স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_২৮

0
488

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

বিষাদের স্বাদ মনকে সম্পূর্ণ রুপে গ্রাস করে নিয়েছে। স্মৃতিদের পরীক্ষা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। স্মৃতি সবকিছু ভুলে পড়াশোনায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে নিজের মনকে দমিয়ে রাখার মতো ভয়ংকর অনুভূতি দু’টো নেই। স্মৃতি সহ্য করতে পারে না। হাসোজ্জল মুখশ্রী খানা সব সময় মলিন হয়ে থাকে। তিক্ততার স্বাদ আর স্মৃতির ভালো লাগে না। কলেজে স্মৃতির বন্ধু মহল বসে আছে। স্মৃতি মাথায় হাত চেপে বসে আছে। যখনই অতিরিক্ত চিন্তা করতে যায়। তখনই মাথায় আঘাত লাগে রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। স্মৃতির পাগলামি আজ কয়েকদিন হলো লক্ষ্য করছে সবাই। স্মৃতিকে সবাই মিলে ঘিরে ধরলো। স্মৃতির কি হয়েছে সবাই আজকে জেনেই ছাড়বে। স্মৃতির অবস্থা দেখে সিয়ামের মুখশ্রী কুঁচকে এলো। কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে সিয়াম বলল,

–আজকাল তোকে একটু বেশিই ছন্নছাড়া দেখায়। তোর কি হয়েছে? আজকে আমাদের বলতেই হবে। না হলে তুই আজকে বাসায় যেতে পারবি না। সিয়ামের কথায় তাল মিলিয়ে মেঘলা বলল,

–স্মৃতি আর আমাদের ভালোবাসে না। তাই নিজের মনের কথা আমাদের বলে না। আমাদের যদি আপন ভাবতো। তাহলে নিজের কষ্টের কথা বলে নিজেকে হালকা করে নিতো। আমরা কি এতটাই খারাপ বন্ধু রে। আমাদের সাথে কষ্টটা ভাগ করে নেওয়া যায় না। স্মৃতি সহ্য করতে না পেরে বলেই দিল,

–আমার একটু শান্তি চাই। আমি কোথাও শান্তিতে থাকতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমি ম’রে যাব৷ প্লিজ তোরা আমাকে বাঁচা। আমি এত তাড়াতাড়ি ম’র’তে চাই না৷ ডিপ্রেশন আমাকে শেষ করে দিল। আমি আর কাউকে ভালোবাসার মতো দুঃসাহস দেখবো না। এবারের মতো আমাকে শান্ত করে দে। যেন আমি পৃথিবীর সবকিছু ভুলে থাকতে পারি। স্মৃতির কথায় সিয়াম রহস্যময় হাসি হাসলো। অতঃপর হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলল,

–তুই পৃথিবীর সবকিছু ভুলে থাকতে চাইছিস তাই তো। এটা কোনো ব্যাপার হলো, তুই আমাদের আগে জানালেই পারতি৷ আজকে বিকেলে আমাদের সাথে দেখা করিস। তোর কথা শান্তি লাগবে? পৃথিবীর সব শান্তি তোর হাতে তুলে দিব৷ সিয়ামের কথায় মেঘ রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তোদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। নিজেরা খারাপ হয়েছিস। আবার অন্যকে খারাপ পথে নিয়ে যাচ্ছিস! আমি থাকতে স্মৃতিকে বিপথে চলে যেতে দিব না। স্মৃতির মতো মেয়ে চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাবে। আর আমি মেঘ বসে বসে দেখবো। এটা কখনো হতে পারে না। তোরা চাইলে ও স্মৃতিকে খারাপ বানাতে পারবি না। আমি আজকেই স্মৃতির বাসায় গিয়ে, আংকেল আন্টিকে সবকিছু বলে দিব। মেঘের কথায় মেঘলা জ্বলে উঠলো। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তুই এমন সাধু সাজছিস যেনো তুই আমাদের সাথে জড়িত নেই। তোর বাবা-মাকে খবর দিব নাকি। তুই দেখি স্মৃতির ভালো সহ্য করতে পারছিস না। স্মৃতি একটু ভালো থাকবে। একটু শান্তিতে থাকবে। তোর এত জ্ব’ল’ছে কেন? মেঘ মেঘলার কথায় স্তব্ধ হয়ে গেল। বাবার কাছে সে ভিষণ দুর্বল। তাই মেঘলা সুযোগ বুঝে দুর্বল জায়গায় আঘাত করল।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশটা জানান দিচ্ছে এখনই বর্ষণ শুরু হবে। নীল আকাশটাকে কালো মেঘের দল সম্পূর্ন রুপে গ্রাস করে ফেলছে। মৃদু বাতাসে গাছের ডালপালা হেলেদুলে পড়ছে। স্মৃতির বন্ধুমহল স্মৃতির জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পরে স্মৃতি ঝড়ের গতিতে হেঁটে আসছে। স্মৃতিকে দেখে অজান্তেই মেঘলার মুখশ্রীতে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সে বেশ আগ্রহ নিয়ে স্মৃতির দিকে এগিয়ে গেল। স্মৃতিকে আগলে নিয়ে সবাই মিলে একটা বাসার মধ্যে প্রবেশ করল। স্মৃতি সবার ব্যবহারে বেশ অবাক হল। সে বুঝতে পারছে অসৎ পথে বন্ধু বেশি আর সৎ পথে কষ্ট বেশি। এতদিন এই বন্ধুরাই এক মিনিট দেরি করলে, কত কথা শোনাতো। আর আজ তাকে আগলে নিল। কথা টা ভাবতেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো স্মৃতি। এই মুহুর্তে সে কিছু ভাবতে চায় না। তার একটু শান্তি চাই। সে শান্তিতে থাকতে পারলেই হয়েছে। মস্তিষ্ক ভালো খারাপ কিছু বুঝতে চাইছে না। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে সে। হঠাৎ করে রোহান স্মৃতির সামনে একটা ইনজেকশন ধরলো। আচমকা মুখের সামনে ইনজেকশন ধরায় স্মৃতি কিছুটা চমকে গেল। রোহান স্মৃতিকে চমকাতে দেখে হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলল,

–ভয় পাস না আমরা তোকে মেরে ফেলবো না। তুই শান্তি চাস না। এই নে তোর শান্তির ঔষধ নিয়ে এসেছি। একবার নিয়ে দেখ পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে যাবি। সুখের দুনিয়ায় মাতোয়ারা হয়ে উঠবি। স্মৃতি আহত কণ্ঠে বলে উঠলো,

–তুই সত্যি বলছিস। এটা দিলে আমি আবার আগের মতো হয়ে যাব। পড়াশোনায় মনযোগ দিতে পারবো। দেখ সামনে আমার পরীক্ষা। আমি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে চাই। আমার শান্তির জন্য তোরা আমাকে যা করতে বলবি। আমি তাই করবো কিন্তু সবকিছুর বিনিময়ে আমার এক টুকরো শান্তি চাই। স্মৃতির কথায় মেঘ উত্তেজিত হয়ে বলল,

–স্মৃতি আমি তোর কাছে অনুরোধ করছি। নিজের ফুলের মতো জীবনটা নষ্ট করে দিস না। সামনে তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। তুই জানিস এটা কি? এটা হচ্ছে ড্রা’গ’স যা ক্ষণিকের জন্য তোকে শান্তি দিবে। কিন্তু তোর সারাজীবনের শান্তি কেড়ে নিবে। একটা সময় আসবে তুই ড্রা’গ’স ছাড়া বাঁচতে পারবি না। একমাত্র ড্রা’গ’স’ই হবে তোর বেঁচে থাকার কারণ। ছোট একটা ভুলের জন্য তোকে সারাজীবন পস্তাতে হবে। এখনো সময় আছে নেশার জগতে এসে নিজের ফুলের মতো দেহটাকে নষ্ট করে দিস না। একটা বার তোর বাবা-মায়ের মুখটা কল্পনা কর। মেঘের কথায় তোহা রেগে বলল,

–তুই স্মৃতিকে এত ভালো সাজেশন দিচ্ছিস। তাহলে তুই ড্রা’গ’স নিস কেনো? আগে নিজে ভালো হ তারপরে অন্যকে জ্ঞান দিতে আসিস। রোহান স্মৃতিকে ড্রা’গ’স দে। আমরা জানি স্মৃতি ঠিক কতটা কষ্ট আছে। খুব গভীর কষ্ট না পেলে, একটা মেয়ে হয়ে নেশার জগতে আসতে চায় না। আমরা সবাই নেশায় আসক্ত। আমাদের নেশায় আসক্ত হবার পেছনে বহু কষ্ট লুকিয়ে আছে। ঠিক তেমনই স্মৃতি আরাভ স্যারকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছে। প্রিয় মানুষের তীব্র অবহেলা মানুষকে মানসিক মৃ’ত্যু দেয়। আমাদের স্মৃতি ভালো নেই। ও জিন্দা লা’শ হয়ে গিয়েছে। তোরা কি চাস মেয়েটা ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিক। তার চেয়ে ভালো নেশায় ডুবে নিজেকে ভালো রাখুক। স্মৃতি অন্য কাউকে ভালোবাসে কথাটা কর্ণপাত হতেই মেঘের বুকের মধ্যে চিনচিন করে উঠলো। কল্পনা করতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে। যাকে হারানোর ভয়ে মনের গভীরে থাকার কথা গুলো আড়াল করে রেখেছিল। আজ সে অন্য কাউকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছে। কথাটা মেনে নিতেই মেঘের বুকটা হাহাকারে ভরে উঠলো। সে মেনেই নিতে পারছে না। স্মৃতি অন্য কাউকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষের ভালো থাকার মাঝে-ও মানসিক সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। আমি না হয় স্মৃতির ভালো থাকাটাকে মানসিক সুখ ধরে নিয়ে বেঁচে থাকবো। আমি বোধহয় কারো ভালোবাসা পাবার যোগ্য নয়। তাই সব সময় সবকিছু আমাকেই হারাতে হয়। আজ যদি মেঘ ছেলে না হয়ে মেয়ে হতো। তাহলে স্মৃতিকে গভীর আলিঙ্গন করে কান্না করতো। কিন্তু সে যে ছেলে আঁখি জোড়াতে জল আসতে মানা। তার নিস্তেজ আঁখি জোড়া দিয়ে নিজের প্রেয়সীকে দেখছে। নিজ চক্ষুে নিজের ভালোবাসার মানুষের ধংস দেখার মতো বাজে অনুভূতি দুটো নেই। স্মৃতির শরীরে রোহান ড্রা’গ’স প্রয়োগ করে দিল। স্মৃতি শান্তি পাখির ন্যায় সোফায় গা এলিয়ে দিল। নিজেকে সামলানো প্রায় কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এক আলাদা জগতে হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতি। সে কি ভয়ংকর অনুভূতি।

চলবে…..

(আরাভকে আবার কে কে দেখতে চান কমেন্ট করুন। আর আমার ড্রা’গ’স সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। যতটুকু জেনে তাই লিখেছি। ভুল থাকলে ধরিয়ে দিবেন। কাল দেওয়ার কথা ছিল। আজকেই কষ্ট করে লিখে দিয়ে দিলাম। সবাই রেসপন্স করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here