আমার_ভীনদেশী_এক_তারা #পর্ব২৪(বোনাস) #Raiha_Zubair_Ripte

0
136

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৪(বোনাস)
#Raiha_Zubair_Ripte

বাংলাদেশে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের ব্যাস্ত শহর দেখতে ব্যাস্ত হেনা। তার অনুভূতি গুলো দিনকে দিন নিকোটিনের ধোঁয়ার মতো উবে যাচ্ছে। হাতে রয়েছে আরহামের চিঠি। চিঠিতে জ্বল জ্বল করে লেখা। কিছু বাক্য। এই নিয়ে শ’খানেক বার পড়ে ফেলো হেনা।

বেয়াইন সাহেব,,

জীবনে হঠাৎই আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে
আপনার আগমন এই কানাডায়। ২০২৩ সালের ১০ ই জুন আপনার সাথে আমার প্রথম কথা। ধীরে ধীরে শুরু হয় জীবন চেনার পর্ব। সম্পর্কটা যেন দুষ্ট মিষ্টি বাঁধনে আটকে গেল। সকাল–বিকেল খোঁজখবর নেওয়া, একটু দেখতে চাওয়া,আপনাকে রাগানো। সব মিলিয়ে মনে হলো জীবনের এক নতুন অধ্যায় খুঁজে পেয়েছি আপনারর মধ্যে। মনের ভেতর মায়ার বীজ গজাতে লাগল। আমার সব ভাবনাজুড়ে শুরু হলো আপনার বসবাস। একপর্যায়ে হৃদয়ের সবটা দখল করে নিলেন আপনি। মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেললাম আপনায়য়। শুরু হলো ভালোবাসার ফুলঝুড়ি। খুনসুটির মধ্যে আপনায় বেয়াইন সাহেবা’ বলে ডাকি, বিশ্বাস করুন কয়েকটা মেয়ের সাথে আমার রিলেশন থাকলেও কখনো তাদের সেভাবে স্পর্শ করি নি। জাস্ট টাইম পাস রিলেশন ছিলো। যবে থেকে উপলব্ধি করলাম আমি সত্যি কারে অর্থে আপনায় ভালোবেসে ফেলেছি বিশ্বাস করুন কোনো মেয়ের দিকে তাকাই নি,তারা জাস্ট নামের গার্লফ্রেন্ড ছিলো আমার। যেসব মেয়েদের সাথে চলাচল ছিলো তাদের সাথেও চলাফেরা করা বাদ দিয়ে।দিছি। শুধু মাত্র আপনার জন্য। আপনি হয়তো ভাবছেন এই কয়েকদিনে কি করে এতো ভালোবাসলাম। আচ্ছা বলুন তো ভালোবাস কি বলে কয়ে আসে? আসে না তো। যার উপর আসে সে তো বুঝে না। এই যেমন আপনি বুঝতে চাইছেন না। কিন্তু আমি তো আপনায় হারাতে রাজি না হেনা। নিজের জিনিস নিজের করে নিতে জানি। ।❝ আমার আমি বলতে শুধু আপনাকেই জানি,, ঐ নীল আকাশ টা জানে আমি আপনায় ভালোবাসি ঠিক কতখানি ❞

হঠাৎ মায়ের ডাকে ঘোর ভাঙে হেনার চিঠিটা বালিশের তলে রেখে রুমের বাহিরে বের হয়। তার মা ফরিদা বেগম জানান পরশু এনা ও শানরা আসছে। কথাটা শুনে হেনা তপ্ত শ্বাস ফেললো। পুনরায় আবার নিজের রুমে চলে আসলো।

.

এনা কাপড় চোপড় প্যাক করছে পরশুই তো বাংলাদেশে যেতে হবে। এক মাস হতে চললো তাদের বৈবাহিক জীবনের। আলমারি থেকে কাপড় বের করতেই একটা ফাইল দেখতে পায়। কৌতুহল নিয়ে ফাইল টা বের করে। ফাইলটা খুলতেই দেখে শানের রিপোর্ট এটা। ভ্রু কুঁচকে আসলো এনার শানের আবার কিসের রিপোর্ট? রিপোর্ট টা পড়ে এনার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। শানের ক্যান্সার অথচ শান তাকে বলে নি। এনার দেহ কেঁপে উঠে সহসা ফ্লোরে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে। রিপোর্ট টা বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মুনিয়া এসেছিলো ভাবির কাছে একটা দরকারে হঠাৎ এনাকে হাঁটু গেঁড়ে কান্না করতে দেখে দৌড়ে চলে আসে।এনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,

” কি হয়েছে ভাবি কান্না করতেছো কেনো।

ফুপিয়ে কান্নার কারনে কিছু বলতেও পারছে না এনা। কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্ট টা মুনিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়। মুনিয়া রিপোর্ট পড়তেই রিপোর্ট টা হাত থেকে পড়ে যায়। দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের রুমে যায় মুনিয়া। মারুয়া আর আব্রাহাম আরহামের সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ মুনিয়াকে কাঁদতে কাঁদতে রুমে আসতে দেখে ভরকে যায় তারা। মারুয়া বেগম মেয়েকে ধরে।

” কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?

” মা শান ভাইয়া।

” হ্যাঁ শান ভাইয়া কি?

” মা শান ভাইয়া ক্যান্সারে আক্রান্ত।

কথাটা শুনে চমকে উঠে সবাই। আব্রাহাম এগিয়ে আসে।

” কি বলছো এসব?

” সত্যি বলছি বাবা। ভাবি কান্না করতেছে খুব।

সবাই এনার রুমে আসে এনা ফ্লোরে বসে কান্না করতেছে। আরহাম রিপোর্ট টা পড়ে দেখে সত্যি তার ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত।

শান নিজের রুমে এসে সবাই কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। অফিস থেকে ফিরেছে,ফ্লোরে এনাকে কাঁদতে দেখে এনার কাছে আসে।

” কাঁদছো কেনো?

এনা নিশ্চুপ।

” কি হলো কাঁদছো কেনো?

এনা সহসা শানের হাত নিজের শরীর থেকে সরিয়ে দেয়। আরহাম রিপোর্ট টা তার ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। শান রিপোর্ট টা দেখে বুঝতে পারে। স্মিত হাসে।

” এতে কান্না করার কি আছে বুঝতেছি না। সামান্য তো একটা রিপোর্ট ই।

আব্রাহাম শানের সামনে দাঁড়ায়।

” এটা তোমার কাছে সামান্য রিপোর্ট মনে হচ্ছে? তুমি ক্যান্সারে আক্রান্ত ভাবতে পারছো?

” হুমম বাবা ট্রিটমেন্ট হচ্ছে ঠিক সেরে যাবো।

” কোন ডক্টর?

” ডক্টর জেলেক্স। চিন্তা করো না আমি ডোজ নিচ্ছি কয়েক মাস চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হয়ে যাবো। আর এনাকে কাঁদতে মানা করো।

” ডক্টরের সাথে দেখা করবো আমি।

শান এনার পানে চায়।

” ডক্টরের সাথে দেখা করে কি করবা?

” আমি দেখা করবো ব্যাস।

” ঠিক আছে ডক্টর কে আসতে বলছি। কথাটা বলে শান ডক্টর জেলেক্স কে ফোন করে তার বাসায় আসতে বলে। ডক্টর জেলেক্স এসে তার পরিবার কে বুঝায় ক্যানসার শব্দটাই আমাদের ডরানোর জন্য যথেষ্ঠ। অসুখের নাম শুনলেই বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠবে এটাই স্বাভাবিক । তবে চিন্তা করার কারণ নেই শান চিকিৎসা নিচ্ছে সুস্থ হয়ে যাবে। সবাই ক্ষান্ত হলো কিন্তু এনার মন ক্ষান্ত হলো না।

” তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে তো শান ডক্টর?

” হ্যাঁ সুস্থ হয়ে যাবে চিন্তার কারন নেই।

ডক্টর চলে যায়। শান সবার উদ্দেশ্যে বলে,,

” হয়েছে শুনেছো কোনো চিন্তার কারন নেই। আমরা পরশু বাংলাদেশ যাচ্ছি যে যার কাপড় প্যাক করে নাও। কথাটা বলে শান নিজের রুমে চলে যায়। এনা ও শানের পিছু পিছু চলে আসে।

বিছানায় বসে আছে শান। সামান্য একটা রিপোর্ট নিয়ে এতো কিছু হলো। এনা শানের পাশে বসে কারো মুখে কথা নেই। আচমকা এনা শানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

” কাঁদছো কেনো?

” একমুহূর্তের জন্য মনে হয়ছিল আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো শান। নিশ্বাসটা থেমে গিয়েছিল।

” পাগল মেয়ে কিছু হবে না। চোখের জল মুছো তো দেখি।

শান এনার চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।

আরাভ এসেছে এ বাড়ি শুনেছে শানের বিষয় টা। মেন দরজায় আসতেই সামনে মুনিয়াকে দেখে।

” তোমার ভাই কোথায়?

” শান ভাইয়া?

” হ্যাঁ।

” ভাবির সাথে রুমে।

” সিরিয়াস কিছু আই মিন ভয়ের কিছু নেই তো।

” না ডক্টর বলছে চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে যাবে।

” ওহ্।

আজ আঠারো দিন পর মুনিয়া আরাভ কে দেখলো। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। কেমন যেনো লাগছে দেখতে তাকে। আরাভের অস্বস্তি হয় মুনিয়ার চাহনিতে। মেয়েটা কিভাবে যেনো তাকিয়ে থাকে। গভীর সে চাহনি কিছা একটা থাকে সেই চাহনিতে। মুনিয়ার দৃষ্টি সরানোর জন্য কেসে উঠে আরাভ। মুনিয়া নিজের দৃষ্টি আরাভের থেকে সরিয়ে আনে।

” আচ্ছা আসি মুনিয়া। পরশু যাচ্ছো তো তোমরা?

” হ্যাঁ যাচ্ছি।

” ওহ্ আচ্ছা তাহলে বিডিতে দেখা হচ্ছে।

কথাটা বলে আরাভ শানের সাথে দেখা করে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে।

#চলবে?

( কমেন্ট করে ভুল ধরিয়ে দিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here