#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৬
#Raiha_Zubair_Ripte
“আরহাম হাত ছাড়ুন কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে। এটা কানাডা না।
হেনার হাত ছেড়ে দেয় আরহাম। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বুকে দু হাত গুঁজে বলে,,
” এটা কানাডা না বলেই ছেড়ে দিলাম হাত টা বেয়াইন সাহেবা। তবে মনে রাখবেন এর পর আপনার কথা মতো এবার হাত ছেড়ে দিয়েছি বলে পরের বার ও দিবো। তখন হাজার বললেও ছেড়ে দিবো না।
কথাটা বলে আরহাম বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। হেনা আরহামের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে ল্যাগেজ নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
ড্রয়িং রুমে বসে আছে ফারাহ্, আমান,মুনিয়া,আর হেনা। টেবিলে খাবার সাজাতে ব্যাস্ত দুই জা। আরমান সাহেব আর এনামুল বাড়ির আশেপাশ টা ঘুরে দেখছে। শান বিছানায় শুয়ে আছে শরীরের এলার্জির মাত্রা বেড়েই চলছে। এনা শানের পাশে বসে রয়েছে। হেনাকে ফোন করে এলার্জির ঔষধ আনতে বলে বাড়ির পাশের ফার্মেসী থেকে। হেনা নিজের রুমে এসে খুচরা টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হতে নিলে ফরিদা বেগম বলে উঠে,,
” কোথায় যাচ্ছিস?
” পাশের ফার্মেসী তে।
” কেনো কি হয়েছে?
” দরকার আছে তাই যাচ্ছি।
” আমাকেও নিয়ে চলুন বেয়াইন সাহেবা।
হেনা রাগান্বিত হয়ে তাকায়।
” আন্টি দেখুন আপনার মেয়ে কিভাবে তাকায়। আপনার মেয়ের কি উচিত না আমাকে একটু আশপাশ টা ঘুরিয়ে দেখানোর।
ফরিদা বেগম আরহামের কথায় সায় জানিয়ে শুধায়,,
” ঠিকই তো। এই হেনা আরহাম কে নিয়ে যা একটু ঘুরিয়ে আন।
” মা উনারা এখনো খান নি তো?
” তো কি হয়েছে আন্টি চাপ নিয়েন না আমি এয়ারপোর্ট থেকে খেয়ে এসেছি।
অগ্যতা অনিচ্ছুক থাকা শর্তেও হেনা আরহাম কে নিয়ে যায়। যতো চাইছে লোকটার থেকে দুরত্ব বজায় রাখতে ততোই লোকটা গা ঘেঁষে থাকতে চাইছে। বাসা থেকে বের হতেই সামনে ঝুলে থাকা খাঁচার ভেতর থেকে পাখি দুটো চেঁচিয়ে উঠে। হেনা পাশ থেকে পাখির খাদ্য বের করে খাবার দেয়। আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” আসুন দাঁড়িয়ে না থেকে।
আরহাম ভদ্র ছেলের মতো হেনার পেছন পেছন যায়। ফার্মেসীর দোকান থেকে এলার্জির মেডিসিন নিয়ে বাসায় চলে আসে ওরা।
রাত বাজে পনে আটটা। ডাইনিং টেবিলে বসে রাতের ডিনার করছে সবাই। নেই শুধু মুনিয়া, মুনিয়ার শরীর টা ভালো লাগছে না তাই রুমে শুয়ে আছে। খাবে না জানিয়ে দিছে। এনামুল হক সোফায় বসে বাদ পড়া আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দের ফোন করে বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছে। পাশেই বসে আছে বড় ভাই আরমান। দু’জনের খাওয়া সবার আগে শেষ। সবাই খাওয়া দাওয়া করে যে যার রুমে চলে যায়।
এনা কাল শান কে মেডিসিন খাইয়েছে। আপাতত আগের চাইতে ভালো লাগছে তার। শান কিছুক্ষন বাগানে পায়চারি করতেই দেখে তার শশুর এদিকটায় আসছে ।
” চলো শান এলাকা টা ঘুরিয়ে দেখাই।
শান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।
এনামুল হক মেয়ের জামাইকে নিয়ে আশেপাশ টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়। আর রাস্তা ঘাটে দেখতে পাওয়া পরিচিতদের সাথে শানের পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের মতো হাটাহাটি করে বাড়ি চলে আসে তারা। এনা হেনা মা আর চাচিকে হেল্প করছে সকালের নাস্তা বানাতে। রান্না ঘর থেকেই এনা শান আর বাবা চাচার আওয়াজ শুনে শানের জন্য কফি আর বাবা চাচার জন্য চা নিয়ে যায়। বাড়ির আর কেউ উঠে নি এখনো ঘুম থেকে। হেনা ব্রেকফাস্ট গুলো ডাইনিং টেবিলে সাজায়। ফরিদা বেগম হেনাকে বলে সবাইকে ডেকে আনার জন্য।
হেনা বাধ্য মেয়ের মতো সবাইকে ডাকতে যায়। মুনিয়ার রুমে গিয়ে মুনিয়াকে জেগে তোলে। আরাভ কে ডাকতে যেতে নিলে এনার সাথে দেখা হয়। এনা ও আরাভের রুমে যাচ্ছিল। হেনাকে দেখে বলে,,
” তুই আরহাম কে ডেকে উঠা,আমি তে আরাভ ভাইয়ের কাছে যাচ্ছিই।
হেনা মাথা নাড়িয়ে আরহামের ঘরের দিকে যায়। আরহাম উপর হয়ে শুয়ে আছে। হেনা দরজায় ঠকঠক শব্দ করে। এতে আরহামের বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে আসে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,,
” কে?
হেনা ঠোঁট দিয়ে জিহ্বা ভিজিয়ে নিয়ে বলে,
” আমি হেনা। মা ডাকছে খেতে তাড়াতাড়ি আসুন।
কথাটা বলে আর একমুহূর্ত ও দেরি করলো না চলে আসলো দরজার সামনে থেকে। আরহাম হেনার কন্ঠ শুনে হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে। দরজার দিকে চাইতেই দেখে হেনা নেই। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
ব্রেকফাস্ট করে সবাই শপিং এর জন্য বের হয়। বাসায় থাকে মুনিয়া, আরাভ আর রত্না বেগম। মুনিয়ার শরীর খারাপ। এ দেশের আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না।
শপিং মলের দোকানে এনা হেনার জন্য বিয়ের লেহেঙ্গা আর শাড়ি চয়েস করে দেয়। রুমানের আসার কথা থাকলেও শপিং মলে আসার পনেরো মিনিট পর ফোন দিয়ো জানিয়ে দেয় সে আসতে পারবে না। আরহাম হেনার পাশে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,
” এমন এক দায়িত্বহীন ছেলে কে বিয়ে করছেন বাহ যার কি-না হবু বউয়ের জন্য সময় নেই।
হেনা কটমট করে তাকায়।
” জাস্ট শাট-আপ হয়তো কোনো কাজে বিজি তাই আসতে পারে নি।
” পরশু আপনাদের বিয়ে শুনলাম আপনার হবু স্বামী ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে তাহলে আবার বিজি কেনো?
” আপনার সমস্যা কি?
” আমারই তো সমস্যা।
হেনা আর কথা না বাড়িয়ে এনার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
বাগানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে আরাভ। জানালা দিয়ে সেটা পর্যবেক্ষণ করছে মুনিয়া। রত্না বেগম পুরো বাড়িতে একা একা ফিল করায় মুনিয়ার রুমে আসে। দরজার সামনে এসে এক ধ্যানে মুনিয়াকে বাহিরে তাকাতে দেখে চুপিচুপি রুমে ঢুকে রত্না বেগম। মুনিয়ার ঠিক পেছন টায় দাঁড়িয়ে মুনিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই দেখে নিচে তার ছেলে। আরাভের দিকেই তাকিয়ে আছে মুনিয়া। এভাবে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ জাগে রত্না বেগমের। সহসা মুনিয়ার কাঁধে হাত রাখে। ভয়ে চমকে উঠে মুনিয়া। মুনিয়াকে চমকে উঠতে দেখে রত্না বেগম ভ্রু কুঁচকে ফেলে। রত্না বেগম কে নিজের রুমে দেখে ভয়ে ঢোক গিলে মুনিয়া। মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বলে,,
” আন্টি আপনি!
” হ্যাঁ আমি।
” কখন এলেন বুঝতেই পারি নি।
” আমি ও কিছু বুঝতেছি না।
” মানে?
” না মানে টানে কিছু না। একা বোর ফিল করছিলাম তাই গল্প করতে আসলাম।
” ওহ্ আচ্ছা আন্টি বসুন না।
কথাটা বলে রত্না বেগম কে হাতের ইশারায় বিছানায় বসতে বলে। রত্না বেগম ঘাড় উঁচিয়ে নিচে থাকা আরাভ কে একবার দেখে বিছানায় বসে। মুনিয়া ও এক পাশে বসে পড়ে।
——————
সন্ধ্যা হয়ে গেছে কেবলই এনারা ফিরেছে শপিং থেকে। ড্রয়িং রুমের টেবিল টায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শপিং এর ব্যাগ গুলো। সবাই টায়ার্ড এই গরমে শপিং করে। এনামুল হক ফোন কানে নিয়ে নিজের রুম থেকে বের হয়। রুমানের বাবা রবিউল খান ফোন দিয়েছে। এনা তার বাবার মুখের দিকে তাকায়। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ রকমের রেগে আছে।
” আপনাদের কি মাথা খারাপ রবিউল ভাই আপনার ছেলে বিয়ে করবে না এখন সেটা বলছেন? এটা কি ছেলেখেলা যখন ইচ্ছে হলো বিয়ের জন্য হ্যাঁ বললো আর যখন ইচ্ছে হলো না তখন না করলো? আমার কি মানসম্মান নেই? কাল বাদে পরশু বিয়ে আর আপনার ছেলে বলছে সে বিয়ে করবে না বাহ! মামার বাড়ির আবদার নাকি?
কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সবাই আশ্চর্য হয়। হেনা নেই হেনা নিজের রুমে গেছে ফ্রেশ হতে। এনা উঠে আসে বাবার পাশে দাঁড়ায়। শান বাসায় নেই। শান আর আরমান সাহেব গেছে পাশের মোড়ের দোকানে চা খেতে।
” কি করবো বলেন ভাই, আমার ছেলে যে এভাবে লাস্টে এসে বিয়ে করতে না করে দিবে ভাবতে পারি নি। তাছাড়া মানসম্মান শুধু আপনারই নষ্ট হবে না সাথে আমার ও হবে। আমার আত্মীয় স্বজন দের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে অনেকে এসেও পড়েছে।
” আরে রাখেন আপনার কথা মিয়া। মানুষ জন দাওয়াত দেওয়া শেষ বিয়ের শপিং করা শেষ এখন বলছে আপনার ছেলে এসব। এখন কেনে বলছে আগে কেনো বলেনি?
” ছেলো আগে থেকে এক মেয়েকে পছন্দ করতো।
” পছন্দ করতো মানে? আপনি আপনার ছেলের মত নেন নাই বিয়েতে? আর অন্য জায়গায় যখন পছন্দ ছিলো মেয়ে তাহলে আমার মেয়েকে দেখতে আসলেন কেনো?
” আসলে ভাই ও মেয়ে আমার পছন্দ ছিলো না। ছেলেকে শর্ত দিয়ে বিয়ে তে রাজি করিয়েছিলাম। এখন ছেলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ঐ মেয়ে কে নিয়ে।
” বাহ! কেমন শিক্ষায় সুশিক্ষিত করেছেন ছেলেকে। আর আপনি ও কেমন বাবা ছিঃ আপনাদের নামে কেস করবো আমি থানায়। আমার মেয়ের জীবন নওয়ে ছিনিমিনি খেলা বের করবো। দেখতে থাকুন কি করি। হাজতের ভাত খাওয়াবো আপনার ছেলে কে।
কথাটা বলে এনামুফোন কে’টে দেয়। মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ে। এনা এনামুলের কাঁধে হাত রেখে বলে,,
” কি হইছে বাবা। রুমান বিয়ে করবে না?
এনামুল মাথা তুলে তাকায়।
” না ঐ বেয়াদব ছেলে গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে পালিয়েছে। আগে থেকেই রিলেশনে ছিলো। বিয়ে করবে না।
” তাহলে হেনার কি হবে এখন।
” হেনার কি হয়েছে?
কথাটা বলতে বলতে বাহির থেকে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে আরমান আর শান।
রত্না বেগম উঠে স্বামীর কাছে গিয়ে সব খুলে বলে। আরহাম সোফায় বসে ড্রামা দেখছে। তার বেশ ভালো লাগছে ছেলেটাকে আচ্ছা মতো ধোলাই দিয়েছে। আরমান সাহেব এগিয়ে ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে,,
” হেনার সাথে যদি আরাভের বিয়ের প্রস্তাব রাখি তাহলে কি মানা করবি এনামুল।
সহসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আরহাম। মুখের হাসি বিলিন হয়ে যায়। মুনিয়ার বুকটা ধক করে উঠে। আড় চোখে আরাভের দিকো তাকায়। আরাভ অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। তার বাবা এসব কি বলছে। যেখানে হেনা কে বোনের নজরে দেখে এসেছে সেখানে বউ ইম্পসিবল। সহসা উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় আরাভ এই বিয়ে নিয়ে।
#চলবে?