#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৯
পুরো ভার্সিটি খুঁজেও মুগ্ধ কে পায়নি আরশি। কে জানে কই গিয়ে বসে আছে রাগ করে!নাকি বাসায়ই চলে গেলো!আরশির নিজের উপরই রাগ হলো।কি দরকার ছিলো ওকে চড় মারার?তাছাড়া ও কি বাচ্চা নাকি যে ওকে মারতে হবে!নাহ!বড় অন্যায় হয়ে গেছে।সরি বলতে হবে!কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আরশি বাসায় এসে পৌঁছালো।আজ মায়ার শেষ পরীক্ষা!তাই আরশিকে আজ পড়াতে যেতে হবে না।মায়া নাকি আজ রেস্টে থাকবে।সে আরশিকে আগেই না করে দিয়েছে।তাই আরশি সোজা চলে এলো বাসায়।দরজা খুলে প্রবেশ করতেই চক্ষু চড়কগাছ!মুগ্ধের পরিবার মানে জুয়েল সাহেব,শর্মিলা আর মায়া বসে আছে।শুধুমাত্র মুগ্ধ নেই।তাদের সামনে বসে আছে জুনায়েদ। আরশিকে ভিতরে ঢুকতে দেখে মায়া বললো,
-“এইত ভাবী..মানে আপু চলে এসেছে।”
আরশি মায়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো।সে মূলত বুঝতে পারছে না যে এখানে কি হচ্ছে!জুয়েল সাহেব আরশির দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“মেয়ে তো চলে এসেছে।এখন ওর মতামত নিয়ে নিন জুনায়েদ ভাই।”
জুনায়েদ মেয়েকে ঘরে যেতে ইশারা করলেন। আরশি ধীর পায়ে ঘরে চলে গেলো।সে এখনো বুঝতে পারছে না যে এখানে কিসের মতামত নিয়ে কথা হচ্ছে।অনেক ভাবাভাবির পর সে দরজার সামনে এসে এমনভাবে দাঁড়ালো যেন তাকে দেখা না যায়। অপর রুম থেকে জুনায়েদ বলছেন,
-“না ভাইসাহেব,ছেলের বয়স তো কম হয়ে যায়।”
শর্মিলার কন্ঠ শোনা গেলো পরমূহুর্তেই,
-“ভালোবাসা কি বয়স দেখে হয় ভাইসাহেব?আমার ছেলে আরশিকে ভালোবাসে।”
আরশির বুক ধক করে উঠলো।এনারা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেননি তো?জুনায়েদ আবার বললেন,
-“সমাজ কি বলবে?লোকেরা না না কথা শোনাবে। বলবে ছেলের কপাল খারাপ বলে এমন বেশি বয়সী বউ পেয়েছে।তারা কি এই ভালোবাসাকে দেখবে?জেনেশুনে মেয়েকে এসবে ফেলে দিবো?”
জুয়েল সাহেব এবার হেসে বললেন,
-“সমাজ কি বলবে তা নিয়ে যদি আমরা বসে থাকি তাহলে তো হচ্ছে না তাই না। আর আজকাল কি এমন বিয়ে হয় না?আমরা শিক্ষিত পরিবার,আপনি শিক্ষিত আমি শিক্ষিত,আমাদের মাঝে কি সমাজের কুসংস্কার নিয়ে চিন্তা করাটা মানায়?”
জুনায়েদ কিছুক্ষণ ভাবলেন।তারপর বললেন,
-“হ্যা কথাটা ঠিক তবে ছেলেরও তো কোনো চাকরীবাকরি নেই।”
-“আপাতত আমার যা আছে আর আমার বাবা যা রেখে গেছেন তা দিয়ে আমার ছেলে সারাজীবন চলতে পারবে।কিন্তু আমার ছেলেকে তো আর বসিয়ে রাখবো না। পড়াশোনা শেষ করার পর তার মামার ব্যবসায় জয়েন করবে।”
জুনায়েদ এবার আর কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। কারণ ছেলে তো সবদিক থেকেই পারফেক্ট।তার শুধু চিন্তা হচ্ছে তার বসকে দেয়া কথাটা নিয়ে।জুনায়েদকে ভাবতে দেখে শর্মিলা বললেন,
-“ভাই সাহেব, আমার ছেলেটা আরশিকে ছাড়া মরেই যাবে।আরশির জন্য ও সবকিছু করতে পারে।পাগল হয়ে যাবে আমার ছেলেটা। ওকে বাঁচানোর জন্য হলেও আরশিকে আমরা আমাদের মেয়ে হিসাবে নিয়ে যেতে চাই।”
জুনায়েদ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“আমার মেয়ের মতামত নিয়ে আমি আপনাদের জানাচ্ছি।”
আরো টুকটাক কিছু কথা বলে ওনারা চলে গেলেন। আরশি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে,
-“আসলেই কি আমি রাজি হলে বাবা রাজি হয়ে যাবে?নাকি ওনাদেরকে কোনোমতে বিদায় করলেন?”
আরশির ভাবনার মাঝেই ঘরে ঢুকলেন জুনায়েদ।আরশি তাড়াহুড়ো করে চোখটা মুছে নিলো।জুনায়েদ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-“ওহ,এখানেই আছো দেখছি।”
-“জ্বী বাবা।”
-“কথা শুনছিলে আমাদের?”
আরশি চুপ করে রইলো।জুনায়েদ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললেন,
-“তুমি কি মুগ্ধ কে পছন্দ করো আরশি?”
আরশি অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালো। জুনায়েদের চেহারায় কোনো প্রকার অনুভূতির সৃষ্টি হলো না।তিনি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আরশি একবার উপরনিচ মাথা নাড়ালো।সাথে সাথে আরশির গালে চড় পড়লো!তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া প্রথম চড়।প্রথম আঘাত!আরশি গালে হাত দিয়ে তাকায় তার বাবার দিকে।জুনায়েদ রেগে বললেন,
-“আজ তুমি বাধ্য করলে তোমার গায়ে হাত তুলতে।”
আরশি মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে কাঁদছে।জুনায়েদ আবার বললেন,
-“জিসানের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।ওনারা তোমাকে পছন্দ করেছে।জিসান তোমার চেয়ে বয়সে ৩-৪ বছরের বড়।আশা রাখছি ওর কথাই এখন তোমার মাথায় থাকবে।”
আরশি অবাক হলো!জিসানের ওকে পছন্দ হয়ে গেছে?আরশি যেমন বিহেভিয়ার করেছিল তার পর তো আরশিকে রিজেক্ট করে দেয়ার কথা।আরশি অবাক হয়ে বললো,
-“বাবা..”
আরশিকে আর বলতে দিলেন না জুনায়েদ। হাত উঁচিয়ে বললেন,
-“আমার কথাই শেষ কথা। জেনেশুনে তোমাকে আমি একটা বাচ্চা ছেলের হাতে তুলে দিতে পারি না।যে কিনা মারামারি করে,বাইক নিয়ে ঘুরে-বেড়ায়।চাকরী নেই।নিতান্তই কম বয়সী।তোমার থেকে চার বছরের ছোট ও।”
আরশি আর চুপ রইলো না।কান্নারত গলায় বললো,
-“কার জন্য মারামারি করে সেটা শুনবে না?”
-“মানে?”
-“আমাকে আজ অবধি যারা যারা টিজ করেছে,অপমান করেছে তাদের মার খেতে হয়েছে।আর সেটা করেছে মুগ্ধ। আমার আড়ালেই করেছে। এখন সেটা প্রকাশ পেয়েছে।আমার জন্য মারপিট করেছে ও।”
-“আমি তোমাকে এমন একজনের হাতে তুলে দিচ্ছি যে তোমাকে এ দেশেই রাখবে না। তোমাকে নিয়ে অন্য দেশে চলে যাবে।ভালো রাখবে।তোমাকে না কোনো টিজ সহ্য করতে হবে আর না কোনো মারপিট দেখতে হবে।”
-“তুমি আমাকে তোমার থেকে দূরে সরাতে চাইছো বাবা?”(কাঁদো কাঁদো গলায়)
-“না,আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাইছি।”
আরশি মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“আমি মুগ্ধের সাথেই ভালো থাকবো বাবা।”
-“তুমি পৃথিবীটাকে এখনো ভালো করে জানোনি আরশি। লোকে নানান কথা বলবে।জিসানই তোমার জন্য ভালো।তোমাকে ভালো রাখবে।পরশু তোমার বিয়ে।যাও এখন প্রস্তুতি নাও।”
-” কিহ!পরশু!”
-“হ্যা। আমার কথাই ফাইনাল। তুমি যদি আমাকে সত্যি কোনোদিন ভালোবেসে থাকো আর আমার ভালোবাসাটার দাম থাকে তোমার কাছে তাহলে আমার কথাটা মানবে।”
বলেই জুনায়েদ দরজা লাগিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। আরশি কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো।মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বিরবির করলো,
-“বাবা যদি আমাকে জিসানের সাথে বিয়ে না দেয় তাহলে বাবার বস বাবার চাকরী নিয়ে নিবে।বাবাকে অপমান করবে।আমিও যে মুগ্ধকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারব না।এখন কি করবো আমি!”
আরশির কান্নার মাঝেই রুমে নক করলো কেউ। আরশি মুখ মুছে দরজার সামনে যেতেই জিসানকে দেখতে পেলো।জিসান হাসিমুখে বললো,
-“হেই আরশি?”
আরশির ভ্রু কুঁচকে গেলো জিসানকে এখানে দেখে।ঠান্ডা গলায় বললো,
-“আপনি এখানে?”
জিসান আরশির রুমে উঁকি দিয়ে বললো,
-“ঢুকতে দিবে না?”
আরশি দরজার আরেকপাশে হাত দিয়ে আটকে দিলো যাওয়ার রাস্তা। তারপর নিম্ন স্বরে বললো,
-“আপনি এখানে কি করছেন?”
-“বাহ রে!হবু বউকে দেখতে আসতে পারব না?”
আরশি শক্ত গলায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে জুনায়েদ বললেন,
-“এসব কি আরশি!ছেলেটাকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছো।রুমে নিয়ে যাও।কথা বলো।”
আরশি আটকে রাখা হাতটা সরিয়ে নিলো।জুনায়েদ হাতে থাকা ট্রে টা নিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন।টেবিল টায় রেখে বললেন,
-“এসো জিসান।”
-“জ্বী আংকেল।”
বলেই জিসান আরশির দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত হাসি দিলো।তারপর রুমে ঢুকে গেলো।আরশিও ধীর পায়ে রুমে ঢুকলো।জুনায়েদ বললেন,
-“তোমরা কথা বলো।আমি আরো কিছুর ব্যবস্থা করি।”
বলেই তিনি প্রস্থান করলেন।জিসান আরশির রুমে থাকা সোফাটায় বসে পড়লো।তারপর বললো,
-“বসো আরশি।”
আরশি বিনাবাক্যে বসে পড়লো সামনে।জিসান চারিদিকে পরখ করে বললো,
-“আমার রুমটা তোমার ২ টা রুমের সমান হবে।”
আরশি জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে তাকায়।জিসান মুচকি হেসে বলে,
-“সমস্যা নেই চলবে।তবে তোমার ঘরটা খুব সুন্দর গোছানো।”
-“থ্যাংক ইউ।”
জিসান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।খানিক পরে বলতে লাগলো,
-“কাঁদছিলে নাকি আরশি?”
আরশি শ্বাস ছেড়ে বিরক্তি প্রকাশ করলো।জিসান আবার বললো,
-“আমার জন্যে নাকি? আই নো আই নো।”
-“এক্সকিউজ মি?আমি আপনার জন্য কেন কাঁদবো?”
(দাঁতে দাঁত চেপে)
-“আমার কারণে।বিকজ,আমার জন্যেই তো তুমি মুগ্ধের থেকে আলাদা হবে।”
আরশি এবার বিস্ময় নিয়ে জিসানের দিকে তাকায়।জিসান বাঁকা হেসে বলে,
-“মুগ্ধ যে তোমায় পছন্দ করে এটা আমি জানি আরশি। আর ভুল না করলে তুমিও ওকে পছন্দ করো।”
-“আপনি কি করে জানলেন?”
-“আজকে রেস্টুরেন্টে তোমাদের হাবভাব দেখলে যে কেউই বুঝে যেত।”
-“এতই যেহেতু বুঝলেন তাহলে বিয়েটা হতে দিচ্ছেন কেন?আমি মুগ্ধ কে ভালোবাসি।”
-“তুমি কাকে ভালোবাসো না বাসো সেটা আমার দেখার বিষয় না। আসল কথা হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি।তাই আর কে কি করলো সেটা আমার দেখার বিষয় না।তাই তোমাদের এসব বুঝতে পেরেই আমি বাবাকে পরশুই বিয়ে ঠিক করতে বলি।”
আরশি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
-“আপনাকে আমি ভালোবাসি না তবুও আমাকে বিয়ে করবেন?যদি বিয়ের দিন আমি পালিয়ে যাই?”
জিসান হো হো করে হেসে উঠলো।তারপর বললো,
-“হাহ। তুমি তোমার বাবার সম্মান নিয়ে একটু বেশিই ভাবো। আমার মনে হয় না তুমি বিয়ের দিন পালিয়ে তোমার বাবার সম্মানে দাগ লাগাবে। আর আমি এটাও জানি যে তুমি তোমার বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েতে না ও করতে পারবে না। এতে তোমার বাবার চাকরীতে টান পড়বে।”
আরশি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।সে ভাবতেই পারেনি যে জিসানের মধ্যে এত প্যাঁচ!জিসান জোরে শ্বাস নিয়ে সোফার দুই পাশে হাত এলিয়ে দিয়ে বললো,
-“তোমার ভাগ্যে আমিই আছি আরশি। নিয়তিকে মেনে নাও। ভুলে যাও এসব মুগ্ধ ফুগ্ধকে।বাচ্চা ছেলে!”
আরশি ভ্রু কুঁচকে অন্যপাশে তাকায়। এই মুহুর্তে যদি তার সামনে সবচেয়ে বিরক্তিকর কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটা জিসান।জিসান নাক ছিটকে বললো,
-“এসব বাচ্চা ছেলেদের কাজই এটা।তাছাড়া ও কি তোমায় আগলাতে পারবে নাকি আরশি? তোমায় না পেলে বড়জোর জিদ দেখাবে, মরেই যাবে..”
আর কিছু বলার আগেই আরশি উঠে দাড়ালো।হাত দিয়ে দরজার দিকে ইশারা করে চেঁচিয়ে বললো,
-“আপনার মুখ থেকে আমি কিছু শুনতে চাই না। গেট লস্ট!”
-“আরশি…”
-“বের হন বলছি। আমার সামনে থেকে সরে যান। নয়ত আমি চড়িয়ে বের করতে বাধ্য হবো।”
জিসান উঠে দাঁড়িয়ে আরশির হাত চেপে ধরে ঘুরিয়ে নিলো।আরশি হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বললো,
-“ব্যাথা পাচ্ছি আমি জিসান।”
-“নেক্সট টাইম চড়ানোর কথা বলবে না। আমি চাইলে তোমার মত মেয়েকে রা*স্তা*য় নামাতে পারি।কিন্তু ভালোবাসি বলে পারছি না।নয়ত আমাকে এসব বলা বের করে দিতাম।”
আরশি জোর করে হাতটা ছাড়িয়ে বললো,
-“কথাটার জবাব তোলা রইলো।একদিন মুখের সামনে ছুঁড়ে মারব।সেদিন আপনিও বাকরুদ্ধ হয়ে যাবেন।দেখে নিয়েন!”
-“দেখা যাক।”(হেসে)
বলেই জিসান ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।আরশি রাগে গজগজ করতে করতে নিজের ওড়নাটা খুলে বেডে ছুঁড়ে মেরে বললো,
-“এই জিসানকে তো আমি পৃথিবী থেকেই উধাও করে দিবো।”
চলবে…
(আমার ভুলক্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন।অযথা সেগুলো নিয়ে মজা না করে ক্ষমার চোখে দেখবেন আর ভালো কিছু লিখতে অনুপ্রাণিত করবেন।ভুলক্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী😌❤️🩹)
(ধৈর্য্য নিয়ে পড়ুন।নিরাশ করব না☺️)