#অনূসুয়া
#পর্ব৭
#রাউফুন
সেদিন সুসমার শ্বশুর মশাই তাকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো সময় মতো। সুসমা সহ্য করতে না পেরে নিঃস্পৃহ হয়ে, নেতিয়ে গেছিলো। সাত দিনের মধ্যে বিছানা থেকে উঠার জো ছিলো না। করিম সাহেব স্ত্রীর উপর কড়া নজর রাখতে লাগলেন। এই বয়সে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছেন। যদি সুসমার জায়গায় নিজের মেয়ে হতো তবে কি প্রজা ঐভাবে ঘর বন্দী হয়ে থাকতে পারতো? নিজের চোখে ছেলেকে একটা বাচ্চা মেয়ের উপর নির্মম ভাবে অত্যাচার করতে দেখেও কিভাবে ঘরের দরজাটা আটকে গো ধরে বসে ছিলো? একজন মা কি করে এরকম নিষ্ঠুর হতে পারে? প্রজাও স্বামীর প্রথম বারের মতো ওমন ভয়ংকর রুপ দেখে আর সাহস করে নি দ্বিতীয় কথা বলার। সুসমাকে কাজের হুকুমও দেননি৷ সুসমা কিছু টা সুস্থ হলেও শরীর দূর্বল হয়ে গেছে অনেকটাই। সেদিনের আঘাতের পর সুসমা মাটিতে বিছানা করে শুয়ে পরে। রাশেদ কথা বলার চেষ্টা চালালেও সুসমা বোবার মতো ছিলো। দিনকে দিন দূরত্ব বাড়ছিলো রাশেদের সঙ্গে। প্রথম দুই দিন রাশেদ কথা বলতে চাইলেও আর বলার চেষ্টা করেনি। সুসমাকে ওঁর মতো ছেড়ে দিয়েছিলো। সে আর পরোয়া করতো না সুসমাকে৷ ঘরের বাহিরে যদি অন্য নারীর প্রতি টান থাকে তবে কি ঘরের বউকে আর ভালো লাগে? দরকার পরতে পারে?
সুসমা ঘর থেকে বাইরেও বের হয়নি এই কদিন। রিয়া সময় মতো খাবার দিয়ে যায় রুমে। এক বেলা খাবার দিলে তো অন্য বেলায় খাবার আসতো না। সুসমা বুঝতে পারতো শাশুড়ী মা রিয়াকে আসতে দিচ্ছে না। অনাহারে থাকতে থাকতে পেট পিঠ শুকিয়ে এক হয়ে যাচ্ছিলো৷ অবশ্য সে তো কাজ করে না তবে খাবার পাবে কিভাবে? তবুও চুপচাপ সয়ে যাচ্ছে সবটা। সে কেন সহ্য করছে এসব নিজেও জানে না। সে শক্ত হতে পারছে না। কোনো কিছু হারানোর একটা ভয় কু’ড়ে কু’ড়ে খাচ্ছে।
সুসমা সপ্তম দিনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বেরিয়েই দেখলো সোফায় শাশুড়ী মা বসে আছে টিভি ছেড়ে। তাকে দেখে মুখ ভেংচি দিয়ে বললেন,
‘নবাবজাদার বেটি ঘর থেকে বেরোলেন তবে? অনেক আরাম করছেন যান ঘরের কাজ করুন।’
সুসমা মাথা নেড়ে চলে গেলো। রান্না ঘরে যেতেই উটকো গন্ধে পেটের নাড়ী ভুড়ি উলটে আসছিলো তার। কোনো রকমে গন্ধের উৎস খুঁজে বের করে দেখলো মাছ কা’টার ময়লা ফেলেনি তার শাশুড়ী। নাকে কাপড় চেপে সবটা পরিষ্কার করে কাজে লেগে পরলো সে। যতোই হোক সংসার টা তো তারই।
তার শ্বশুর মশাই বেশির ভাগ সময় বাড়ি থাকেন না। অল্প বিস্তর পড়াশোনা থাকায় একটা ছোট খাটো চাকরি জুটাতে পেরেছেন গার্মেন্টসে।
•
পরের দিন সুসমা বাসন মাজছিলো। রান্না ঘরে গিয়ে সুসমাকে অবধারিতভাবে ইশারা করে ডাকলো রিয়া। এই বাড়িতে এই মেয়েটা আর তার শ্বশুর মশাই তাকে একটু আদর যত্ন করে। মাঝে মাঝে মাকে লুকিয়ে রিয়া তার সঙ্গে গল্প করে। তার সঙ্গে কথা বলতে আসলেই শাশুড়ী মায়ের খোঁচানো কথা শুনতে হয় তাই রিয়া তার সঙ্গে গল্প করতে আসে না খুব একটা! রিয়া চাইতো না তার জন্য সুসমাকে কোনো রকম কথা শুনতে হোক। সুসমা আঁচলে হাত মুছে বললো, ‘কিছু বলবে?’
‘আজ সবাই দু-খানা করে মাছ ভাজা খেয়েছে আর তুমি খেলে না কেন ভাবি?’
এইরকম একটা প্রশ্নের ঠিক কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না সুসমা। বলল, ‘মাছের কা’টা’য় আমার ভয় আছে। মাছ বেছে খেতে পারি না গলায় কা’টা আটকে যায়!’
‘তুমি কি আমাকে বোকা পেয়েছো? আমি জানি মাছ তোমার কতটা পছন্দ! এতোটা ছাড় দিও না ভাবি। মায়ের এসব নাফরমানি আমি সহ্যও করতে পারি না আবার কিছু বলতেও পারি না৷ যতই হোক মা তো। এরপর থেকে মাছ ভাজার সময় একটা করে পিস উঠিয়ে রাখবে নিজের জন্য! মা দেখার আগেই সেটা আবার খেয়ে ফেলবে। এভাবে না খেলে এই বাড়িতে ভালো কোনো খাবারই তুমি খেতে পারবে না ভাবি। এই নাও মা এই মাছ ভাজা লুকিয়ে রেখেছিলো আমি তোমার জন্য এনেছি। মা কিছু জিজ্ঞেস করলে আমি বলবো এটা আমি খেয়েছি!’
রিয়ার সমাদরে সুসমার চোখ বেয়ে মুক্তোর ন্যায় অশ্রুদানা গড়িয়ে পরলো৷ চোখ মুছে বললো, ‘আমি এভাবে খাবার খেতে চাই না রিয়া৷ আমার গলা দিয়ে নামবে না। মা যদি কোনো দিন নিজে থেকে আমাকে মাছ মাংস খেতে দেন তবেই খাবো। আমি এতোটাও খাওয়া পা’গ’ল না যে লুকিয়ে খাবার খাবো।’
‘মা তোমাকে কোনোদিন ও ভালো ভালো খাবার খেতে দেবে না। যেহেতু তোমার আমার কথা ভালোই লাগলো না তবে এভাবেই থাকো গে। আমার আর কি? আমরা খাবো আর তুমি রেঁধে বেড়ে দিয়েও খেতে পারবে না। কি সুন্দর না ব্যাপারটা?’ কথা শেষ করে রিয়া গটগট করে হেঁটে চলে গেলো নিজের রুমে।
সুসমার বাবার কথা মনে পরলো। তার বাবা সব সময় বলতো, ‘মা আমার মানুষ চিনতে কখনোই ভুল হয় না। আমি জানি রাশেদ অনেক ভালো ছেলে। শাশুড়ীর সঙ্গে একটু মানিয়ে নাও মা। মেয়েদের বিয়ে একবার ই হয়। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এসব একবার ই হয়। ‘
এদিকে তার বাবার হার্টের অসুখ। রাশেদ এতোটা নোংরা লোক এটা যদি তার বাবা শুনে তবে অনেক কষ্ট পাবে। তাই বাবার কথা চিন্তা করে মুখ বুঝে, দাঁত দাঁত কামড়ে পরে রইলো শশুড় বাড়িতে। রাশেদ অবৈধ সম্পর্ক গুলো এতোটাই নিখুঁত ভাবে করতো যে সুসমা টেরই পেতো না। কলেজ যাওয়ার পর এক বছর ধরে তাকে রোজ একটা ছেলেকে তাকিয়ে থাকতে দেখতো। একদিন সে সুযোগ পেয়ে ছেলেটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি রোজ রোজ এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কেন? আমি বিবাহিত, আমার স্বামী সংসার আছে। আমাকে আর এভাবে দেখবেন না। আমার থেকে দূরে থাকলে আপনারই ভালো হবে। আর হ্যাঁ আর কক্ষনো যদি আপনি আমাকে চিঠি দিয়েছেন তো তার ফল ভালো হবে না৷ শুধু মাত্র আপনার জন্য আমার সাজানো সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে!’
সুসমা সেদিনও জানতে পারেনি ছেলেটা আসলে কথা বলতে জানে না তাই চিঠি লিখে নিজের মনের কথা ব্যাক্ত করে। ছেলেটা যখন জানলো সুসমা বিবাহিত তখন সুসমা খেয়াল করেছিলো ছেলেটার চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পরছে অশ্রুদানা। একটা ছেলে যে এভাবে কাঁদতে পারে তা দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছিলো সুসমা। সেদিন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি আসার পর তুখোড় জ্বরে পনেরো দিন বিছানায় পরে ছিলো। জ্বর নিয়ে তিন বেলা রান্না ছিলো নিত্য দিনের সঙ্গী। জ্বর সারবে কি তড়তড় করে বেড়ে যেতো রাতে। আর এতো অসুস্থতার মধ্যে রাশেদের শারিরীক চাহিদা তো আছে। পরদিন রাশেদ কিভাবে যেনো সেই ছেলে আর সুসমার ছবি পেয়েছিলো। যার কয়েক কপি আর চিঠি দিয়েছিলো সুসমার বাবার হাতে তুলে। যার দরুন দূরত্ব বেড়ে গেছিলো সুসমার বাবার বাড়ির সঙ্গে। বাবা মা কেউ-ই আর খোঁজ নিতো না। এদিকে সুসমা সত্যিটা বোঝাতে চাইলেও শুনতে রাজি হয়নি। ছবি আর চিঠি দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো তার বাবা তার থেকে। এরপর দেখতে দেখতে কত গুলো বছর কে’টে গেছিলো। বিয়ের চার বছরের মাথায় সে কন্সিভ করেছিলো এরপরই বদলে গেছিলো তার জীবন। রাশেদ কোনো ভাবেই মানছিলো না বাচ্চাটা তার। এটা সেটা নোংরা, মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দিচ্ছিলো। যেটা মেনা নেওয়া ছিলো সুসমার জন্য জীবন মৃত্যুর সমান।
#চলবে
প্লিজ কেউ ছোট বলবেন না। ফোনে চার্জ নেই, সারাদিন কারেন্ট নেই। যেটুকু লেখা ছিলো সেটুকুই পোস্ট করলাম। আর কালকে বোনাস দিতে চেয়েও পারিনি ব্যস্ততার কারণে!