#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৩৩(অবশিষ্টাংশ)
#হুমাইরা_হাসান
তাপমাত্রার ওঠানামায় ত্রস্ত পরিবেশটা গরম ছেড়ে আবারও শৈথিল্যে মেতেছে। কাঁচের জানালায় আবৃত ঘরটিতে এসির হীম হাওয়া শীতলতাকে তড়তড় করে বাড়িয়ে দিয়েছে। হাত তুলে ছোট রিমোটটা নিয়ে এসির বাড়তি শীতলতা কমিয়ে দিলো মেহরাজ। চাদরটা এক হাতে তুলে ভালো করে সারা শরীরে পেঁচিয়ে দিলো। শরীরের উপরে নরম চাদরের অস্তিত্ব অনুভব করলেই নড়েচড়ে উঠলো মোহর। জড়োসড়ো হয়ে উষ্ণ জায়গাটার ওমে মিশে যেতে চাইলো যেন।
মেহরাজ এক হাতে আগলে ধরলো ওকে খুব যতনে, আদরে। আলতো স্পর্শে নরম ঝরঝরে চুলগুলো ছুঁয়ে দিলো। মাথাটা কিঞ্চিৎ নামিয়ে এনে গভীর কেশের মধ্যিখানে মুখ ডুবিয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে অধরজোড়া চেপে রাখলো।
কাল রাতেই কিরকম কাঁদছিলো মেয়েটা, মেহরাজের একটু সাহারা পেয়ে বুকের ভেতর ঝাপটে ধরেছিলো আদুরে ছানার মতো। কে বলবে এই মেয়েটাই উপরে উপরে সবাইকে এতো ম্যাচিউরিটি আর শক্ত খোলস টা দেখিয়ে বেড়ায়!
অথচ মেহরাজের একটু খানি আদুরে আশকারা পেয়ে সারাটা রাত বুকটা আঁকড়ে ধরে রেখেছিলো। বুকের মাঝে মুখ ডুবিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো। বিরতিহীন কান্নায় ভিজিয়ে দিয়েছে পরনের শার্টটা। মেহরাজ খুব আলতো ভাবে আরেকটু জড়িয়ে নিলো, মোহরের পাতলা শরীর টা বুকের ভেতর লেপ্টে নিলো। বুক ভরে অস্থির করা দাবদাহ ক্রমেই শীতল হতে শীতলতর হতে থাকলো।
উষ্ণ ওমে ঠিক কতটা সময় ধরে প্রশস্থ বুকের আলিঙ্গনে আবদ্ধ ছিলো তার নূন্যতম ধারণাও হয়তো নেই মোহরের, প্রগাঢ় নির্দ্বিধায় দেদারসে মিশে রইলো মেহরাজের বুকটার সাথে। ঘুমের ঘোরে নাক মুখ ঘষে দিলো মেহরাজের বুকের সাথে।
প্রচণ্ড অস্থিরতায় চোখ খিঁচিয়ে নিলো মেহরাজ, ওষ্ঠভাঁজের ফাঁক দিয়ে ঝড়ের বেগে বাতাস টেনে নিলো। মোহর ঘাড়টা বাকিয়ে কপাল টা মেহরাজের থুতনিতে ঠেকিয়ে রেখেছে, প্রতি মুহূর্তে আঁছড়ে পড়া মোহরের দগ্ধ প্রশ্বাস মেহরাজের বুক,গলায় জ্বলন ধরিয়ে দিচ্ছে। অনুভূতি, ভালোবাসা, প্রবল উন্মাদনার জ্বলন। যার তোপে নিজেকে সামলাতে ছারখার হচ্ছে প্রেমিকের অস্থির মন।
যা ক্রমেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে ফুলে রাখা চোখ আর মেদুর গালটাতে। ফুলিয়ে রাখা ঠোঁটের ভাঁজে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ডুবিয়ে দেওয়ার প্রবল খায়েশ সারা শরীর অবশ করে দিচ্ছে যেনো। ফোঁস করে নিঃশ্বাস টেনে হজম করে নিলো অদম্য অনুভুতি। অবাধ্য মনটাকে কড়াভাবে শাসিয়ে দিলো এই বলে
” মোটেও নাহ, মোহমায়া আমার বুকের মাঝে যত্নে লালন করা প্রস্ফুটিত ফুল, যেই ফুল যতক্ষণ না স্বেচ্ছায় আমার বদনে ঝড়ে পড়ে, ততক্ষণ আমি তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে পারিনা। ফুলটা যে আমার বড়ো শখের, বড়ো আদরের ”
নিজেকে বহু কষ্টে সংযত করলো মেহরাজ, উত্তাপময় নিঃশ্বাস ছাড়লো রয়েসয়ে।
বাইরে মানুষের কিঞ্চিৎ শোরগোল। বাড়িভর্তি মেহমানের আনাগোনা শুরু হয়েছে তার রেশ ধরেই এতো গুলো স্বরের প্রতিধ্বনি। মেহরাজ আলতো ভাবে মোহরকে বুক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কনুইয়ে ভর করে আধশোয়া হয়ে উঠে ঘড়ির দিকে তাকালো। নয়টা বেজে পাঁচ মিনিট। মোহর নড়েচড়ে উঠে মুখ কুচকে নিলো, ঘুমের ঘোরেই হয়তো উষ্ণ বুকটার খোঁজে নীরব অভিযোগ সপেছে।
মেহরাজ ঠোঁট এলিয়ে হাসলো, তৃপ্ততার হাসি। প্রিয়তমার মুখে নিজের জন্য ব্যাকুলতা দেখার চেয়ে আনন্দের কিছু কি আছে? উহু নেই, শ্রেয়সীর মুখে প্রেমিকের জন্য উদ্বিগ্নতার ছাপ হৃদয় জুড়ে শীতলতা মেখে দেয়।
মেহরাজ এগিয়ে ঝুঁকে এলো মোহরের মুখের কাছে, কোমল স্বরে ডাকলো
– মোহ? উঠবেন না?
মোহর বেশ রয়েসয়ে চোখ খুললো আস্তেধীরে। চোখের সামনে ধীরে ধীরে সুপ্রসারিত হলো কোমল, হৃদয়স্পর্শী চেহারাটা। মুখে ঝুলানো মায়াভরা হাসিটা যেনো ঠিক বুকে বিঁধে যায়। এই মুখ জুড়ে এতো মায়া! এতো মায়া কি আদও আর কোথাও পাবে মোহর। ধপ করে রাতের কথাটা মনে পড়ে গেলো। মেহরাজ কিভাবে ওর হাতদুটিতে যত্ন করে দুচোখের পানি মুছিয়ে দিলো,বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো। বাবা মায়ের পরে ঠিক এভাবে কি কেও কখনো আদুরে হাতটা মাথায় বুলিয়ে দিয়েছিলো? এতো ভালোবাসার স্পর্শ কি আদও মোহরের কপালে ছিলো? এতটা পাওয়ার যোগ্যতা কি তার আছে?
ভাবনার মাঝেই মেহরাজ ওর ঘাড়ের পেছনে হাত রেখে তুলে বসালো। নিজে খাট থেকে নেমে গিয়ে কাবার্ড খুলে একটা জামা বের করে মোহরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
– রাত থেকেই তো আমিই সামলে যাচ্ছি। এবার কি ওয়াশরুমেও আমি নিয়ে যাবো? আমার কিন্তু আপত্তি নেই আপনি বললে…
– নাহ আমিই যাচ্ছি।
বলে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নামলো। ঘুমের ঘোর কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে না উঠতে এমন ছিচকেপনা শুনে হতভম্বের ন্যায় বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। জামা কাপড় কুন্ডলী পাকিয়ে হাতের মধ্যে গুঁজে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
সময় খানেক বাদে গোসল করে বেরোলো ভেজা চুলে। মেহরাজ বারান্দা থেকে ঘরে ফিরে ফোন নিয়ে বসেছে। মোহর আসতেই উঠে দাঁড়ালো, তোয়ালে টা হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকবে তার আগেই মোহরের চিকন নরম কণ্ঠটা শ্রবণেন্দ্রিয়ে ঘেঁষতেই পা দুটো থেমে গেলো
– রুদ্ধ!
বুকের ভেতর যেনো চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হলো। এই নামটা ঠিক কতটা মোহনীয় শোনালো মোহরের কণ্ঠে তা এখন মেহরাজ কি করে বোঝাবে তাকে? ভাবপ্রবণ সূক্ষ্মতায় ক্ষতবিক্ষত বুকটা সামলে ঘুরে দাঁড়ালো মেহরাজ, ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিৎ জড়ো করেই প্রশ্নবোধক চাহনিটা প্রকাশ করলো, মোহর এগিয়ে এলো দু’কদম মৃদু কণ্ঠে জড়তাহীন কাতরতা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
– আপনিও আমায় ছেড়ে যাবেন না তো আব্রাহাম সাহেব?
বুকে যেই উত্থাল ঝড় টা উঠেছে মোহরের কাতর স্বরটা যেনো তাতে একরাশ উচ্চচাপ ধরিয়ে তড়বড় করে কালবৈশাখী তুলে দিলো। আজ মোহরের চোখে জড়তা নেই, নাইবা আছে লজ্জা
বরং একবুক কৌতূহল, জিজ্ঞাংসুক চাহনিটা মেলে রেখেছে মেহরাজের দিকে। মেহরাজ তোয়ালে টা হাত থেকে ফেলে দিয়ে দুকদম এগিয়ে এলো, বার দুয়েক জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নিষ্প্রভ গলায় বলল
– আমার খুশি হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, আপনাকে দেখলে কোনো কারণ ছাড়াই খুশি হয়ে যায় আমি আমার মন। এখন বলুন তো নিজের সুখটাকে ছেড়ে দিয়ে আমি রুদ্ধ কিভাবে থাকবো?
তবুও যেনো ক্ষান্ত হলো না মোহরের সজন হারানো বিধ্বস্ত মনটা। বিষাদে মাখা মুখটা ঝুকিয়ে নিতেই তীক্ষ্ণ হলো মেহরাজের চাহনি। কড়া গলায় বলল
– এক ফোঁটা পানি যেনো গাল বেয়ে মাটিতে না পড়ে মোহ। কাল সহ্য করেছি, আজ আর নয়। আপনি কি আমার প্রথম অনুরোধ টাও রাখবেন না মোহ?
প্রথমে কড়া শাসনের ন্যায় বললেও শেষোক্ত বাক্যটিতে মিশিয়ে দিলো বুকভরা ব্যাকুলতা, হতাশা। মেহরাজের এই আবেগ টুকু মোহরের হৃদগহীনে পৌছালো কি না ঠিক জানা নেই, তবে চোখে টলমল হয়ে আসা পানি টা আর গড়িয়ে পড়লো নাহ। তবে পা দুটো এগিয়ে এনে কাছাকাছি দাঁড়ালো মেহরাজের, হাতটা তুলে মেহরাজের বুকের উপর রেখে বলল
– সব হারানো ছন্নছাড়া নিঃস্ব আমি, আপনি ছাড়া আমার কেও নেই। খুব ভয় হয় জানেন, মনে হয় আপনিও হয়তো আমার থাকবেন নাহ, নিয়তির মতো আপনিও ছেড়ে যাবেন আমায়।
মেহরাজ মোহরের দুই বাহুতে হাত রাখলো। নরম কণ্ঠে বলল
– ওই যে বললাম। আপনি আমার একমাত্র সুখ। আমিতো মরে গিয়েও আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইনা মোহ। অস্তিত্বে মিশে গেছেন আপনি, নিজ অস্তিত্ব ছেড়ে কেও কোথাও কি করে যাবে মোহ
নিঃশ্বাস যেনো ফুরিয়ে এলো মোহরের। অজানা ভয় জেঁকে বসেছে মোহরের মন মস্তিষ্কে ব্যাপকভাবে। যতটা না মেহরাজ নামক মানুষটার মায়ায় জড়িয়ে পড়ছে ততই অস্থির হয়ে উঠছে মন। হারানোর ভয়টা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখছে।
– এই যে সারাটা সময় সামনে ঘুরে বেড়াই, একটু জড়িয়ে ধরে আদর ও তো করতে পারেন মোহ, তা না আপনি কি না হারিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন!
অভিমানিনীর ভয়টা যেনো নিমিষেই উড়িয়ে দিলো। মেহরাজের এহেন কথায় না চাইতেও গাল ভারী হয়ে এলো মোহরের। মেহরাজ ওকে আরেকটু নেতিয়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ এনে বলল
– বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলেই পারেন, তাইলেই তো হারানোর ভয় থাকে নাহ।
লজ্জা, বিড়ম্বনায় চোখ সিটিয়ে নিলো মোহর। পরনের জামাটা খামচে ধরে মুহূর্ত কয়েক চোখ বুজে থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে খুলে তাকালো। সামনে মেহরাজ বা তার টিকিটিও নেই। অসভ্য লোকটা ওকে লজ্জায় ফেলে নিজেই পালিয়েছে। ফিক করে হেসে উঠলো মোহর, ধীর পায়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।
সিড়ি বেয়ে নিচে এলো উদ্বিগ্ন চোখে। নিচে বেশ কয়েকজন লোক, এর অধিকাংশই মোহরের অচেনা। তাথইয়ের ঘরেও কেও নেই। ত্রস্ত পায়ে শাহারা বেগমের ঘরের দিকে পা বাড়াবে তখনই পেছন থেকে বেশ চেনা চেনা একটা স্বর কানে এলো
– মোহর?
ভ্রুদুটি জড়ো করেই ঘুরে দাঁড়ালো মোহর। খানিক সময় ধরে তাকিয়ে রইলো আগন্তুকের দিকে। সেই আগের চেহারা, সাস্থ্য, আগের ন্যায়ই হাস্যজ্বল মুখ। মোহরের দ্বিধাদ্বন্দ্বিত চেহারায় চেয়ে হাসিমুখে আরেকটু এগিয়ে এসে বলল
– আমায় ভুলেই গেলে ভাবী? এই তো এক মাস আগেই দেখা হয়েছিলো? কি মনে করতে পারোনি?
মোহর সৌজন্যসুলভ হেসে বলল
– না,,হ্যাঁ চিনতে পেরেছি
– যাক ভাবীজানের যে আমাকে মনে আছে তাতেই আমি ধন্য
নোমানের কথায় মূর্তির ন্যায় তাকিয়ে রইলো মোহর। ওর জড়তাকে অগ্রাহ্য করে নোমান খপ করে ওর হাতটা চেপে ধরে বলল
– ওদিকে কোথায় যাও। আমার সাথে এসো একজন তোমার সাথে দেখা করতে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে।
বলেই মোহরের প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করে, মোহরের হাত ধরে বসার ঘরটাতে নিয়ে এলো। সোফাতে বসা গোলগাল চেহারার এক ভদ্রমহিলা, শ্যাম গড়নের মুখটায় খুব একটা হাসি হাসি ভাব নেই। কেমন দাম্ভিক্যের সাথে বসে। নোমাম ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– মা এই হলো এ বাড়ির একমাত্র বউ, মোহর মোহর শিকদার
মুহুর্তেই স্বাভাবিক নয়নজোড়া বাঁকা চাহনিতে ঘিরে ধরলো মোহরকে৷ বেশ তীক্ষ্ণ, সূক্ষ্ম চাহনির ভাজে বেশ অনেক সময় তাকিয়ে থেকে হাত তুলে ইশারা করে বলল
– দেখি এদিকে এসো তো মেয়ে
মোহর জড়তা ভরা চোখে এদিক ওদিক তাকালো। কাকলি বেগম সেই মহিলাটির পাশেই বসে। আরেক পাশে বসা তিয়াসা। তাদের মুখাবয়ব আর কথাবার্তার ধরনেই বোঝা গেল চেনা জানা বেশ আগে থেকেই। মোহরের দ্বিধা কাটানোর মতো কাওকেই পাশে পেলো নাহ। নোমান যেনো বুঝে ফেললো মোহরের জড়তা, ভরসা দেওয়ার ন্যায় বলল
– আরে এতো সংকোচ বোধ করছো কেনো? উনি তোমার একমাত্র ফুফু শাশুড়ী। মানে আমার মা।
মোহর জড়ত্ব ভরা কদম ফেলে এগিয়ে গিয়ে পাশের সিঙ্গেল সোফাতে বসলো। মহিলা আপাদমস্তক যেনো চোখ দিয়্ব গিললো। অতঃপর তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন
– বলি এর থেকে তিয়াসা কোনদিকে কমা বুঝলাম না? চেহারা, গায়ের রঙ, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস, যোগ্যতা কোনো দিক থেকেই তো তিয়াসার বরাবর দেখছি না। এই জাতপাতহীন মেয়েটাকে মেহরাজ বউ করে এনেছে?
ঘাড় ঝুকিয়ে নিলো মোহর। সামনে বসা শ্যাম গড়নের মহিলাটির মুখ দেখেই মনে হচ্ছিলো তার নজর খুব একটা মোলায়েম নাহ। মোহরকে তার পছন্দ হয়নি তা প্রথম অভিব্যক্তিতেই স্পষ্ট ছিলো।
– তা সংসার কেমন করছো মেয়ে? অবশ্য মেহরাজকে যখন পটিয়েছো ভালোই যাচ্ছে হয়তো।
মোহর জবাব দেওয়ার মতো কিছুই খুঁজে পেলো নাহ। মহিলাটি অবিলম্বেই বলে উঠলো
– এই মেয়ে বোবা নাকি? ভদ্রতা জানো না? আমি কথা বলছি আর তুমি দেমাগ দেখিয়ে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো?
– ওকে ছাড়ুন তো ফুপি, চিপ
শেষের কথাটা বেশ স্পষ্টভাবেই কানে গেলো মোহরের। ও মুখ খুলে কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে অতি চেনা কণ্ঠে জিহ্ব থেমে গেলো।
– আমার বউ বলে কথা দেমাগ তো একটু আকটু থাকবেই ফুপি
সবাই ঘুরে তাকালেও তাকালো না মোহর, মেহরাজ আড়চোখে নোমানের দিকে তাকিয়ে ওকে পাশ কাটিয়ে এসে দাঁড়ালো রুকাইয়া বেগমের সামনে। মৃদু হেসে বলল
– ভালো আছেন তো ফুফু?
রুকাইয়া বেগমের মুখে আধার নামলো যেনো মেহরাজের আগমনে। তবুও চোখ ঘুরিয়ে বলল
– ভালো আর থাকতে দিলে কই? তোমার এই বউয়ের জন্যেই আমার ছে..
বাকিটা বলার আগেই থমকে যেতে হলো। মেহরাজ কথার মাঝেই বলে উঠলো
– আহা, গল্পগুজব করার জন্য পুরো দিন পড়ে আছে ফুফু। চা নাস্তা করে নিবেন চলুন।
বলে মোহরের দিকে ফিরে বলল
– আমার বিবিজান আবার খুব ভালো চা করে জানেন তো। আজকে আমার বিবিজানের বানানো চা খাওয়াবো চলুন।
বলে ডাইনিংয়ের দিকে এগোতে নিলে মেহরাজের পাশাপাশি নোমান এসে দাঁড়িয়ে বলল
– তাহলে তো আমিও আজ খেতে চাই, ভাবীজানের হাতের চা বলে কথা কি বলো ভাই?
মেহরাজ প্রত্যুত্তর করলো না নোমানের কথায়। তীক্ষ্ণ চাহনিতে একবার শুরু নোমানের মুখটা পরখ করে এগিয়ে গেলো।
মোহর রান্নাঘরে গিয়ে আম্বি খাতুনের সাথে সাথে নাস্তা গুলো এনে টেবিলে রাখলো। নিজে হাতে চা ও করে আনলো। আম্বি খাতুন এখন আর মোহরকে কটাক্ষবানী খুব একটা শোনান না, তবে কথাও বলেন নাহ। এক প্রকার এড়িয়েই চলে। মোহর অবশ্য তাতে কষ্ট পাইনা।
এবার একে একে সবাই নামলো। শাহারা বেগম এসে সোফাতে বসলেন পান চিবোতে চিবোতে। তাথই ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে শাহারা বেগমের সাথেই এলেন। ওকে নাস্তা করার কথা বলে ‘পরে’ বলেই চুপ করে রইলো। সবশেষে এলো সাঞ্জে। সকলে বসে নাস্তা শুরু করেছে। মোহর মাথাটা ওড়নার আড়ালে ঢেকে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলো মেহরাজ খাবার শুরুর আগেই রাশভারি কণ্ঠে ডেকে বলল
– আমার পাশে এসে বসুন মোহ
মোহর অপ্রস্তুত হলো। জড়তাপূর্ণ চাহনিতে দ্বিধা নিয়ে তাকালেও মেহরাজের কড়া নজরে চেয়ে তা স্থির হলো নাহ। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসলো। মেহরাজ নিজে ওর প্লেটে নাস্তা তুলে দিলে রুকাইয়া বেগম কটাক্ষ করে বলল
– বাহ মেহরাজ বেশ তো পত্নীসেবক হয়েছো দেখি। দেখো ওতো যতনে উথলে সব বাড়ি সম্পদ ও তার নামে করে দিও না যেনো। প্রেমের ঠেলায় তো করেও ফেলতে পারো।
– যা আমার তাই তো আমার সহধর্মিণীর, এতে তার নামে করে দিলেও বা সমস্যা কোথায়।
ঠিক এই কারণটাই রুকাইয়া বেগম মেহরাজকে পছন্দ করেননা। ছেলেটা সব কথায় বাঁকা উত্তর দিয়ে বসে। কিন্তু নিজের কটাক্ষ করার স্বভাব টাও তো বাদ দিতে পারেন নাহ।
নোমান মন মতো খেয়ে যাচ্ছে, চামচটা রেখে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল
– সত্যিই ভাবী। যাদু আছে তোমার হাতে। এমন চা রোজ ছয় বেলা খেলেও মনটা ভরবে না হয়তো।
প্রত্যুত্তরে কিঞ্চিৎ হাসলো মোহর। মেহরাজ খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালো, ঠিক তখনই কলিং বেলের শব্দ হলো। সকলে যেহেতু খাওয়াই ব্যস্ত তাই তাথই উঠে দাঁড়ালো, বাচ্চাটা শাহারা বেগমের কোলে দিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দুহাতে খুলে দিলো কাঠের বিশালাকার দ্বার দুটো।
ঠিক কতখানি, আর কতটা শব্দে বোঝালে পরিস্থিতি টা ব্যাখা করা সম্ভব তা হয়তো তাথইয়ের শব্দে আসছে নাহ, কয়েক মুহুর্তে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো, নিষ্পলক চোখের ঝাপসা দৃষ্টিতে কয়েকবার পলক ফেললো। এটা কি স্বপ্ন? দিনে দুপুরে এমন কল্পনা কেনো এলো ওর? এ কি মনের ভুল নাকি চোখের ভ্রম?
তাথইয়ের পাথরমূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা দেখে মেহরাজ এগিয়ে এলো। বোনকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই দরজার সামনের দাঁড়িয়ে থাকা চেহারাটা চোখে বিঁধলো। নিমিষেই জড়ানো ভ্রু যুগল প্রসারিত হলো, অধর কোণের হাসিটা এবারে সবার দৃষ্টিগোচর হলো। বেশ হাস্যজ্বল চেহারায় উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল
– রিয়েলি? হোয়াট এ্যা সারপ্রাইজ, তুই কখন এলি!
.
.
.
চলমান
©Humu_❤️