#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
মীরার চলে যাওয়ার দিন উপস্থিত। সন্ধ্যার ফ্লাইটে দিল্লিতে চলে যাবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারলো, আজকেও তাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। বিরক্ত হলো মীরা। মায়ের সাথে কিছুক্ষণ চোটপাট করে বাবাকে কল লাগালো। রিসিভ হলে প্রথমেই বলে বসে,
“তুমি জানো না? আজকে আমি চলে যাব? আজকে কীভাবে আমাকে দেখতে আসবে?”
মিস্টার রফিক তালুকদারের শান্ত জবাব,
“এখন মাত্র সকাল সাড়ে আটটা বাজে। ওরা সাড়ে দশটা বা এগারোটায় আসবে। তুমি সময় পাবে।”
“তোমাদের কাজকর্ম দেখলে মনে হয় আমি বোঝা হয়ে গেছি। যাও মেনে নিলাম। জাস্ট দেখে যাবে। নাথিং মোর। এতো শর্ট ইন্ট্রোডাকশনে আমি কবুল বলবও না আর সাইনও না। মনে রেখো।”
কথাগুলো শেষ করে খট করে ফোন কে*টে দেয় মীরা। বিরক্ত লাগছে তার। রাগে এখনি বেরিয়ে যেতে মন চাচ্ছে। মীরার বড়ো ভাবি শারমিন আসে। এসে পাশে বসে বলে,
“রাগ করো না। শুধু দেখে যাবে। আগের তিনটাও তো হয়নি। এবারেরটা যদি ভালো হয় শুধু কথা এগুবে।”
“জানি ভাবি। কিন্তু আমার বারবার পাত্রপক্ষের সামনে বসতে ভালো লাগে না। দুই সপ্তাহে কতবার বসলাম!”
“তোমার বিয়ের হুকুম হলে দেখবে এমনেই বিয়ে হয়ে যাবে।”
“হুম।”
শারমিন হাসলো। অতঃপর বলল,
“যাও তো তৈরি হয়ে নাও। গোসল করে আগে মা-থা ঠাণ্ডা করো।”
মীরাও হাসে। ফের বলে,
“যাচ্ছি।”
“বিকেলে চলে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়েছ?”
“কিছুটা। তুমি তো জানো, আমি আগে ব্যাগ গুছাতে পারি না।”
“জানি তো। তারপর কিছু না কিছু ফেলেই যাও। একদম তোমার বড়ো ভাইয়ের মত! তুমি গোসলে যাও, আমি গুছিয়ে দিচ্ছি।”
মীরা খুশি হয়ে ভাবিকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে জামা-কাপড় নিয়ে গোসলে চলে যায়।
_______
এবার পাত্রপক্ষের মাঝে কোনো খুঁত পেলেন না মীরার বাবা। বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। পাত্র এক মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির ম্যানেজার পদে রিসেন্টলি পদোন্নতি হয়েছে। বাবার কথায় এবার আর মীরা কোনো কথা বলল না। তবে সে এখন কোনোরকম বন্ধনে যাবে না। আজকে ইন্ডিয়া যাবে, তারপর দুইমাস পর আসবে। তখন যা হওয়ার হবে। ছেলেপক্ষের মাঝে কিঞ্চিত অসন্তোষ দেখা গেলেও পাত্র রাদিব রাজি হলো। সে বলল,
“মিস মীরা যেহেতু চাচ্ছেন না তাহলে পরেই হোক।”
মীরা জোরপূর্বক হাসলো। রাদিব ছেলেটা এমনিতে ভালো কিন্তু একটু বেশি গায়ে পড়া। যখন আলাদা কথা বলতে দিলো তখন অতিরিক্ত সৌন্দর্যের বর্ণনা করছিল। যা মীরার কাছে খানিক অতিরঞ্জিতই লেগেছে। তাও এবার কিছু বলল না। ছেলেপক্ষকে মীরার মা ও ভাবিরা দুপুরে খাইয়ে ছেড়েছেন। ছেলের বড়ো বোন মীরার জব এড়িয়া ও ইন্ডিয়াতে ভাড়া করা ফ্লাট, রুমমেট সব সম্পর্কে খুঁটে খুঁটে তথ্য নিয়েছে। মীরা অনিচ্ছাসত্ত্বে সব ইনফোরমেশন ধৈর্য সহকারে দিয়েছে।
ছেলেপক্ষ চলে যাওয়ার পর মীরার মা শুরু করেছে, কেন অন্তত আংটি পড়িয়ে রাখল না। মীরা কয়েকবার বলেও থামাতে না পেরে ৩টা বাজেই বাড়ি থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে। যেতে দেড়-দুই ঘণ্টা লাগবে। এখনও দুই ঘণ্টা বাকি। কী করবে না করবে ভেবে এয়ারপোর্টের কাছে থাকা এক ফ্রেন্ডকে আর্জেন্টলি ডাকে। মীরার ফ্রেন্ড পার্থনা একা বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল। তার স্বামী অফিসে। আর শ্বশুর-শাশুড়ি গ্রামের বাড়িতে। মীরার কল পেয়ে চলেও আসে। তারপর দুই বান্ধবী মিলে রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া, গল্প-গুজব করে সময় পার করে ফেলে।
________
ফ্রিশার জ্বর কমেছে। শেহজাদ এইজন্য একদিন ছুটি নিয়েছে। যাতে ফ্রিশার মন খারাপ কমে। সারাদিন ফ্রিশার। নিজের হাতে রান্না করে ফ্রিশাকে খাইয়েছেও। কিছু আইটেম সে রান্না করতে পারে। চিজি পাস্তা, বাটার চিকেন ইত্যাদি। ফ্রিশারও এসব খুব পছন্দ। সারাদিনে ফ্রিশাকে কাঁধছাড়া করেনি। বাচ্চা মেয়েটাও অনেক খুশি। নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া থেকে বাহিরে ঘুরতে যাওয়া সব। সারাদিন পর শেহজাদ ফ্রিশাকে ঘুম পাড়িয়ে রকিংচেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে। তখন ড: আকবর রেহমান আসেন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলেন,
“প্রতিদিন ওকে এভাবে সময় দিবে?”
শেহজাদ সোজা হয়ে বসে। শ্রান্ত চাহনি ফেলে বলে,
“আপনি কী বলতে চাইছেন?”
“তুমি তা ঠিকই বুঝতে পারছ শেহজাদ।”
শেহজাদ পাল্টা প্রশ্ন করে,
“সৎমা কি সত্যি আমার মেয়েকে ভালোবাসতে পারবে?”
“আমরা তেমনটাই দেখে বিয়ে করাব।”
শেহজাদ বুঝলো, সে তার ফুফা-ফুফিকে বুঝাতে পারবে না। তাও একটা শেষ চেষ্টা করল।
“কেউ কেনো তার মেয়েকে এক বিবাহিত, বাচ্চা আছে এমন লোকের সাথে বিয়ে দিবে? কী লাভ তাতে? অর্থ-সম্পত্তি?”
“তুমি একটু বেশি ভাবো। আমি এক মেয়েকে দেখে রেখেছি। এখন তোমরা দুজন রাজি হলে মেয়ের পরিবার রাজি করানো কোনো ব্যাপার না।”
শেহজাদ অবাক হলো ভীষণ। সে তৎক্ষণাৎ বিস্ময়াভিভূত স্বরে শুধালো,
“আপনি কি তবে সবাইকেই জোর করবেন? জোর করে এক মেয়েকে রাজি করাবেন আমাকে বিয়ে করতে?
ড: আকবর রেহমান ভড়কালেন। তিনি তো মীরাকে অনুরোধ করেছে মাত্র। তিনি জবাবে বললেন,
“তুমি ভুল বুঝছ শেহজাদ। আমি জোর করব কেন? রিকুয়েস্ট করেছি জাস্ট। মেয়েটা ভেবে, চিন্তে জবাব জানাক। তারপর কথা আগাবো।”
শেহজাদ এবার কাটকাট স্বরে বলল,
“আপনি কাউকে কোনো প্রকার জোর করবেন না। জোর করার পর রাজি হলেও, পরবর্তীতে আফসোস করে আমার মেয়েকে কষ্ট দিবে। যা আমি সহ্য করব না।”
ড: আকবর রেহমান বোঝাতে চাইলেন,
“আমি জোর করছি না। তোমাকেও বলছি ভেবে দেখো।”
“দেখব।”
ড: আকবর রেহমান হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে গেলেন।
________
প্রায় দশ-বারো দিন পর। মীরা ও রাইমা সবে ল্যাব থেকে ফ্লাটে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে কিনে আনা খাবারগুলো একে একে সাজাচ্ছে। তখন মীরার ফোনটা বেজে উঠলে, রাইমা হইহই করে ওঠে। রম্যস্বরে বলে,
“যা যা। বাকিটা আমি সাজিয়ে নিব। জিজাজি কল করেছে। উনাকে ওয়েট করাস না। বেচারা দিনে শুধু নিয়ম করে তিনবার তোকে কল করে।”
“চুপ থাক।”
মীরা আলতো শাসালো। রাইমা পাত্তা না দিয়ে বলে,
“ওমা! আমি বললেই শুধু দোষী হয়ে যাই তাই না? নিজে যখন কথা বলিস।”
“দেখ, আমি কথা বলতে চাই না। এখন কল কেটে দিলেও অভদ্রতা দেখায়। সকালে ল্যাবে ঢুকব তখন কল করে। কোনোমতে ব্যস্ততা দেখিয়ে পার করি। দুপুরে কল দিলে প্রথমবারে ধরি না। এখনও তাই করব। আমাকে এভাবে বাচ্চাদের মতো ট্রিট করাটা পছন্দ না। বর্ণও করত। কিন্তু কী হলো? ধোঁ*কা দিলো তো।”
রাইমা ওর কাঁধ জড়িয়ে আদুরে স্বরে বলে,
“চি*ল ইয়ার। পুরোনো কাসুন্দি ঘেটে কী লাভ বল? জিজাজি কল করেছে, যা কথা বল। কয়দিন পর তো বিয়েই।”
“আজ এতো জলদি কেন কল দিবে? প্রতিদিন তো আরও পরে কল দেয়।”
“আগে দেখ তো। যা জলদি যা।”
রাইমা, মীরাকে একপ্রকার ঠেলেই পাঠিয়ে দিলো। মীরা ক্লান্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ধীর পায়ে রুমে গেল। বিছানার উপর থেকে ফোনটা তুলে রিসিভ করে কানে নিলো। অতঃপর যা শুনলো তাতে তার শরীরের র*ক্ত হিম হয়ে ওঠলো। প্রত্যুত্তর করতে যেন ভুলে গেল।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
রিচেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।