স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_২৯

1
734

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

স্মৃতিদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। মেয়েটা পড়াশোনার কোনো কমতি রাখেনি। সর্বোচ্চ ফলাফল পেয়ে সে উত্তীর্ণ হয়েছে। নেশায় তার মন মস্তিষ্ক উন্মাদ হয়ে গিয়েছে। মাঝেমধ্যে ছোট খাটো কথায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সময় পেলেই ঘুমিয়ে পড়ে। বন্ধুদের সাথে আগের মতো মিশতে যায় না। শুধু মাত্র প্রয়োজনেই তাদের কাছে যায়। তাদের থেকে-ও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে স্মৃতি। সে খুব সাবধানতার সাথে নেশাদ্রব্য গ্রহণ করে। স্মৃতি বরাবরই একা থাকতে ভালোবাসে। তাই মেয়ের মাঝে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পায়নি স্মৃতির বাবা-মা। তবে স্মৃতির অতিরিক্ত ঘুম লক্ষ্য করার মতো ছিল। পরীক্ষা শেষ অবসর সময়ে ভালো লাগছে না। তাই হয়তো মেয়ে ঘুমিয়ে সময় পার করছে। সে কথা ভেবে এতটা-ও গুরুত্ব দেয়নি তারা। স্মৃতির ড্রা’গ’সে’র নেশা উঠেছে। এই মুহুর্তে নিজেকে দমিয়ে রাখা কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠছে। স্মৃতি তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে বাহিরে বের হয়ে গেল। যথাসময়ে স্মৃতি মেঘলাদের বাসায় চলে আসলো। তোহা, মারিয়া, রোহান তিনজন আগে থেকেই মেঘলাদের বাসায় এসে বসে আছে। স্মৃতি কোনো কথা না বলে মেঘলার ড্রয়ার খুলে, ড্রা’গ’স বের করল। এখন আর স্মৃতিকে ড্রা’গ’স প্রয়োগ করে দিতে হয় না। সে নিজেই ড্রা’গ’স নেওয়াতে পারদর্শী হয়ে গিয়েছে। ড্রা’গ’স নিয়ে মেঘলার হাত থেকে খপ করে একটা সি’গা’রে’ট টান দিয়ে নিয়ে নিল। সি’গা’রে’ট টা জ্বালিয়ে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। সবাই স্মৃতির দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কি ছিল আর কি হয়ে গেল। মারিয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো,

–মেয়েকে নেশার জগতে নিয়ে এসে কি লাভ হল? মেয়েটা জাতে মা’তা’ল তালে ঠিক। পরীক্ষায় ঠিক গোল্ডেন প্লাস পেয়েছে। মেয়েটাকে ধংস করার জন্য এত কিছু করলাম। মেয়েটাকে ধংস করে-ও আমরা যে হেরে গেলাম। মারিয়ার কথা শুনে মেঘ কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করতে করতে বলল,

–মানুষ পরাজয়ের জন্য সৃষ্টি হয়নি! তাকে ধংস করা যায়, কিন্তু হারানো যায় না। তোরা স্মৃতিকে ধংস করতে চেয়েছিলি না। তোদের আশা পূর্ণ হয়েছে। স্মৃতি ধংস হয়ে-ও জিতে গিয়েছে। আর তোরা জিতে গিয়ে ও হেরে গিয়েছিস। স্মৃতিকে আমি অনেক বুঝিয়ে ছিলাম। স্মৃতি শুধু নিজের সাময়িক কষ্ট ভুলে থাকার জন্য এই পথে আসতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এই কথা একবার-ও বলেনি যে, নেশায় জর্জরিত হয়ে সে তার পুরো ক্যারিয়ার শেষ করে দিবে। স্মৃতির কাছে তার বাবা-মা অমৃত। স্মৃতি তার বাবা-মাকে কখনো কষ্ট দিতে পারবে না। ড্রা’গ’স নিয়ে সাময়িক কষ্ট ভুলে গিয়ে বাবা-মায়ের জন্য নতুন করে শুরু করেছে। হেরে গিয়ে-ও জিতে গিয়েছে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পেয়েছে। দেখবি স্মৃতি তোদের থেকে ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাবে। মানুষ নেশা করলেই খারাপ হয়ে যায়। এমনটা ভাবার দরকার নেই। মানুষের ইচ্ছে শক্তিটাই সব। স্মৃতি নিজের একার কথা ভাবে না। যে বাবা-মা জন্ম দিয়েছে। সেই বাবা-মায়ের কথা ও ভাবে। স্মৃতির অনেক ইচ্ছে চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। আমি আর স্মৃতি অনলাইনে শেয়ারে কাজ করি। জানিস আমাদের মাসিক বেতন কত? তোদের জানাবো না। তোরা হজম করতে পারবি না। নিজেকে ধংস করতে হলে এমন ভাবে কর। যেন হেরে গিয়ে-ও জিতে যাস। আমার বিশ্বাস স্মৃতি একদিন ওর ভুল বুঝতে পারবে। আবার সঠিক পথে ফিরে আসতে চাইবে। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। স্মৃতিকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব আমি নিব। মেঘের কথায় সবার মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এলো। স্মৃতি মেয়েটা এতটা চালাক। তা তাদের ধারনার বাহিরে ছিল। স্মৃতি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কক্ষ প্রবেশ করতে করতে বলল,

–মেঘ জানিস আমার এদের সাথে আর মিশতে ইচ্ছে করে না। আমার নতুন নতুন ফ্রেন্ড চাই। পুরোনোদের সাথে মিশতে মিশতে বোরিং হয়ে গিয়েছি। আমার শুধু তোর সাথে থাকতে ভালো লাগে। চল দোস্ত আজকে তোর সাথে সারা বিকেল ঘুরবো। আজকে তুই বেতন পেয়েছিস। আজকে তুই আমাকে পুরো শহর ঘুরিয়ে দেখাবি। চার দেওয়ালের আবদ্ধ কক্ষ থাকতে থাকতে তিক্ততা এসে গিয়েছে। মনটাকে একটু ফ্রেশ করা প্রয়োজন। কিছু মানুষ জানে না। তারা জিতে গিয়ে-ও হেরে গিয়েছে। আমি এতটা-ও অকৃতজ্ঞ সন্তান না যে, নিজের সুখের কথা ভেবে বাবা-মায়ের কথা ভুলে যাব। আমার কোনো ভাই নেই। ভবিষ্যতে আমার বাবা-মাকে আমাকেই দেখতে হবে। বাবা-মাকে ছেড়ে দূরে সরে যাবার কথা আমি কল্পনা ও করতে পারি না। ম’রে যাবার আগে এমন কিছু করে যাব। যেন আমার মৃ’ত্যু’র পরে আমার বাবা-মাকে কারো দোয়ারে যেতে না হয়। তোরা আমাকে অনেক শান্তি দিয়েছিস। তোদের কিভাবে ভুলে যাই বল। তোরা চিন্তা করিস না। স্মৃতি আবার আসবে তোদের কাছে, কিন্তু আজকে তোদের সহ্য হচ্ছে না। স্মৃতি আজকে মেঘের সাথে একা ঘুরতে চায়। কথা গুলো বলেই মেঘকে নিয়ে বের হয়ে গেল। অপমানে সবার মুখটা চুপসে গেল।

অন্ধকার কক্ষের মধ্যে দু’হাতে নিজের কেশগুলো আঁকড়ে ধরে আছে আগন্তুকের বোন। কক্ষের সব আসবাবপত্র চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। দু’দিন ধরে সে না খেয়ে আছে। পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। এই অচেনা শহরে এসে একটা মানুষের ভালোবাসায় অন্ধ হয়েছিল সে। আজ কয়েক মাস হল মানুষটা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। মানুষটাকে ছাড়া ভেতরটা শূন্য শূন্য লাগছে। এই মুহুর্তে ভিষণ করে মানুষটার শূন্যতা অনুভব করছে আগন্তুকের বোন। মানুষটা ছাড়া পুরো শহর বিষাদ হয়ে গিয়েছে। মানুষটাকে শহরে ফিরে আসার জন্য শহরের অলিগলি আহবান জানাচ্ছে। কিন্তু মানুষটা শহরটাকে শূন্য করে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। মেয়েটার শ্বাস কষ্ট উঠে গিয়েছে। মেয়েটার অবস্থা খারাপ দেখে আগন্তুক ছুটে বোনের কক্ষের দিকে এগিয়ে আসছে। নিজের প্রাণ প্রিয় বোনের করুন অবস্থা দেখে আগন্তুকের বুকটা হাহাকার ভরে গিয়েছে। মা ম’রা মেয়েটাকে কখনো কষ্ট পেতে দেয়নি আগন্তুক। তার পাপের শাস্তি তার বোন পাচ্ছে। এর থেকে ভয়ংকর শাস্তি দু’টো হতেই পারে না। মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। আগন্তুক এসে বোনকে নিজের কক্ষে নিয়ে চলে গেল।

রিক্সায় পাশাপাশি বসে ঘুরছে স্মৃতি আর মেঘ। স্মৃতির সাথে মেঘের গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে হবে। মেয়েটা এখন নেশার জগতে রয়েছে। হাজার সুন্দর করে বোঝালে ও স্মৃতির অকেজো মস্তিষ্ক কিছুই বুঝবে না। মেঘ স্মৃতির মন মতো চলছে। স্মৃতির ক্ষতি হবে এমন কাজ করা থেকে সব সময় দূরে দূরে রাখছে। এই দুঃখের সময়ে একমাত্র মেঘই স্মৃতিকে মানসিক ভাবে ভরসা দিয়েছে। সেজন্য স্মৃতি মেঘ ছাড়া কিছু বুঝতে চাইছে না। মেঘের অবুঝ মন বুঝে না। আবার ও স্মৃতিকে প্রশ্ন করে বসলো,

–এই নেশার জগৎ থেকে ফিরে এসে একটা সুন্দর জীবন কাটাতে পারিস না স্মৃতি। কেনো নিজের ফুলের মতো জীবনটাকে নষ্ট করছিস? এভাবে চলতে থাকলো তুই বাঁচবি না স্মৃতি। ম’রে যাবি। মেঘের কথায় স্মৃতি রক্তিম চোখে মেঘের দিকে তাকালো। তারপরে তাচ্ছিল্য কণ্ঠে বলল,

–এক মৃ’ত মানুষ কতবার ম’রে? আমি অনেক আগেই ম’রে গিয়েছি মেঘ। যে মানুষটা বহুদিন আগেই ম’রে গিয়েছে। তাকে আর নতুন করে মা’রা যায় না মেঘ। আমার জীবনে যে এক চিমটি অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা করবে। আমি তাকেই আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিব। সেটা বন্ধুত্ব হোক বা ভালোবাসা। তুই আমার মেজাজ টাই খারাপ করে দিয়েছিস। তোকে আমার সহ্য হচ্ছে না। আমি বাসায় চলে যাচ্ছি। কাজের বিষয় নিয়ে রাতে কথা হবে। কথা গুলো বলেই রিক্সা থেকে নেমে চলে গেল। মেঘ আহত দৃষ্টিতে স্মৃতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে…..

(আরাভকে খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবো। জানি নেশার বিষয়টি সবাই মেনে নিতে পারছেন না। আমি গল্পটা যেভাবে ভেবে রেখে ছিলাম। সেভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার ওপরে ভরসা রাখুন নিরাশ করবো না। যাদের একদমই ভালো লাগছে না। তারা গল্পটাকে ইগনোর করুন। সবাই রেসপন্স করবেন।)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here