ফাগুন_হাওয়ায়_হাওয়ায় #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৬

0
436

#ফাগুন_হাওয়ায়_হাওয়ায়
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৬
মীরা তৃতীয়বারের মত পাত্রপক্ষের সামনে বসলো। এবার আর শাড়ি পড়ল না। পাত্রপক্ষ নাকি এবার সব মেনে নিয়েছে। কিন্তু পাত্রের কাণ্ডে মীরা বাবাই আর মত দিতে পারছেন না। কারণ পাত্র সুস্থ না। দেখতে সুস্থই লাগে কিন্তু যখন মীরাকে দেখে পাত্রের মা বললেন তাদের পছন্দ হয়েছে, তখনি পাত্র বসা থেকে উঠে ছুটে আসে মীরার দিকে। মীরা ভড়কে যায়। এসেই মীরার হাত ধরে কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করতে থাকে। মীরা হাত ছাড়িয়ে ভয়ে সোফাতে ভর দিয়ে সোফা সহ খানিক পিছিয়ে গেলে পাত্র এসে মীরার পা ধরে বাচ্চাদের মতো বলে,

“কী সুন্দর পা! এই পা আমি মাটিতে রাখব না!”

মীরার বাবা রফিক তালুকদার তৎক্ষণাৎ পাত্রের বাবার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়েন।
“ভাইসাহেব, এসব কী? আপনার ছেলে এমন পাগলামি করছে কেন?”

পাত্রর বাবা আমতা আমতা করছেন। তা দেখে মীরার বাবা ঘটককে উুুঁচু স্বরে বললেন,
“আপনি জানতেন না?”

ঘটকও হকচকিয়ে চেয়ে আছে। সে শুনেছে ছেলের মাথায় একটু সমস্যা। কিন্তু একি! পাত্রের মা বড়ো মুখ করে বলেন,
“বিয়ে করাবেন না বলে দিলেই তো হয়। অপমান করার কী আছে? চলে যাচ্ছি আমরা। এই উঠো সবাই।”

রফিক তালুকদার হাত জোড় করে বললেন,
“হ্যাঁ প্লিজ। আমার মেয়ে ফেলনা নয়। সে স্বাবলম্বী এবং খুব ভালো ভাবে চলতে পারে।”

বাবার কথাটা মীরার চোখে জল এনে দিল। সে ছলছল নয়নে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে চোখে চোখ পরতেই মাথা নিচু করে চলে গেল।

পাত্র পক্ষ চলে গেলে রফিক তালুকদার ঘটককে বলেন,
“আপনি না পারলে বলে দিন, আমি অন্য ঘটক দেখব।”

ঘটক বলেন,
“পরেরবার ভালো পাত্র আনব ভাইসাহেব। চিন্তা করবেন না। আমি যদি জানতাম, তবে কি পা*গল ছেলে আনতাম? বলেন। পরশু ভালো পাত্র আনব।”

ঘটকও বিদায় নিলেন। মীরার মা, মীরার বাবার কাছে এসে বললেন,
“তুমি চিন্তা করো না। আর এত তাড়াহুড়ো করো না। তাড়াহুড়ো করছ বলেই এমন হচ্ছে। ঘটক যা পারছে তাই আনছে।”

মীরার বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
“তোমার মেয়ে এবার গেলে আর কবে আসবে ঠিক আছে? তাইতো অন্তত ছেলে পছন্দ হলে আকদ করিয়ে রাখব।”

“যা ভালো বুঝো। বারবার মেয়েটাকে পাত্রপক্ষের সামনে বসাতে আমার ভালো লাগে না।”

মীরা কিছুক্ষণ নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বই নিয়ে বসল। হুমায়ূন আহমেদের “চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস” বইটা পড়তে শুরু করে। আগে কিছুটা পড়েছিল এখন তারপরের থেকে পড়ছে। পড়তে পড়তে সময় চলে যাচ্ছে বুঝতেই পারেনি।

_______

আজ ফ্রিশা মনম*রা হয়ে বসে আছে। আজ স্কুলে সব বাচ্চাদের প্যারেন্টসরা গিয়েছিল। ফ্রিশার সাথে ওর দাদুমনি গিয়েছিল। ফ্রিশার সব বন্ধুরা তাদের মা অথবা বাবাদের সাথে সুন্দর সময় পার করেছে। অনেকের তো বাবা-মা দুজনেই এসেছিল। সবাই বাবা-মাকে নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছে। ফ্রিশা স্টেজে উঠে বাবা সম্পর্কে বলার পর মা সম্পর্কে বলার আগেই কেঁদে ফেলেছিল। স্কুল থেকে ফেরার পর ফ্রিশা দুপুরেও খায়নি, এখন রাত হয়ে গেছে তাও না। শেহজাদকে আজ এক জরুরী কাজে যেতে হয়েছিল। বাড়ি আসতে আসতে রাত নয়টা বেজে গেছে। এসেই শুনে ফ্রিশা খায়নি। দরজা লাগিয়ে বসে আছে। শেহজাদ ফ্রিশার রুমে গিয়ে কয়েকবার দরজা নক করল, নাম ধরেও ডাকল। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। মিসেস শাহিদা বললেন,

“একটু আগেও সাড়া দিয়েছে। মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে গেছে। তোমার কাছে রুমটার চাবি আছে না? খুলো তো।”

শেহজাদ চট করে নিজের ঘরে চাবি আনতে গেল। চাবিটা আলমারির ভেতরে ছিল। ফ্রিশার রুম তো কখোনো লক করা হয় না তাই চাবিটাও হাতের কাছে ছিল না। চাবি এনে দরজা খুলে দেখে ফ্রিশা মেঝেতে নিজের বড়ো টেডিবিয়ারের পেট জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। গালের কাছে কান্নার ছাঁপ সুস্পষ্ট। শেহজাদ মেয়েকে এভাবে দেখে কষ্ট পেলো। মেয়ে তার বড্ড জিদ্দি। ঠিক তার মতো। অবশ্য ফ্রিওনাও জিদ্দি ছিল। শেহজাদ ফ্রিশাকে কোলে তুলতে গিয়ে ঘাবড়ে যায়। গা গরম। এসির বাতাসেও যদি গা এত গরম থাকে তাহলে তো বুঝাই যায় ভীষণ জ্বরে সেন্সলেস। শেহজাদ চিৎকার করে সার্ভেন্টকে ডেকে বলে,

“এখুনি আমার ঘর থেকে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে এসো।”

সার্ভেন্ট দ্রুত ছুটে যায়। শেহজাদ, ফ্রিশাকে কোলে তুলি বিছানায় শুইয়ে এসি অফ করে ফ্যান ছাড়ে। মিসেস শাহিদা পানিভর্তি বাটি ও রুমাল নিয়ে আসে। সার্ভেন্ট ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে আসলে শেহজাদ থার্মোমিটার বের করে জ্বর মেপে দেখে ১০২ ডিগ্রি। সে ফের বলে,

“ও তো কিছু খায়নি। খালি পেটে ঔষুধ দেওয়া যাবে না। সূপ করো ইমেডিয়েটলি।”

মিসেস শাহিদা তন্মধ্যে ফ্রিশার মুখে জলের ছিঁটা দিয়ে জলপট্টি শুরু করেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সূপ রান্না হলে ঠান্ডা করে একটু করে মুখে দেয়। ফ্রিশা খেতেই চাচ্ছে না। বিড়বিড় করে কিছু বলছে। শেহজাদ কান পেতে শোনে। ফ্রিশা ‘মা! মা!’ করছে। শেহজাদ হতাশ হলো। মেয়েকে সব দিতে পারলেও মা তো দিতে পারবে না। মিসেস শাহিদাও কান পেতে শুনলেন। অতঃপর অসহায় কণ্ঠে বললেন,

“আজকের ফাংশনে সবার বাবা-মা এসেছিল। সবাই নিজেদের বাবা-মাকে নিয়ে কিছু না কিছু বলেছে। কিন্তু ফ্রিশা তার মা সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি। কান্না করে দিয়েছে। ও মায়ের অভাব খুব অনুভব করে। একটু ভাবো শেহজাদ। মেয়েটার জন্য হলেও।”

শেহজাদ শুনেও শুনলো না। মেয়েকে বুকে আগলে কিছুটা জোড়াজোড়ি করে কয়েক চামচ সূপ খাইয়ে তারপর ঔষুধ খাইয়ে দিয়েছে। এরপর নিজের ঘরে গিয়ে রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। আজ রবিবার। ক্লাসের সিডিউল বেশ ছিল। ভাবতে লাগল যেদিন ফ্রিওনা এই পৃথিবীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। ফ্রিওনা সেদিন শেহজাদের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল,

“অ্যাই অ্যাম ভেরি স্টাবর্ন। দিস ইজ হোয়াই, টুডে অ্যাই অ্যাম লিবিং মাই ডটার এন্ড হাসবেন্ড। প্লিজ ম্যারি এগেইন এন্ড গেট অ্যা নিউ মাদার ফর হার। হু উইল লাভ হার এজ ওয়েল এজ ইউ।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলল শেহজাদ। এই চৈত্রমাসের শেষ দিনই ছিল ফ্রিওনার শেষ দিন। বসন্তের শেষ দিনেই চলে গেল তার জীবনের বসন্ত। মাঝেমাঝে খুব রাগ হয়, ফ্রিওনা এত জেদি কেন ছিল! এতটা একরোখা!

চলবে ইনশাআল্লাহ,

রিচেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here