#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_২
#নিশাত_জাহান_নিশি
“তার সম্পর্কে যেহেতু তুমি এতকিছুই জানতে তাহলে আমাকে এসব আগে বললেনা কেন? প্লিজ এখন এটা বলোনা যে, তার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তুমি জানতে না।”
সামান্তার হঠাৎ চ্যাচাম্যাচিতে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো মিশালের! থতমত খেয়ে সে কান দুটো চেপে ধরল। মেয়ে মানুষের গলার স্বর হওয়া উচিৎ চিকন, মোলায়াম ও সুরেলা। পুরুষরা যেন সহসা তাদের কণ্ঠের প্রেমে পরে যায়। কিন্তু এ কেমন দস্যি মেয়ে সামান্তা? যার কণ্ঠস্বর এত শুষ্ক, রূক্ষ পুরুষ লোককেও ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট? যদিও এই মুহূর্তে সামান্তার চিৎকার চ্যাচাম্যাচি করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু মিশালের সাথে অহেতুক চ্যাচানোটা তার শোভা পায়না। অসন্তোষ দৃষ্টিতে রাগান্বিত সামান্তার দিকে তাকালো মিশাল। বিরক্তিকর স্বরে বলল,
“হেই স্টপ। সম্পূর্ণ কথা না শুনে ষাঁড়ের মত চ্যাচাস কেন?না বুঝে চ্যাচানোটা ইদানিং তোর বেড হেবিট হয়ে দাড়িয়েছে। আমিতো নিজেও জানতাম না স্বপ্নীল একটা প্লে-বয়। আজ স্বপ্নীলের বাবা বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পর আমি তার এলাকায় গিয়ে স্বপ্নীলের ক্যারেক্টার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। তার এলাকায় আমার কিছু ক্লোজ ভাই ব্রাদার রয়েছে। তাদের থেকেই খবরটা জানা। তাছাড়া এখন জেনেও তো আর কিছু করার নেই তাইনা?”
শান্ত হয়ে এলো সামান্তা। মিশালের সাথে অহেতুক রাগ দেখানোটা তার বাড়াবাড়ি মনে হলো। সহসা নিজেই নিজেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সামান্তা বলল,
“তোমাকেই বা ব্লেইম করেই কী হবে? সব দোষ তো আমার! আমিই তো নিজে খাল কেটে কুমির ডেকে এনেছিলাম। মাত্র কয়েকমাসের পরিচয়ে আমার উচিৎ হয়নি তাকে ট্রাস্ট করার। তার পরিবারকে আপন করে নেওয়ার। আরও ডিটেলে খোঁজ খবর নেওয়ার উচিৎ ছিল তার। ভুল করেই কেন আমরা আফসোস করি? অতিরঞ্জিত কোনোকিছুই যে আমাদের জন্য শুভ নয়! একচুয়েলি আমি ভেবেছিলাম খামোখা প্রেম ভালোবাসায় না জড়িয়ে বরং বিয়েই করে ফেলি! বিয়ের চেয়ে পবিত্র সম্পর্ক আর কী হতে পারে? যেহেতু স্বপ্নীল আমাকে প্রতিনিয়ত ফিল করাচ্ছিল হি লাভস মি লট। তবে এখন মনে হচ্ছে যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। বিয়ের পর তার ক্যারেক্টার সম্পর্কে জানতে পারলে হয়ত আমার আত্নহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতনা! তবে এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে যে ক্ষণিকের জন্য হলেও আমি তার প্রতি দুর্বল হয়েছিলাম। তার মনগড়া মিথ্যে কথাগুলো বিশ্বাস করেছিলাম। সে তো আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই ছিলনা।”
হাঁটুতে পুনরায় মাথা ঠেকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল সামান্তা। নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। কেন অল্পতে স্বপ্নীলকে বিশ্বাস করে ফেলল সে? তবে কী কঠিন নারীদের মনও অল্পতে গলিয়ে ফেলার অসম্ভব ক্ষমতা রাখে দুঃশ্চরিত্র পুরুষ মানুষরা? পরিবারের কথা অন্তত ভাবার উচিৎ ছিল তার। বুকটা ভারি হয়ে এলো মিশালের! নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ক্রন্দনরত সামান্তার দিকে। কিছুক্ষণ অন্তর সামান্তাকে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্বযেক্ষণ করার পর মিশাল ধীরস্থির হলো। ইশ! কাঁদলে কত বিচ্ছিরি দেখায় মেয়েটাকে! তা যদি মেয়েটা জানত তাহলে হয়ত ঐ দু’চোখে কখনও শ্রাবণ নামাত না। কে-ই বা চাইবে ইচ্ছে করে অন্যের কাছে নিজেকে কুৎসিত প্রতিপন্ন করতে? মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল মিশালের। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে হয়ত এখনি সামান্তাকে ক্ষেপাতো মিশাল!প্রচুর ক্ষেপাত। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে যেতো।
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে জীবনে এই দুইবার সামান্তাকে কাঁদতে দেখছে মিশাল! প্রথমবার সিঁড়ি থেকে পড়ে পা ভেঙে যাওয়ায়, দ্বিতীয়বার আজ। তাও আবার একটানা এভাবে। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে ছোটোবেলা থেকেই সামান্তা খুব কঠোর মনের মেয়ে ছিল! অন্যান্য মেয়েদের মত ছোটো খাটো বিষয় নিয়েও কাঁদার স্বভাব নেই তার। তবে আজ তার ধাক্কাটা বেশ গভীরে-ই লাগল। তাইতো বিরামহীনভাবে কান্না তার। সামান্তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য গলা ঝাকালো মিশাল। কোমল স্বরে বলল,
“দেখ সামু? ঠকে যাওয়া সাময়িক সময়ের জন্য কষ্টকর হলেও সেই ঠকে যাওয়া থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাতে ক্ষতি কী? তুই ভাবিসনা, যে তোকে ঠকিয়েছে সে নির্ঘাত জিতে গেছে। সত্যিকারের হার তো তার-ই হয়েছে। কারণ সে মানুষকে ঠকাতে ঠকাতে দিন দিন এতটাই নিচে নামছে যে, মানুষের থেকে রুহের হায় ও অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া হচ্ছেনা তার।তবে তুই চাইলে কাল একবার স্বপ্নীলদের বাসায় যেতে পারিস। তাদের শাসিয়ে আসতে পারিস। সত্যিই তো তাদের ছেলে তোর সাথে যা করেছে অন্যায় করেছে। কার দায়ভার তাদের নিতেই হবে। তুই চাইলে তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করতে পারিস। যদিও চাচা-চাচী চাইছেনা তুই এসব করিস! বিষয়টাকে তোর পাগলামি বলে ভুলে যেতে চাইছে।”
হাঁটুতে মুখ গুজেই সামান্তা নাক টেনে রুদ্ধশ্বাস ফেলল। আবদারসূচক গলায় মিশালকে শুধালো,
“তুমি যাবে আমার সাথে মিশাল ভাই?”
“তুই চাইলে কেন যাবনা? তবে এখন তোর কিছু খেয়ে নেওয়া উচিৎ। নিজেকে এনাফ সময় দেওয়া উচিৎ, একটু রেস্ট নেওয়া উচিৎ। সবার আগে তো নিজেকে তো ঠিক রাখতে হবে তাইনা?”
“তাহলে আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো।”
বসা থেকে ওঠে দাড়ালো মিশাল। সামান্তার রুম থেকে বের হয়ে গেল সে। যেতে যেতে মৌন হাসল। শার্টের কলারটি পেছনের দিকে এলিয়ে নিজের ধারণা অনুযায়ী বিড়বিড় করে বলল,
“আই নো সামান্তা। তুই আমাকে কিছুটা জেলাস ফিল করানোর জন্যেও স্বপ্নীলকে বিয়ে করতে চেয়েছিলি! ভেবেছিলি আমার আগে বিয়ে করে দেখিয়ে দিবি তুই। যদিও স্বপ্নীল তোকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে তোর ব্রেন ওয়াশ করেছিল! দুর্বল হতে কতক্ষণ? এত ইন্টিলিজেন্ট একটা মেয়ে হয়েও তুই তার প্ল্যান ধরতে পারলিনা? বোকার মত কাজ করলি? তোর ধারণা জিনিয়ার সাথে আমার এফেয়ার চলছে! ছোটোবেলা থেকেই তো আমাদের মধ্যে তুমুল কম্পিটিশন! তুই যা করবি আমাকেও তা করতে হবে। আমি যা করব অনুরূপভাবে তোকেও তা করতে হবে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নই। কবে আমাদের মধ্যে এই কম্পিটিশন শেষ হবে বল তো? এর পরিণতি কী হবে? তবে এখন তোর সাথে যা হলো তা খারাপ নয় বরং…
কদাচিৎ হাসল মিশাল! ভাবুক ভাবমূর্তি পাল্টে হঠাৎ সে রহস্যময় গলায় বলল,
“যা হলো বরং ভালোই হলো! কী ভালো হলো, কেন ভালো হলো তা নিশ্চয়ই তুই পরে জানতে পারবি! আগে নিজেকে ঠিক কর তুই এরপর না হয় সত্যির মুখোমুখি হবি।”
দ্রত পায়ে হেঁটে মিশাল রান্নাঘরে গেল। ফিল্টার থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে হঠাৎ তার মনে হলো সামান্তাকে কিছু খাওয়ানো উচিৎ। সকাল থেকেই হয়ত অভুক্ত সামান্তা। এত অনিয়ম করলে শরীর ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকবে তার। তড়িঘড়ি করে মিশাল রান্নাঘরে থাকা ভাতের পাতিল, তরকারির পাতিল খুলে দেখল পাতিল সব ফাঁকা। শুধু তাই নয় প্রতিদিনকার ন্যায় আজও ফ্রিজ ও মিডসেফ দুটোতেই তালা ঝুলা! অবাক হলোনা মিশাল। বরং বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিলো। কারণ এসবের সম্মুখীন তাকে প্রতিদিনই হতে হয়। তখনি মিশালের আকস্মিক দৃষ্টি পরল দেয়াল ঘড়ির দিকে। মাঝরাত প্রায় তিনটা তখন। এই মাঝরাতে তো দোকানপাটও খোলা থাকবেনা। খালি পানি সামান্তাকে দেওয়াটা কী ঠিক হবে?
পা টিপে টিপে হেঁটে মিশাল তার সৎ বোন রুমকির রুমের দরোজার সামনে দাড়ালো। রুমকির কাছ থেকে হেল্প চাওয়া ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নেই তার । যদিও মিশাল জানে রুমকি তাকে নিরাশ করবে না। সবেমাত্র সতেরো পেরিয়ে আঠারোতে পা দিলো রুমকি। মিশালের মতই চেহারার গড়ন তার। ফর্সা ও লম্বাটে আকৃতির মুখশ্রী। দুজনই তাদের বাবার মত দেখতে হয়েছে। সৌভাগ্যবশত রুমকি মিশালের সৎ বোন হলেও আপন বোনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। পরিস্থিতির চাপে পরে রুমকি তার মায়ের সামনে মিশালের সাথে রূঢ় আচরণ করলেও চুপিসারে মিশালের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়! মিশালকে তার বিপদে আপদে অনেক হেল্পও করে। বড়ো ভাই হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করে। যার কিচ্ছুটি তাদের মা শাহনাজ বেগম জানেননা। জানলে হয়ত রুমকিকে আস্ত রাখবেননা! উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়বেন।
রুমকির পাশের রুমটিই হলো শাহনাজ বেগমের। তাই মিশাল খুব সর্তকতার সাথে নিচু আওয়াজে চেষ্টা করল রুমকির রুমের দরোজায় টোকা মারার। যেন শাহনাজ বেগম কিছু আন্দাজ করতে না পারেন। দরোজায় দেওয়া দুই তিন টোকায় রুমকির ঘুম ভাঙল। বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলোনা মিশাল তার রুমের দরোজায় দাড়িয়ে। কারণ এত রাতে মিশাল ছাড়া অন্যকেউ তার দরোজায় কড়া নাড়বেনা। খারাপ কিছু হয়েছে ভেবে রুমকি তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে ওঠে বসল। আস্তেধীরে রুমের দরোজাটি খুলে দিলো। ঘুম ঘুম চোখে মিশালের দিকে তাকালো। কাচুমাচু দৃষ্টিতে মিশাল ঘুমে কাবু রুমকির দিকে তাকালো। মিনমিনে স্বরে বলল,
“তোর রুমে কিছু কুকিজ হবে?”
বিপরীতে কোনো প্রশ্ন করলনা রুমকি। বরং হামি তুলে নমনীয় স্বরে বলল,
“দাড়াও আনছি।”
ঢুলুঢুলু শরীর নিয়ে রুমকি তার ওয়াড্রবের উপর থাকা কুকিজের পটটি নিয়ে এলো। মিশালের হাতে কুকিজের পটটি তুলে দিয়ে বলল,
“এই নাও।”
আদুরে হয়ে মিশাল রুমকির গাল দুটো টেনে দিলো। আহ্লাদি হয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“থ্যাংকস।”
মিটিমিটি হাসল রুমকি। মিশালের দিকে উৎফুল্ল দৃষ্টিতে তাকালো। আনন্দঘন গলায় বলল,
“আজ আমি খুব খুশি জানো?”
“ওহ্ রিয়েলি? এত খুশির কারণটা কী শুনি?”
“কারণ, আজ সামান্তা আপুর বিয়ে ভেঙে গেছে!”
“মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? কষ্টের বিষয় নিয়ে হঠাৎ তোর খুশি হওয়ার কারণ কী?”
“আরেকটা কারণে দুঃখ ও পেয়েছি জানো?”
“কী কারণ?”
“তোমরা দুজন দুজনকে রিজেক্ট করেছ তাই!”
গম্ভীর মুখে রুমকি ঠাস করে মিশালের মুখের উপর দরোজাটি লাগিয়ে দিলো! বিকট আওয়াজে শাহনাজ বেগম থতমত খেয়ে ঘুম ভেঙে ওঠে পরলেন। কে রে বলে মৃদু চিৎকার করলেন। কোনোদিকে কালক্ষেপণ না করে তিনি ছটফটিয়ে ওঠে রুমের দরোজা খুলে আশেপাশে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তবে কোথাও কেউ নেই! চারদিক শুনশান। তবে কী তিনি ভুল শুনলেন? রুমের দরোজা আটকে তিনি পুনরায় ঘুমিয়ে পরলেন। তবে মন থেকে সন্দেহ দূর হলোনা কিছুতেই।
বুকে হাত রেখে কয়েকদফা স্বস্তির শ্বাস ফেলে মিশাল। স্থির হয়ে সামান্তার রুমের দরোজার সামনে দাড়ালো। হাঁফ ছাড়া গলায় বলল,
“থ্যাংকস গড। রাইট টাইমে জায়গা থেকে পালাতে পেরেছিলাম!”
গ্লাসভর্তি পানি ও কুকিজের পট নিয়ে মিশাল সামান্তার রুমে প্রবেশ করল। বিছানার উপর হাঁটু ভাজ করে বসেছিল সামান্তা। মিশালের হাতে পানির গ্লাস দেখামাত্রই সামান্তা জায়গা থেকে ওঠে দাড়ালো। তড়তড়িয়ে হেঁটে মিশালের হাত থেকে গ্লাসটি তার হাতে নিলো। ঢকঢক করে এক চুমুকেই গ্লাসটি সম্পূর্ণ ফাঁকা করে ফেলল। নিশ্চল দৃষ্টিতে মিশাল ক্ষুধার্ত সামান্তার দিকে তাকালো।কুকিজের পটটি মিশাল সামান্তার দিকে এগিয়ে দিলো। নরম স্বরে বলল,
“টেইক ইট। শুধু পানি খেয়েই জীবন রক্ষা করা যাবেনা। সাথে ভারি কিছুও খেতে হবে।”
“কিছু খাওয়ার ইচ্ছে নেই এখন। এসব নিয়ে যাও তুমি। নাও আই নিড টু রেস্ট।”
“জাস্ট শাট আপ। বাড়াবাড়ি না করে খেয়ে নে। অসুস্থ হয়ে পরলে কিন্তু কাল স্বপ্নীলদের বাসায় যেতে পারবিনা। এখন তুই কী চাস বল?”
নিরুপায় হয়ে সামান্তা কুকিজের পটটি মিশালের হাত থেকে নিতে বাধ্য হলো। আপত্তি সত্ত্বেও জোর করে দুটি কুকিজ খেলো। সারাদিন পর মাত্র পেটে খাবার পরল তাই কেমন যেন গাঁ গোলাতে লাগল সামান্তার। মিশালও তখন রুম থেকে বের হয়ে গেল। ওয়াশরুমে মুখভরে বমি করতে লাগল সামান্তা! ইচ্ছেমত বমি করার পর সে দুর্বল শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরল।
,
,
অস্বস্তি, অসুস্থতা ও বিষণ্নতা নিয়ে রাতটা কোনো রকমে কাটল সামান্তার। সকাল দশটা নাগাদ সে স্বপ্নীলদের বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে রইল। মিশালও ভেজা চুল ঠিক করতে করতে প্রায় রেডি হয়ে সামান্তার রুমে প্রবেশ করল। মিশালকে দেখামাত্রই সামান্তা জায়গা থেকে ওঠে এলো। অধৈর্য গলায় শুধালো,
“কী হলো? এত দেরি হলো কেন? কখন যাব আমরা ঐ বাড়িতে?”
শার্টের পকেটে কালো সানগ্লাসটি রাখল মিশাল। ধীর দৃষ্টিতে সামান্তার দিকে তাকালো। বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছে সামান্তাকে। নিষ্প্রাণ হয়ে আছে মায়াবি মুখখানি। তবে সেই সম্পর্কে সামান্তাকে কোনো প্রশ্ন করলনা মিশাল। উদাস গলায় বলল,
“আর একটু ওয়েট কর। সাহিল ভাই গাড়ি নিয়ে আসছে!”
“হোয়াট? এরমধ্যে আবার সাহিল ভাই কেন?”
“সাথে একজন গার্ডিয়ান থাকা ভালো।”
“তুমিতো জানো মিশাল ভাই। সাহিল ভাইকে আমি ভয় পাই! উনি সামনে থাকলে আমি কাউকে কিছু বলতে পারবনা। বার বার হুমকি-ধমকি দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিবে। ঝামেলা পছন্দ করেননা উনি।”
“দুনিয়ার সবাইকে ভয় পেলেও তুই আমাকে ভয় পাসনা এর কারণ কী বল তো? গুনে গুনে আমি তোর তিনবছরের বড়ো! সেই হিসেবে তো সাহিল ভাই আমাদেরও অনেক বড়ো তাইনা?”
মিশালের মুখোমুখি দাড়ালো সামান্তা। অপ্রত্যাশিত ভাবে মিশালের বুকের পাঁজরে জোরে এক ধাক্কা মারল। রাশভারি ভাব নিয়ে মিশালকে উপেক্ষা করে সে রুম থেকে বের হয়ে গেল! রাগে রি রি করে বলে উঠল,
“কারণ তোমাকে দেখলেই আমার রাগ হয়! আই ডোন্ট নো, কেন তোমাকে আমি সহ্য করতে পারিনা। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও মানিয়ে নিতে পারিনা। চিরশত্রু তুমি আমার। হয়ত তুমিও আমাকে তাই ভাবো!”
দুর্বল হাসল মিশাল। বুকের পাঁজরে ব্যথা লাগল তার। ক্ষতস্থান শুকায়নি যে এখনও। শুকাবেই বা কী করে? ঘণ্টা কয়েক আগেই তো বুকের পাঁজরে আঘাত লাগল তার! ব্যথা সহ্য করে নিলো মিশাল। সামান্তার যাওয়ার পথে অকপট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কুঁচকে যাওয়া শার্টের কলারটি ঠিক করল। ক্ষীণ হেসে বলল,
“আমি লাইক ইউর এটিটিউট ঝগড়ুটে বালিকা! তুই ভাঙবি তবে মচকাবিনা।”
পেছন থেকে গলা উঁচিয়ে সামান্তাকে ডাকল মিশাল। বিরক্ত হয়ে থামল সামান্তা। বুকের উপর হাত গুজে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো ভাবলেশ মিশালের দিকে। তখনি হেয়ালি গলায় মিশাল বলল,
“সাহিল ভাইয়া আসছেনা। ক্ষেপাতে চেয়েছিলাম তোকে!”
“আর ইউ মেড মিশাল ভাই? আমার দুঃসময়ে দাড়িয়েও তুমি আমার সাথে মজা নিচ্ছ?”
“হাজার হোক আ’ম অ্যা বেড বয়! স্বভাব ছাড়তে পারিনা। যদিও এটা সম্পূর্ণ তোর ধারণা। বাই দ্যা ওয়ে, রাগিয়ে তোকে হেল্প করছিলাম কঠিন কিছু সত্যির মুখোমুখি দাঁড় করাব তাই!”
ভ্রু যুগল খরতরভাবে কুঁচকে নিলো সামান্তা। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো মিশালের দিকে। উৎসুক ভঙ্গিতে এগিয়ে এলো মিশালের দিকে। আগ্রহী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“হোয়ালি না করে বলো তুমি কী বলতে চাও?”
“প্রস্তুত তো তুই সত্যিটা শোনার জন্য?”
“হ্যাঁ প্রস্তুত বলো এবার?”
“জানি কথাগুলো শোনার পর তোর শক লাগবে। তবুও আমার কথাগুলো বলতে হবে। হাইড এন্ড সিক বিষয়টা আমার পছন্দ নয়।”
“আরে বললাম তো কথা এত না প্যাচিয়ে ডিরেক্টলি বলো তুমি কী বলতে চাও?”
“স্বপ্নীল প্রায় তিনটি র্যাপ কেইসের সাথে জড়িত ছিল! গতকাল সকাল থেকেই পুলিশ তাকে হন্ন হয়ে খুঁজছিল। তাই স্বপ্নীল বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। খবরটা কোনোভাবে আমার কানে আসে। তুইতো জানিস স্বাভাবিক কারণেই পুলিশদের সাথে মেলামেশা আমার! তাই সব খবর আমার কানে আসে। যদি বলি আজ ভোরের দিকে আমি স্বপ্নীলকে মেরে নাক নকশা ফাটিয়ে তাকে হসপিটালে ভর্তি করে এসেছি শুনলে কী তুই খুব রাগ করবি? কষ্ট পাবি? না-কি খুশি হবি?”
#চলবে…?