হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস #পর্ব_১৯ #মোহনা_হক

0
551

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_১৯
#মোহনা_হক

সকাল নয়টা পনেরো। এক প্রকার হৈ-হুল্লোড়ে রুয়াতের ঘুম ভেঙে গেলো। কাল ও তাদের বাসা একদম নিরব ছিলো। আজ এমন চিৎকার চেচামেচি তে বাসা যেনো ফেঁটে যাচ্ছে। রুয়াত উঠে বসলো। বাহির থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে মেহরুবা। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখলো। আজ অনেক ঘুমিয়েছে। কাল সারা রাত আয়াজের অপরিচিত ব্যবহার তাকে ঘুমোতে দেয়নি। বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে কেঁদেছে। রাতের খাবার ও খায়নি। মূলত আয়াজের ব্যবহার সহ্য করতে পারেনি। সে তো সম্পুর্ণ নির্দোষ ছিলো। রুয়াত উঠে দরজা খোলার আগে একবার আয়নায় নিজেকে দেখে নেয়। চোখগুলো ফোলা ফোলা লাগছে। নাক ও লাল হয়ে আছে। ফর্সা মুখে লাল আভা। দরজা খুলতেই দেখে মেহরুবা দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে শাহরীন আর সায়রা। এরা রুয়াতের খালাতো বোন। রুয়াত কে দেখেই হাসি দেয়।

মেহরুবা একটু রাগ দেখিয়ে বললেন-
-‘আজ কি তুই জানিস না? এতো বেলা ঘুমিয়েছিস কেনো? আর তোর চোখ মুখ এতো লাল আর ফোলা লাগছে কেনো? ঘুম হয়নি নাকি?’

হকচকিয়ে যায় রুয়াত।
-‘রাতে একটু দেরি করে ঘুমিয়েছিলাম। তাই হয়তো এমন লাগছে। কিন্তু আজ কি?’

ভ্রু কুচকে মেহরুবা রুয়াতের দিকে তাকায়।
-‘আজ ইনিমার শ্বশুড় বাড়ি থেকে সবাই আসবে। তোর আর আয়াজের বিয়ের তারিখ ঠিক করতে। কতো কাজ পড়ে আছে আর মেয়ের ঘুম শেষ হয়না। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি টেবিলে নাস্তা দিয়েছি। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়। আর ডাকতে পারবো না।’

মেহরুবা শাহরীনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-‘ওকে আজ তুই সাজিয়ে দিস মা। ইনিমা তো তাদের সাথে আসবে। তাই আজ ওকে সাজানোর দায়িত্ব তোর। আমি ঠিক সময়ে এসে তোকে শাড়ি দিয়ে যাবো।’

তাড়াহুড়োয় মেহরুবা নিচে চলে আসে। শাহরীন মাথা দুলায় তার খালামণির কথায়। রুয়াতের থেকে দু বছরের বড় শাহরীন। তার ও বিয়ে হয়েছে এক বছরের বেশি সময় হয়েছে। শাহরীন রুয়াতের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে-

-‘কেমন আছিস? আমি তো জানি আমি জিগ্যেস না করলে তুই কখনো জিগ্যেস করবি না। তোকে তো আমরা চিনি ছোটবেলা থেকে।’

রুয়াত হেসে শাহরীনের হাত জড়িয়ে ধরে।
-‘ভালো আছি আপু। তোমরা কখনো এলে? আর কে কে এসেছে? মনেহচ্ছে বাসায় আজ অনেক মানুষ।’

-‘আমরা এসেছি। আর মামিরা এসেছে। নানু আর নানাভাইয়া ও এসেছে। নিচে গেলেই সবাইকে দেখতে পারবি। আগে তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। খালামণি কি বলে গেলে শুনেছিস তো?’

মাথা নাড়ায় রুয়াত। একবার পাশ ফিরে সায়রা কে ও দেখে নেয়। এবার দশম শ্রেণিতে পড়ছে। রুয়াত সায়রার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। প্রতিত্তোরে সায়রা ও হাসে। অতঃপর রুয়াত ফ্রেশ হয়ে আসে। নিচে গিয়ে দেখে এ এক এলাহী কান্ড। রুয়াতের নানা আমজাদ সাহেব মাছ কাটছেন। পাশে মেহরুবা আর রুয়াতের বড় মামি দাঁড়িয়ে। বাড়িতে যেনো উৎসব মুখোর পরিবেশ তাদের। সচারাচর এ বাড়িতে তেমন কেউ বেড়াতে আসে না। কারণ রুয়াতের নানুর বাড়ি অনেক দূর হওয়াতে বেশি একটা তারা তাদের নানুর বাড়িতে যায় না। আবার এখানেও কেউ আসে না। যোগাযোগ প্রতিনিয়ত মোবাইলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। রুয়াতের নানা বরাবরই খাবারের বিষয়ে বেশ পারদর্শী। বাল্যকাল থেকেই তিনিই সব কাজ করতে জানেন। এরকম কাহিনী নতুন কিছু না। রুয়াত নানুর বাড়িতে গেলে দেখে এসব। রুয়াত গিয়ে তার মামী ও খালামণির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। মায়ের বকাবকি তে তাড়াতাড়ি নাস্তাটা সেরে নেয়।

চৌধুরী বাড়ি থেকে সবাই মজুমদার বাড়িতে আসবেন বিকেলে। ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে। দুপুরে মেহরুবা এসে রুয়াত কে গাঢ় মেরুন রঙের একটা শাড়ি দিয়ে যায়। শাহরীন রুয়াত কে শাড়ি পরিয়ে দেয়। মোটামুটি একটা সাজ ও দেয় রুয়াতের ফেইসে। রুয়াত চুপচাপ বসে আছে। শাড়ি পড়েছে সেজেছে এর মানে এই না যে আয়াজের উপর থেকে অভিমান চলে গিয়েছে। রাগ এখনো আছে। তবে তা কোনো কাজ কর্মে প্রকাশ করলো না। যা বলার আয়াজ কে বলবে। রুয়াতের সাজ শেষ হলে তাকে রুমে বসিয়ে শাহরীন নিচে চলে আসে।

(*)

মায়া চৌধুরী আর ফজলুল চৌধুরী তৈরি হয়ে বসে আছেন। আরহাম আর ইনিমা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আয়াজ বাসায় আসেনি এখনো। মায়া চৌধুরী তার ছেলেকে বারবার কল দিচ্ছেন প্রতিবার কল কেটে দিচ্ছে আয়াজ। সকালেই তো বলে গেলো আজ’ই যেনো রুয়াতের সাথে তার বিয়ের তারিখ জানাতে ওই বাড়িতে যাবে। যে বলছে এখন তার খবর নেই। এক সময় রাগ করে মায়া চৌধুরী কল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ইনিমা তার শ্বাশুড়ির রুমে আসে। এসে দেখে তিনি মুখটা ছোট করে বসে আছে। আর নিচে ফজলুল চৌধুরী সোফায় বসে বসে খবর দেখছে।

-‘মা কি হয়েছে বসে আছেন যে এভাবে?’

চিন্তিত স্বরে মায়া চৌধুরী বললেন-
-‘আয়াজ এখনো এসে পৌছায়নি। আমরা তো রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু ওর আসার নাম নেই।’

-‘মা হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত আছে চলে আসবে। আপনি চিন্তা করবেন না। আর যেহেতু আয়াজ সকালে বলেছে আজ আমাদের বাসায় গিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করে আসবে তার মানে সে যাবেই।’

মায়া চৌধুরী এখনো স্থির হয়ে বসতে পারছেন না।
-‘আজ ও তাকে ব্যস্ত থাকতে হবে? আরহাম কে ডেকে আনো যাও।’

ইনিমা গিয়ে আরহাম কে ডেকে আনে। আরহাম এসে মায়ের পাশে বসে বলে-
-‘কি হয়েছে মা?’

-‘দেখ না বাবা আমি তোর ভাইটা কে কতোবার কল দিলাম ধরেনি। তুই ওকে কল দে। কতক্ষণে যাবো আমরা?’

-‘দিচ্ছি কল। তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো।’

আরহাম উঠে বাহিরে চলে যায়। সে ও আয়াজ কে কল দিচ্ছে কিন্তু আয়াজ ধরছে না। কিছু সময় পর আয়াজের গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে । আরহাম সেদিক চেয়ে আছে। মহাশয় গাড়ি থেকে নামছেন।

আরহাম আয়াজের সামনে এসে দাঁড়ায়। একটু ধমক দিয়ে বলে-
-‘কল রিসিভ করে কি বলা যায় না আমি আসছি? মা কতো টেনশন করছে তোর জন্য।

এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আয়াজ আরহামের দিকে তাকায়।
-‘সেরকম পরিস্থিতি থাকলে তো কল রিসিভ করা হতো।’

-‘মানুষের টেনশন তো তোর গায়ে লাগে না। আমিও বা কি বোকা এই পাথরের কি সেই ফিলিংস আছে নাকি?’

আয়াজ সামনের দিকে অগ্রসর হয়। ভাইয়ের এরূপ কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। আয়াজ ফ্রেশ হয়ে কালো রঙের পাঞ্জাবী পড়ে নেয়। তারপর মায়ের রুমে যায়। আরহাম আগেই বলেছে আয়াজ এসেছে। কিন্তু মায়া চৌধুরী রাগ করে আর যায়নি ছেলের কাছে। তাই আয়াজ নিজ থেকেই আসে। মায়া চৌধুরী প্রথমে রাগ করে কথা বলেনি। ছেলের সাথে তো আর রাগ করে থাকা যায়না তাই অনেক পরে কথা বলেছে। আর এসব করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। ইনিমা আর আরহাম এক গাড়িতে গিয়েছে। পরের গাড়িতে আয়াজ, ফজলুল চৌধুরী আর মায়া চৌধুরী আসছে।
মজুমদার বাড়িতে আয়াজের ঢুকার সাথে আগেই হান্নান মজুমদার এগিয়ে যায়। ফজলুল চৌধুরী আর মায়া চৌধুরী জাফরি কে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়। আয়াজ আরহাম এখনো ভিতরে যায়নি। দু’জন বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।

আরহাম আয়াজের দিকে এগিয়ে আসে। কাঁধ বরাবর হাত রেখে বলে-
-‘শুন ভাই তখন মেয়েটার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তোর কারণে তার পরিবার ও তার মতামত নেয়নি। আমার একান্তই ইচ্ছা তুই রুয়াতের মতামত নিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে বলবি।’

আয়াজ হাসে আরহামের কথায়।
-‘এতো টান শালীকার জন্য?’

-‘রুয়াত কে আমি আমার বোনের মতো দেখি। সে হিসেবে আমি আমার মন্তব্য জানিয়েছি। বাকিটা তোর ইচ্ছে।’

আরহাম চলে যায়। ইনিমা দুই ভাইয়ের কথোপকথন শুনে ফেলে। আরহামের কথা বেশ পছন্দ হয় তার। আর যতোই আয়াজ আরহামের সাথে এসব কথা বলে দুষ্টুমি করে ভাইয়ের কথা কখনো ফেলে দেয় না সে। ইনিমা আয়াজ কে বলে ভিতরে আসার জন্য। আয়াজ ভিতরে আসে।
মায়া চৌধুরী মেহরুবার সাথে কথা বলছেন। ইনিমা এখনো রুয়াতের সাথে যায়নি। নিচে তার শ্বশুড়ের পাশে বসে আছে। আয়াজ আর আরহাম এক জায়গায় বসেছে। জাফরি সবার মাঝে দৌড়াদৌড়ি করছে। রুমে একা একা বসে আছে রুয়াত। একটু আগে সায়রা এসে বলে গিয়েছে ওই বাড়ি থেকে
সকলে চলে এসেছে। রুয়াত আয়াজের কথা ভাবছে। প্রথমদিন আয়াজের কথায় বিয়েটা এক্সামের কারণে পিছিয়েছে। এখন তো এক্সাম শেষ। আর আয়াজ আজ কি বলে বিয়ে নিয়ে সেটাই ভাবছে। ‘বিয়ে’ কথাটি মনে পড়তেই বুক কেঁপে ওঠে রুয়াতের। সব কেমন অস্থির অস্থির লাগছে তার।

-‘ইনিমা চলো আমার সাথে। রুয়াতের সাথে দেখা করে আসি।’

ইনিমা মাথা নাড়িয়ে বলে-
-‘চলুন মা।

মায়া চৌধুরী আর ইনিমা রুয়াতের সাথে দেখা করতে যায়। রুয়াত তাদের দেখে দাঁড়িয়ে যায়। মায়া চৌধুরী রুয়াতের থুতনিতে হাত রেখে বলে-

-‘কেমন আছো মা?’

রুয়াত একবার ইনিমার দিকে তাকায়। হেসে উত্তর দেয়।
-‘ভালো আছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন?’

-‘ আমি তো খুব ভালো আছি। কারণ এখন থেকে তুমিও আমাদের সাথে থাকবে।’

রুয়াত বুঝেছে মায়া চৌধুরী কি বলতে চাচ্ছেন। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হাসি দেয়। মায়া চৌধুরী কিছু সময় রুয়াতের সাথে বসে কথা বলে। ইনিমা ও ছিলো রুয়াতের পাশে। মায়া চৌধুরী কথাগুলো বলে নিচে চলে যায়। রুয়াত খুব মনযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনেছে। ইনিমার উঠে রুয়াতের সামনে দাঁড়ায়। মাথা তুলে দেখে তার বোন কে। একটু সংকোচ বোধ হচ্ছে ইনিমা কে তার মনের কথা বলবে কিনা!

-‘কিছু নিয়ে চিন্তায় আছিস?’

ঢোক গিলে রুয়াত ইনিমার দিকে তাকায়। আবারও কাল করা আয়াজের বা’জে ব্যবহারের কথা মনে পড়ছে। রুয়াত ইনিমা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সাথে সাথেই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে তার। ইনিমা অবাক হয়ে বোনের পিঠে হাত রাখে। হঠাৎ রুয়াত কাঁদছে কেনো? তার মানে কি রুয়াত রাজি না এই বিয়েতে? এখনো কি মত দিতে পারেনি?

ইনিমা রুয়াত কে শান্ত করার চেষ্টায় আছে।
-‘কাঁদছিস কেনো বোন? তুই কি এখনো এই বিয়েতে রাজি না?’

দু দিকে মাথা নাড়ায় রুয়াত। কাঁদার ফলে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ইনিমা চেয়েও ছাড়াতে পারছে না।

-‘ কি হয়েছে বলবি তো। এভাবে অকারণে কেঁদে কোনো মানে আছে?’

কান্না জড়িত স্বরে রুয়াত বলে-
-‘আপু কাল ওনি আমায় বকেছে। বকার তো কোনো কারণ থাকা লাগবে। এই যে আমি এখন অকারণে একটু কাঁদছি না বরং কাল ওনি আমায় অকারণে বকেছেন। তুমি তো জানো আমি কারও জোরে কথা বলা সহ্য করতে পারি না। কাল ড্রাইভারের সামনে আমার সাথে জোরে কথা বলেছেন ওনি।’

বোনের কথায় ইনিমা হাসে। বয়স ১৯ এর গন্ডিতে আর এখন শিশুসুলভ আচরণ করছে রুয়াত। রুয়াতের জায়গায় ইনিমা হলে সহ্য করে নিতো। কিন্তু আয়াজ ভুলে বোধহয় রুয়াতের সাথে এমন করে ফেলেছে। রুয়াত সব মুখ বুজে সহ্য করতে পারলেও কারও জোরে কথা বলা সহ্য হয় না তার। এটা খুব ভালো করেই ইনিমা জানে। বোনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে-

-‘এখন থেকে সবকিছুর সাথে কারও জোরে কথা বলাটা ও সহ্য করে নিতে হবে। তুই কিন্তু এখনো আর ছোট নেই। বড় হয়েছিস। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখতে হবে তোর। আর আয়াজের হয়তো কিছু কারণে মাথা গরম ছিলো তাই এমন করেছে।’

রুয়াতের কান্না হুট করেই বন্ধ হয়ে যায়। ইনিমার শক্তপোক্ত স্বরের কথায় মাথা নাড়ে। রুয়াতের রুম থেকে বের হয়ে আসে ইনিমা।

.

-‘ভাই সাহেব আপনি বিয়ের তারিখটা ঠিক করলে আমি খুশি হবো।’

হান্নান মজুমদার আর ফজলুল চৌধুরী কে রুয়াত আর আয়াজের বিয়ে ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফজলুল চৌধুরী কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আয়াজ বলে উঠে

-‘আমি রুয়াতের সাথে একটু কথা বলে আসছি। এর আগে কেউ বিয়ের তারিখ ঠিক করবেন না।’

আয়াজের কথায় সহমত জানান তারা। আয়াজ উঠে রুয়াতের রুমের দিকে যায়। আরহাম হাসছে আনমনে। তার ভাই তার কথাটি মোটেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ফেলে দেয়নি। একটু আরামসে নড়েচড়ে বসে সে।

রুয়াত ওয়াশরুম থেকে মুখটা ধুয়ে আসে। প্রচুর খারাপ লাগছে তার। হঠাৎ আয়াজ এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। এমন সময়ে আয়াজ কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে রুয়াত।

-‘রাগ করে আছো খুব ভালো করেই জানি। আর রাগ করেই যে চোখ মুখের এই অবস্থা বানিয়েছো সেটাও ভালো করে জানা আছে আমার। সোজাসাপ্টা কথা বলছি, তোমার আর আমার এনগেজমেন্টের সময় আমি তোমার মতামত নেইনি। তখন তুমি আমায় ভালোবাসো নি। তাই খুব ভালো করেই জানতাম তুমি প্রথমেই আমাকে রিজেক্ট করে দিতে। তখন সম্পুর্ণ আমার মতামতে এনগেজমেন্ট হয়। আমি বলেছিলাম বিয়ের আগে তোমার মতামত নিবো। তুমি অনুমতি দিলেই বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে। তুমি আমায় ভালোবাসো। মুখে প্রকাশ না করলেও কাজ কর্মে বুঝেছি। ভালোবাসো না আমায়?’

রুয়াত একটু পিছিয়ে যায়। তা দেখে আয়াজ বলে-
-‘উহুম পিছোবে না। যেখানে আছো সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। নাহয় আমি আসতে বাধ্য হবো।’

পা থেমে যায় রুয়াতের।
-‘বিয়েতে রাজি তুমি?’

রুয়াত গলার স্বর শক্ত করে।
-‘না।’

কথাটি যেনো আয়াজের বুকে এসে লাগে। রাগে রুয়াতের সামনে এসে তার হাত চেপে ধরে।

-‘সামান্য একটু রেগে কথা বলায় এতো রাগ হয়েছে তোমার?’

পরক্ষণেই আয়াজ থামে। শান্ত হয়। রেগে নয় ভালো করে বুঝাতে হবে। গলার স্বর একটু নরম করে বলে-

-‘শুধু রাগটাই দেখেছো প্রেয়সী? আমি যে প্রচন্ড ভালোবাসি তোমায় সেটা দেখোনি? রাগ করো না। তোমার ‘না’ বলা শব্দ বাদ দিয়ে হ্যাঁ বলো। আমি সত্যিই আর কখনো তোমার সাথে জোরে কথা বলবো না। কক্ষনো আমার জানটা কে কষ্ট দিবো না। রাজি হয়ে যাও না।’

আপাদমস্তক চেয়ে আছে রুয়াত। বিয়েতে রাজি করানোর জন্য কতো আহাজারি তার এমপি সাহেবের। আয়াজ কে অবাক করে দিয়ে রুয়াত জড়িয়ে ধরে তাকে।

-‘আমি আগে থেকেই রাজি ছিলাম। শুধু আপনার রাগ ভাঙানোটা দেখতে চেয়েছিলাম। বিয়ে আমি রাজি রাজি রাজি।’

আয়াজ হেসে রুয়াতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।

-‘উহু বিয়ের আগে এসব ভালোবাসা নয়।’

রুয়াত লজ্জায় মুখে হাত দিয়ে ফেলে। খুব বড় ভুল করে ফেলেছে সে।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here