স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_২৭

0
564

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

“পুরুষ মানুষের ভালোবাসা ভয়ংকর আর নারীর ভয়ংকর ঘৃণা। পুরুষ মানুষ সহজে কাউকে ভালোবাসতে পারে না। আর নারী সহজে কাউকে ঘৃণা করতে পারে না। পুরুষ মানুষের প্রকৃত ভালোবাসা হচ্ছে, গুপ্ত খাজনার মতো। যে পায় সে ভাগ্যবতী। আর নারীর ঘৃণা হচ্ছে সামুদ্রিক ঝড়ের মতো সহজে আসে না। আর যখন আসে তখন কানয়াত লন্ড ভন্ড করে দেয়। ”

মুঠোফোনে টুং করে শব্দ বেজে ওঠায় স্মৃতি ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা পড়লো। সবকিছু বিরক্ত লাগছে তার। অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে দেখে, গভীর অযত্নে মুঠোফোনটা বিছানায় ছুরে ফেলে দিল। আজকাল পড়াশোনায় মনযোগ দিতে পারে না সে। একটা মানুষ তার জীবনের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। মানুষটা তার অভিমান কখনোই বুঝতে পারেনি৷ কথাটা ভেবে আরো গভীর ভাবে তীব্র হচ্ছে অভিমান। তাকে একটু ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো? বুকের মধ্যে হা’তু’ড়ি পি’টা করছে স্মৃতির। বাঁচতে ইচ্ছে করছে না তার। যখনই স্মৃতির মাথায় উল্টা পাল্টা চিন্তা এসে হানা দেয়। তখনই বাবা নামক সুপার ম্যান এসে বুকটা প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলে, স্মৃতি আবেগে বশিভূত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে চাইছিল। এমন সময় আবিদ রহমান আসে স্মৃতির কাছে, স্মৃতির মাথায় হাত রেখে বললেন,

–এই বয়সে এই সময়টা ভুল করার ভুল তোমার ও হবে। তবে ভুল কিছু করে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাকে একবার বলে নিও। তোমাকে খাইয়ে পড়িয়ে আমি বড় করেছি সমাজ না। খারাপ সময়ের পরে ভালো সময় অবশ্যই আসবে। তবে এমন কিছু করো না যাতে আমার ও কিছু হয়ে যায়। আমার মায়ের পরে তুমি আমার মা, তুমি আমার মেয়ে, আমাকে একটা করে দিও না আম্মু। বাবার এক কথায় স্মৃতির মন মস্তিষ্ক শীতল হয়ে গেল। অনুভূতিরা জানান দিচ্ছে তারা কাজ করছে। স্মৃতি বাবার আহত মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করে মনের গহীনে সাহস পেল। সে বাবাকে ভরসা দিয়ে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসলো।

পরের দিন বিকেল বেলা আরাভ ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। চারটা ব্যাগ একটা একটা করে গাড়িতে তুলছে। স্মৃতির ছাদের রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে। বুকটা হাহাকারে ভরে গিয়েছে। তবুও অনুভূতিরা কাজ করছে না। হৃদয়ের গভীর থেকে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু ছুটে মানুষটার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে না। অন্য সময় হলে স্মৃতি ছুটে চলে যেত। মানুষ তাকে গভীর ভাবে আহত করেছে। তাই হয়তো মানুষটার প্রতি অনুভূতি কাজ করছে না। স্মৃতির আঁখি জোড়া বলে দিচ্ছে কতটা অভিমান জমে আছে তার মনে আরাভের জন্য। আঁখি জোড়া ভিজে আসতে চাইলে স্মৃতি আঁখি জোড়াকে দমিয়ে দিল। মুখশ্রী ঘুরিয়ে কক্ষের দিকে যাবার জন্য অগ্রসর হলো তখনই স্রুতি আসে স্মৃতির সামনে, স্রুতিকে দেখে স্মৃতি মুখশ্রী গম্ভীর করে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। তখনই স্মৃতির হাত ধরে নরম কণ্ঠে বলে উঠলো,

–আমার ওপরে রাগ করে আছিস? স্মৃতি হাতটা আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

–আমার রাগ এতটা সস্তা নয়। যার তার ওপরে দেখাবো। আমি মানুষটা যেমন দামি। তাই আমার রাগ গুলো ও দামি মানুষের ওপরে দেখাবো। যাদের আমি ভালোবাসি। যারা আমার কাছের লোক। আমার আপনজন আমি তাদের ওপরে রাগ করি। বাহিরের মানুষের জন্য রাগ করে, আমার রাগের অপচয় করার কোনো মানেই হয় না। স্রুতি আহত দৃষ্টিতে স্মৃতির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বড্ড অভিমানী। কবে যে সবকিছুর অবসান ঘটবে। স্রুতি মলিন কণ্ঠে স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তুই চাইলে আরাভে আটাকতে পারিস। তুই চোখের সামনে যা কিছু দেখছিস। সবকিছু সত্যি না-ও হতে পারে। স্রুতির কথা শুনে স্মৃতি বজ্রকণ্ঠে বলে উঠলো,

–আমি জানি আমি মানুষটাকে ভালোবাসি। ভালোবাসার আগে আমার কাছে আত্মসন্মানটা আগে, আত্মসন্মানের ঊর্ধ্বে কোনো কিছু হতে পারে না। আমাকে বিনাদোষে যে মানুষটা প্রহার করেছে। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ জেনে ও আমাকে একটা বার সরি বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। মানুষ হারিয়ে গেলেই কি আর ম’রে গেলেই কি তাতে আমার কোনো যায় আসে না। কথা গুলো বলেই স্মৃতি দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল। ভালোবাসা মানুষ যতই খারাপ হোক না কেনো নিজের মুখে ভালোবাসার মানুষের মৃত্যু কামনা করার মতো ভয়ংকর অনুভূতি দু’টো নেই। আর একটু থাকলে বোনের সামনে নিজেকে দমিয়ে রাখা কষ্টকর ছিল। সে নিজের দুর্বলতা কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের দুর্বলতার কথা জেনে গেলে, সময় বুঝে আঘাত করতে দু’বার ভাববে না। সে যতই কাছের লোক হোক না কেনো। আঘাত কাছের মানুষ গুলোই করে দূরের মানুষ নয়। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে স্মৃতি নিজের কক্ষে এলো। দু’আঁখি জোড়া অশ্রুকণায় ভিজে গিয়েছে। ভিষণ কষ্ট হচ্ছে স্মৃতির সহ্য করতে পারছে না। সে সহ্য করতে না পেরে বেলকনিতে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে বিচার দিতে লাগলো,

–সব সময় কেনো আমার সাথেই এমন হয় আল্লাহ। আমি বড় সস্তা মানুষ বুঝছো। আমাকে যখন তখন ছেড়ে চলে যাওয়া যায়। আমাকে ভালোবাসা যায় না। তবে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। জন্মের পরে বাব-মায়ের ভালোবাসা ছাড়া কারো ভালোবাসা পায়নি। মেয়ে হয়েছি বলে বড় আব্বুরা দূরে সরিয়ে দিয়েছে। দাদা দাদি একটা বারের জন্য দেখতে আসেনি। আমার কপালে কি ভালোবাসা বলতে কি নেই আল্লাহ। শুনেছি দুঃখের পরে সুখ আসে। আমার সুখ কবে আসবে আল্লাহ? আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। আমার আপন মানুষরাই আমাকে শিখিয়েছে। মানুষ যতটা আপন দেখায়। ততটা আপন তারা নয়। এবার নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করবো। সবাই আমাকে দেখে আফসোস করবে। কথা গুলো বলতে বলতে অশ্রুকণা গুলো শুকিয়ে গিয়েছে। মনের কথা গুলো কাউকে অনন্ত বলতে পেরেছে ভেবেই ভেতটা শান্তি লাগছে। এক বুক ভরা হাহাকার নিয়ে নিজের কক্ষে আসলো। সন্ধ্যার আজান কর্ণকুহরে আসতেই নামাজ পড়ে, পড়তে বসলো। বাবা-মায়ের মনে কষ্ট দেওয়া যাবে না। সে যতই কষ্টে থাকুক না কোনো বাবা-মা তার একটা ভালো রেজাল্টের আশায় প্রহর গুনছে। রেজাল্ট খারাপ হলে সমাজের মানুষ তাদের কটু কথা শোনাবে। এটা সে সহ্য করতে পারবে না। পড়ার টেবিলে বসে ও পড়াশোনায় মনযোগ প্রদান করতে পারছে না। দুনিয়ায় সব চিন্তা স্মৃতিকে গ্রাস করে ফেলছে। সে দু’হাতে নিজের কেশগুলো খামচে ধরে আছে। উঠে গিয়ে ড্রয়িং রুমে গেল। স্মৃতির মা সবার জন্য নাশতা তৈরি করে নিয়ে আসছে। স্মৃতিকে দেখে বাবার পাশে বসতে বলল। স্মৃতি নিঃশব্দে বাবার পাশে গিয়ে বসলো সবকিছু তার বিষাদ লাগছে।

এয়ারপোর্টে আরাভ বসে আছে। একটু পরে মারিশা আর ফাহিম আসলো। মরিশা আরাভের পাশে বসে বলল,

–এখানো সময় আছে। তুমি চাইলে তোমার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে পারো। দূরে সরে গেলেই যে ভালোবাসা বাড়বে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরঞ্চ ভালোবাসার কাছে থেকে ভালোবেসে বুঝিয়ে সবকিছু আদায় করে নিতে হয়। আমি তোমাকে আবারও বলছি তুমি ভুল করছো। তোমাকে ভেতর থেকে আফসোস করতে হবে। মারিশার কথায় আরাভ রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তোমার জ্ঞান নেওয়ার জন্য আমি এখানে বসে আছি। তোমাকে জ্ঞান দেওয়ার জন্য আমি তোমাকে ডেকেছি। আরাভের কারো জ্ঞান নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যে নিজের বোনকে বাঁচাতে পারেনি। সে কিভাবে অন্য একটা মেয়েকে বাঁচাবে? আমি চাই না আমার জন্য কোনো মেয়ে বিপদে পরুক। আমার অভিশপ্ত জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চাইনা। কথা গুলো বলেই আরাভ ব্যাগ নিয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেল। মারিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, একদিন গভীর ভাবে প্রস্তাবে আরাভ। মারিশার স্বামী মারিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here