বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ৮) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
366

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

‘ভালোবাসেন আমাকে?’ প্রশ্নটা করেই তীব্র কৌতুহল নিয়ে রিদের দিকে চেয়ে আছে আরশি। হটাৎ এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে রইল রিদ। খুব করে যেন বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমি তোর আবেগের ভালোবাসা নয়, সারা জীবনের ভালোবাসা হতে চাই পিচ্চি। কিন্তু উপযুক্ত সময়টা যে এখনো আসেনি।

বলতে ইচ্ছে হলেও আপাতত ইচ্ছেটা মনের ভেতরই লুকিয়ে রাখলো সে। চেহারায় ক্ষনিকটা কঠোরতার ভাব নিয়ে এসে বলে,
“বয়স কতো তোর? ভালোবাসার মানে বুঝিস?”
আরশির মাঝে যেন আজ একটুও ভয় কাজ করছে না। রিদের খুব কাছাকাছি এসে দাড়িয়ে শান্ত ভাবে বলে,
“উত্তর টা জানতে চাইছি আমি। আমায় ভালোবাসেন?”

এই মেয়েটার দেখি দিন দিন সাহস বেড়েই চলছে। আগে সামনে দাড়িয়ে কথা বলতেই ভয়/লজ্জায় মুখ লুকাতে চাইতো। আর এখন চোখের দিকে চেয়েই ভালোবাসার কথা বলছে, ভাবা যায়? রিদ এবার কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বলে,
“কবে থেকে এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় চেপেছে তোর? তাই তো বলি দিন দিন পড়াশোনার এই অবস্থা কেন? পিচ্চি মেয়ে এখনো নাক টিপ দিলে দুধ পড়বে। প্রেম করার বয়স হয়েছে তোর?”

আরশি দু’হাত ভাজ করে বুকে গুঁজে রিদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“আচ্ছা তাই? আপনি জানেন, আমার সাথে কয়েকটা মেয়ের অলরেডি বিয়ে হয়ে গেছে?”

রিদ এবার হতাশার ভঙ্গিতে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“পাঁকা পাঁকা কথা শিখেশিস না? পিচ্চি একটা মেয়ে অলরেডি প্রেম ছেড়ে বিয়ে পর্যন্ত চলে গেলি। এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা আর মাথায় আনলে কিন্তু কানের নিচে একটা দিয়ে সোজা ছাদ থেকে ফেলে দিব। বিয়ের ‘ব’ পর্যন্ত ভুলে যাবি তখন। ”

বলেই আরশিকে আর কিছু বলার সুজুগ না দিয়ে তার এক হাত ধরে হাটা শুরু করে সিঁড়ির রুমের দিকে। সিঁড়ির রুম অব্দি এসেই থমকে দাড়ালো আরশি।
“কি হলো থেমে গেলি কেন?”
ভ্রু কুঁচকে কথাটা বলে রিদ। আরশি ক্ষনিকটা নরম স্বরে বলে,
“আপনি যান আমি একটু পর আসছি।”

রিদের বুঝতে দেড়ি হলো না আরশির জড়তার কারণ। গতকাল এমন একটা ঘটনার পর হয়তো সে রিদের সাথে সবার সামনে পড়ার ভয় পাচ্ছে। বিশেষ করে মামার। রিদ ক্ষনিকটা শান্ত গলায় বলে,
“যাবি নাকি কোলে করে নিয়ে যাবো?”

কিছুটা চমকালো আরশি। এই লোকের মুড কিছুক্ষণ পর পর সাকিব আল হাসানের বলের মতোই সুইং করে। দেখা যাবে সত্যি সত্যিই কোলে তুলে হাটা শুরু করবে। তখন আরো বিশ্রি কান্ড ঘটে যাবে। তাই চুপচাপ হাটা শুরু করে সে। মনে মনে একটাই দোয়া করছে, মামা যেন কোনো ভাবেই সামনে পড়ে না যায়।

আরশিকে নিয়ে সোজা রুমে চলে যায় রিদ। আলমারি খুলে দু’টো শাড়ি বের করে আরশির হাতে দিয়ে বলে,
“তোর পুড়িয়ে ফেলা শাড়ির ক্ষতিপূরণ।”
আরশি চুপচাপ শাড়ি গুলোর দিকে এক পলক চেয়ে বলে,
“সেদিন তিনটাই নিয়ে এসেছিলেন?”
“হুম।”

ক্ষনিকটা অবাক হয় আরশি। সেদিন কেনা-কাটার সময় সে নিজের মাঝেই বিড়বিড় করে বলেছিল, ‘তিনটাই তো পছন্দ হয়েছে। কোনটা রেখে কোনটা নিব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’
নিজের মাঝেই বলা কথাটা বুঝলো কিভাবে সে? নাকি মুখ দেখেই মন পড়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে তার? এটা কি মনের মিল? ভাবনার মাঝে রিদ পাশ থেকে বলে,
“এবার যা হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। নাস্তা করতে হবে।”

বলেই রিদ ফ্রেশ হওয়ার ব্যস্ততা নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরলে আরশি পেছন থেকে ব্যাগ হাতে বলে,
“এগুলো রেখে যাচ্ছি এখানে।”
রিদ পেছন ফিরে ভ্রু কুচকে বলে,
“কেন?”
“বাসায় যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো।”

আর কিছু বলল না রিদ। আরশি চুপচাপ ব্যাগ গুলো আগের জায়গায় রেখে রুম থেকে বের হতেই মামির মুখোমুখি হতে হয় তাকে। মাঈমুনা চৌধুরি ছেলেকে ডাকতে এসে দরজা খুলেই আরশিকে দেখে ক্ষনিকটা চমকানোর ভঙ্গিতে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল তার দিকে। হয়তো এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না সে। ক্ষনিকটা গম্ভির দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“এই ভোর বেলায় রিদের রুমে কি করছিস তুই?”

চোখে-মুখে সন্দেহের ছাপ তার। এমন অবস্থায় কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায় আরশি। সাথে ভয়ও হয় অনেকটা। মামি উল্টাপাল্টা কিছু মিন করেনি তো? ভাবতেই কিছুটা কাঁপা স্বরে বলে,
“রি,, রিদ ভাইয়া ডেকেছিল মামি।”
মাঈমুনা পূনরায় গম্ভির গলায় বলে,
“কেন ডেকেছিল? আর রিদ কোথায়?”

এবার ভয়ে গলা শুকিয়ে আশে আরশির। ভয়ার্ত চাহুনিতে রুমের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,
“ওয়াশরুমে গেছে মামি।”
আরশি ভেবেই নিয়েছে, এই মুহুর্তে মামি নিশ্চই তাকে ভুল বুঝবে। ভয়ে যেন কাঁন্না পাচ্ছে আরশির। মাঈমুনা চৌধুরি আবারও শান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
“কেন ডেকেছিল?”
এবার ভয়ে ভয়ে সত্যটা বলে আরশি,
“গতকাল ঐ ঘটনার পর রিদ ভাই আমার শাড়িটা পুড়িয়ে ফেলেছে। আর নতুন দুইটা শাড়ি নিয়ে এসেছে। এগুলো দিতেই ডেকেছিল এখানে।”
“কেন পুড়িয়েছে শাড়ি।”

উত্তরটা জানা থাকলেও বলতে পারলো না আরশি। নিচু স্বরে জবাব দেয়,
“জানি না।”
মাঈমুনা চৌধুরির বুঝতে অসুবিধা হলো না ছেলের রাগ সম্পর্কে। বয়স এমনি এমনি হয়নি তার। আরশির দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বলে,
“বাড়িতে মেহমান আছে। তারা তোকে এই ভোর বেলায় রিদের রুমে দেখলে উল্টাপাল্টা ভেবে নিবে। ঘরে মেহমান না থাকলে ভিন্ন কথা। আমরা ঘরের মানুষ এগুলো বুঝলেও বাইরের মানুষ এগুলো স্বাভাবিক ভাবে নিবে না। মেয়ে মানুষ এগুলো মাথায় রাখবি। যা ফ্রেশ হয়ে রুমকিকে নিয়ে টেবিলে গিয়ে বস। নাস্তা দিচ্ছি আমি।”

হালকা মাথা নেড়ে আচ্ছা বলে চুপচাপ বেড়িয়ে যায় আরশি। এতক্ষণে যেন হাফ ছেড়ে বাচলো আরশি। যাক, অন্তত মামি তাকে ভুল বুঝেনি। সহজেই পরিস্থিতি বুঝতে পারেন তিনি। এ জন্যই হয়তো মামিকে এতো ভালো লাগে।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আজ বৌ ভাতে রুহির শশুড় বাড়িতে সবার যাওয়ার কথা থাকলেও যাচ্ছে না আরশি। তার জন্য এত বড়ো একটা কাহিনি ঘটে গেছে, এখন ঐ বাড়িতে যাওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
রিদও একটা কাজের কথা বলে ঘন্টাখানেক আগে বেড়িয়েছে এখনো কোনো খবর নেই। এদিকে রোহান বারংবার ফোন দিলেও ফোন বন্ধ পাচ্ছে তার।
রুহি হয়তো জানতো এমন কিছুই হবে। তাই ফোন দিয়ে বলেছিল, আরশি ও রিদকে যেন অবশ্যই নিয়ে যায় তারা। যেতে না চাইলেও জোর করে নিয়ে যায়। কিন্তু ব্যর্থ হলো তারা।

দুপুরের পর ফাহিমদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছায় সবাই। রিদ-আরশির জন্য দেড়ি হচ্ছিল দেখে ফাহিমের বাবা বারংবার ফোন দিচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে তাদের ছাড়াই রওনা দেয় সবাই।
সেখানে পৌছাতেই রুহি মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
“আরশি কোথায় মা? তাকে এনেছো?”
“আসেনি।”
“রিদ?”
“সেও আসেনি।”

মুহুর্তেই রুহি রিদকে ফোন দেয়। সে জানে কোনো লাভ হবে না। তবুও দিল। বরাবরের মতো এবারও বন্ধ পেয়ে অনেকটাই হতাশ হলো সে। যদিও সে জানতো এমনটাই হবে। কারণ ছোট বেলা থেকেই রিদের জেদ সম্পর্কে ভালো করেই জানে সে।

”””””””””””””””””””””””’
হাতে দু’টো প্যাকেট নিয়ে বাসায় প্রবেশ হরে রিদ। আরশি তখন রুমে বসেছিল চুপচাপ। হটাৎ রুমে রিদকে প্রবেশ করতে দেখে বলে,
“আপনি যাননি তাদের সাথে?”
“না।”
“কেন জাননি? রুহি আপু ফোন করে বারংবার আপনার কথা বলছিল।”
“তুই কেন না গিয়ে ঘরে বসে আছিস?”

প্রশ্নের মাঝেই উত্তর টা পেয়ে গেলো আরশি। তাই আর কিছু না বলে নিরব হয়ে বসে রইল সে। রিদ তাকে তাড়া নিয়ে বলে,
“যা প্লেট নিয়ে আয়। ক্ষিদে পেয়েছে খুব।”
“ফ্রিজে তো খাবার রেখে গেছে। মামি বললো, গরম করে খেয়ে নিতে। বাইরে থেকে কেন আনলেন?”
“ইচ্ছে হয়েছে তাই। এত প্রশ্ন করিস কেন? যা বলছি তাই কর।”

চুপচাপ একটা প্ল্যাট নিয়ে আসে আরশি। রিদ প্লেটে খাবার নিয়ে বলে,
“আজ এক প্লেটে খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে তোর?”
“মোটেও না। একটা আপনার জন্যই এনেছি। আমার ক্ষুদা নেই।”
রিদ আর কিছু বললো না। চুপচাপ খাবার প্রস্তুত করে বলে,
“হা কর।”
“খেতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
রিদ এবার তার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“দেখ, অনেক ক্ষুদা লেগেছে। আর কষ্ট করে নিয়ে আসা খাবার ফেলে দিতে বাধ্য করবি না একদম।”

এবার নিরুপায় ভঙ্গিতে ভঙ্গিতে চুপচাপ হা করে আরশি। খাওয়া শেষে আরশির বিষন্ন চেহারার দিকে চেয়ে রিদ বলে,
“সব কিছুর জন্য মন খারাপ?”
আরশি দু’দিকে মাথা নেড়ে বলে,
“উহু।”
“তোর মন খারাপের জন্য স্যরি।”
“কেন?”
“আমার জন্যই হয়েছে তাই।”
“আপনার জন্য মন খারাপ হলে আমি আপনার সাথে কথাই বলতাম না।”

আরশির এমন বাচ্চামো কথায় হেসে ফেলে রিদ। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলে,
“চল তাহলে আজ একটা সাইকেল রেস হয়ে যাক। কয়দিন আগে তো চ্যালেঞ্জ করেছিলি। দেখি কতটুকু শিখলি?”
“যাই শিখি আপনাকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।”
রিদ তার মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,
“ওকে ডান, চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড। দেখা যাক কে জিতে।”

“”””””””””””””””””””””””””””””

ফুরফুরে বিকেল। বাড়ির সবাই আসতে প্রায় সন্ধা হবে হয়তো। এমনিতেও বিষণ্নতায় ইচ্ছে হচ্ছিল বাইরে থেকে ঘুরে আাসতে। সাহস করে রিদের সাথে বেড়িয়ে যায় আরশি৷

দুটো সাইকেল দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে দুজন। আরশিকে সাইকেল চালানো শিখিয়েছে রিদ আর রুমকিকে শিখিয়েছে রোহান। রুমকির শিখতে দেড়ি হয়েছে অনেক। যার কারণে রোহানের কম বকা শুনতে হয়নি তাকে। রুমকিও কম না, এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়ে যেত এক পর্যায়ে।

ফাকা রাস্তায় দুজন ছুটছে দুটো সাইকেল নিয়ে। আরশির মাঝে জেতার তীব্র প্রচেষ্টা। তাই সামনের দিকে চেয়ে এক ধ্যান-এ চালাচ্ছে সে। ঝুটি করা চুল গুলো বাতাশে উড়ছে তার।
রিদ তার পেছন পেছন চালাচ্ছে তাল মিলিয়ে। আরশি মাঝে মাঝে পেছন ফিরে দেখছে রিদ কতটুকু দুরে। যা দেখে রিদ কিছুটা হেসে চ্যাঁচিয়ে বলে,
“সামনে দেখে চালা, নয়তো পড়ে যাবি।”

ছুটে চলছে দুজন। মুক্ত বাতাশে ছুটে চলা রমনীর দিকে তাকাতেই তীব্র মুগ্ধতা এসে গ্রাস করে নেয় তাকে। তবুও বেসামাল ভাবে ছুটে চলছে তার পিছু পিছু, তবে খুব কাছাকাছি। আরশি পড়ে যাওয়া ভয়ে ও আরশির এগিয়ে থাকা জয়ের হাসি দেখতেই হয়তো পেছনে পরে আছে সে। এই প্রশান্তিতে রিদ চলন্ত সাইকেলের মাঝে দু দিকে হাত মেলে দিল। প্রেয়শির হাসিতে এক বুক প্রশান্ত নিয়েই ছুটে চলছে। হয়তো প্রেয়সির মুখের হাসিই জিতে যাওয়ার চেয়ে হাজার গুন বেশি প্রশান্তি দেয় তাকে।

সাইকেল রেখে ক্লান্ত ভঙ্গিতে একটা গাছের নিয়ে বসে দুজন। রেস-এ জিতে চোখে-মুখে প্রশান্তির ছাপ আরশির। রিদ সেই হাসিতে দৃষ্টি আটকালেও পরক্ষণে তা সরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,
“তুই তো আজ সত্যিই আমাকে হারিয়ে দিলি রে পিচ্চি। এখ প্রথম কেউ আমাকে রেস এ হারিয়েছে। আর সেটা তুই।”

রিদের দিকে দৃষ্টি রাখে আরশি। শান্ত গলায় বলে,
“চালাক মানুষদের গুন কি জানেন? তারা খুব বেশি চালাকি করতে জানে। আর তাদের বোকামি কি জানেন? তাদের চালাকি যে অন্য কেউ বুঝে যায়, এটা তারা বুঝতে পারে না।”

রিদ কিছু না বোঝার ভান ধরে বলে,
“কি সব উল্টাপাল্টা বলছিস?”
আরশি আবারও মুচকি হেসে বলে,
“আপনার কি মনে হয়, আমি আপনাকে একটুও বুঝি না? তাছারা আপনি যদি সত্যিই জিততে চাইতেন, তাহলে আমার সাইকেলে দু’টো ডানা লাগালেও আমি আপনাকে হারাতে পারতাম না।”

To be continue………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here