বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১২) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
312

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রিদ চলে যাওয়ার পর থেকে গত দু’দিন খুব বিষণ্নতায় কেটেছে আরশির। প্রিয় মানুষ গুলো হুট করে দুরে চলে গেলে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে সবচাইতে একাকি মানুষটা মনে হয় তখন। ইচ্ছে করে তাকে ফিরিয়ে এনে পুরোটা সময় তার সাথেই পার করে দিতে। অথচ কাছে থাকতে এতটুকু গুরুত্বও বুঝতে পারি না আমরা।

গতকাল পৌছানোর পর রাতে ফোনে কথা হয়েছিল একবার। তবে খুব বেশিক্ষন না। মিনিট দুয়েকের মতো। বলেছিল অনেকটা পথ যার্নি করে ক্লান্ত লাগছে শরির। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিবে। তারপর আর কথা হয়নি। কলের অপেক্ষায় মায়ের ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে বিষণ্ন মনে দাড়িয়ে আছে আরশি। পেছনে মায়ের উপস্থিতি বুঝতেই ভাবনার ধ্যান ভাঙে তার।
মায়ের দিকে ফিরতেই মা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,
“ফোনটা একটু দে তো। তোর বাবাকে কল দিয়ে দেখি আজ এতো দেড়ি করছে কেন।”

মায়ের হাতে ফোনটা দিলে কল দিয়ে ব্যস্ত ভাবে রুমের দিকে চলে গেলো সে। অনেক্ষণ ধরে খাবার নিয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করছে মা। আসতে দেড়ি করার কত অস্থির সে। সবাই কি সবার প্রিয় মানুষের জন্য আমার মতো অস্থিরতা অনুভব করে? একটা দির্ঘশ্বাস ছাড়ে আরশি। যার জন্য এত অস্থিরতা তার তো কোনো চিন্তাই নেই এই নিয়ে।

ভাবতে ভাবতে মা ফোনটা আবার তার হাতে দিয়ে চলে গেলো। ফোনের দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে অতঃপর ভেতর রুমের দিকে হাটা ধরলো সেও। বিষণ্নতায় ছেয়ে যাওয়া মুখটায় যেন এক চিলতে হাসি ফোঁটাতে তখনই কল এলো রিদের। ঝলমলে চাহুনিতে দু’সেকেন্ড পার হওয়ার আগেই ফোন রিসিভ করে আরশি।

রিদ কল রিসিভ হওয়ার সময় দেখেই বুঝলো ফোন হাতে কলের অপেক্ষা করছিল আরশি। অথচ পরীক্ষার দু’মাসও নেই তার। তাই শুরুতেই প্রশ্ন করে,
“পরীক্ষার দু’দিন নেই ফোন হাতে কি করছিলি?”
“কই কিছু করছিলাম না।”
“তাহলে তোর হাতে ফোন কেন?”

প্রতি উত্তরে কিছু বললো না আরশি। আরশিকে চুপ থাকতে দেখে রিদ এবার নমনীয় গলায় বলে,
“না পড়ে ফোন হাতে বসে থাকলে কি ভালো রেজাল্ট আসবে, হুম?”
“দিনের বেলায় তো আর ফোন করেন নি।”
“নতুন জায়গা, তাই সবকিছু টিকঠাক করতে ব্যস্ত ছিলাম। তো খেয়েছিস?”
“না, বাবার জন্য ওয়েট করছি। ভালো আছেন? সব ঠিকঠাক আছে তো?”
“হুম, আলহামদুলিল্লাহ।”

এর মাঝেই মায়ের ডাক পড়লো। বাবা এসেছে হয়তো। না চাইতেও এতটুকু কথার মাঝে ইতি টানতে হলো। তবে এইটুকু কথাই যেন সারা দিনের অস্থিরতাটা কমিয়ে দিচ্ছে একটু একটু করে।

ফোন রেখে ক্লান্তি ভঙ্গিতে এক পাশে বসে রিদ। এর মাঝে রুমের দরজার সামনে দাড়ায় একটা অপরিচিত ছেলে। ভদ্র ভাবে বলে,
“ম্যা আই কামিং ব্রো?”
রিদ হালকা মাথা নেড়ে ছোট করে বলে,
“ইয়েস।”
ছেলেটা একটা হাসি দিয়ে প্রবেশ করে রুমে। রিদের পাশে এসে দাড়াতেই রিদ একপাশে সরে জায়গা করে দিয়ে বলে,
“প্লিজ সিড ডাউন।”
ছেলেটা বসে বলে,
“থ্যাংকস ব্রো। হাউ আর ইউ?”
“আ’ম ফাইন। ইউ?”
“আ’ম অলওয়েজ ফাইন ব্রো। হোয়াট্স ইউর নেম?”
“সানভি আহমেদ রিদ।”
“আ’ম সাজ্জাদ। হয়্যার আর ইউ ফ্রম?”
“আ’ম ফ্রম বাংলাদেশ।”

ছেলেটা এবার ক্ষনিকটা চমকে তাকায় রিদের দিকে। ক্ষনিকটা ভ্রু-কুচকে বলে,
“আপনি বাঙালি?”
রিদও ক্ষনিকটা অবাক হয়ে বলে,
“এখানে উঠার সময় শুনেছিলাম এখানে, আরো একজন বাঙালি ছেলে আছে। সে তাহলে আপনি?”
“হ্যাঁ। পাশের রুমেই থাকি দুজন। অন্যজন ইন্ডিয়ান। আর আমার বাড়ি চট্টগ্রামে। যাই হোক, খুব ভালো লাগলো নিজ দেশের একজন বন্ধু পেয়ে।”

ক্ষনিকটা হাসলো রিদ। সাজ্জাদ চার পাশে চোখ বুলাতেই রিদের পাশে ফ্রেমের মাঝে একটা মেয়ের ছবি দেখতে পায়। কৌতুহল নিয়ে বলে,
“ভালোবাসার মানুষ নিশ্চই?”
রিদ ক্ষনিকটা মুচকি হেসে হালকা মাথা নেড়ে বলে,
“হুম।”
সাজ্জাদ ছবিটার দিকে চেয়ে বলে,
“হি’জ ভ্যারি লাকি গার্ল।”
“কিভাবে?”

সাজ্জাদ রিদের দিকে চেয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“কারণ সে আপনার শখের নারী। আর একজন মেয়ে যখন তার ভালোবাসার মানুষটার কাছে খুব শখের ও মুল্যবান হতে পারে তাহলে সে অবশ্যই ভাগ্যবতী। যা সবাই হতে পারে না।”
রিদ ক্ষনিকটা কৌতুহল নিয়ে বলে,
“আপনার দেখি ভালোই অভিজ্ঞতা আছে।”
সাজ্জাদ একটু মৃদু হেসে বলে,
“কারণ আমারও একটা শখের নারী ছিল। যাকে একেবারে মনের গভির থেকে ভালোবাসতাম।”
রিদ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ছিল? মানে এখন আর নেই?”
সাজ্জাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“না। চলে গেছে অন্য কারো কাছে।”
“কেন?”
” লং ডিস্টেন্স। দেশে থাকা কালিন সব ঠিকঠাকই ছিল। এখানে আসার পর দুরুত্বে শুন্যতায় হয়তো অন্য কাউকে ভালো লেগেছিল তার। অনেক লং স্টোরি। সে লুকালেও আমি জানার পর প্রথমে তাকে বুঝিয়েছিলাম। তারপর সে মুক্তি চেয়েছে, আমিও মুক্ত করে দিলাম। পরিশেষে সে ভালো থাকুক এটাই চাই।”

এটুকু বলেই সাজ্জাদ কিছুটা হেয়ে রিদের কাধে হাত রেখে বলে,
“যাই হোক। বাদ দাও ওসব কথা। নতুন এসেছো সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নাও। পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। এখন আসি, পরে কথা হবে। আর কোনো প্রয়োজন হলে বলবে, পাশের রুমেই আছি।”

বলেই মুখে মৃদু হাসি ধরে রেখে চলে গেলো সাজ্জাদ। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল রিদ। একটা ভয় হুট করেই যেন মনের ভেতর নাড়া দিয়ে উঠল। আরশির বয়স টা আবেগের। এই লম্বা দুরুত্বে যদি আবেগকে প্রশ্রয় দিয়ে যদি সেও এমন কিছু করে বসে? যদিও তার প্রতি তীব্র বিশ্বাস আছে তার। তবুও প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয় মাঝে মাঝে সবারই বুকটা কেঁপে উঠে হুট করে।

“”””””””””””””””””””””””””””””

দেখতে দেখতে কেটে গেলো অনেক দিন। আরশির রেজাল্ট বের হয়েছে আজ। গত দু’য়েকদিন ধরে টেনশনে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিলেও এখন এক আকাশ সমান প্রশান্তি এসে ভিড় জমিয়েছে মনে। খুশির খবর টা পেয়েই যেন আর দেড়ি করতে চাইছে না সে। ফোন হাতে নিয়েই কল দিল রিদের কাছে। রিদ ফোন রিসিভ করেই বলে,
“অভিনন্দন আমার পিচ্চি পরী।”

আরশি কিছুটা ভ্রু কুচকে বলে,
“আমি কি এখনো আমার রেজাল্ট বলেছি, পাশ নাকি ফেল?”
রিদ ফোন হাতে একটা হাই তুলে বলে,
“ফেল করলে তো আমার কাছে কল দেওয়া দুরে থাক, আগামী এক সাপ্তাও খুঁজে পেতামনা তোকে।”
“আপনি বলছিলেন না, আমি 4 পয়েন্টও পাবো না। এখন তো আমি,,,,,”
“জিপিএ ৫ পেয়েছিস তাই তো?”
“মুখের কথা কেড়ে নেন কেন? আর আপনি জানালেন কিভাবে? আমি এখনো কাউকে জানাইনি।”
“ম্যাজিক।”
“কচুর ম্যাজিক। তো বলুন, এখন খুশি হয়েছেন? সারাক্ষণ তো পড়া পড়া করতেন।”
“আমাকে খুশি করতে রেজাল্ট ভালো করেছিস?”
“না আপনার উপর জেদ করে পড়তাম।”
“তাহলে ঠিক আছে। আমি বাতাসে মিলিয়ে দিব আমার পিচ্চির খুশির দিনের বার্তা। যেন সবাই জানতে পারে আমার উপর জেদ করেও আমার পিচ্চি পরীর মুখে আজ ফুটন্ত গোলাপের ন্যায় বিজয়ী হাসি ফুটেছে।”

“”””””””””””””””””””””””””””””””
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই যেন চমকে উঠে আরশি। গত চার মাস এই বেলকনিতে কোনো চিরেকুট পায়নি সে। রিদ ভাই যাওয়ার পর থেকেই। তাই ভেবেই নিয়েছিল এটা রিদেরই কাজ ছিল। নিরামিষ মানব, প্রকাশ্যে কিছু বলতো না। অনুভূতির সব কথাই চিরেকুটের মাধ্যমে জানান দিত।

কিন্তু আজ মিথ্যা প্রমানিত হলো সেটা। কারণ আজও বেলকনিতে একগুচ্ছ ফুলের সাথে একটা চিরেকুট পড়েছিল। যেখানে লেখা ছিল ছোট একটা বার্তা,,,,

‘সুহাসিনী,
জানি গতকাল থেকেই এক টুকরো চাঁদের ন্যায় দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর হাসি টুকু মিশে ছিল তোমার কোমল ঠোঁটের মধ্যিখানে। তাই আজ সুহাসিনী বলেই সম্বোধন করলাম। সাথে এই খুশির দিনের জন্য অভিনন্দন সুহাসিনী। আর হ্যা, এই হাসি তোমার কোমল ঠোঁটে মিশে থাকুক জনম জনম। আমি না হয় সেই হাসিতেই নিজেকে উৎসর্গ করে দেব।’

ঠায় দাড়িয়ে রইল আরশি। প্রিয় মানুষটার চিঠি ভেবে সব গুলোই নিজের কাছে যত্ন করে রেখেছিল সে। মাথায় শুধু একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে, এই চিঠি কার? কে ই বা এই অগন্তুক?

To be continue……………..

~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইল। আর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তির্ন সকল ছোট ভাই ও বোনদের জন্য রইল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here