#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৫৯.
বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে চাঁদের।ভেতরে থাকা হৃদযন্ত্রটা তড়িৎ গতিতে লাফাচ্ছে তার।সে কস্মিনকালেও ভাবেনি তাকে কোনো পরপুরুষ এভাবে চেয়ে বসবে।মনে তার এতোটা ভয় জেঁকেছে যে মস্তিষ্কে নানান ধরণের উদ্ভট চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।হয় আজ নিজে শেষ হবে নাহয় এসব জা!নোয়ারদের শেষ করবে।যা হবে সে দেখে নেবে,এই ভেবেই শাড়ির কুচির কাছটায় কোমড়ে একটা ছুরি গুজে নেয় আর হাতে একটা পেপার স্প্রে নিয়ে কাপড়ে পেচিয়ে হাত পেছন দিকটায় দিয়ে এগোয় নিজ রুমের দিকে।অতঃপর ভেতরে আসতেই দেখতে পায় তার বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বিছানার পেছন দিকে দু’হাত রেখে উপরে ঝুলন্ত ফ্যানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছে সেই কালো পোশাকে আবৃত লম্বাটে লোকটা।চাঁদ এসে খানিকটা কাশতেই লোকটা দৃষ্টি তার পানে করে গম্ভীরভাবে বলে,
“দরজা আটকে দিয়ে কাছে এসো”
চাঁদ সামান্য ঢোক গিলে দরজা আটকে দিয়ে লোকটার সামনে গিয়ে দু’হাত জায়গা ফাকা রেখে দাঁড়ায়।চাঁদের তার সামনে যেতেই লোকটা তাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে লাগলে চাঁদ ভীষণ বিব্রতবোধ করে,অস্বস্তি জেঁকে ধরে তাকে।খানিকটা ঘামতেও লাগে সে।হৃদপিণ্ড এত দ্রুত চলাচল করছে যে সে নিজেকে সামলে রাখতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে তবুও সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।চোখ ফেটে কান্না আসার উপক্রম তবুও নিজেকে সামলাচ্ছে সে।অতঃপর লোকটার ভরাট কন্ঠে কেপে উঠে সে।লোকটা বলে,
“নাম কী তোমার?”
“মা….মাহুয়া”
“তো মহুয়া?এর আগেও এসব করেছো?”
“কা তি লো” [না করিনি]
লোকটা তার গাম্ভীর্যভাব বজায় রেখেই বলে,
“তোমার ভাষা বুঝতে পারদর্শী নই আমি।ইংলিশ বলতে পারো?”
চাঁদ মাথা দু’পাশে নাড়ে অর্থাৎ ‘না’।তা দেখে লম্বা শ্বাস ফেলে লোকটা বলে,
“বাংলা যেহেতু পারোই না তাহলে আমার সাথে ইশারায় কথা বলবে বুঝেছো?”
চাঁদ কেবলই মাথা ঝাকায়।লোকটা আবার বলে,
“বয়স কত তোমার?”
চাঁদ হাতের দশ আঙুল দুইবার দেখাতেই লোকটা হেসে দিয়ে বলে,
“বিশ?”
চাঁদ দ্রুত উপরনিচ মাথা ঝাকায়।লোকটা তার মাথায় থাকা কালো পেচানো কাপড়টা খুলে ফেলে চুল ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,
“এত কম বয়সে বিয়ে দিয়েছিলো কেনো তোমায়?”
চাঁদ কেবলই তাকিয়ে থাকে তার পানে।লোকটার উদ্দেশ্য ঠিকঠাক বুঝতে পারছেনা সে।তবুও কেবল তাকিয়ে আছে বলে লোকটা বলে,
“ওহ সরি সরি আমিতো ভুলেই গেছি তুমি বাংলা বলতে পারোনা”
চাঁদ আবারও মাথা ঝাকায়।তারপর লোকটা পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখের মাস্কটা খুলে বিছানার উপর রেখে রুমাল দিয়েই মুখের ঘামটুকু মুছতে মুছতে চাঁদের পানে দৃষ্টি দিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“তুমি এভাবে পাহাড়িদের মতো না সেজে নরমাল বাঙালী মেয়েদের মতো সাজতে পারোনা?ভীষণ ভালো লাগবে কিন্তু তোমায়।আর ওয়েস্টার্নে?”
বলেই আবারও চাঁদকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগে।তা দেখে চাঁদ আরেকটু দূরে চলে যায় বলে লোকটা হোহো করে হেসে দিয়ে বলে,
“হাহাহা রিল্যাক্স!এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই”
চাঁদ কেবলই ঢোক গিলে।লোকটা আঙুলের ইশারায় কাছে আসতে বললে চাঁদ সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে।মিনিট দুয়েক চুপ থেকে লোকটা নিজেই চাঁদের হাত ধরে টেনে তার নিকটে এনে দাড় করায় চাঁদকে।সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের শরীরে এমনভাবে বিদ্যুৎ খেলে গেলো যেনো সে এক্ষুনি জ্ঞান হা!রাবে।ভয়ে জমে গেছে পা জোড়া।কী করবে না করবে বুঝতে পারছেনা।কেবলই লোকটার মুখের পানে তাকিয়ে আছে সে।খানিকটা বিদেশী ভাব তাতে বিদ্যমান হলেও মুখের আদলটা কার সাথে যেনো মিলে যাচ্ছে ঠিক মনে করতে পারছেনা চাঁদ।সে এরকম চেহারা আগেও দেখেছে,হয়তো হুবুহু না তবে খানিকটা এমনই।কিন্তু এই লোকটা ভীষণ ফর্সা,চুলগুলো কালচে-বাদামী।পুরোপুরি বাদামী না তবে রঙটা ঠিক কাঠ লিচুর বাকলের ন্যায়।মুখে দাড়ি-গোফের ছিটেফোটা নেই।হয়তো ক্লিন শেভ করা।লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করতে করতেই তার হঠাৎ বলা বাক্যে কান গরম হয়ে আসে চাঁদের,
“চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছো মেয়ে?তবে আমিতো পুরোটাই নিজেকে সপে দিতে চাই তোমার কাছে।উইল ইউ বি মাই ভ্যালেনটাইন বেইবি?”
বলেই চাঁদের কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে সে।চাঁদ হতবিহ্বল হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে।তবে লোকটার শক্তির সাথে সে পেরে উঠে না।অতঃপর হতাশার নিশ্বাস ছাড়তেই লোকটা শরীর দুলিয়ে হেসে হেসে বলে,
“শেষ?সব শক্তি শেষ?এত ছটফট করছো কেনো লিটেল বার্ড?”
অতঃপর আবারও চাঁদকে ঝাকিয়ে বলে,
“এই মেয়ে পাখি হবে আমার?”
বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে থাকে চাঁদ তার পানে।অতঃপর লোকটা আবারও বলে,
“হেই বলোনা মহুয়া?ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া?কতটা পাগল করেছো তুমি আমায়?তোমার এই মায়াবী মুখটা একদম ভুলতে পারিনা”
বলেই চাঁদের নাকের ডগায় আলতো করে তর্জনী দ্বারা ছুয়ে দেয় সে।চাঁদের শরীর রি রি করে উঠে ঘৃণায়।দাতে দাত চেপে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।অতঃপর লোকটার একের পর এক প্রশ্ন শুনে চোখ খোলে সে,
“তুমি নাকি মিজোরামের?তবে তোমার মাঝেতো তা দেখতেই পাই না আমি।কেমন বাঙালীয়ানা ভাব তোমাতে।হোয়াই বাংলাদেশী গার্লস আর সো অ্যাট্রাকটিভ ম্যান?বাট তুমিতো ইন্ডিয়ান রাইট?”
লোকটার কথা শুনে চাঁদ মাথা ঝাকিয়ে আবারও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে লোকটা চাঁদের ঠোটে তর্জনী রেখে বলে,
“হিশ!এতো নড়াচড়া করছো কেনো?চুপচাপ থাকো না মহুয়া বার্ড।আয় ওয়ানা সে সামথিং টু ইউ”
বলেই আরেকটু চেপে ধরে কাছে নিয়ে আসে তাকে।চাঁদের পেটের কাছে থাকা ছুরির ধা!রালো অংশ দ্বারা বারবার পেটে চাপ লেগে ব্যথা পাচ্ছে সে।খানিকটা জ্বলছেও।সম্ভবত কে!টে গেছে।দাত কিড়মিড়িয়ে ব্যথায় হাসফাস করতে লাগে সে।চাঁদের ছটফটানি দেখে লোকটা বলে,
“ভয় পেয়োনা।তোমার সাথে কিছু করবোনা আমি।শুধু এভাবে দাঁড়িয়ে থাকো ভাল্লাগছে।দূরে যেয়োনা প্লিজ”
এরপর খানিকটা থেমে লোকটা ফের বলে,
“তোমার মুখটায় এত মায়া!উফ।আই জাস্ট লাভ ইওর আইস,ফেস।দিজ নোজ,লিপ্স,হ্যান্ড,হিপ,চেস্ট ইচ অ্যান্ড এভ্রিথিং হোয়াট ইউ হ্যাভ প্রিটি গার্ল!”
লোকটার কথায় গা ঘিনঘিন করে উঠে চাঁদের।অতঃপর তাকে সরাতে চাইলে সে আরও চেপে ধরে কঠিনভাবে বলে,
“আরেকবার নড়তে চাইলে যা করতে চাচ্ছিনা তা করে ফেলবো মেয়ে! আর তুমি আমায় বাঁধাও দিতে পারবেনা”
লোকটার কথায় পুরোপুরি জমে যায় চাঁদ।লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলতে লাগে সে।চাঁদের উত্তপ্ত শ্বাসগুলো গিয়ে আছড়ে পড়তে লাগে লোকটার ঘাড় এবং গলায়ও।বড্ড বেসামাল হয়ে পড়ে সে।চাঁদকে অনেকটা কাছে টেনে এনে তার ঘাড়ের কাছে মুখ নিতে লাগলেই চাঁদের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ে যায়।চোখে থাকা লেন্স খুলে যাবে বলে তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে ঠোট কামড়ে ধরে মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ ডাকতে লাগে সে।লোকটার ঘাড়ে গরম পানির স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে চাঁদকে সরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখতেই বিচলিত হয়ে চাঁদের বাহু ধরে সে বলে,
“মহুয়া?এই মহুয়া?কাদছো কেনো?”
“প্লিজ প্লিজ কেদোনা।আয় আম সো সরি।আর হবেনা।আর এমন হবেনা সত্যি।তবুও কেদোনা প্লিজ”
“প্লিজ কেদোনা।এই যে দেখো কানে ধরছি আমি”
বলেই হাতে থাকা গ্লাভস গুলো খুলে কানের লতি স্পর্শ করে সে।অতঃপর খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,
“এই দেখো,দেখোনা।দেখো,এই যে দেখো তোমার জন্য কেবল তোমার জন্য দি লিওনেল অ্যালেন কানে ধরেছে।জাস্ট সি গার্ল।দেখো”
লোকটার কথা শুনে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় চাঁদ।অতঃপর নাক টেনে কেবলই তার পানে তাকিয়ে থাকে সে।লোকটা তাকে তার ডান পাশে বসিয়ে দিয়ে বলে,
“পাশে বসো ঠিক আছে?কাছে আসতে হবেনা।আনবোনা আর।তবুও তুমি কেদোনা।এই!পানির ছাপ পড়ে গেছে গালে।দেখি মুছে দেই”
“না!”
কপাল কুচকে লোকটা বলে,
“ঠিক আছে ঠিক আছে ধরছিনা।তুমি বলো,আমায় কেমন লেগেছে তোমার?ভালো?”
কথাখানা শুনেই লোকটার দিকে তাকিয়ে চাঁদ মাথা কাত করে বলে,
“নাম?”
“কী?”
চাঁদ ভ্রু উচিয়ে বলে,
“তুঙ্গি আই হামিং?” [আপনার নাম কী?]
কুঞ্চিত ভ্রুযুগোল আরও কুঞ্চিত করে লোকটা বলে,
“কী?কী বলছো?বাংলায় বলো।নাহয় ইশারায়”
অতঃপর ইতস্তত করে চাঁদ তার তর্জনী দ্বারা লোকটার বাহুতে স্পর্শ করে উচ্চস্বরে বলে,
“নাম?”
বলেই আবারও তাকে ছুয়ে দুই ভ্রু উচিয়ে বলে,
“নাম?”
লোকটা হেসে দিয়ে বলে,
“ওহ আচ্ছা আমার নাম?আমার নাম জিজ্ঞেস করছো তুমি?”
চাঁদ উপরনিচ মাথা নাড়তেই লোকটা বলে,
“আমার নাম অ্যালেন।লিওনেল অ্যালেন।তুমি আমায় অ্যালেন বলে ডেকো ঠিক আছে?”
“অ্যা…অলান?”
লোকটা হেসে বলে,
“না না।অ্যালেন”
“অ্যা…অ্যালেন?”
“এইতো এইতো হ্যা।অ্যালেন,আমি অ্যালেন।মহুয়ার অ্যালেন”
বলেই হাসে সে।অতঃপর আবারও বলে,
“এই জানো?আমি তোমার থেকে কিন্তু অত বড় না। আ’ম অনলি টুয়েনিফাইভ”
“হা?”
“মানে আমার পঁচিশ বছর।তোমার থেকে পাঁচ বছরের বড় আমি”
“ওকে ওকে”
“এই ইংলিশ পারো তুমি?”
চাঁদ ডানে বায়ে মাথা ঝাকায়।ঝাকাতেই ভ্রু কুচকে অ্যালেন বলে,
“তাহলে ওকে বললে যে?”
এবার নিজের দিকে ইশারা করে চাঁদ বলে,
“ভাসা?আমা..আমাদার ভাসা”
চাঁদের কথা শুনে দুই ভ্রু কুচকানোবস্থায় উঁচু করে দুই ঠোট মিলিয়ে রেখেই ঠোট টিপে হাসতে লাগে ছেলেটা।অতঃপর বলে,
“আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি।তোমায় আমি রোজ একটু একটু করে বাংলা শেখাবো ঠিক আছে?আর শোনো তোমার কাছে আমি ছাড়া কেউ আসবেনা।ইউ আর অনলি মাইন”
ছেলেটার কথাগুলো শুনে বিস্ফোরিত নয়নে তার পানে চাইতে বাধ্য হয় চাঁদ।জানতে ইচ্ছে করছে এই লোকটা কে?তার সাথে এমন করছে কেনো?খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে ‘আপনি আমার মতো কালো মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট কেনো?চাওয়াটাতো দৈহিক বলে মনে হচ্ছেনা।তবে কী তা?’ নিজের কথাগুলো মনে মনেই গিলে ফেলে চাঁদ।অতঃপর ভাবতে থাকে ছেলেটাকেতো ভালোই মনে হচ্ছে তবে এসবের সাথে জড়িত কেনো সে?বিদেশী বিদেশীও লাগছে।নামটাও কেমন বিদেশীদের মতো।তবে এত সুন্দর বাংলা বলছে কী করে?কে এই অদ্ভুত ছেলেটা?মাস্টারমাইন্ডের কী হয় সে?নাকি সে ই মাস্টারমাইন্ড?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
শুক্রবার,জুম্মার দিন।জুম্মা পড়েই মসজিদ থেকে বেরিয়ে চাঁদের নম্বরে ডায়াল করে অরণ।কিছুক্ষণ বেজে বেজে কেটে গিয়ে পরবর্তীতে ওপাশ থেকেই কল আসে চাঁদের।অরণ তা রিসিভ করে বলে,
“আমি বের হয়েছি।তুমি রওয়ানা দাও।পনেরো মিনিটের মতো লাগবে আমার”
“শুনুন।আমরা ওয়ারি যাবো।নাহয় সমস্যা হবে।আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করে”
“এমনটা মনে হচ্ছে কেনো?”
“জানিনা।আপনি আগে মোড়ের সামনে আসুন।না থাক আপনি শহীদুল্লাহ্ হলের সামনে আসুন আমি ওখানটায় দাড়াবো।সেখান থেকে ওয়ারি ঠিক আছে?”
“আচ্ছা আসছি।তবে সাবধানে এসো তুমি।আজকাল তোমায় নিয়ে অনেক টেনশন হচ্ছে।না জানি কোন ঝামেলায় নিজেকে জড়িয়েছো”
খানিকটা হেসে চাঁদ বলে,
“চিন্তা করবেন না।আসুন”
অতঃপর কল কেটে দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে চাঁদ।পরনের জামা খানিকটা উঁচু করে পা’জামা একটুখানি নামিয়ে বেশ সাবধানে আলতো হাতে পেট ছুতেই দাত খিচে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।চশমা বারবার নাকের ডগায় আসছে বলে বিরক্ত হয়ে চশমা খুলেই ফেলে চাঁদ।খুলে তা পাশে রেখে দিয়ে সামনে থাকা স্যাভলন নিয়ে তুলোতে ভরিয়ে পেটে লাগাতেই জ্বলে উঠে পেটের কা!টা অংশটা।ছুরি লম্বাভাবে রাখা ছিলো বিধায় কাটা দাগটাও লম্বাটে ই হয়েছে।অনেকখানিই চামড়া ভেদ করে মাংসে লেগে কে!টে গিয়েছে।শুকাতে ঢের সময় লাগবে ভেবেই হতাশ হয় চাঁদ।ভীষণ জ্বালাপোড়া করে তার।পেটে টানও লাগে।কোনোকিছুই শান্তি মতো করতে পারেনা।তুলো আর স্যাভলন দিয়ে কাটা জায়গা পরিষ্কার করে তাতে পভিসেপ ক্রিম লাগিয়ে তার উপর সামান্য তুলো রেখে ব্যান্ডেজ দিয়ে পুরো পেটে তা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে এনে গিট দিয়ে ড্রেসিং শেষ করেই উঠে দাঁড়ায় বের হওয়ার জন্য।উঠতে গিয়েও পেটে টান লাগে তার।তবুও নিজেকে সামলে দরজা খুলে হাটা ধরে বাড়ির বাইরে যাবার উদ্দেশ্যে।
শহীদুল্লাহ হলের সামনে থেকে চাঁদ আর অরণ একই রিক্সায় উঠে।গন্তব্য ওয়ারির পাস্তা ক্লাব।কথায় আছে,যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।আজ যেনো তা খাপে খাপে মিলে গেছে।চাঁদের পেটে টান লাগছিলো বিধায় রিক্সায় উঠতে অসুবিধা হচ্ছিলো তাই অরণ তার হাত ধরে রিক্সায় উঠতে সাহায্য করে এবং ঠিক সেই মুহুর্তে নামাজ সেড়ে সেই পাশ দিয়েই নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো প্রণয় কিন্তু চাঁদ আর অরণকে সেভাবে দেখে ভ্রু সামান্য কুঞ্চিত করে তাদের পানে তাকিয়ে থাকে।অতঃপর যেই না তারা রিক্সায় উঠে রিক্সার হুড তুলে দেয় চোয়াল আপনাআপনি শক্ত হয়ে আসে প্রণয়ের।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাদের হাতেনাতে ধরার জন্য ক্ষীপ্র গতিতে সেও এক রিক্সায় উঠে তাদের পিছু নেয়।
To be continued…..
[বিঃদ্রঃপ্রথমত দেরি হওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আমি জানি আপনারা অপেক্ষা করে থাকেন কিন্তু কী করবো বলুন?অতীতের শেষ সময়গুলো এতোটা বিষাদপূর্ণ যে সেগুলো সাজিয়ে লিখতে আমার বেশ সময় লাগছে।বারবার রিচেক দিতে হচ্ছে।প্রতিটা দৃশ্য মানানসই হচ্ছে কিনা ভাবতে হচ্ছে।তাই আমার দেরি হচ্ছে দিতে।আর কে যেনো বললো সাসপেন্স রেখে দিয়েছি ক্লিয়ার করছিনা।তো তার উত্তরে আমি এটাই বলবো যে সাসপেন্স রাখিনি।এটা একটা বড় গল্প তথা উপন্যাস যার দরুন সবটা ধারাবাহিকভাবেই আসবে।হুট করেই আমি সবটা একই পর্বে ক্লিয়ার করে দিতে পারবোনা।হয়তো সাসপেন্স হয়েই যাচ্ছে তবে আমি এতে কী করতে পারবো বলুন?আমার হাতে কিছুই নেই।গল্প পড়তে থাকলেই জানতে পারবেন আর আশা রাখছি পুরোটাই পড়বেন।আর হ্যা হিন্টস আবার কী করে দেয়া যায় সেটা আমি জানিনা।হিন্টস দিয়ে পাঠকমহল যদি সবটা ভেবেই ফেলে,বুঝেই যায় তো গল্প লিখে কী লাভ?থ্রিলার গল্পে যদি ক্লাইমেক্সই না থাকে গল্প উপন্যাসের মজাটা কোথায় থাকবে?আমি প্রথমেই বলেছিলাম এটা পুরোপুরি রোমান্টিক গল্প না।মাত্র পচিশ শতাংশ রোমান্টিকতা আছে এতে আর বাকিসবই থ্রিলার।থ্রিলিং অংশতো কেবল শুরু হলো!এখনোতো অনেককিছুই দেখা বাকি,বহুকিছু হওয়া বাকি!আপনাদের কাছে আমি শুধু এটাই অনুরোধ করতে পারবো যে ধৈর্য ধরে পড়ুন, উপন্যাসটা আপনাদের মনে ধরার মতোই এক উপন্যাস হবে এতটুকু আশা রাখছি।বাকিটা আপনারাই গল্প শেষ হলে বুঝতে পারবেন।আর হ্যা অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন অতীত কবে শেষ হবে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি।আর সম্ভবত দুটো পর্ব হবে অতীতের।আমিই জানিয়ে দেবো শেষ হলে।আর হ্যা আবারও বলছি গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক!বাস্তবতার সঙ্গে দয়া করে মেলাবেন না কেউ]