#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৩২
#হুমাইরা_হাসান(যবনিকাংশ)
– কিসের জন্যে এখনো অপেক্ষা করে বসে আছেন ভাইজান, আগাছা যত তাড়াতাড়ি উপড়ে ফেলা যায় ততই ভালো, না তো সেটা ধীরে ধীরে পুরোটাকেই নিজের লতা পাতায় গ্রাস করে ফেলবে!
নিগূঢ় নিস্তব্ধতায় সামনের ব্যক্তিটির কয়েকটি বাক্যবাণ টা পিনপতন নীরবতা চূর্ণ করে ঝংকার তুললো মস্তিষ্কে। চায়ের পেয়ালাতে লম্বা চুমুক দিয়ে কাউচের হেডসাইডে মাথা এলিয়ে দিল। চোখ বুজে এলো গভীর চিন্তায়। হাতের তর্যনীতে ঠকঠক জাতীয় শব্দ করলো কাউচের হাতলে। মৌনতা বজায় রাখা অবস্থাতেই আবারও সামনের কণ্ঠস্বরটা ব্যপক উৎকণ্ঠা মিশিয়ে বলল
– কয়েক মাস আগের কথা কি ভুলে যাচ্ছেন ভাইজান? মাহবুবের জন্য কি ঝামেলাটাই না পোহাতে হয়েছিল, শুধুই কি ঝামেলা ও তো বি’ষের মতো উঠেপড়ে লেগেছিল সব ধ্বং’স করে দিতে। ঠিক শেষ মুহুর্তের আগেই যদি ওকে শেষ না করে দিতাম তাহলে ফলাফল টা কি হতো বুঝতে পারছেন? বাইশ বছর ধরে যেটাকে আড়ালে রেখে সামলে চলেছি, যার জন্যে আজ এতো কিছু তার রহস্যভেদ হলে কোথায় পৌঁছাতাম ভাবতে পারছেন?
– তুমি তাহলে কি করতে চাইছো?
– সাপের রক্ত থেকে সাপ ই তৈরি হবে, বিষদাঁত গজানোর আগেই উপ’ড়ে ফেলেন ভাইজান।
– যাকে উপ’ড়ে ফেলার কথা বলছো সে কার আয়ত্তে, কার হাতের মুঠোয় আছে সেটা কি করে ভুলে যাচ্ছো? তার সম্পদে হাত দেওয়ার দুঃসাহস দেখাবো বলছো?
– ওকে এতোটা কেনো ভয় পাচ্ছেন কি করবে ও..
পুরো কথাটা শেষ করার আগেই চোখ খুলে তাকালো, ঠেস দেওয়া শরীর টা সোজা করে বসে দুহাতের মুষ্টি দৃঢ়তর করলো, শক্ত চোয়ালে চোখে চোখ রেখে বলল
– ভয় কেনো পাচ্ছি ভুলে যাচ্ছো? মাজহাব কে ভুলে গেছো? ওর ক্ষমতা দাপটকে এতো দ্রুত মন থেকে মুছে ফেললে? বাঘের ঔরসে বাঘ ই জন্মায়
– যাকে বাঘ বলছেন তাকেও কিন্তু আমরাই শেষ করেছি। ক্ষমতা, শক্তি থেকেও যেটা ভয়ংকর সেটা হলো কূটনীতি। আমার মনে হয় না ও তেমন কিছু করতে পারবে।
– সেই পরিস্থিতি আর আজকের পরিস্থিতি আকাশ পাতাল তফাৎ। চল্লিশ ভাগ শেয়ারে তিনজন কি করবে?
– ওটা তো জনসম্মুখ ঠেকানোর চেহারা মাত্র। আসল ব্যবসা টা তো এতো সহজে ভেস্তে যেতে দিতে পারিনা ভাইজান। আপনি পারলেও আমি পারবো না। আমার কাছে সম্পদের চেয়ে বেশি কেও না, এটা হাসিল করার পথে যেই সামনে আসবে আমি তাকেই গোড়া থেকে উ’পড়ে ফেলবো। আপাতত এই চুনোপুঁটিকে সরাতে হবে
– পেনড্রাইভ টা কিন্তু এখনো আমরা হাত করতে পারিনি! ওটার জন্যেই আমি শান্ত হয়ে আছি। খোদা না করুক ওটা যদি একবার হাত লেগে যায় যাকে চুনোপুঁটি বলছো বিষদাঁত বসাতে এক বিন্দু ছাড় দেবে নাহ। ওর মুখে আমি ঔদ্ধত্য দেখেছি, ভয়হীনতা দেখেছি। বছর খানেক আগে যেই জৌলুশ, দাপটের জন্য দমে যেতে হয়েছিল আমাদের লক্ষ কোটির কারবার সেই দুঃসাহস আমি ওর চোখে দেখেছি। যতটা সহজভাবে নিচ্ছো ততটাও নাহ
কথা গুলোর স্বর আস্তে আস্তে আরও ক্ষীণ হয়ে আসতে লাগলো। শীর্ণা শ্রবণশক্তি ওতটা ঠাওর করে উঠতে পারলো না। তবে শ্রবণযন্ত্র ভেদ করে যতটুকুই এসেছে তা পরিস্থিতি বুঝতে কাফি।
খুব আস্তেধীরে ধীর পায়ে সরে এলো দরজা থেকে। নিঃশব্দে প্রস্থান করে হটে এলো। ঘরে এসেই খিল তুলে ধরলো। অস্থিরতা, দুঃশ্চিন্তায় দরদর করে ঘাম ছুটছে দূর্বল শরীর বেয়ে, বছর খানেক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা আবারও বুকের মাঝে হানা দিচ্ছে।
এবার শুধু একটা খু’ন না, রক্তারক্তির তাণ্ডব হবে। দীর্ঘকালীন স্মৃতিতে আড়ষ্ট মস্তিষ্কে খেঁই গুলো বারংবার বিদ্যুতের ন্যায় ঝলকানি দিচ্ছে, বিড়বিড় করে অস্পষ্ট গলায় বারবার আওড়ালো
– ম’রবে, তোমরা সবাই ম’রবে। কেউটে ভেবে উড়িয়ে দিচ্ছো যতো সহজে সে যে শঙ্খচূড় হয়ে দংশ’ন করবে খুব শীঘ্রই বুঝতে পারবে। চোখের সামনে তিনটা মাসুম কে ম’রতে দেখেছি। পাপের ষোলোকলা পূর্ণ হবে তোমাদের এবার, নিয়তি কোথায় ফেলবে হাড়েহাড়ে বুঝতে পারবে পাপী’ষ্ঠের দল।
_________________________
দীর্ঘায়িত রজনী টার যেনো চোখের পলকে অবসান হলো। এই তো মাত্র যেনো চোখ দু’টো লেগেছিলো, কিয়ৎকালের ব্যবধানে যেনো ঘুমটা ছুটে গেলো।
ঘুমের মাঝে নড়েচড়ে উঠলো মোহর,
টিপটিপ করে নেত্রদ্বয় খুলে তাকালো। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে পাশে তাকালেই আঁখিদ্বয় সুস্থির হলো অতিশয় সুপুরুষের পানে।
প্রশস্ত পিঠ মেলে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, নীলচে-কালো রঙের টি-শার্টটা কুচকে লেপ্টে আছে পুরুষালি শরীরে। মোহরের বিপরীতে মুখ ঘুরিয়ে রাখায় মুখটা স্পষ্ট না দেখতে পেলেও ঘাড়ের পেছনে দৃষ্টিকর্ষনীয় লালচে তিলটা একেবারে চুম্বকের ন্যায় চোখে বিঁধে গেল মোহরের। মেহরাজের যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য মোহরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে তার মধ্যেই একটি ঘাড়ের এই লালচে তিলটা।
কেমন যেনো দেখলেই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে, কিয়ৎক্ষণ জহুরি নেত্রে চেয়ে রইলো মোহর, পরক্ষণেই নিজের অজান্তেই ঝুঁকে এলো খানিক। মেহরাজের শরীরের কড়া ঘ্রাণ টা খুব নিকট থেকে মোহরের নাকে লাগছে। ঝট করেই গতরাতের কথা মনে পড়ে গেলো মোহরের, মেদুর গালখানা অচিরেই লালাভ টকটকে আভায় রক্তাভ হয়ে উঠলো। মানুষটার বৈশিষ্ট্য, চরিত্র যতটাই শান্ত সমুদ্রের ন্যায়, তার পাগলামি কথা গুলো ঠিক সেই সমুদ্রেরই উপচে পড়া উথাল-পাথাল ঢেউয়ের ন্যায়।
কেমন মোহাচ্ছন্নের ন্যায় আলতো ভাবে মোহরের আঙ্গুল ছুঁয়ে দিল মেহরাজের ঘাড়ের তিলতুল্য লালচে বিন্দু টা। শরীর জুড়ে অনবদ্য অনুভূতি গুলো বিস্ফোরণের স্বরূপ ছুটতে লাগলো।
অযাচিত অনুভূতি গুলোর অবাধ্যতা দেখে নিজেকে দূর্বশ ইচ্ছে গুলো প্রাণপণে আগলে নিলো মোহর।
সরে আসতে নিলেও টান পড়লো ওড়নাতে, ওড়নার টান পড়া অংশটা অনুসরণ করে তাকালেই অকল্পনীয় দৃশ্য টুকু দেখে থমকে গেলো হৃদস্পন্দন। মেহরাজ নিজের হাতের মুঠোয় ওড়নার একাংশ মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে, বন্ধনটা এতটাই দৃঢ যে হাতের ফাঁকফোকর দিয়ে বাতাস ও ঢুকছে কি না সন্দেহ।
মোহর আলতো ভাবে বার কয়েক চেষ্টা করলো ওড়নাটা ছাড়িয়ে নেওয়ার কিন্তু মেহরাজের দৃঢ়মুষ্টির সাথে পেরে উঠলো নাহ। ঘুমের মাঝেও কেও এতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে পারে!
মোহর ওড়না টা ওভাবেই রেখে উঠে কাবার্ড খুলে অন্য একটা ওড়না পরে ফ্রেশ হতে গেলো।
_____________________
– এখানে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি দোস্ত?
– আরে সিগনেচার না করিয়েই চলে যাবো নাকি!
– আচ্ছা আমি দাঁড়াচ্ছি নিচে। তুই ঝটপট সাইন টা করে নিয়ে চলে আই
মোহর ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলে শ্রীতমা। তড়বড় করে নিচে নেমে গেলো। মোহর দাঁড়িয়ে আছে ফায়াজের কেবিনটার সামনে। হাতে চেপে রাখা বেশ মোটা সোটা একটা ফাইল।
ফাইল নয় অ্যাসাইনমেন্টের পেপারস। যার সাইন করানো গতদিনই শেষ। কিছু কারণ বশত মোহর যথাযথ সময়ে কমপ্লিট করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই আজকে সাইন করাতে এসেছে। অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে আছে কারণ অন্য সেকশনের প্রফেসর এসে গল্প জুড়েছে ফায়াজের সাথে।
বেশ অনেকক্ষণ সময় পার করে বেরোলো সে, অবিলম্বেই মোহর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠকঠক জাতীয় শব্দ করলো করলো দুবার।
ফাইল গুলো গুঁছিয়ে মাত্রই চেয়ার ছেড়ে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ফায়াজ, শব্দের উৎসটা খেয়াল করে দরজা বরাবর তাকিয়ে বহুকাঙ্ক্ষিত চেহারাটা দেখেই এক পলকের জন্য থমকে গেলেও পরমুহূর্তে চোয়াল শক্ত স্বাভাবিক করে নেয়।
– আসতে পারি স্যার?
কিঞ্চিৎ ঘাড় নাড়িয়ে অনুমতি দিলো ফায়াজ। চেয়ারটাতে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো। মোহর এগিয়ে এসে হাতের ফাইলটা ফায়াজের সামনে রাখলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপণ না করেই সোজা তাকিয়ে বলল
– এটা কি?
– স্যার লাস্ট মান্থের ক্যাম্পিং’র ইনফরমেশনের অ্যাসাইনমেন্ট।
– এটা জমা দেওয়ার ডেট এক্সপায়ার্ড মিস মোহর।
মোহর বিব্রত হলো নাহ। উত্তর জানা সত্ত্বেও ফায়াজের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তা ওর জানা। অকপটেই উত্তর করলো
– স্যার লাস্ট মান্থ আমার মায়ের ডেথ আর কিছু পারসোনাল ইস্যুর কারণে লম্বা সময় গ্যাপ পরেছে যার আওতায় এই ক্যাম্পিং টাও ছিল। যেহেতু আমি নিজে পার্টিসিপ্যান্ট করতে পারিনি তাই অন্যদের থেকে ইনফরমেশন কালেক্ট করে প্রিপেয়ার করতে একটু বেশি সময় লেগে গেছে। আমি দুঃখিত।
ফায়াজ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মোহরের দিকে খানিক। মেয়েটার চেহারা যেনো আরও উজ্জ্বল, আরও স্নিগ্ধ হয়েছে দিনকে দিন। তাকালে তাকিয়েই থাকতে মন চাই, তবুও সেই অযাচিত ইচ্ছে টাকে দমিয়ে প্রত্যুত্তর হীনা ফাইলটা এগিয়ে নিলো। পৃষ্ঠা উলটে সই করতে করতে আড়চোখে তাকালো নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির পানে।
– থানা থেকে ফোন এসেছিল মোহর!
আচানক যেনো ফায়াজ আগের রূপে ফিরে এলো। সেই আগের ন্যায় উৎকণ্ঠিত গলায় বলল কথাটা, মোহর ঘাড় তুলে তাকালেও কথাটির মর্মার্থ টুকু মস্তিষ্কে হানা দিতেই চোখ ভরে এলো, কিন্তু তা প্রকাশ করলো না। তথাকথিত ছাত্রীর ন্যায় নিয়মনিষ্ঠ ভাবে বলল
– স্যার থ্যাঙ্কিউ সাইন করে দেওয়ার জন্য। এরপর থেকে দেরী হবে না আশা করছি।
– তুমি আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছো মোহর?
বেশ উচ্চরবে বলল ফায়াজ। কণ্ঠে একরাশ হতাশা আর বিহ্বলতা। মোহর সেদিকে মনোনিবেশ না করার ন্যায় বলল
– আপনার কথাকে এড়িয়ে যাওয়ার মতো অকৃতজ্ঞ আমি নই। আমি শুধু বিষয় টাকে এড়িয়ে যাচ্ছি
– কেনো এড়িয়ে যাচ্ছো? তুমি কি সব ভুলে যাচ্ছো? কোথায় গেলো তোমার জেদ তোমার ন্যায়, সত্যতা? নাকি বিয়ে সংসার করে নিজে অতীত টা ভুলে যাচ্ছো? ভুলে যাচ্ছো তোমার লক্ষ্য প্রতি…
– স্যার প্লিজ! অনুরোধ করছি এই বিষয় টা আমার সামনে তুলবেন নাহ। আমিতো চেষ্টা করেছি? কমতি তো রাখিনি, ফলাফল কি? শূন্য!
আমি জানি আমি যতই দৌড়াই চিৎকার, চেঁচামেচি করি তা কারো কান অব্দি যাবে না কারণ আমার না আছে কোনো ক্ষমতা নাইবা যোগ্যতা। এই সমাজ আমাদের মতো গরীব মানুষের প্রতি সহানুভূতি, ন্যায়পরায়ণতা দেখায় না স্যার। তাই আমি ছেড়ে দিয়েছি। সবটা ছেড়ে দিয়েছি খোদা তায়ালার উপরে। শুধুমাত্র তার উপরেই বিশ্বাস করে বসে আছি। কারণ আমি জানি আমার রব ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।
একসাথে এতগুলো কথা বলে দম ছাড়লো মোহর। না চাইতেও কান্নাগুলো উগড়ে বেরিয়ে আসছে ভেতর থেকে। চোখ ফুড়ে দুফোঁটা গড়িয়েও পড়লো। ফায়াজ এগিয়ে এলো চেয়ার ছেড়ে মোহরের সামনে এসে দাঁড়ালে মোহর দুকদম পিছিয়ে গেলো। হাত সামনে বাড়িয়ে অনুরোধের স্বরে বলল
– আপনি আমাকে শুরু থেকেই অনেক সাহায্য করেছেন স্যার। আমি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে। শুধু আরেকটা অনুরোধ এই কথাটা আর কোনোদিন ও তুলবেন না আমার সামনে। আমি সহ্য করতে পারিনা।ওদের বলবেন কে’সটা আমি আর এগোতে চাইনা। যা হয়েছে ওখানেই ডিসমিস। খুব কষ্টে নিজেকে সামলেছি, শক্ত করেছি। আর ভাঙতে পারবোনা
কথার সাথে ফুঁপিয়ে উঠলো। ফায়াজের বুকের ভেতর কেমন একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হলো মোহরের চোখের পানি দেখে। এগিয়ে এসে পরম যত্নে হাতটা মোহরের মাথার উপরে রাখলো, স্নেহমিশ্রিত গলায় বলল
– ঠিকাছে, আর বলবোনা। যা কিছু তোমাকে কষ্ট দেয় তা আমি কখনো তোমাকে ছুঁতে দেবো নাহ। আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে, সরি!
মোহর শান্ত হলো। চোখের পানি মুছে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে বলল
– আমি কষ্ট পাইনি স্যার। আমার কোনো কষ্ট নেই।
ফায়াজ জবাবে মৃদু হাসলো। টেবিলের উপর থেকে চশমাটা তুলে মোহরের সামনে এসে বলল
– চলো এগোয়। আমিও বেরোবো।
মোহর জবাব হীনা বেরিয়ে এলো। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেইটের সামনে এলে ব্যাগ থেকে ফোনটা ভেজে উঠতেই হাঁটা গতি কমিয়ে ফোন টা বের করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে শ্রীতমার কণ্ঠস্বর।
– ভাবীই আমি এইদিকে..
বলে এক ছুটে দৌড়ে এলো সাঞ্জে। মোহর এক হাতে কানে ফোনটা ধরেই সামনে তাকিয়ে সাঞ্জেকে থামতে বলার আগেই মোহরের পাশ কাটিয়ে ফায়াজ এগিয়ে বের হতে নিলে একদম সাঞ্জের সামনে এসে পড়লো।
অকস্মাৎ দৌড়ের গতি থামাতে গিয়ে বেতাল হয়ে ধাক্কা লাগলো ফায়াজের বুকের সাথে। ধড়াম করে পড়লো রাস্তার উপরে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনায় মোহর এখনো থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে, ফোনের ওপাশ থেকে শ্রীতমার ‘ হ্যালো? হ্যালো’ বলা চিকন কণ্ঠটা কানে এলেও মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারলো নাহ। এগিয়ে গিয়ে শ্রীতমাকে ধরতে গেল।
– ঠিক আছেন আপনি? আই’ম সরি আমি খেয়াল করিনি আপনাকে
ভরাট ধীরস্থির কণ্ঠে সাঞ্জে হা করে তাকিয়ে রইলো। কিভাবে কি হলো এটুকু বুঝে ওঠার আগেই একটা লম্বা চওড়া ছেলে ওর সামনে হাঁটু মুড়ে বসে হাত বাড়িয়ে ধরলো। আগামাথা না বুঝেই হাত বাড়িয়ে দিলো আগন্তুকের দিকে। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা অবস্থায়ই পুরুষটি আবারও বলল
– ঠিক আছেন? কোথাও লেগেছে?
সাঞ্জে হতবুদ্ধির ন্যায় ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে না বলল। হাতের আইসক্রিম টা মাটিতে পিষে হাতের কনুই আর জামাতে লেপ্টে গেছে। ফায়াজ সেদিকে লক্ষ্য করে পকেট থেকে টিস্যুর ছোট প্যাকেট বের করে সাঞ্জের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
– আপনার হাতটা মুছে নিন
ততক্ষণে মোহর এগিয়ে এলো সাঞ্জের কাছে। ওকে ধরে ব্যস্ত গলায় বলল
– সাঞ্জে কোথাই লেগেছে দেখি? তুমি যে কি করো না, কেনো যে দৌরাতে গেলে!
বলে সাঞ্জের জামা হাতে ঝেরে দিতে লাগলো। সাঞ্জে তখনও সুস্থির নেত্রে তাকিয়ে ফায়াজের দিকে, যার কৌতুহলী নজর একবার সাঞ্জে কে দেখছে তো একবার মোহরকে।
– ও তোমার পরিচিত মোহর?
ফায়াজের প্রশ্নে মোহর ব্যস্ত স্বরেই বলল
– জ্বি স্যার ও
– আপনি যাকে মোহর বলছেন সে আমার ভাবী।
নরম প্রাণোচ্ছল কণ্ঠে এবার প্রসারিত নয়নে তাকালো কিশোরী চেহারায়। বেশ গোলগাল ধাচের চেহারা, উজ্জ্বল বর্ণ। পরনে লম্বাটে ফ্রকের ন্যায় পোশাক । চুলগুলো উঁচু করে ঝুটি করা। মায়াভরা চেহারাটায় একবার তাকালে চোখে পড়ার মতন।
– ওহ। আমি দুঃখিত মিস। আমার একটু খেয়াল করা উচিত ছিলো।
– সরি। আমিই রাস্তায় না দেখে ছুটোছুটি শুরু করেছি। এমনটা করা উচিত হয়নি আমার।
অপরাধীর ন্যায় চেহারা করে বলল সাঞ্জে। মুখটা বাচ্চাদের মতো ছোট করলো। ফায়াজ মৃদু হাসলো সাঞ্জের মুখাবয়ব দেখে।
– নেক্সট টাইম থেকে দেখে ছোটাছুটি করবেন তাহলে।
বলেই ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেলো নিজের গাড়িটির উদ্দেশ্যে। পেছনে একটা বারও না ফিরে চোখের আড়াল হয়ে গেলো নিমিষেই। ফায়াজের যাওয়ার পানে একধীমে চেয়ে সাঞ্জে টেনে টেনে বলল
– উনি আমাকে দেখে হাসলো কেনো ভাবী
– ওটা তোমার দেখতে হবে নাহ। তুমি একা কেনো একা আসতে গেলে বলো তো। এসো,চলো
বলে সাঞ্জের হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। সাঞ্জে হাঁটতে হাঁটতে বলল
– বাড়িতে একা বোর হচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম রায়হান আঙ্কেল যখন আসছে তোমাকে নিতে আমিও আসি। আমি কি জানতাম নাকি যে ধপ করে ধাক্কা লেগে থপ করে পড়ে যাবো
.
.
.
চলমান।
#হীডিংঃ শুরুতেই যখন যবনিকাংশ কথাটা উল্লেখ করে দিয়েছি তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এখানকার বাক্য সংলাপ, সহ অনেক কিছুই অস্পষ্ট থাকবে। তাই ধৈর্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো। পরিস্থিতি সাপেক্ষে সবটা খোলাসা হবে ইনশাআল্লাহ
©Humu_❤️