হৃদয়ে শুধু আপনি❤️ #লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম) #পর্ব:০৭

0
330

#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৭

-“এসব তুমি কি বলছো বাবা?এত তাড়াতাড়ি বিয়ে..”

আরশির কথাটাকে তেমন গুরুত্ব দিলেন না জুনায়েদ। তিনি বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

-“ওনারা যেহেতু পছন্দ করেছে তার উপরে আমি আর কিছু বলতে পারবো না।তাছাড়া মেয়ের সুখটাও তো দেখতে হবে।ওখানে তুমি সুখে থাকবে।অভাব হবে না।”

আরশি নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে বললো,

-“বাবা আমি পড়াশোনা করতে চাই।এতদিনের কষ্টটা কি বিফলে যাবে?”

-“ওনারা বিয়ের পর তোমাকে না পড়িয়ে রাখবে না আরশি।ওনারা যথেষ্ট শিক্ষিত।অবশ্যই তোমাকে পড়াশোনার সুযোগ করে দিবে।”

-“কিন্তু বাবা..”

আরশিকে থামিয়ে দিলেন জুনায়েদ। হাত উঠিয়ে বললেন,

-“আর কোনো কিন্তু না।জিসান ফোন করেছিল। আজ যাওনি কিন্তু আগামীকাল অবশ্যই ওর সাথে দেখা করতে যাবে।দেখো,পছন্দ হবে।ছেলে খারাপ না।”

আরশি অসহায় গলায় বললো,

-“বাবা পড়াশোনাটা শেষ করার পর যদি ডিশিসন টা নিতে তবুও মানতাম।”

-“আমার আর কিছু বলার নাই।কালকে যাবে নয়ত ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ।”

বলেই জুনায়েদ সেখান থেকে চলে গেলেন।আরশি দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো,

-“আমি তো মুগ্ধ কে ভালোবেসে ফেলেছি।এখন আমি অন্য একজনকে বিয়ে করবো কিভাবে?বাবা তো ডিশিসন ফাইনাল করে দিয়েছে।জিসানকে না করলে সে যদি চাকরী নিয়ে টানাটানি করে? না না আর কিচ্ছু ভাবতে পারছি না।”

বলেই আরশি ডুকরে কেঁদে উঠলো।আপাতত তার কি করা উচিত সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।বেশ কিছুক্ষণ সেভাবেই কেটে যায়।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠায় আরশি মুখ তুললো।ওড়নায় মুখটা মুছে ফোনটা সামনে আনতেই মুগ্ধের নামটা ভেসে উঠলো। আরশি কল ধরে গলাটা ঠিক করে বললো,

-“হ্যালো?”

মুগ্ধ চুপ করে রইলো।আরশি আবারো বললো,

-“হ্যালো?মুগ্ধ?”

মুগ্ধ এবার ঠান্ডা গলায় বললো,

-“কাঁদছিলেন কেন আরশি?”

আরশি অবাক হলো।সে কাঁদছিলো এটা মুগ্ধ কিভাবে জানলো?তবুও সে হাসার চেষ্টা করে বললো,

-“কাঁদব কেন?কাঁদছি না তো।”

মুগ্ধ এবারো চুপ করে রইলো।আরশি শুধু মুগ্ধের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে।কিন্তু মুগ্ধ কিছু না বলায় এবার আরশি আবার বললো,

-“কি হলো?”

-” না কিছু না। ভাবছি..”

-“কি ভাবছেন?”

-“ভাবছি আরশি আমাকে কত্ত মিথ্যা কথা বলে।অথচ আমি আরশিকে কখনো মিথ্যা বলি না।”

আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ধরা পড়ে গেছে।সে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

-“কাঁদছি না তো।”

-“কাঁদছেন।আপনার গলা ভাঙা আর বারবার নাক টানছেন।”

-“বেশিক্ষণ শাওয়ার নেয়ায় ঠান্ডা লেগে গেলো।আর কিছু না তো।”

-“তাই না?”

-” হু।”

মুগ্ধ আবার চুপ মেরে গেলো।কথা ঘুরাতে আরশি বললো,

-“খেয়েছেন? না খেয়ে থাকবেন না কিন্তু।”

-“খেয়েছি।”

-“ঘুমাবেন কখন?”

বলতে বলতে আরশি ঘুমন্ত দিবার পাশে বসলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।মুগ্ধ ঘন ঘন শ্বাস ছেড়ে বললো,

-“আপনি এসে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যান।”

আরশি দুষ্টু হাসলো।এতক্ষণের মন খারাপিটা একটু কমলো মনে হয়। হাসি বজায় রেখেই বললো,

-“দিবাকেও তো ঘুম পাড়িয়ে দিতে হয় না। অন্তত দিবার থেকে তো বড় আপনি।”

মুগ্ধ বিছানায় থাকা পিলোতে উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো।তারপর মায়াভরা গলায় বললো,

-“আপনার প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে শান্তির ঘুম উবে গেছে যে।এখন এই শান্তির ঘুম ফেরত আনতে আপনাকেই প্রয়োজন আমার।”

আরশি মুগ্ধের কথাগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলো।মুখে ভালো লাগার হাসি ফুটে উঠেছে তার।মুগ্ধ আবার বললো,

-“একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

-“কি?”

-“হুমায়ুন আহমেদ কি বলে গেছেন জানেন?”

-“অনেককিছুই বলে গেছেন।কোনটির কথা বলছেন?”

-“উনি বলেছেন,” মেয়েদের তৃতীয় নয়ন থাকে। এই নয়নে সে প্রেমে পড়া বিষয়টি চট করে বুঝে ফেলে। ”
তাহলে আপনি কেন আমার প্রেমে পড়ার বিষয়টা বুঝে উঠতে পারেননি? কেন আমায় বোঝার চেষ্টা করেননি?”
আপনাকে পাওয়ার জন্য আমার মন যে কতটা আকুল হয়ে আছে আরশি।ভীষণরকম ভাবে আপনার মায়ায় পড়ে গেছি আমি।পাগল হয়ে গেছি। এই পাগলকে আপনি ছাড়া কেউ সামলাতে পারবে না আরশি।”

মুগ্ধের ঘুমঘুম গলায় এমন কথা শুনে আরশির সর্বাঙ্গে ভালোলাগার হাওয়া বয়ে গেলো।অজানা ভয়ে,ভালো লাগায়,অনুভূতিতে কেঁপে উঠলো বুক।কোনোমতে নিজেকে সামলে বললো,

-“সামলে নিবো।”

-“কবে আরশি?এখনই নিয়ে আসব?আচ্ছা আপনি নিচে আসুন।”

-“এই না না। একদম না। আপনি এখন ঘুমাবেন।”

মুগ্ধের ঘুম ঘুম গলা শুনে আরশির বেশ ভালো লাগছে।ছেলেটার মধ্যে এত মায়া কেন? আরশি কিছুতেই ওকে ফেরাতে পারেনি। মুগ্ধের একেকটা আবদার যকন আরশির মনে ভালো লাগার ঢেউ বইয়ে দেয়।মুগ্ধ আবারো ধীর গলায় বললো,

-“আপনি যাবেন না প্লিজ।ফোন কাটবেন না।নিঃশ্বাসের শব্দ শুনবো।”

বলতে বলতে আবার সব চুপচাপ। আরশি ডাকলো,

-“মুগ্ধ?”

ওপর পায় থেকে ঘনঘন নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে।আরশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সেটা শুনলো।তারপর আবার ডাকলো,

-“মুগ্ধ?ঘুমিয়ে গেলেন?”

এবারো সব চুপ। আরেকবার ডাকতেই মুগ্ধ ‘চ’ শব্দ করে বললো,

-“ঘুমাতে দিন না আরশি!স্বপ্নে তো আপনাকে জড়িয়ে ধরতে দিন।”

ব্যস!আবারো সব চুপচাপ।আরশি বুঝলো,মুগ্ধ কে আর জাগানো ঠিক হবে না। সে কলটা কেটে দিলো।তারপর টি-শার্ট আর প্লাজো নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।ঝর্ণার নিচে দাঁড়ায় আরশি।মনে পড়ে যায় আজ মায়ার বলা কথাগুলো।মায়া আরশির হাত ধরে বলেছিলো,

-“আমার ভাইকে কষ্ট দিও না আপু।সে তোমাকে অনেকবেশি ভালোবাসে। আমি তো মাত্র এইটে পড়ি।আমি হয়ত এসব বিষয়ে ছোট মানুষ।কিন্তু নিজের চোখের সামনে ভাইকে কষ্ট পেতে দেখেছি আমি।তুমি দয়া করে আর ওকে কষ্ট দিও না।মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে তোমাকে চেয়েছে ও।তোমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই যে কত রাত কাটিয়েছে!খাওয়া-দাওয়া ভুলে গেছে।তোমায় অবহেলায় কষ্ট পেয়ে তোমায় কিছু বলে না ঠিক তবে ঘরে ঠিকই ভাঙচুর করে।”

আরশি সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।মায়া বলেছিলো,

-“আমার এই পাগল ভাইয়াকে তুমিই একমাত্র সামাল দিতে পারবে।তোমার কথাই শুনবে ও।পারবে তো নতুন ভাবী?”

শেষের কথাগুলো লজ্জায় ফেলেছিলো আরশিকে।তবুও সে মাথা নেড়ে বলেছিলো,

-“পারবো!”

কথাগুলো ভেবে চোখ থেকে পানি বের হয়ে এলো আরশির।আসলেই সে পারবে তো মুগ্ধকে নিজের করে পেতে?এই পাগলটার পাগলী হতে পারবে তো সে?বাবার কথাটা ভেবেই আরশি ভয়ে বুক চেপে ধরলো।

এদিকে মুগ্ধের কান থেকেও ফোনটা আস্তে আস্তে পড়ে গেলো বিছানায়। উপর হয়ে যেই পিলোতে শুয়ে ছিলো সেটাকে ঘুমের মাঝেই আরেকটু চেপে ধরে বললো,

-“ভালোবাসি আরশি।”

_____________

রেস্টুরেন্টে বসে আছে আরশি।সামনেই জিসান।আবারো একই পরিস্থিতি।আরশি বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে।তা দেখে জিসনা বললো,

-“তোমার কি অস্বস্তি হচ্ছে?”

-“নাহ। আপনি কেন ডেকেছেন বলুন।”

-“দেখো আরশি,আমি তো আগেই বললাম যে আমি তোমাকে পছন্দ করি।বিয়ে করতে চাই। এখন তুমিও তোমার সম্পর্কে কিছু বলো!”

আরশি বিরক্তি নিয়ে বললো,

-“আমার সম্পর্কে না জেনেই পছন্দ করে ফেলেছেন?”

-“ভালোবাসতে কি ডিটেইলস জানতে হয়?”

আরশি ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো।মনে মনে ভাবলো,

-“এখনি আবার ভালোও বেসে ফেললো?”

কথাটা মনের মধ্যে রেখে সে মুখে বললো,

-“তাহলে আবার জানতে চান কেন?”

আরশির এমন জবাবে জিসান থতমত খেয়ে গেলো।তবুও সে লাজুক হেসে বললো,

-“কিছু কিছু তো জানতেই হয়। এটলিস্ট বউ হবা আমার।”

আরশি চোখমুখ কুঁচকে অন্যদিকে তাকায়।তারপর আবারো জিসানের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলে,

-“হইনি এখনো।”

-“হবে তো।আমার বাবা আমাকে যা চাই তাই ই দেন। আশা রাখছি এটাও পাবো।”

-“ওহ আচ্ছা।”

-“তোমার আব্বুর তো আমাকে বেশ পছন্দ। তোমার আমাকে কেমন লাগে?”

আরশি যেন জিসানের কথাটা শুনলোই না।তার মাথায় তখন অন্য চিন্তা। সে যে আজ ভার্সিটিতে না গিয়ে মুগ্ধ কে না বলেই দেখা করতে চলে এলো মুগ্ধ জানতে পারলে তো ক্যালেঙ্কারী হয়ে যাবে। আরশির ই বা কি দোষ?সে তো গতকাল সবটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু মুগ্ধই ঘুমিয়ে গেলো।তবে মুগ্ধের সাথে কথা বলে আরশির ভীষণ হালকা লাগছিলো।সে নিজের মনকে প্রস্তুত করেছে এটা বলে,

-“মুগ্ধ আমাকে এত ভালোবাসে আর ওকে পেতে আমি জিসানকে রিজেক্ট করতে পারব না?একটা চেষ্টা তো করায় যায়।কিন্তু এমনভাবে করতে হবে যেন বাবার সম্মান বা চাকরীতে কিছু না হয়।তাছাড়া মুগ্ধ তো আমার পাশে আছে।এটাই অনেক।”

আরশির ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে জিসান বললো,

-“আরশি?শুনছো?”

আরশির হুঁশ এলো।থতমত খেয়ে বললো,

-“কি?কি হয়েছে?”

আরশির বিহেভিয়ার জিসানের কেমন অদ্ভুত লাগে।সে এবার অফ মুডে গিয়ে বলে,

-“জিজ্ঞেস করলাম কিছু।”

-” ওহ আচ্ছা। কি জিজ্ঞেস করলেন?”(হালকা হেসে)

-“তোমার আমাকে কেমন লাগে সেটা।”

-“ওহ আচ্ছা,কেমন আর লাগবে?”

-“কেমন লাগবে মানে!বর হিসাবে।জীবনসঙ্গী হিসাবে!দেখো আরশি,আমাকে যদি তোমার ভালো না লাগে তাহলে বলতে পারো। আমার কোনো স্বভাব তোমার খারাপ লাগলে বলতে পারো। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে সেটা পাল্টে ফেলবো।”

আরশি শুধু মুখে হাসিটা বজায় রেখে শুনছে।বেচারীর মাথায় ঢুকলে তো কিছু বলবে!যেখানে জিসানের জন্য তার মনে কোনো ফিলিংস এই নেই সেখানে সে বলবে কিভাবে?
জিসান তো নাছোড়বান্দা!সে আজ শুনেই ছাড়বে যে আরশি কেন তাকে পছন্দ করছে না!আরশি পড়েছে দোটানায়।মুগ্ধ তাকে খুঁজতে খুঁজতে যদি চলে আসে তো?
মনের কথা মনেই রয়ে গেল।রেস্টুরেন্টের দরজা খুলে মুগ্ধ আর তার বন্ধুরা প্রবেশ করলো। দরজার দিকে মুখ করে বসায় আরশির স্পষ্ট চোখ পড়লো মুগ্ধের উপর।গলাটা কেমন যেন শুকিয়ে গেলো বেচারীর। মুগ্ধ কিছুক্ষণ খুঁজতেই আরশিকে পেয়ে গেলো।এগিয়ে আসতেই সেই ছেলেটাকে দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো তার। আরশি বারবার ইশারা করছে মুগ্ধ কে না আসতে।এদিকে মুগ্ধ আরশির দিকে তাকাচ্ছেই না।সে সেই ছেলেটার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে।আরশি ঢোক গিলে বিরবির করলো,

-“ভাগ জিসান ভাগ!”

চলবে….
(আমার ভুলক্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন।অযথা সেগুলো নিয়ে মজা না করে ক্ষমার চোখে দেখবেন আর ভালো কিছু লিখতে অনুপ্রাণিত করবেন।ভুলক্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী😌❤️‍🩹)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here