অন্যরকম_ভালোবাসা পর্ব ১৩ #মৌমিতা_শবনাম

0
480

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ১৩
#মৌমিতা_শবনাম

বৃষ্টি হাসপাতালে ভর্তি জ্ঞান ফিরেছে তার। তবে হেটে যাওয়ার মতো সুস্থ ও নয়। বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে তার। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে তখন সেখানে তন্নি আর রাদ আসে। হাজার রাগ থাকলেও বৃষ্টির এমন একটা খারাপ খবর শুনে বসে থাকতে পারেনি তন্নি তাই ছুটে চলে এসেছে।

তন্নিকে দেখে বৃষ্টি হাসে। তন্নি অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে মেয়েটা শুকিয়ে গেছে। সন্তান হারানো স্বামী হারানোর থেকে কষ্টের বলে মনে করে তন্নি। স্বামী হারালে সন্তানের মুখ দেখে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু সন্তান হারালে কি করবে?

তন্নি বৃষ্টির পাশে বসতেই বৃষ্টি হালকা হেসে বলে, –” দেখ তন্নি তোর সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি দিয়েছে আমাকে। আমি আরো শাস্তি পাওয়ার যোগ্য দেখ না যাকে ভালোবেসে তোর সাথে বেইমান করলাম সে ও তার মা আমাকে হাসপাতালের বেডে রেখে চলে গেছে। ”

তন্নির খারাপ লাগছে বৃষ্টির জন্য। মেয়েটার তার কর্মফল পেয়েছে এর থেকে বড় শাস্তি আর কিছু হতে পারে না। তন্নি বৃষ্টির হাত ধরে বলে, –” আমার তোর উপর কোনো রাগ নেই।”

বৃষ্টি বলল, — ” জানিস তন্নি আমি নাহ চেষ্টা করেছি সংসারটা বাঁচাতে কিন্তু অন্যের সংসার ভেঙ্গে সংসার করলে যা হয় আর কি।”

তন্নি বলল,–” তুই তো এমন ছিলি নাহ তোকে তো কেউ কিছু বলতে গেলে তাকে নাকানিচুবানি খাওয়াতি।”

বৃষ্টি হাসলো হালকা। হাসিটায় ছিল একরাশ চাপা কষ্ট। তন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,–” জানিস যখন জেনেছি আমি মা হতে যাচ্ছি অনুভূতিটা অন্যরকম ছিল তোকে বোঝাতে পারবো না। তখন ভাবলাম সব বাদ দিবো ভালো মেয়ের মতো সংসার করবো। যখন আমি সংসারে মন দিলাম তখন আমার স্বামী সরি নিরব তখন মনে করলো তোকে ছাড়া সে অসম্পূর্ণ। তোকে পেতে সে এখন উঠে পড়ে লেগেছে মনিকে এনেছে কে সে জানি নাহ। ”

তন্নি রাদের দিকে তাকায়। রাদ তন্নির দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে। তন্নিও মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

————-
মনি আজ রাদের বাসায় যাবে। প্রিপারেশন নিচ্ছে যেন সেখানে কোনো ভুল না হয়। নওরব তার পাশে বসে মনিকে দেখছে আর বলছে কিভাবে সে তন্নির সামনে অভিনয় করবে। মনি বারকয়েক অভিনয় করে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে– ” অভিনয় পারফেক্ট হচ্ছে তো?”

নিরব বলে,–” একদম পারফেক্ট হচ্ছে এভাবে অভিনয় করলে তন্নি বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে। ”

মনি হাসে। নিরব হঠাৎ মনে পড়ে বৃষ্টির কথা সে জলদি তার মাকে কল দেয় এই মেয়ে যদি পুলিশ কমপ্লেইন করে তাহলে মা ছেলে দুজনকেই জেলে যেতে হবে। মনির পাশ থেকে উঠে নিরব বারান্দায় চলো যায় ফোন নিয়ে। রুনা ফোন ধরতেই নিরব বলে ওঠে, –” বৃষ্টি কোথায়? ”

রুনা চমকে বলেন,–” হাসপাতালে কেন?”

নিরব বলল,–” তুমি কোথায়? ”

রুনা বলল,–” হাসপাতালে যাচ্ছি রাস্তায়। ”

নিরব বিরক্তিতে কপাল কুচকে ফেলল। দাঁতে দাঁত চিপে বলল– ” মা তুমি এমন বোকামি কি করে করতে পারো ও যদি এখন পুলিশ স্টেশনে চলে যায়। ”

রুনা বললেন,–” কি বলিস আমি বুঝতে পারিনি রে।”

নিরব কিছু বলল না। রুনা বুঝতে পারলেন তার করা ভুলের জন্য ছেলের রাগ হয়েছে। রুনা বললেন, –” চিন্তা করিস নাহ আমি হাসপাতালে গিয়ে ফোন দিচ্ছি। ”

নিরব ছোট করে উত্তর দিল, –” হুম। ”

তারপর নিরব কল কেটে এসে আবার মনিকে বলল রেডি হয়ে নিতে। মনিও চলে যায় রেডি হতে তাদের আবার ছবি আনতে যেতে হবে

————-
রুনা হাসপাতালে এসে দেখে বৃষ্টি কোথাও নেই। রুনা সারা হাসপাতাল খোঁজে ফেলেছে কিন্তু সে কোথাও বৃষ্টিকে দেখতে পায় না। রুনা ভয় পেয়ে যান। সে জলদি নিরবকে কল দেয়। নিরব সাথে সাথে কল রিসিভও করে। নিরব বলে,–” হ্যা মা বলো।”

রুনা একটা ঢুক গিলে ভয়ে ভয়ে বললেন, –” বাবা আমি বৃষ্টিকে পাচ্ছি নাহ।”

নিরব চিৎকার দিয়ে বলে, –” হোয়াট!”

রুনা আবারও বললেন, –” হাসপাতাল পুরোটা খোজেছি কোথাও নেই সে।”

নিরব চিন্তায় পড়ে গেল কোথায় গেল মেয়েটা। পুলিশ স্টেশন যায় নি তো। এদিকে রুনাও চিন্তায় আছেন বৃষ্টি পুলিশ স্টেশন চলে যায় নি তে। তাহলে তো উনাকে আর নিরবকে জেলে যেতে হবে ভয়ে শুকনো ঢুক গিলল। ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নিল।

————–
নিরব এবং রুনার ধারণা একদম ঠিক বৃষ্টি পুলিশ স্টেশনে গেছে। বর্তমানে সে পুলিশ অফিসার রওনক এর সামনে দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টি তাকে সব বলল। সব শুনে রওনক বললেন,–” আপনার বিয়ে হয়েছে কতদিন? ”

বয়সে বাবার সমান লোকের কাছ থেকে আপনি সম্বোধন পেয়ে কিছুটা আনইজি ফিল করে। পরক্ষনেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে, –” জ্বি তিন মাস হবে প্রায়।”

রওনক বুঝলেন। বৃষ্টি ওর কাছে কিছু ই লুকাইনি বরং তার অন্যায় গুলো সহ তুলে ধরেছে। রওনক আবার জিজ্ঞেস করলেন, –” এখন আপনার স্বামী অর্থাৎ নিরব কোথায় আছে? ”

বৃষ্টি কিছুক্ষণ ভেবে বলল,–” সে কোথায় আছে জানি নাহ কিন্তু আমার শ্বাশুড়ি কোথায় আছে আমি জানি।”

রওনক বললেন, –” ওকে চলুন। ”

রওনক আর বৃষ্টি বেরিয়ে পড়ল হাসপাতালের দিকে। বৃষ্টির মাথায় এখন একটাই চিন্তা যে পাপ সে করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত সে করবে নিরবের থেকে দূরে চলে যাবে। নিরব যেই পাপ করেছে তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।

————-
মনিকে নিরব রাদের বাসার সামনে নামিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। মনি সকল প্রমাণ নিয়ে রাদের বাসায় ঢুকে। আজ অফিস ছুটি থাকায় রাদ বাসাতেই আছে। তন্নি দুপুরের খাবার রান্না করে আর রিধি তাকে হেল্প করছে যদিও তন্নি নাহ করেছে অনেকবার যে তার হেল্প লাগবে নাহ।

নিরব ল্যাপটপে বসে কাজ করছিল রাইদা তার পাশে বসে তার ফোনে কার্টুন দেখছিল। তখন হঠাৎ সেখানে মনি ঢুকে বলে,–” রাদ।”

আচমকা নিজের নাম শুনে সামনে তাকিয়ে চমকে যায় রাদ। মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় মনি নামটি। তন্নি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে সে। মনি দৌড়ে এসে রাদকে জড়িয়ে ধরে রাদ বিরক্ত হয়ে মনিকে ছাড়িয়ে বলে,–” তুমি এখানে কেন এসেছো?”

মনি আবারও রাদের কাছে ঘেঁষে বলে,–” ওমা আমি আমার স্বামীর কাছে আসবো না এছাড়া এখানে আমার সন্তান আছে। ”

তন্নি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে সোফায় এসে বসে মনিকে জিজ্ঞেস করে, –” সন্তান মানে? ”

মনি চোখে পানি নিয়ে রাইদার দিকে তাকায়। রাইদা পিটপিট করে দেখে যাচ্ছে সবাইকে সে বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে। মনি গিয়ে রাইদাকে কোলে তুলে বলে, –” এই যে এই হলো আমার আর রাদের মেয়ে রাইদা।”

রাইদা অপরিচিত কারো কোলে উঠে সে কি কান্না। মনিকে চিমটি দিতে থাকে যেন তাকে নামিয়ে দেয়। অবশেষে বাদ্য হয়ে মনি তাকে নামিয়ে দেয়
রিধি দাড়িয়ে দেখছে এই মেয়েকে বিরক্ত লাগছে তবে ভাই না করাই সে কিছু বলছে না নয়তো সেও নাকানি চুবানি খাইয়ে ছাড়তো এই মেয়েকে।

তন্নির কোলে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে রাইদা। তন্নি রাইদাকে নিজের কোলে নিয়ে মনিকে জিজ্ঞেস করে, –” আপনি যে উনার ওয়াইফ তার কি প্রমাণ? ”

মনি যেন এতক্ষণ এই প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছিল। ব্যাগ থেকে সেই বানানো ছবি গুলো বের করে তন্নিকে দিলো। তন্নি ছবি গুলো দেখে রাদের দিকে তাকিয়ে বলে– ” আপনি আমার সাথে চিট করলেন। ”

তন্নির এই কথায় মনি সবার আড়ালে হাসে। রাদ চমকে উঠে তন্নি তাকে ভুল বোঝবে নাতো। রাদ তাড়াহুড়ো করে বলে,–” না না মিসেস তন্নি আমি চিট করে নি মনি আমার ওয়াইফ নয় আর রাইদা তো…..

রাদকে পুরোটা বলতে না দিয়ে মনি বলে উঠে, –” আমাদের সন্তান রাদ প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমি আর কখনো তোমায় ছেড়ে যাবো না কোথাও।”

তন্নি কান্না করে বলে,–” আই হেট ইউ রাদ।”

তন্নি কান্না করে উপরে চলে যায়। রাদও তার পিছন পিছম যায়। রিধি চোখ পাকিয়ে মনির দিকে তাকিয়ে বলে–” গেস্ট রুমে গিয়ে বসো।”

রিধি রাইদাকে নিয়ে চলে যায়। মনি মনে মনে খুশি হয় তার প্ল্যান সকসেস হচ্ছে। সে নিজের ব্যাগ নিয়ে গেস্ট রুমে চলে যায়। তন্নির জন্য তার বড্ড মায়া হচ্ছে আহারে মেয়েটা বার বার কষ্টই পাচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here