#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২০
#Raiha_Zubair_Ripte
মুনিয়া ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি নিয়ে আসে নি আসার সময় আরহাম ড্রপ করে গেছে কিন্তু এখন ফিরবে কিভাবে?আরহাম ফোন ও তুলছে না। উপায়ন্তর না পেয়ে এবার রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা ধরলো। আরাভ গাড়ির ভেতর থেকে মুনিয়াকে দেখে ফেলে। এটা মুনিয়া নাকি সেটা দেখার জন্য মুনিয়ার দিকে এগিয়ে আসে গাড়ি নি। হ্যাঁ এটা মুনিয়া।
” একা একা হেঁটে কোথায় যাচ্ছ?
হঠাৎ এমন কথা শুনে চমকে উঠে মুনিয়া। পাশ ফিরে গাড়ির ভেতর আরাভ কে দেখে।
” আমাকে বলছেন?
” না তোমার পাশে থাকা ঐ মেয়েটাকে।
” ওহ্
কথাটা বলে আবার হাঁটতে থাকে মুনিয়া। আরাভ নিজের মাথা নিজেই চাপড়ায়। গাড়িটা ধিরে ধিরে চালিয়ে আবার মুনিয়ার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়।
” এই মেয়ে এভাবে হেঁটে কোথায় যাচ্ছ?
মুনিয়া আবার হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ায়।
” আমি?
” হুমম।
” ওহ্ আসলে গাড়ি নিয়ে আসি নি তাই হেঁটে যাচ্ছি শপিংমলে।
” শান রা যেখানে গেছে ওখানে?
” হ্যাঁ।
” আমিও ওখানেই যাচ্ছি তুমি চাইলে যেতে পারো আমার সাথে।
” উঠবো গাড়িতে?
” না র’শি দিচ্ছি আমার গাড়ির চাকার সাথে নিজেকে বেঁ’ধে নাও আমি তোমাকে হেঁ/চড়ে হেঁ/চড়ে নিয়ে যাই ভালো না আইডিয়াটা!
মুনিয়া বোকা বনে চলে যায়। পারমিশনই তো চাইলে শুধু। মুনিয়া গাড়ির পেছনে গিয়ে বসতে নিলে আরাভ বলে উঠে,,
” আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হয়। পেছনে কেনো বসেছো?
” তাহলে কোথায় বসবো?
” আমার কোলে এসে বসো ষ্টুপিড।
” আপনার কোলে? এটা হয় নাকি তাই!
” হবে না কেনো চোখের সামনে যদি আর কোনো জায়গা না পাও তাহলে তো কোলেই বসাতে হয়।
” আপনার পাশের সিটে বসবো?
” না গাড়ির সামনে দেখতে পাচ্ছো কতবড় জায়গায় আছে ওখানে গিয়ে বসো। ভালোই হবে বাতাস পাবা ভলো করে।
” এহ্ আমি পড়ে যাবো তো।
” আরে পড়বে না ট্রাস্ট মি।
মুনিয়া গাড়ি থেকে বের হয়। খানিক গাড়ির পেছনে গিয়ে হেসে নেয়। আর একটু থাকলে ওখানেই হেসে ফেলতো। মুনিয়া যেমন অবুঝ সেজে কথা বলে আরাভ ও তার সাথে তাল মেলায়। বিষয় টা খুব এনজয় করে মুনিয়া। হাসি থামিয়ে নিজেকে ঠিক করে গাড়িতে এসে বসে।
বেশ নিরবতা চলে দুজনের মধ্যে। আরাভ কিছু একটা মনে করে মুনিয়াকে জিজ্ঞেস করে,,
” তুমি ভার্সিটি তে কেনো এসেছ?
মুনিয়া সামনে তাকিয়ে বলে,,
” বয়ফ্রেন্ডের ক্লাস করতে।
” মানে!
” মানে হচ্ছে মানুষ তো আসে ভার্সিটিতে বয়ফ্রেন্ডের ক্লাস করতে। আমি ও এসেছি।
” ফাইজলামি করছো?
” এমা আমি কেনো ফাইজলামি করবো?
” তাই তে করছো। কয়েকদিন আগেও না আমাকে জমের মতো ভয় পেতে।
” এখনও তো পাই।
” কিভাবে?
” আমার দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকান।
” কেনো?
” তাহলে দেখবেন ভয় পেয়ে আছি।
” আচ্ছা আমার দিকে তাকাও এই দেখো রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
মুনিয়া আরাভের দিকে তাকায়। আরাভের তাকানো দেখে হেঁসে ফেলে।
” হাসছো কেনো?
” এটা তো রাগান্বিত চোখ না।
” তুমি অনেক পাঁজি হয়ে গেছো জানো?
” আপনি না বললে জানবো কিভাবে?
” এই যে বললাম।
” হুমম এখন থেকে জেনে রাখলাম আমি অনেক পাঁজি।
” গুড।
কথার তালে তালে শপিংমলের সামনে এসে পড়ে আরাভ মুনিয়া। মুনিয়া চশমা টা ঠেলে গাড়ি থেকে বের হয়। আরাভ গাড়ি টা সাইডে রেখে মুনিয়ার সাথে শপিংমলে প্রবেশ করে।
শান একের পর এক লেহেঙ্গা দেখছে এনার জন্য একটাও পছন্দ হচ্ছে না। এনা তপ্ত শ্বাস ফেলে।
” আর কতোক্ষণব্যাপী টাইম ওয়েস্ট করবেন। যেকোনো একটা নিলেই তো হয়।
” কি ভাবিপু কি যে-কোনো একটা নিলেই হয়?
মুনিয়াকে দেখে এনা জড়িয়ে ধরে। পাশে আরাভ কে দেখে বলে,,
” দুজনের এন্ট্রি টাইমিং তো ভালোই।
আরাভ স্মিত হাসে।
” হুম তোমার ননদ কে নিয়ে আসলাম। দেখলাম রাস্তায় একা একা হাঁটছে তাই একটু সাহায্য করলাম।
শান ডার্ক রেড কালারের একটা লেহেঙ্গা এনে এনার সামনে ধরে।
” এটা কেমন?
এনা তাকায় লেহেঙ্গা টার দিকে লেহেঙ্গা টা অনেক সুন্দর। ডার্ক রেডের উপর গোল্ডেন কালারের কাজ করা।
” সুন্দর তো অনেক।
শান এটা নিয়ে দোকানদার কে প্যাক করতে বলে সেই সাথে গায়ে হলুদের জন্য হেয়াইট কালার তার ভেতর কাচা হলুদ রঙের কাজ করা সেই লেহেঙ্গা টাও প্যাক করতে বলে।
অন্য দিকে হেনাকে আরহাম একটার পর একটা লেহেঙ্গা শাড়ি দেখাচ্ছে। দোকানদার ও হাঁপিয়ে গেছে। হেনার বেশ রাগ হচ্ছে আরহামের উপর। তার গার্লফ্রেন্ড কে দিবে শাড়ি লেহেঙ্গা আর তাকে কিনা দেখাচ্ছে কোনটা নিবে। এবার কিছুটা রাগ নিয়েই আরহাম কে বলে,,
” হচ্ছে টা কি আর কত শাড়ি লেহেঙ্গা দেখাবেন। আপনার জন্য আমি আর সেলসম্যান দেখেন বিরক্ত হয়ে গেছি।
” আপনি পছন্দ করে দিলেই তো আর এতো বিরক্ত হতে হয় না।
” আপনার গার্লফ্রেন্ডের কেমন শাড়ি লেহেঙ্গা পছন্দ আমি কিভাবে জানবো। আর আপনার গার্লফ্রেন্ড ই বা দেখতে কেমন।
” আমার গার্লফ্রেন্ড দেখতে অনেক সুন্দর ডাগর ডাগর চোখ। নাকের ডোগায় রাগ টইটম্বুর করে। ফর্সা গায়ের রং। একদম মায়াবতী। হাইট হবে পাঁচ ফুট চার বা তিন ইঞ্চি।
সহসা হেনার মন খারাপ হয়ে গেল। গার্লফ্রেন্ডের রুপের এতে প্রশংসা বাহ! পেছন থেকে আরহাম হেনার কান্ড দেখে ফাইয়াজ হেসে উঠে। হেনা শাড়ি লেহেঙ্গার ভেতর থেকে একটা শুভ্র রঙের শাড়ি আর ছাই রঙের একটা লেহেঙ্গা নিয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” এই নিন। আর বিরক্ত করবেন না। আপনার জন্য আমার শপিং করা এখনো হয় নি।
আরহাম লেহেঙ্গা আর শাড়ি টা উল্টে পাল্টে দেখে।
” এটায় কি সত্যি তাকে মানাবে?
” হ্যাঁ ভাইয়া মানাবে আমি পছন্দ করে দিছি মানাবে না কেনো।
হেনার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে মুখটা চুপসে যায় আরহামের।
” ডোন্ট কল মি ভাইয়া। ইউ ক্যান কল মি ছ্যাইয়া ছ্যাইয়া।
কথাটা বলে আরহাম শাড়ি লেহেঙ্গা নিয়ে সেলসম্যানের কাছে নিয়ে প্যাক করতে বলে।
সবাই টুকটাক প্রায় অনেক কিছুই কিনেছে কিন্তু মুনিয়া কিনে নি। শান সেটা দেখে ভীষণ রেগে আছে। নিজের হাতে গিয়ে পছন্দ করে বোনের জন্য শাড়ি লেহেঙ্গা ওয়েস্টার্ন ড্রেস কিনে আনে। সাথে অ্যাঞ্জেলেকার জন্য ও। মেয়েটাকে অনেকদিন ধরে দেখে না শান। মা বাবা হেলেনের জন্য ও শপিং করে।
শপিং গুলো নিয়ে বের হয়ে পড়ে। আরাভ হেনা,এনা আর ফাইয়াজ কে নিয়ে চলে যায়। আর আরহাম মুনিয়াকে নিয়ে। শান একটা ট্যাক্সি ডেকে সেটায় উঠে পড়ে।
নিজের বাড়র সামনে ট্যাক্সিটা আসতেই ভাড়া মিটিয়ে বাড়িরতে কলিং বেল বাজায়। হেলেন দরজা খুলে দেয়। শান কে দেখে বেশ অবাক হয়।হেলেন গলা ছেড়ে তার শাশুড়ী কে ডাকে। অ্যাডেলা সবেই বিশ্রাম নেবার জন্য বিছানায় শুয়েছে। হেলেনের ডাক শুনে বিরক্তিতে বিছানা ছেড়ে উঠে আসে।
দরজার সামনে শান কে দেখে রাগান্বিত হয়ে হেলেনের দিকে তাকায়।
” তুমি এখানে এসেছ কেনো? ও বাড়িতে ঠাই মিলে নি বুঝি?
শান হাসে। ” ঠাই কেনো মিলবে না? আমার বিয়ে পরশু কাল গায়ে হলুদ তুমি আসবে না?
” না।
হেলেনের হাতে শপিংয়ের প্যাকেট গুলো দিয়ে অ্যাডেলার সামনে এসে দাঁড়ায়।
” এখনো রেগে আছো?
” রাগ নেই তোমার প্রতি।
” তাহলে আসবে না কেনো বিয়েতে?
” যার তার বিয়েতে অ্যাডেলা উইলসন যায় না।
” আমি তাহলে যার তারের মধ্যে পরি?
” হ্যাঁ।
” বেশ তাহলে তুমি যখন আসতে চাইছো না তাহলে জোর করবো না। আচ্ছা হেলেন অ্যাঞ্জেলেকা কোথায়?
” ওর বাবার কাছে খেলছে।
” খেলছে মানে?
” হুমম হ্যাভেন এখন প্রায় সুস্থ শুধু হাঁটতে পারে না।
বেশ অবাক হয় শান। তার ভাই সুস্থ হয়েছে কিন্তু তার মা তাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না?
” আমাকে জানাও নি তো?
” তেমাকে কেনো জানাবে আমার বাড়ির খবর বাহিরের মানুষকে কেনো দিবে।
অ্যাডেলার কথা শুনে কষ্ট পেলেও সেটাকে গুরুত্ব দিলো না শান।
” আমি কি দেখা করতে পারি হ্যাভেনের সাথে?
” না।
” অ্যাঞ্জেকার সাথেও না?
” না।
” বেশ। ভালো থেকো।
” শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে যাও।
” ফেলে দিয়ো এগুলো যদি বাসায় রাখার মতো জায়গা না পাও তবে।
কথা গুলো বলে শান চলে আসে।
#চলবে
(গল্পটা কেমন লাগছে সেটা জানাবেন আজ। হ্যাপি রিডিং)