বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১০) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
365

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সাজ সকালে মুখে পানি পড়তেই ঘুম ভাঙলো রিদের। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সামনে গ্লাস হাতে দাড়ানো আরশির দিকে তাকাতেই দেখে হাসছে সে। এই সকাল সকাল ঘুমের মাঝে পানি ঢালার মতো বিরক্তিকর আর কিছু আছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। তবুও এই বিরক্তিকর কাজটা করে সে নির্লজ্জের মতো হাসছে।

এবার বিরক্তির সাথে চেহারায় রাগান্বিত ভাব রেখে আরশির এক হাত চেপে ধরে রিদ। আচমকাই এভাবে ধরায় পালাতে চেয়েও ব্যর্থ হলো আরশি। রিদ উঠে দাড়িয়ে অন্য হাতে মুখে লেগে থাকা পানি গুলো মুছে বলে,
“এটা কি ছিল?”
আরশি এখনও মুখে হাসি ধরে রেখে বলে,
“ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।”
রিদ চেহারায় রাগান্বিত ছাপ রেখে আবারও স্বাভাবিক গলায় বলে,
“এতো আলগা পিরিত তো আমি দেখাতে বলিনি।”
“আপনি কেন বলবেন, আমি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম?”

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল রিদ। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,
“এখন আর ভয় পাস না আমাকে?”
আরশি দু’দিকে ‘না’ সূচক মাথা নাড়ালো। রিদ কিছু একটা বোঝার ভঙ্গিতে উপর-নিচে হালকা মাথা নাড়িয়ে ‘আচ্ছা’ বলে আরশির দুই হাত একজায়গায় করলো। আরশির দু’হাত রিদ এক হাত দিয়ে জোড়ে চেপে ধরে হাটা শুরু করে ওয়াশ রুমের দিকে। আরশি উহ্ সূচক শুব্দ করে নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও ব্যর্থ হলো। এবার একটু ভয় পেলো এটা ভেবে এই লোক কেন আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছে?

ওয়াশরুমে ঢুকে দেখে অর্ধেক পানি ভর্তি একটা বালতি রাখা আছে। রিদ ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,
“বাহ্ সব দেখি রেডি করাই আছে।”
আরশি এবার ব্যাপার টা বুঝতে পেরে ক্ষনিকটা কান্নার ভান ধরে বলে,
“স্যরি স্যরি স্যরি ভাইয়া, আর জীবনেও এমন কিছু করবো না। এই প্রমিস করছি।”

রিদ এবার তার হাত ছেড়ে এক পাশে দাড় করিয়ে বলে,
“কান ধরে দশ বার উটবস কর।”
ওয়াশ রুমে আশেপাশে কারো দেখে ফেলার ভয় নেই। তাই আরশি বাধ্য মেয়ের মতো কান ধরে উটবস করতে শুরু করলো। নয় পার হয়ে দশবার হতেই রিদ চুপচাপ বালতির পুরো পানিটাই ঢেলে দিল আরশির গায়ে। শারা শরির ভিজে গেলে যেন বোকা বনে গেলো আরশি। অবাক ভঙ্গিতে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে অতঃপর বলে,
“কান ধরার শাস্তি দিয়েছেন কান ধরেছি। তাবুও ভিজিয়ে দিলেন?”
রিদ এবার গাল টেনে একটা হাসি দিয়ে বলে,
“এটা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ স্কয়ার। কেউ আমাকে একটু ভালোবাসা দিলে আমি তাকে বহুগুণ ভালোবাসা ফিরিয়ে দিই। হিহিহি।”

বলেই চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো রিদ। রাগে শরির রি রি করলেও কিছু বলতে পারছে না আরশি। নিজের দিকে তাকাতেই যেন এবার কাঁন্না পাচ্ছে খুব।

আরশির মা টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন। রিদ তার কাজে হেল্প করছে আর ফুপি-ভাতিজার দুখের-সুখের আলাপ করছে।
এর মাঝে এই সাজ সকালে আরশিকে ভেজা অবস্থায় দেখে ক্ষনিকটা চমকালো তার মা। কারণ জানতে চাইলে আরশি পরপর কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে যেন বেলুনের মতো ফুলছে। কিছুক্ষণ ফোঁস ফোঁস করে অতঃপর ক্ষনিকটা কাদু ভাব নিয়ে বলে,
“তোমার ভাইয়ের ছেলে করেছে এ কাজ। বিনা দোষে এই সাজ সকালে কাক ভেজা করে দিয়েছে আমায়।”

পূনরায় কাজে মন দিল তার মা। স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“বিনা বাতাসে তো আর গাছের পাতা নড়ে না।”
“আমি কিছু করিনি।”
“তুমি কত ধোয়া তুলসীপাতা, সেটা তো রিদের ভেজা টি-শার্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”

মায়ের কথা আরশি কিছুটা হতাশ হয় আরশি। মা হয়েও ভাইয়ের ছেলের পক্ষ নিয়ে নিজের মেয়ের বিরোদ্ধে রায় দিচ্ছে? দেশ থেকে ন্যায় বিচার উঠে যাচ্ছে দিন দিন।

“””””””””””””””””””””””””””

সকালে সবার নাস্তা শেষে যার যার ব্যস্ততায় উঠে চলে গেলেও এখনো টেবিলে নাস্তা নিয়ে বসে আছে ফারুক। একটু একটু করে খাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে খাবার টা শেষ করতে চাইছে না আজ।

সবাই উঠে চলে গেলে রুহির দিকে চেয়ে ফারুক বলে,
“ভাবি, এখানে বসো। তোমার সাথে কথা আছে একটু।”
রুহি কৌতুহল নিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে বলে,
“হুম ভাইয়া বলুন।”
ফারুক ক্ষনিকটা মৃদু হেসে বলে,
“প্রথমত আমাকে তুমি বা তুই করে বললেই আমি বেশি খুশি হবো। কারণ বয়সেও আমি আপনার ছোট। আর দ্বিতীয়’ত স্যরি।”

রুহি কিছুটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু স্যরি কেন?”
“ঐ দিনের ঘটনার জন্য। বিশ্বাস করুন ভাবি আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি। আরশি হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার সময় শুধু সেভ করেছিলাম এটুকুই। আর হুট করে রিদ ভাই এসে হয়তো ভুল বুঝে এমন একটা সিকুয়েশন ক্রিয়েট করে ফেলেছে। বিষয়টা পুরোটাই একটা মিস আন্ডারস্টেনিং।”

হুট করে ঐ টপিক উটায় রুহি কিচুটা বিব্রত হয়ে বলে,
“দেখো, যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি মনে করি ওসব নিয়ে আর না ভাবাটাই ভালো হবে।”
ফারুক পূনরায় বলে,
“যদিও আমার মনে হয় আমি কোনো ভুল করিনি। তবুও ভাবি, নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আমার মনে হয় আমার ক্ষমা চেয়ে আত্মিয়তার সম্পর্কটা সুন্দর রাখা উচিৎ। আমি জানি, রিদ ভাই আমার সাথে কথা বলতে চাইবে না। তবুও ভাবি আপনি তার সাথে আমার একটু কথা বলিয়ে দিবেন? আমি যাষ্ট ক্ষমা চাইবো আর কিছু না।”
প্রতি উত্তরে কিছুক্ষন চুপ থেকে রুহি বলে,
“আচ্ছা, দেখি কি করা যায়।”

“””””””””””””””””””””””””””””””

বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালে বাইরে রিদের গাড়ি দাড় করানো দেখে চমকালো আরশি। সকালে গিয়েছিল, এখন আবার হুট করে আসার কারন কি?
বুঝতে না পেরে বেলকনি থেকে রুমে ফিরে আসে সে। তখনি রিদ রুমে প্রবেশ করে ক্ষনিকটা তাড়া দেখিয়ে বলে,
“রেডি হয়ে নে, বাইরে যাবো।”
“কেন?”
“গেলেই দেখবি।”
“আম্মু,,,,,,,”
“ফুপিকে বলেছি আমি। এখন যা বলছি চুপচাপ তাই কর। আমি কিছুক্ষণ ওয়েট করছি, দশ মিনিটের মাঝে রেডি হয়ে বাইরে আয়।”
বলেই বেরিয়ে গেলো রিদ। জানার কৌতুহল থাকলেও প্রশ্ন করার সুজুগ পেলো না আরশি।

রেডি হতে প্রায় পনেরো মিনিট সময় লাগলো তার। তাড়াহুড়ো করলেও পাঁচ মিনিট লেট। যাই হোক, এর জন্য কিছু শুনতে হয়নি তাকে। আরশি রেডি হয়ে বের হলে রিদ ফুপিকে ডেকে বলে,
“আমরা যাচ্ছি ফুপি।”
ফুপি তাদের কাছে এসে বলে,
“আচ্ছা, ওর বাবা ফেরার আগেই তারাতাড়ি ফিরে আসিস বাবা। নাহলে আবার রেগে যেতে পারে।”

রিদ অন্য দিকে তাকিয়ে নিজের মাঝে বিড়বিড় করে বলে, ‘বউ নিয়ে বাইরে গেলে শশুরের এতো সমস্যা কিসের?’
পাশ থেকে আরশির মা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কিছু বললি?”
রিদ ক্ষনিকটা মৃদু হেসে বলে,
“না ফুপি তেমন কিছু না। তাড়াতাড়িই ফিরে আসবো।”
“আচ্ছা, ফি আমানিল্লাহ।”

“”””””””””””””””””””””””””””””””

ছাঁদের মাঝে একটা খোলা রেস্টুরেন্টে বসে আছে দুজন। আরশি কৌতুহল নিয়ে রিদের দিকে চেয়ে বলে,
“আমরা এখানে কার জন্য অপেক্ষা করছি।”
“রুহির জন্য।”
রিদ শান্ত গলায় কথাটা বললেও অনেকটাই অবাক হয় আরশি। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“রুহি আপু! হটাৎ এই জায়গায়!”
“হুম। বলল, বিয়ের দিন যাইনি তাই আজ যেন তোকে নিয়ে তার সাথে দেখা করি।”

কিছুটা নার্ভাস হয়ে গেলো আরশি। রুহি আপুর সাথে নিশ্চই দুলাভাইও আসবে। এতকিছুর পর ভাইয়ার সামনে দাড়াতে হবে, ভাবতেই কেমন যেন লাগছে তার। যেন এমনটা জানলে রিদের সাথে আসা দুরে থাক, বাসা থেকেই বের হতো না সে।
ভাবতে ভাবতেই রুহি আপু উপস্থিত হয় সেখানে। নার্ভাস হওয়া চেহারা এবার অবাক হওয়ায় রুপ নিল। রুহিকে দেখে খুশি হলেও পাশে ফারুককে দেখে অনেকটা অবাক হলো রিদ নিজেও।

রুহি সামনে আসতেই উঠে দাড়িয়ে গেলো রিদ। এক পলক ফারুক-কে দেখে নিয়ে শান্ত গলায় রুহির দিকে চেয়ে বলে,
“ও তোর সাথে কেন?”
শান্ত ভাবে প্রশ্ন করলেও রিদের রাগ বুঝতে সময় লাগলো না রুহির। এবার আরেকটু কাছে গিয়ে রিদের এক হাত ধরে বলে,
“দেখ, ভুল বুঝিস না ভাই। ফারুক তার ভুল বুঝতে পেরেছে। তাই সে এসেছে তোদের কাছে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে।”

রিদ পূনরায় শান্ত ভাবে বলে,
“এটা কি শুধুই একটা ভুল ছিল?”
রুহি পূনরায় তাকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলে,
“দেখ যা হওয়ার হয়ে গেছে। ভুলে যা ওসব। ভুল বড়ো হলেও ক্ষমা করা মহৎ গুন।”
এর মাঝে ফারুকও পাশ থেকে বলে,
“আ’ম রিয়েলি স্যরি রিদ ভাই। ফান করতে গিয়ে আমার এমনটা করা ঠিক হয়নি। আমি আমাজ কাজের জন্য লজ্জিত। ছোট ভাই মনে করে ক্ষমা করে দিন, প্লিজ।”

রিদ কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। ফারুক এবার আরশির দিকে চেয়ে দু হাত জোর করে বলে,
“আপু সত্যি আমি সেদিন মজা করতে গিয়ে এমনটা হয়ে গেছে। আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। ভাই হিসেবে ক্ষমা করে দিন। আমি আপনাদের সবার কাছেই ক্ষমা পার্থী।”

দুজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে সবটা স্বাভাবিক করে নিল ফারুক। ফারুকের মাঝে অপরাধবোধের ছাপ দেখে আর কিছু বলতে পারলো না রিদও। রিদকে ক্ষমা করতে দেখে এবার আরশিও ক্ষমার দৃষ্টিতে তাকালো। মানুষ মাত্রই ভুল। আর ক্ষমা করাটাও মহৎ গুন।

একসাথে বসলো চারজন। ফারুক অনেকটা হাস্যজ্জল মুখে ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার দিল। যেন আজ খুব খুশির দিন তার। বিকেলটা চারজন একসাথে উপভোগ করে বিদায় নিল তারা। ফারুক হাসি মুখে রিদের সাথে হ্যান্ডসেক করে কোলাকুলি করে নিল। অতঃপর আরশির দিকে চেয়েও নমনীয় ভাবে বিদায় দিল ফারুক।

বিদায় নিয়ে আরশির হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসলো রিদ। জানালা দিয়ে হাত নারিয়ে পূনরায় বিদায় জানিয়ে ছুটলো আরশিদের বাড়ির উদ্দেশ্য। আরশিকে পৌছে দিতে হবে তাড়াতাড়ি।

রুহি গাড়িতে উঠে বসলো। ফারুক গাড়ির পাশে দাড়িয়ে এক পলক তাকালো রিদের গাড়ির দিকে। কিছুটা মুচকি হেসে নিজের মাঝে বিড়বিড় করে বলে,
“সব কিছু এতটুকুতেই শেষ নয়। আর না আমিও একটুকুতে হার মেনে নেওয়ার মানুষ। নিজেকে ছোট করেছি মাত্রই আত্মিয়তার সম্পর্ক টা সুন্দর রাখতে। আমার আঘাতের স্বাদ ঠিকই উপভোগ করতে হবে দুজনকে। অপেক্ষাটা শুধু সঠিক সময়ের।”

To be continue……………

~ আসসালামু আলাইকুম। ব্যস্ততার জন্য এতদিন না দিতে পারার পারার জন্য দুঃখিত। এবার থেকে রেগুলার গল্প পাবেন ইন’শা আল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here