#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২২
গাড়ি থামে ফরাজী ভিলা আর আহমেদ ভিলার মাঝ বরাবর। গাড়ি থামার সাথে সাথে তীর তাড়াহুড়ো করে চলে যায় নিজের বাড়িতে এক বারও পিছন ফিরে তাকায় নি পর্যন্ত। ইশা বার বার প্রশ্ন করেছিলো হাতটা কি করে কেটেছে কিন্তু তীর টু শব্দটা পর্যন্ত করে নি এক ধ্যানে বাইরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিলো। ইশা ভাইয়ের দিকে তাকায়। ইশান ইশার তাকানো বুঝতে পেরে বলে।
–বাড়ি যা আর আমার রুম থেকে আমার ধূসর কালারের কোর্টটা আনবি আর টেবিলের উপর যা যা ফাইল আছে সেগুলা অফিসের ব্যাগে ভরে নিয়ে আয় আমি অপেক্ষা করছি এখানে। সাথে ল্যাপটপটাও আনবি।
–আচ্ছা।
–আর শুন মা যদি ব্রেকফাস্টটের কথা বলে তাহলে বলবি অফিসের ক্যান্টিনে করে নিবে।
ইশা মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। ইশা গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকার সাথে সাথে ইশান মাথাটা সিটে হেলিয়ে দিয়ে চোখের পাতা বন্ধ করে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে। দু আঙুল দিয়ে কপালের এক সাইড চেপে ধরে। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব। মেয়েটা দিন দিন ইশানকে পাগল করে দিচ্ছে এক দন্ডও ভালো করে নিশ্বাস নিতে দিচ্ছে না। কি করবে এখন ইশান কি করে বুঝাবে এই অবুঝ মেয়েটাকে।
ইশা পাঁচ মিনিট পরেই এসে ইশানের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে যায়। জিনিস গুলা পাওয়ার সাথে সাথেই ইশান অফিসের পথে রওয়ানা দেয়।
_____
অন্যদিকে তীর বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথে আজিজুল আহমেদের সামনে পরে। আজিজুল আহমেদ মেয়ের চোখ, মুখের এমন করুন অবস্থা দেখে বিচলিত কন্ঠে শুধায়।
–কি হয়েছে আমার মায়ের মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?
তীর আস্তে করে উত্তর দেয়।
–কিছু হয় নি বাবা।
অন্য পাশ থেকে আয়েশা সুলতানা বলে।
–তাহলে তর চোখ মুখের এমন বেহাল দশা কেন?
–ওই আসলে আর এক মাস পরেই তো এক্সাম তারেই জন্য।
আজিজুল আহমেদ তীরের হাত ব্যান্ডেজ করা দেখে চিন্তিত গলায় বলে।
–আচ্ছা তা নয় বুঝলাম কিন্তু তোমার হাতে ব্যান্ডেজ কেন? হাতে কি হয়েছে মা?
তীর তড়িৎ বেগে হাতটা লুকিয়ে বলে।
–ও কিছু না একটু কেটে গেছে।
আয়েশা সুলতানা বিচলিত হয়ে মেয়ের হাত নিজের হাত নিয়ে বলে।
–হাত কাটলো কি করে তীর?
তীর চুপ করে আছে কি মিথ্যা বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
–কি হলো বল?
–আ.. স… লে…. মা হয়েছে কি! ব্রেঞ্চে যে লৌহা ছিলো সেখানে না দেখে আমি হাত দিয়ে ফেলেছিলাম আর সাথে সাথে কেটে যায়।
–সাবধানে হাত পা ছুটাছুটি করবি তো নাকি। বড় কিছু হয় নি তো।
–নাহ মা।
এমন সময় ইশান এসে হাজির হয় আহমেদ ভিলাতে। ইশান অনেক আগেই এসেছে আর তীরের বলা মিথ্যে কথাটাও শুনেছে। ইশানকে দেখার সাথে সাথে আজিজুল আহমেদ বলে।
–ইশান তুমি?
তীর ইশানের দিকে তাকায় কিন্তু ইশান অন্য দিকে তাকিয়ে আছে একে বারের জন্য তীরের দিকে তাকাছে না। ইশান বলে।
–আসলে আঙ্গেল তীরের ঔষুধ গুলা গাড়িতে ফেলে এসেছিলো সেটাই দিতে আসলাম।
–ও আচ্ছা তাহলে তুমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে। কিন্তু ফোনে যে বললে…
–আসলে আঙ্গেল আপনারা চিন্তা করবেন তাই সত্যিটা বলি নি।
–দাঁড়িয়ে আছো কেন ইশান? বসো।
–না না আঙ্গেল আমার ইম্পরট্যান্ট একটা মিটিং আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
–আচ্ছা।
–আর আঙ্গেল ঔষুধ গুলা ঠিক মতো খাওয়াবেন। বুঝতেই তো পারছেন হাতটা কি দ্বারা কেটেছে। অবশ্য ভালো করে ড্রেসিং করে দেওয়া হয়েছে তাই এত বেশি চিন্তা করার কারন নেই।
এর মাঝে তীর বলে উঠে।
–আমাকে নিয়ে আপনার এত চিন্তা করতে হবে না। আমার বাবা মা এখনও বেচে আছেন আমাকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য। তাই আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে।
আয়েশা সুলতানা কিঞ্চিৎ রেগে বলেন।
–তীর এসব কি কথাবার্তা ভদ্র ভাবে কথা বল।
–মা আমার ভালো লাগছে না আমি উপরে গেলাম আর আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
বলেই ধপধপ পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়। ইশান আবাক চোখে তাকিয়ে আছে তীরের যাওয়ার দিকে। তীর আড়াল হওয়ার সাথে সাথে ইশানের ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্য হাসি ফুটে উঠে। তীরের মনের ভেতরে যে পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে এটা ইশান ভালো করেই টের পাচ্ছে। কি করে এই পাহাড় সমান অভিমান ভাঙবে ইশান।
আজিজুল আহমেদ ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।
–কিছু মনে করো না বাবা তুমি ও আসলে….
–না না আঙ্গেল আমি কিছু মনে করি।
আয়েশা সুলতানা বলেন।
–মেয়েটার যে কি হয় মাঝে মাঝে বুঝি না আমি।
–আঙ্গেল তাহলে আমি আসি।
–আচ্ছা বাবা! সাবধানে যাও।
_____
তীর নিজের ঘরের ডুকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে হাত থেকে কলেজ ব্যাগটা মেঝেতে ফেলে দিয়ে নিজেও বসে পড়ে দরজার সাথে পিট ঠেকিয়ে মেঝেতে। এতক্ষন বুকের ভেতরের জমে থাকা কান্নাটা যেন আর চেপে রাখতে পারছে না ডুকরে কেঁদে উঠে তীর। ইশান আর আবিরা বলা কথা গুলা বার বার কানে বারি খাচ্ছে। কেন এমন করছে ইশান ওর সাথে ভালো যখন বাসেই তাহলে কেন বলছে না? কেন স্বীকার করছে না? কেন এত লুকোচুরি করছে? চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে তীরের কিন্তু পারছে না শুধু বাড়ির লোকজনের জন্য। চাপা গলায় কান্না করা যে খুব কষ্টের। গাল ফাটিয়ে কান্না করায় যে সুখটা পায় চাপা কান্না করলে সে সুখটা পাওয়া যায় না বরং আরও কষ্ট বাড়ে। তীর বুকের বা পাশটা চেপে ধরে এত ব্যাথা অনুভব করে কেন এই জায়গাটাতে ইদানিং।
আচমকা তীর উঠে দাঁড়িয়ে সোজা ওয়াশরুমে ডুকে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে শাওয়ারের নিচে। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়েই চিৎকার করে কেঁদে উঠে। আস্তে আস্তে হাটু মুড়ে বসে পড়ে নিচে। সারা শরীর ভিজে যাচ্ছে আস্তে আস্তে সাথে সদ্য করা হাতের ব্যান্ডেজটাও। পানির সাথে গাল বেয়ে পড়ছে তীরের চোখের নোনা পানি। চোখের পানি আর শাওয়ারের পানি মিলে একাকার হয়ে গেল!
বিশ মিনিট পর তীর বের হয় ওয়াশরুম থেকে শুকনা কাপড় পড়ে। সারা শরীর, ঠোঁট, হাত-পা, মুখ ফ্যাকশে হয়ে গেছে বেশিক্ষণ ভিজার কারনে, চোখ দুটো লাল হয়ে আছে অতিরিক্ত কান্নার কারনে। শরীর বার বার কেঁপে উঠছে ঠান্ডার জন্য। হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে ফেলেছে ভেজার জন্য। কাটা স্থানটা কেমন বাজে ভাবে সাদা হয়ে গেছে। মাথাটা ভার হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে যেন শত মণের বোঝা কেউ ওর মাথার উপর রেখে দিয়েছে। চুলগুলোও ভালো করে মুজার শক্তি টুকুও পাচ্ছে না তীর, শরীরের বিন্দু পরিমান বল পাচ্ছে না। চোখে ভর করছে রাজ্যের ঘুম কান্না করার ফলে। না পেরে কোনো মতে দুর্বল পা ফেলে সোজা বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ে কম্বল গায়ে দিয়ে।
______
দুপুর পেরিয়ে বিকেলে হয়ে গেল কিন্তু তীর এখনও নিচে নামচ্ছে না। তীর একা থাকতে চেয়েছিলো তাই আর ওকে কেউ ডির্স্টাব করে নি। তবে তীরের মা মাঝে একবার ডেকেছিলো খাবার খাওয়ার জন্য কিন্তু সাড়া দেয় নি তীর। ভেবেছেন ঘুমাচ্ছে মেয়ে তাই আর ডির্স্টাব করে নি। কিন্তু এখন আয়েশা সুলতানার টেনশন হচ্ছে এত ঘুমাচ্ছে কেন মেয়েটা? তাই এক প্রকার ধৈর্য হারা হয়ে তীরের দরজায় শব্দ করে কিন্তু কোনো রেস্পন্স আসে না ভেতর থেকে। বার বার ডেকে যাচ্ছে তীরকে কিন্তু প্রত্যেক বারের মতো কোনো সাড়া আসছে না। আজানা ভয় হানা দিচ্ছে মাথায়। বার বার উপরওয়ালার কাছে মেয়ে যাতে ঠিক থাকে তারেই দোয়া করছেন। আয়েশা সুলতানা মেয়ের ফোনে কল দেয় কিন্তু ফোন বেঁজে কেটে যায়। ওনার চিল্লাচিল্লি শুনে ঘুমন্ত শাপলা বেগম আর ছোট অভি আসে। আয়েশা সুলতানা কে এভাবে চিৎকার করতে দেখে শাপলা বেগম বলে।
–কি হয়েছে বউ মা?
আয়েশা সুলতানা কাঁদতে কাঁদতে বলেন।
–আম্মা দেখুন না মেয়েটাকে কখন থেকে ডাকছি কিন্তু কোনো সাঁড়া দিছে না।
–কি বলছো বউ মা! দেখি সরো আমি ডাকি তো একবার।
শাপলা বেগমের সাথে ছোট অভিও ডাকে কিন্তু তীরের কোনো রেস্পন্স নেই। তীর কোনো সাড়া দিছে না দেখে ছোট অভি ভয়ে শেষমেষ কেঁদেই ফেলে। আয়েশা সুলতানা মেয়ের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে ফরাজী ভিলাতে যায়। ফরাজী ভিলাতে গিয়ে সমান তালে কলিং বেল বাজাতেই থাকেন। কিছুক্ষন পরেই নেহা বেগম এসে দরজা খুলার সাথে সাথে আয়েশা সুলতানা কাঁদতে কাঁদতে বলেন।
–ভাবি আমার মেয়েটা ভাবি।
নেহা বেগম উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধায়।
–কি হয়েছে ভাবি?
–তীরকে কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি কিন্তু কোনো সাড়া দিছে না। কিছু একটা করুন ভাবি আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ওর বাবার একটা মিটিং আছে তাই ওনাকেও ফোনও করতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে আপনাদের কাছে আসে।
–আপনি চিন্তা করবেন না। তীরের কিচ্ছু হবে না।
নেহা বেগম আর আয়েশা সুলতানার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে বাড়ির সবাই এসে পরে শুধু ইশান ছাড়া। ইশান এখনও অফিসে। ভাগ্যক্রমে আজ ইহানও হসপিটাল থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছে। ফরাজী পরিবারের সকল সদস্যই আহমেদ ভিলায় যায় তাড়াতাড়ি করে। সবার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে মেয়েটা কিছু করে বসে নিতো আবার।
ইশা তো আজহারি শুরু করে দিয়েছে। ওর প্রিয় বান্ধবীটার কি হলো হঠাৎ করে? কিছু দিন ধরে দেখছে কেমন উদাসীন হয়ে থাকে। আগের মতো হাসি-খুশি থাকে না সবসময় চুপচাপ থাকে।
সোহেল ফরাজী আর ইহান দুজনে মিলে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ডুকে যা দেখে তাতে সবাই শকড।
#চলবে________
আজকের পার্ট তেমন ভালো হয় নি আমার মতে।