝামেলা মিটিয়ে বৌ নিয়ে চলে গেলো তারা।

মেহমানরা চলে গেলে বাড়ি এখন প্রায়ই খালি বললেই চলে। কয়েকজন আছে যারা দুর থেকে এসেছিল। রাত তখন প্রায় বরো টা। রুদ্র চৌধুরী রিদকে ডেকে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
“এমনটা করা কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল? হাজার হোক রুহির শশুর বাড়ির মানুষ, এমনকি রুহির দেবর হয় সে। একটা ভুল করেছে তার জন্য বুঝিয়ে বললেও পারতি। এমন একটা ঝামেলা বাধিয়ে ফেলার কি প্রয়োজন ছিল?”

রিদ ঠান্ডা মাথায় বাবার দিকে চেয়ে বলে,
“আগের বার বুঝিয়ে বলেও কোনো লাভ হয়নি। তাই এবার আর তার প্রয়োজন মনে করিনি।”

বলেই আর এক মুহুর্ত সেখানে দাড়ালো না সে। হয়তো এই বিষয়ে আর কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। রাত গভির হওয়ায় সবাই নিজেদের মতো চুপচাপ রুমে চলে গেলো। বিছানার এক পাশে বসে রুদ্র চৌধুরী গম্ভির গলায় মাঈমুনা চৌধুরীর দিকে চেয়ে বলে,
“আরশিকে বলে দিবে রিদের সাথে যেন আর খুব একটা না মিশে। তাছারা সব কিছুর ব্যবস্থা করে দ্রুতই রিদকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে হবে। আমি চাইনা কোনো আবেগ ইমোশন তার ক্যারিয়ারের বাধা হয়ে দাড়াক।”

মাঈমুনা চৌধুরী স্বামীর দিকে চেয়ে বলে,
“আরশিও তো আমাদের মেয়ের মতোই। তো,,,,”
কিছু বলার আগেই রুদ্র চৌধুরী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“মেয়ে তো আর না। সেও যে মায়ের মতো বিশ্বাসঘাতক হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে। আমি চাই না তার জন্য আমার ছেলের দেখা স্বপ্নে কোনো ব্যাঘাত ঘটুক।”

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

সকাল হতেই আরশিকে নিয়ে ছাদে উপস্থিত হয় রিদ। কাল রাতের পরা শাড়িটাও নিয়ে নিয়েছে সাথে। চুপচাপ রিদের এক পাশে দাড়িয়ে রইল আরশি। থমথমে পরিবেশে ভোরের আলো ফুটেছে অনেকটা। রিদ গোছানো শাড়িটাকে এলোমেলো করে নিচে রাখলে আরশি ক্ষনিকটা অবাক হয়ে বলে,
“কি করছেন এসব?”
রিদ উত্তর না দিয়ে বলে,
“গতকাল ফারুক যখন তোর হাত ধরেছিল তখন থাপ্পর মারিস নি কেন?”

আরশি ক্ষনিকটা অপরাধীর ন্যায় বলে,
“মেহমান দেখে বলতে পারিনি কিছু।”
রিদ একটা শ্বাস নিয়ে তার চোখে দৃষ্টি রেখে বলে,
“এত সভ্য কেন তুই? প্রথমে কিছু বলিসনি দেখেই তো পরের বার সে অসভ্য আচরণ করার সাহস পেয়েছে। শোন, তোর নিজের কাছে নিজেকে সামান্য মনে হলেও হয়তো এমনও কেউ আছে যার কাছে তুই পৃথিবীর সবচেয়ে অমুল্য কেউ। সুতরাং তার কথা ভেবে হলেও নিজেই নিজের সম্মান রক্ষা করবি।”

কৌতুহল বসত ‘কে সে?’ প্রশ্নটা করতে গিয়েও থেমে গেলো আরশি। কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল রিদের পাশে। রিদ চুপচাপ একটা লাইটার জ্বেলে সেই শাড়িটাতে আগুন ধরিয়ে দিল। আরশি ক্ষনিকটা চমকে বলে,
“কি করলেন এটা? নতুন শাড়িটা পুড়িয়ে দিলেন কেন?”

রিদ শান্ত গলায় বলে,
“কারন তাকে অন্য কারো হাতের ছোঁয়া লেগেছে।”

আরশি নিশ্চুপ চেয়ে রইল রিদের দিকে। চোখ বুঁজে পরপর কয়েকটা শ্বাস নিয়ে এবার নিজে থেকেই তীব্র কৌতুহলী প্রশ্নটা করে বসে,
“ভালোবাসেন আমাকে?”

হটাৎ এমন প্রশ্নে শরির জুড়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো রিদের। এই প্রথম আরশির কোনো কথায় যেন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো তার। বুকটা টিপটিপ করতে শুরু করলো মুহুর্তেই। এই প্রথমবার যেন আরশির দিকে তাকালে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যাচ্ছে সে। আজব, হটাৎ নিজেকে এমন নুইয়ে পড়া পাতার মতো মনে হচ্ছে কেন? পিচ্চি একটা মেয়ে। হটাৎ আজ তার দিকে তাকাতেই বুকটা ধুকপুক করছে কেন? আশ্চর্য!

To be continue……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here