#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২২(বোনাস)
#Raiha_Zubair_Ripte
হসপিটালের কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আরহাম, মুনিয়া ও তার বাবা। ভয় পাওয়ার কিছু নেই সামান্য মাথা ব্যাথা থেকে এমন টা হয়েছে এটা বলেছে ডক্টর বাড়ির লোকদের কিন্তু এটা যে শানের রোগের থেকেই উৎপত্তি হয়েছে সেটা বলেনি। শান বলতে নিষেধ করেছে। নাকের চারপাশে থেকে র’ক্ত মু’ছে কিছু মেডিসিন দেয় ডক্টর শান কে।
” তোমাকে বলেছিলাম না আমার সাথে দেখা করতে? দেখা করে গেলেই এমন সিচুয়েশনে পড়তে না।
ডক্টর জেলেক্স কথাটা বলে উঠলো।
” আসলে ডক্টর বুঝতে পারি নি এমনটা হবে।
” তোমার রোগ এখনো সেরে যায় নি শান বি কেয়ারফুল। সবে সবে এক ডোজ দেওয়া হয়েছে কয়েক মাস এই চিকিৎসার মধ্যে তোমায় থাকতে হবে। সাবধানে চলাচল করো আর ডোন্ট ওয়ারি তোমার পরিবার কে বলেছি ভায় পাওয়ার কিছু নেই মাথা ব্যাথার কারনে জাস্ট এমন হয়েছে।
” থ্যাংস ডক্টর।
শান উঠে দাঁড়ায় আগের চাইতে খানিকটা ভালো লাগছে। হাত ঘরিটায় চেয়ে দেখে এখনো সময় হয় নি আরো ঘন্টা খানেকের মতো সময় আছে যেহেতু বিয়ে টা রাতে। আব্রাহাম ছেলের কাছে আসে। এক হাত দিয়ে ধরে বলে,,
” আর ইউ ওকে শান, ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে তোমায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকতে দেখে চমকে গিয়েছিলাম আমরা।
” চিন্তা করো না বাবা ঠিক আছি আমি।
মুনিয়া এসে শান কে জড়িয়ে ধরে। কেঁদে দেয়।
” কাঁদছিস কেনো আমি ঠিক আছি।
মুনিয়া ছেড়ে দেয়। আরহাম এসে জড়িয়ে ধরে ভাইকে।
” হয়েছে এবার চলো ও বাড়ি যেতে হবে তো। ও বাড়িতে কিছু জানানো হয় নি।
আব্রাহামের কথায় সায় জানায় সবাই বেরিয়ে যায় হসপিটাল থেকে।
————-
হেফজিবা দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। কান পেতে তার দূর সম্পর্কের খালা আর কাজিনের কথা শুনছে। তার খালা তার ছেলের সাথে তার বিয়ে দিতে চাইছে হেফজিবার সম্পত্তির জন্য। কথাটা শুনে ঘৃণায় চোখ মুখ কুঁচকে এলো। জীবনে শান্তি নেই, হুটহাট সিদ্ধান্ত মানুষকে আরো বিপদে ফেলে হেফজিবা আরাভের মায়া ভুলতে যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিল সে তার সম্পত্তির জন্য তাকে বিয়ে করছে। ভাগ্যিস তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে হেফজিবা অফিসে থেকে অনেক ভেবেছে তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না। একজনকে মনে রেখে অন্য জনের সাথে তো সংসার করেছিলো কি পেলো? এখন সেই মানুষকে মনে রেখে আবার অন্য কাউকে বিয়ে তার পক্ষে সম্ভব না। আরাভ কে পায় নি ভাগ্যে ছিলো না বলে। তাই বলে আবার অন্য সম্পর্কে জড়াবে? অনেক ভেবেছে বিষয়টা নিয়ে। আজ সকালেই যখন তার খালা বিয়ের কথা বললো তখন সেটা এনাকে জানিয়েছে কারন আরাভ জানুক সে কাউকে বিয়ে করে অন্তত হ্যাপি আছে।
আরাভ কে ভুলতে চায় না হেফজিবা কেনো যে সে এতোবড় ব্লান্ডার করতে যাচ্ছিল বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবিয়ে করিয়ো কাজ,করিয়া ভাবিও না। তাহলে পস্তাতে হবে। সত্যি আরকেটু হলে পস্তাতে হতো। এই জীবন নিয়ে তিক্ত ধরে গেছে হেফজিবার।
আর একটু হলে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলতো। তাদেরই বা দোষ দেয় কিভাবে হেফজিবা। দোষ তো তার নিজের সেখানে অন্যকে কি করে কিছু বলবে। হেফজিবা আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না,নিজের রুমে এসে কাপড় প্যাক করে বেরিয়ে যায় বাসায় থেকে। আর একমুহূর্ত ও এ বাড়ি থাকবে না।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে আর কখনো কোনো সম্পর্কে নিজেকে জড়াবে না হেফজিবা। বাকিটা জীবন একাই কাটাবে। বোঝা উচিত ছিলো তার, কি করে সে এতো তাড়াতাড়ি এসবে নিজেকে জড়াতে যাচ্ছিলো। ঘৃণা হচ্ছে এখন নিজের উপর হেফজিবার।
******
পাশাপাশি বসে আছে এনা আর শান। শান কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু হয়েছে, কিন্তু এনা হাজার বার জিজ্ঞেস করেও পায় নি উত্তর। ছেড়ে দিয়েছে জিজ্ঞেস করা। কাজি সাহেব শান কে কবুল বলতে বলে শান একবার এনার পানে চেয়ে কবুল বলে দেয়। এবার এনার পালা। এনাকে কবুল বলতে বলে। এনা নিশ্চুপ শান এনার হাতটা ধরে ভরসা দেয় চোখের ইশারায়। এনা স্মিত হাসে। একবার সমানে বসে থাকা বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে কবুল বলপ দেয়। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।
হেনা বোনকে জড়িয়ো ধরে। এবার এনা কেঁদে দেয়। এনামুল হক এগিয়ে আসেন। এনা হেনা কে ছেড়ে বাবা কে জড়িয়ে ধরে। এনামুল সযত্নে মেয়েকে আগলে নেয়। আরমান শেখ ও আদুরে ভাস্তি কে জড়িয়ে ধরে। শানের হাতে এনাকে তুলে দিয়ে বলে এনামুল,,
” আজ থেকে আমার ঘরের এক কলিজা কে তোমার হাতে তুলে দিলাম কখনো অযত্ন অবহেলা করো না। কখনো যদি মনে হয় আমার মেয়ে বেশি হয়ে গেছ তাহলে শুধু একবার বলে দিয়ো আমি নিয়ে যাবো আমার মেয়েকে।
শান এনার হাত ধরে দৃঢ়তা নিয়ে বলে,,
” চিন্তা করবেন না বাবা আমি কখনো এনার অযত্ন হতে দিবো না। এই যে হাত ধরেছি আর কখনোই ছাড়বো না।
এনামুল প্রশান্তি পান।ছেলেটার উপর আস্থা আছে। যাই হোক মেয়েকে কষ্ট পেতে দিবে না।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে শান এনা কে নিয়ে চলে আসে তাদের বাড়ি।
মারুয়া বেগম সব আচার-অনুষ্ঠান করে ছেলের বউকে ঘরে তুলে। মুনিয়া এনা কে তার ভাইয়ের রুমে নিয়ে যায়। হরেক রকম ফুল দিয়ে আজ সাজানো হয়েছে রুমটা।সেই সাথে ফেইরিলাইট্স লাগানো। পুরো রুম থেকে হরেক রকমের ফুলের ঘ্রান ভেসে আসছে। মুনিয়া এনাকে বিছানায় বসিয়ে বাহিরে চলে আসে। এনা পুরো রুম ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। ভারি লেহেঙ্গায় বেশ অস্বস্তি হচ্ছে এনার তাই ল্যাগেজ থেকে একটা কুর্তি বের করে ওয়াশরুমে গিয়ে পাল্টে নেয়। শান রুমে এসে দেখে তার বউ ঘরে নেই বেলকনিতে গিয়ে দেখে সেখানেও নেই। হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজে বুঝতে পারে বউ তার ওয়াশরুমে। ওয়াশরুম থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ায় শান। এনা মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই সামনে শান কে দেখে ভরকে যায়। মেকি হাসি দিয়ে টাওয়েল টা নিয়ে বেলকনিতে মেলে দেয়। শানের মেজাজ তুরক্ষে। কোথায় বউয়ের সাজ্জিত মুখ দেখবে তা না বউ তার গোসল করে বের হয়েছে। এনার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
” লেহেঙ্গা পাল্টিয়েছো কেনো?
” আসলে খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো। অতো ভারি লেহেঙ্গা পড়ে আর টিকতে পারছিলাম না। তাই।
মুহূর্তে রাগান্বিত চেহারা শীতল হয়ে আসলো।
” খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো?
” হুমম।
” বাসর রাতটা কি এভাবেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কাটাবে?
” আপনি চাইলে এবাবে কাটাতে আমার অসুবিধা নেই।
” আমি যদি অন্য ভাবে কাটাতে চাই তাহলে কি অন্যায় হবে?
” মোটেও না আপনার যেভাবে খুশি কাটান।
সহসা শান এনাকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়।
এনা শানের বুকে মুখ গোজালো। শান স্মিত হেসে এনাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কাথাটা শরীরে টেনে দিয়ে কপালে চুমু একে দিয়ে বলে,,
” ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে।
কথাটা বলে নিজেও এনার পাশে এনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। এনার রাগ হয় মানুষটা এমন কেনো। আজ তাদের বাসর রাত কোথায় একটু রোমান্স করবে তা না। শান এনার রাগান্বিত চেহারা দেখে চোখ বুঝে হাসে। শরীর টা তার ভালো লাগছে না। শরীর টা ভালো হোক সব রাগ ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবে। আপাতত সুস্থ হওয়া জরুরি। রাগ নিয়েই ঘুমের দেশে পারি দিলো এনা।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ে এনা। দেখে শান জড়িয়ে ধরে আছে। এনা শানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। মারুয়া বেগম এনাকে এতো সকাল নিচে নামতে দেখে তড়িঘড়ি করে বলে,,
” কি ব্যাপার এতো সকাল নিচে তুমি কিছু দরকার?
” না মনি এমনি নিচে আসলাম আপনায় হেল্প করতে।
” বাচ্চা মেয়ে তুমি হেল্প করা লাগবে না। কয়েকদিন পর থেকে তো এই সংসার তুমিই সামলাবে এখন রেস্ট নাও।
এনা মাথা নাড়িয়ে আবার রুমে চলে আসে। ফোনটা নিয়ে হেনাকে ফোন দেয়। হেনা ফোনে কথা বলছিলো এনার ফোন আসায় ফোন কে’টে এনাকে ফোন দেয়।
” বোন ললিতা কোন কোন জায়গায় তো’র ব্যাথা লো।
” ধূর কি বলিস।
” ওমা কি বললাম, এতে সকাল সকাল উঠছিস যে?
” ঘুম আসছিলো না।
” সারা রাত ঘুম হয়েছে তো?
” হ্যাঁ হয়েছে।
” শোন এনা পরশু আমরা বাংলাদেশে ব্যাক করছি।
” থেকে যা না তুই।
” আমি এখানে থেকে একা একা কি করবো?
” আমার দেবরের সাথে রেখে দিবো তোকে।
” ধূর কি বলিস। তোর দেবর মনে হয় আমায় ভালোবাসে।
” সত্যি!
” হ্যাঁ বলে কি-না বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখবে। ও তো জানে না আমার অর্ধেক বিয়ে হয়ে গেছে।
” জানলে নির্ঘাত ছ্যাকা খাবে রে।
” হয়তো
” ব”জ্জাত মেয়ে আচ্ছা রাখি পরে কথা হবে আজ আসবি তো নাকি?
” হ্যাঁ আসবো।
কথা বলে এনা ফোন কেটে দেয়
এনার বাড়ির লোক সবাই এসেছে এ বাড়ি।মুনিয়ার চোখ না চাইতেও বারবার আরাভের দিকে চলে যাচ্ছে। লোকটা সামনে আসলে শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আরাভ এখনে হেফজিবাতে মগ্ন,বিয়ের কথা শোনার পর বড় মুখ করে বলেছিল সে নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছে আদৌও কি সামলিয়ে নিতে পেরেছে? ফারাহ্ সোফায় বসে আছে দিনকে দিন শীরর তার খারাপের দিকেই যাচ্ছে কোনো কিছু খেতে পারে না।
এনামুল হক বউ আর মেয়েকে নিয়ে পরশু রওনা হবে বাংলাদেশে। হেনার ও সামনে বিয়ে। এবার ফিরে হেনার বিয়ের ব্যাবস্থা করতে হবে।
” বেয়াই সাহেব আপনাদের পুরো পরিবারে দাওয়াত নয় বরং অনুরোধ রইলো সামনে হেনার বিয়ে সপরিবারে আমার মেয়ে হেনার বিয়েতে আসবেন। পরশুই আমরা ব্যাক করছি বাংলাদেশে।
কথাটা আরহামের কর্ণকুহর হতেই অবাক হয়ে তাকায় হেনার দিকে। হেনার মুখে লেগে আছে হাসি। হেনার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে অথচ একটা বার হেনা বললো না?
#চলবে?
(গঠনা মূলক মন্তব্য করবেন। হ্যাপি রিডিং)