আমার_ভীনদেশী_এক_তারা #পর্ব২৩

0
165

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৩
#Raiha_Zubair_Ripte

বাগানে দাঁড়িয়ে আছে হেনা আর আরহাম। কারো মুখে কোনো কথা নেই। হেনার দৃষ্টি মাটিতে আর আরহামের দৃষ্টি আকাশ পানে। বেশখানিকটা নিরবতা থেকে হুট করে আরহাম হেসে উঠে। আরহামের হাসি দেখে আরহামের পানে চায় হেনা।

” কংগ্রাচুলেশনস বেয়াইন সাহেবা।

” ধন্যবাদ। আসবেন কিন্তু আমার বিয়েতে।

” চিন্তা করবেন না সময় পেলে অবশ্যই যাবো।

” বেশ।

” আপনার প্রতি আমার অনুভূতি কিন্তু মিথ্যা ছিলো না হেনা।

” কিছু করার নেই আরহাম। সব অনুভূতির মিলন হয় না।

” আমার সাথে এমনটা না করলেও পারতেন।

” আমি কিছুই করি নি। আগে থেকেই আমার বিয়ে ঠিক করা ছিলো আরহাম।

” ভেঙে দিন বিয়ে টা।

” সম্ভব নয়।

” কেনো?

” বাবার উপর দিয়ে কথা বলার সাহস নেই আমার।

” তাহলে আমায় বলতে দিন।

” বারন তো করি নি আমি।

” বলতেও তো দিচ্ছেন না।

” সময়ের ব্যাবধানে হয়তো ভুলে যাবেন আমায়।

” মনে হয় পারবো না ভুলতে। এই অল্প কয়েকদিনে খুব করে বুঝে গিয়েছি আপনাতে বাজে ভাবে আসক্ত আমি হেনা।

” যেখানে মানুষ বছরের পর বছর ভালোবেসেও নিজের অনুভূতি বুঝতে পারে না সেখানে এই কয়েক সপ্তাহ কিভাবে বুঝলেন আপনি ভালোবাসেন আমায়।

” ভালোবাসি হেনা আপনায়। প্রথম দিকে বেয়াইন হিসেবে ফ্ল্যার্ট করলেও মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি আমি আপনায় । ভেঙে দিন না বিয়ে টা ফিরে আসুন আমার কাছে

” সেটা আর হবার নয়।

” কেনো হবার নয়। আপনার যার সাথে বিয়ে ঠিক তাকে কি আপনি ভালোবাসেন হেনা?

কথাটায় কিছু একটা ছিলো যা হেনাকে কিছু ফিল করালো। আরহামের গলা কাঁপছে। বিয়ে তো বাবা ঠিক করেছে ছেলেকে সেভাবে চিনেও না।

” ভালোবাসি কি না জানি না আরহাম তবে বিয়ের পর নিশ্চয়ই ভালোবাসবো।

” আর আমি?আপনি তো আমার সাথে চিট করেছেন।

” আসি ভালো থাকবেন।

কথাটা বলে হেনা চলে আসে। সেও যে বাজে ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে আরহামের প্রতি বলবে কিভাবে। তাকে ছ্যাকা খাওয়াতে গিয়ে নিজেই ভালোবেসে ফেলছে। এক মূহুর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলো হেনা তার যে বিয়ে ঠিক করা। বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে যার সাথে কখনো দুদণ্ড বসে কথা বলা হয় নি।

————————

শান এনার কোমর জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে।

” আপনি কি যাবেন মাসখানেকের মধ্যে বাংলাদেশে?

শানের তো সামনে মাসে আরেক ডোজ আছে। যাবে কি করে।

” তুমি যেয়ো? আমার তো অনেক কাজ। আমি না হয় বিয়ের তিন দিন আগে চলে যাবো।

” এহ্ তাহলে আমি ও তখনই যাবো।

” কেনো?তোমার বোনের বিয়ে তুমি আরো আগে যাবে।

” না আপনার সাথেই যাবো।

” আচ্ছা রাগ কমেছে?

” কিসের রাগ?

” এই যে রাতে আদর করি নি দেখে রাগে ফায়ার হয়ে ছিলে।

” মোটেও না।

” আমার মুড হয়েছে রোমান্স করার।

” কখনোই না।

” দেখবে?

” না।

” না কেনো আমি করবো।

” জোর করবেন?

” মোটেও না জাস্ট কোলে তুলে নিয়ে যাবো আর,,

” আর কি?

” আর কিছুই না শুধু ভালোবাসবো।

কথাটা বলে শান এনাকে বিছানায় নিয়ে আসে। বাহিরে মৃদু বাতাস বইছে সেই সাথে তাদের মনের মিলন। শানের ভালোবাসা গভীর হতে আরো গভীর হয়। কেঁপে উঠে এনা।

——————

এনা শান দাঁড়িয়ে আছে এয়ারপোর্টে আজ তার বাবা মা বোন চলে যাবে। মন খারাপ করে জড়িয়ে ধরে আছে মা’কে। খুব ইচ্ছে করছে বাবা মা থেকে যাক এখানে। শানের মা নিজের থেকে মেয়েকে ছাড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে,,

” নিজের খেয়াল রাখবে। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবে। শশুর শাশুড়ীর কথা শুনবে। এনা মাথা নাড়ায়। সে সব শুনবে।
শানের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” শান মেয়েটার খেয়াল রেখো। আর তাড়াতাড়ি করে চলে এসো কিন্তু।

” চিন্তা করবেন না এনার খেয়াল রাখবো। আর সময় মতো পৌঁছে যাবো বাংলাদেশ।

হেনা বোন কে জড়িয়ে ধরে। এনামুল ভাই,ও ভাইয়ের ছেলেদের থেকে বিদায় নেয়। মেয়েকে জড়িয়ে কিছুটা সময় নিয়ে। এরপর হেনা আর স্ত্রী কে নিয়ে ঢুকতে নিবে এয়ারপোর্টের ভেতরে আর তখনই পেছন থেকে আরহাম ডেকে উঠে,,

” বেয়াইন সাহেবা। আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাবেন।

হেনা সহ সবাই পেছন ঘুরে। আরহামের এসেছে লোকটা কে দেখে বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হলো হেনার। অজান্তে গড়িয়ে পড়লো দু ফোটা অশ্রু। আরাভ হেনার সামনে দাঁড়ায়।

” চলেই যাচ্ছেন তাহলে হেনা।

হেনা মুচকি হেসে।

” হুমম।

” যাচ্ছেন ভালো কথা। আবার ফিরবেন এ দেশে আমার হাত ধরে কথাটা মিলিয়ে নিয়েন।

হেনা বুঝলো না আরহামের কথার মানে।

” মানে?

” মানে কিছু না। বলছি আজ যাচ্ছেন বাবা মায়ের হাত ধরে আবার ফিরবেন আমার হাত ধরে। বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিন। দেখা হচ্ছে বিডিতে। বধূ সেজে অপেক্ষা করবেন কেমন। ভালো থাকবেন যান সময় হয়ে গেছে।

আরহাম একটা ছোট্ট কাগজ হেনার হাতে ধরিয়ে দেয়। হেনা জিজ্ঞেস করে,,

” কিসের কাগজ?

” বিডিতে গিয়ে দেখবেন। আপনার জন্য কিছু অপেক্ষা করছে। আপনি চাইতেও আবার আমার সাথে বাঁধা পড়বেন মিলিয়ে নিয়েন। এখন যান কয়েক দিন রিলাক্স করুন। হেনা কিছুই বুঝতে ছে না। এদিকে সময় ও হয়ে গেছে আরহামের কথাকে গুরত্ব না দিয়ে তার বাবা মায়ের সাথে চলে যায় হেনা।

এনা শানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here