#তুমি_শুধু_আমারই_হও
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#অরনিশা_সাথী
|৫|
উৎসব অর্নির দিকে এগিয়ে গেলো আরো কয়েক কদম। অর্নি পেছাতে পেছাতে ওয়াশরুমের দরজার সাথে পিঠ ঠেকে গেলো। শুকনো ঢোক গিলছে অর্নি। উৎসব অর্নির দিকে ঝুঁকে বললো,
–“তার মানে তোমার চয়েজ’ও ভালো না?”
অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“তা কখন বললাম?”
–“একটু আগেই তো বললে।”
–“আম্ আমি বলেছি যারা আপনাকে টাওয়াল পড়া অবস্থায় দেখেও ফিদা হয়ে যায় তাদের চয়েজ ভালো না।”
–“তুমি ফিদা হও না?”
এই মূহুর্তে অর্নি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। অর্নি কি করে বলবে এই ছেলেকে এ অবস্থায় দেখলে ওর ভিতরে সব উলোটপালোট হয়ে যায়? সবকিছু কেমন লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। অর্নি বললো,
–“স্ সরুন সামনে থেকে।”
উৎসব সরার বদলে আরো ক্ষানিকটা এগিয়ে গেলো অর্নির দিকে৷ অর্নি পেছাতে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলে একদম ফ্লোরে ধপাস হয়ে পড়লো। ওয়াশরুমের দরজা লক ছিলো না, যার জন্য জোরে চাপ লাগতেই দরজা খুলে যায়। অর্নি পড়ার সময় উৎসবের গলা ধরতে গিয়েও নাগাল পায় না৷ অর্নির নখের আঁচড়ে উৎসবের গলার দিকে ক্ষানিকটা কেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। উৎসব অর্নির কোমড় ধরে গিয়ে ও নিজেও গিয়ে অর্নির উপরেই পড়ে। উৎসব অর্নির উপরে পড়তেই অর্নি ক্ষানিকটা চিৎকার করে বলে উঠলো,
–“আল্লাহ গো গেলাম আমি।”
উৎসব দ্রুত অর্নির উপর থেকে সরে যায়৷ কিছুক্ষণ আগেই উৎসব শাওয়ার নিয়েছে যার জন্য ওয়াশরুম ভেজা। অর্নিও একদম ভিজে গেছে। উৎসব অর্নিকে দাঁড় করিয়ে বললো,
–“খুব লেগেছে তোমার?”
–“তো লাগবে না? আপনার মতো একটা মানুষ আমার উপর পড়লে আমি ঠিক থাকি? আপনি না দিন দিন অনেক ভারী হয়ে যাচ্ছেন।”
–“সামান্য এইটুকু পড়াতেই এই কথা? আমি তো তোমার উপর সম্পূর্ণ ভর দেইনি৷ তাতেই এত লাগলো তোমার?”
অর্নি কিছু না বলে জামা ঝাড়তে শুরু করলো। সত্যি বলতে ওর তেমন একটা লাগেনি। এমনিতেই উৎসবকে হয়রান করার জন্য বলছে এসব। কিন্তু উৎসব’ও কি কম যায়? ও অর্নির মুখ দেখেই বুঝেছে অর্নির লাগেনি। উৎসব অর্নির দিকে ঝুঁকে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“রাতে তো কতবার’ই সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দেই তোমার উপর। তখন তো কিছু বলো না। নাকি তখন আমার আদর ভালোবাসায় এতটাই মত্ত থাকো যে এসবে খেয়াল’ই থাকে না?”
উৎসবের এমন কথায় অর্নির কান দিয়ে যেন গরম ধোয়া বের হচ্ছে। লোকটা এমন কেন? অর্নি দুহাতে উৎসবকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
–“অসভ্য একটা।”
বলেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলো অর্নি। আলমারি খুলতেই একটা প্যাকেট চোখে পড়লো। যার উপরে, “আমার বউয়ের জন্য” লিখা। অর্নি হেসে প্যাকেট হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলো। অতঃপর উৎসবকে দেখিয়ে বললো,
–“কি আছে এতে?”
–“খুলে দেখো।”
অর্নি খুলতে গেলেই উৎসব ওকে বাঁধা দিয়ে বললো,
–“এখন খোলার দরকার নেই। তুমি বরং ফ্রেস হয়ে এটা পড়ে আসো, ফাস্ট।”
অর্নি কিছু না বলে প্যাকেট হাতে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো। অর্নি খুব এক্সাইটেড ভিতরে কি আছে সেটা জানার জন্য। খুশিমনে প্যাকেট খুলতে শুরু করলো অর্নি। ড্রেস হাতে নিয়েই অর্নি মুখটা ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। শর্ট ওয়েস্টার্ন ড্রেস এনেছে উৎসব। ফুল ব্ল্যাক৷ অর্নি গায়ের সাথে ধরে দেখলো হাটুর’ও উপর অব্দি। তার উপর স্লিভলেস। যতটা খুশি মনে ওয়াশরুমে গিয়েছিলো ঠিক ততটাই মন খারাপ করে বেরিয়ে এলো অর্নি। উৎসব বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন ঘাটছিলো। দরজা খোলার শব্দে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো উৎসব। অর্নি ড্রেসটা উৎসবের দিকে ছুঁড়ে মেরে বললো,
–“এটা কি ড্রেস? ভাবলাম শাড়ি এনেছেন। পড়বো না আমি এটা।”
উৎসব ড্রেস হাতে এগিয়ে এলো অর্নির দিকে৷ অর্নির সামনে দাঁড়িয়ে ড্রেসটা উল্টেপাল্টে দেখে বললো,
–“শাড়ি তো মাঝে মধ্যেই দেই, একবার না হয় ওয়েস্টার্ন দিলাম। দোষ কি এতে?”
–“আরো অনেক ধরনের ওয়েস্টার্ন আছে, তাই বলে এটা নিয়ে আসবেন আপনি?”
কথাটা বলে অর্নি চলে যেতে নিলে উৎসব ওর হাত ধরে টেনে সামনে এনে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“কিন্তু আমার বউটাকে তো আমার এই ওয়েস্টার্নেই দেখার ইচ্ছে হচ্ছে।”
–“কিছুতেই না, এইসব পড়তে পারবো না আমি।”
উৎসব আরো গভীর ভাবে অর্নিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“কেন?”
–“অনেক ছোট এটা। এর থেকে তো ভালো কিছু না পড়েই থাকা।”
উৎসব চট করেই অর্নিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে বললো,
–“আচ্ছা তাহলে তাই হোক, কিছু পড়ার দরকার নেই।”
অর্নি চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
–“ছিঃ কি অসভ্য আপনি।”
–“তুমিই তো বললে।”
–“আমি তো জাস্ট কথার কথা বলেছি, তাই বলে আপনি____”
–“লেট হচ্ছে তো বউ, ঘুমাবো আবার। দ্রুত গিয়ে ওয়েস্টার্ন’টা পড়ে এসো না প্লিজ।”
–“তো ঘুমান, না করেছে কে?”
–“ঘুমানোর আগে আর একবার শাওয়ার নেওয়া দরকার না?”
–“এক ঘন্টা’ও হয়নি গোসল করেছেন বাইরে থেকে এসে, এর মাঝে আবার কেন?”
উৎসব অর্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“বউকে আদর করা শেষে শাওয়ার নিতে হয় না?”
লজ্জায় অর্নির গাল লাল হয়ে গেলো। উৎসবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“দিন দিন বড্ড অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন আপনি।”
কথাটা বলেই অর্নি কিচেনে চলে গেলো রাতের খাবার গরম করতে।
–
শুয়ে আছে টায়রা৷ আজকাল শরীরটা বেশ দূর্বল লাগে ওর। অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠে। অর্নব অফিস থেকে ফিরেছে কিছুক্ষণ হবে। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে দেখলো টায়রা শুয়ে আছে। অর্নব টায়রার মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত রাখতেই টায়রা উঠে বসলো। মলিন হেসে বললো,
–“খাবার দেই, চলো।”
–“শরীর কি অনেক খারাপ লাগছে?”
টায়রা মৃদু হেসে বললো,
–“সামান্য, এখন চলো তো রাত অনেক হয়েছে খেয়ে নিবে।”
–“বেশি খারাপ লাগলে তুমি শুয়ে থাকো, আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
–“এতটাও খারাপ লাগছে না। আম্মু’ও না খেয়ে বসে আছে চলো এবার।”
অর্নব আর টায়রা বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। মিসেস অদিতি ততক্ষণে টেবিলে খাবার গুছিয়ে ফেলেছেন। টায়রা দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বললো,
–“তুমি আবার এসব করতে গেলে কেন? আমি করে নিতে পারতাম তো।”
মিসেস অদিতি হেসে বললো,
–“সে জানি, তুই করে নিতে পারতি। আমার তো কোনো কাজ নেই তাই ভাবলাম টেবিলে খাবার দিয়ে দেই। তুই এসেছিস পর থেকে তো আমায় কিছুই করতে দিস না। তার উপর তোর’ও শরীরটা ভালো নেই কয়েকদিন ধরে।”
টায়রা মিসেস অদিতিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“তুমি আর তোমার ছেলে থাকার পরেও আমার শরীর খারাপ থাকতে পারে বলো?”
–“হয়েছে, এবার খেতে বোস।”
অতঃপর তিনজনে একসাথে খেতে বসলো। খাওয়া শেষে অর্নব বেসিনে হাত ধুতে যাওয়ার সময় ওর ফোন বেজে উঠলো। অর্নব ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতেই বেসিনের কাছে চলে গেলো। এদিকে মিসেস অদিতি আর টায়রা সবকিছু গুছিয়ে রাখছে। অর্নব কথা বলা শেষ করে এসে দেখলো টায়রা আর মিসেস অদিতি সোফায় বসে গল্প করছে। অর্নব মিসেস অদিতির পাশে বসে বললো,
–“আম্মু একটা গুড নিউজ আছে।”
মিসেস অদিতি আর টায়রা তাকালো অর্নবের দিকে। অর্নব একগাল হেসে বললো,
–“টায়রা প্রেগন্যান্ট আম্মু, আ্ আমি বাবা হবো আম্মু। আমাদের সংসারে ছোট্ট একটা বাবু আসছে।”
অর্নবের কথায় মিসেস অদিতি খুব খুশি হলো। টায়রা তখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মিসেস অদিতি টায়রাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলাম এতদিন।”
টায়রা লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো। মিসেস অদিতি টায়রার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
–“এখন থেকে আর কোনো ছোটাছুটি নয় ঠিক আছে? কেয়ারফুলি থাকতে হবে আর ঠিকমতো খাবার খেতে হবে, মনে থাকবে?”
টায়রা মৃদু স্বরে বললো,
–“হুম।”
–“আচ্ছা, এখন শুয়ে পড়। রাত অনেক হয়েছে।”
এই বলে মিসেস অদিতি চলে গেলেন নিজের ঘরে৷ অর্নব এসে চট করেই টায়রাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। টায়রাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে অর্নব লাইট অফ করে টায়রার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। টায়রাকে টেনে নিজের বুকের উপর এনে টায়রার মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
–“জানো টায়রা আজ আমি ভীষণ খুশি। আমাদের ঘরে ছোট্ট একটা বাবু আসবে আমার খুশিটা আমি বোঝাতে পারছি না তোমাকে।”
টায়রা অর্নবের টি-শার্ট খামচে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। অর্নব বুঝতে পেরে দ্রুত টায়রাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে বললো,
–“এ’কি টায়রা? কাঁদছো কেন? তুমি খুশি না আমাদের বেবি আসছে শুনে?”
টায়রা অর্নবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“কে বলেছে আমি খুশি না? আমি অনেক খুশি অর্নব।”
–“তাহলে কাঁদছো কেন?”
–“খুশিতে।”
অর্নব টায়রার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
–“ভালোবাসি।”
টায়রা অর্নবের বুকে চুমু দিয়ে বললো,
–“আমিও ভালোবাসি তোমাকে।”
–
উৎসবের জোড়াজুড়ি তে অর্নি ওয়েস্টার্ন পড়ে ওয়াশরুমেই দাঁড়িয়ে আছে। বারবার ওয়েস্টার্ন টেনে হাটুর নিচে নামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। উৎসব বারবার অর্নিকে ডাকছে। অর্নি আর কোনো উপায় না পেয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। অর্নিকে দেখে উৎসব হা হয়ে গেলো। ফর্সা গায়ে স্লিভলেস শর্ট ব্লাক ওয়েস্টার্নে খুব আকর্ষণীয় লাগছে অর্নিকে। চোখ ফেরানো দায়। উৎসব ধীরে ধীরে অর্নির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অর্নিকে আগাগোড়া দেখে বললো,
–“ইশ্! কি সুন্দর লাগছে তোমাকে বউ। আগে জানলে সেই কবেই একটা ওয়েস্টার্ন পড়িয়ে দু চোখ ভরে দেখতাম তোমাকে।”
–“অস্বস্তি হচ্ছে আমার।”
–“আমিই তো। তোমার বর’ই তোমাকে দু’চোখ ভরে দেখছে অন্যকেউ না।”
–“এ্ এবার চেঞ্জ করে আসি?”
–“একদম না।”
কথাটা বলে উৎসব অর্নির দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,
–“আমি নিজে চেঞ্জ করে দিবো।”
লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো অর্নি। উৎসব দুহাতে অর্নির দুই গাল ধরে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।
চলবে~
|অনেক দিন পর লিখা। কেমন হয়েছে জানি না। রি-চেক করিনি, ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন|