#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৭
#Raiha_Zubair_Ripte
“ সরি বাবা আমার পক্ষে হেনা কে বিয়ে করা পসিবল না। হেনা কে কখনো আমি ঐ নজরে দেখিনি বোন ব্যাতিত। সেখানে বিয়ে করে সংসার নট পসিবল। আরহাম আছে আমার থেকেও ভালে ছেলে। তার সাথে দাও বিয়ে।
কথাটা শুনে আরমান সাহেব ছেলেকে কিছু শোনানোর জন্য উদ্যত হলে এনামুল থামিয়ে দেয়। আরহাম কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা মানে হেনাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলা। এনামুল হকের সামনে এসে বলে,,
” আঙ্কেল একটা প্রস্তাব রাখতে চাই আমি আপনার কাছে।
এনামুল মাথা তুলে তাকায়। ভ্রুকুটি করে বলে,,
” কি প্রস্তাব?
আরহাম জিহ্বা দিয়ে শুঁখনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নেয়। আশেপাশে সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।
” আঙ্কেল আমি হেনাকে বিয়ে করতে চাই যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে।
কথাটা শুনে এনামুল হক আরহামের পানে চায়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এক ছেলে বলছে বিয়ে করবে না আরেক ছেলে বলছে সে হেনাকে বিয়ে করবে। শান আরহামের দিকে এগিয়ে এসে কনুই ধরে বলে,,
” মজা করছিস তুই?
” নো ব্রো আমি মজা করছি না। আমি সিরিয়াসলি হেনাকে বিয়ে করতে চাই।
” কিন্তু তোমার বাবা মা?
আরহাম এনামুল হকের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” চিন্তা করবেন না আঙ্কেল বাবা মা তো কালই এসে পড়বে আর তাছাড়া তাদের কোনো আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না।
” কিন্তু হেনা তো মনে হয় রাজি হবে না। যদি একবার শুনে বিয়ে ভেঙে গেছে তো।
” সে আঙ্কেল আমার উপর ছেড়ে দিন হেনাকে আমি মানিয়ে নিবো। আপনারা তো রাজি হয়ে যান। এতে এ কূল ও কূল দুই কূল ই রক্ষা পাবে। আপনার মানসম্মান অক্ষুণ্ণ রইলো আর হেনার আর আমার বিয়েটাও হয়ে গেলো।
মুনিয়া ও এবার আরহাম কে সাপোর্ট করে বলে,,
” হ্যাঁ আঙ্কেল রাজি হয়ে যান। তাছাড়া আমার ভাই পাত্র হিসেবে দারুন এনা ভাবি তো থাকেই এখন না হয় হেনা আপু ও থাকবে।
” আমি কোথায় থাকবো মুনিয়া।
কথাটা বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে হেনা। মুনিয়া কিছু বলতে নিবে এনা থামিয়ে দেয়।
” ও কিছু না। এমনি বলছে মুনিয়া। আমাদের সাথে তোকেও নিয়ে যাবে কানাডা।
” ওহ্। আচ্ছা আব্বু রুমান ফোন ধরছে না কেনো আমার। সন্দিহান হয়ে বলে হেনা।
এনামুল কি বলবে ভেবে পায় না। এনা নিজে থেকে জবাব দেয়,,
” হয়তো ব্যাস্ত তাই ফোন ধরছে না। ফ্রী হলে কল ব্যাক করবে। আর তাছাড়া কাল তোর গায়ে হলুদ সেটায় ফোকাস কর।
_________________
ড্রয়িং রুমে বসে আছে আরহামের বাবা মা পাশেই বসে আছে এনামুল, আরমান,রত্না,ফরিদা। আব্রাহাম গলা ঝেড়ে বলে,,
” আমাদের সমস্যা নেই বেয়াই সাহেব এক মেয়ে তো আমার বড় ছেলের বড় আপনার অন্য মেয়ে না হয় আমার ছোট ছেলের বউ হবে। যেখনে ছেলে রাজি বিয়ে করতে সেখানে আমরা না করি কিভাবে।
আরহাম যেনো এতোক্ষণে দেহে প্রাণ ফিরে পেলো। এনামুল হক শান্তি পেলো আব্রাহামের কথা শুনে। এখন মেয়ে রাজি হলে হয়।
গায়ে হলুদের সাজে সেজে আছে হেনা। একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়াচ্ছে। আরহামকে বেশ হাসি খুশি দেখছে হেনা। লোকটা না সেদিন বড় গলায় বললো তার বিয়ে হতে দিবে না তাহলে এমন হাসিখুশি কি করে?
আরহাম হাতে হলুদ নিয়ে হেনার মুখে ছুঁয়ে দিয়ে বলে,,
” গায়ে হলুদ ছোঁয়ালাম বউ জান।
কথাটা বলেই চলে আসে। আরহামের বউ ডাকটা এখনো কানে বাজছে।
এনামুল হক অল্প কয়েকজন ইনভাইট করেছে বিয়েতে। তাদের আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব হাতে গুনা কয়েকজন।
এনা বোনের মুখে হলুদ ছুঁয়ে দেয়। হালকা নাচ গান করে যে যার মতো ঘুমোতে যায়। ঘুম নেই আরহামের চোখে। তার আর তর সইছে না কখন সকাল হবে হেনাকে বউ করে নিয়ে যাবে। সারারাত নির্ঘুম হয়ে কাটালো।
সকাল সকাল তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে বিয়ের। হেনা পাত্র রুমানের জায়গায় আরহাম এসেছে কথাটা শুনে ভরকে যায়। বাবার দিকে তাকাতেই এনামুল সব খুলে বলে হেনাকে। হেনা রাগান্বিত হয় তাকায় বাবার দিকে।
” তাই বলে যার তার সাথে বিয়ে দিতে চাইবে।
” যার তার সাথে কই আরহামের সাথে ঠিক করেছি। ছেলেটা তো ভালোই।
” আমি খারাপ কখন বললাম।
” তাহলে আপত্তি কোথায়।
” যা ভালো মনে হয় তাই করো গিয়ে। মন চাইবে একজনের সাথে বিয়ে দিতে সে পালিয়ে গেলে তখন আরেক জনের সাথে বিয়ে দিতে চাইবে।
কথাটা বলে নিজের রুমে চলে আসে হেনা। ভীষণ ভালো লাগছে উফ ফাইনালি বিয়ে ভেঙেছে। এবার খুশি মনে পার্লারে যাবে সাজতে।
দুই জনে মিলে বিয়ে ভাঙতে পারলো তাহলে। আরহামের ফোনে ফোন দেয় হেনা। আরহাম রেডি হচ্ছে,,
” ফাইনালি বিয়ে ভাঙলাম আমরা। ট্রিট দিন আমায়।
” কিসের ট্রিট আপনায় বিয়ে করে লগ্ন ভ্রষ্টা থেকে বাঁচাচ্ছি সেটাই কি ট্রিট নয়।
” এহহহ এটা ট্রিট কিভাবে।
” ট্রিট টা বাসর রাতের জন্য তোলা থাকুক। রাখি যাও রেডি হয়ে নিন।
কথাটা বলে ফোন কেটে দেয় আরহাম।
ফাইনালি আরহাম আর হেনা বিয়ে হয়ে গেলো। নিজের রুমে বসে আছে হেনা। আরহাম পাশে এসে বসে হেনার। হেনার ঘুমটা উঁচু করে, ট্রিট কই। স্মিত হাসে আরহাম পকেট থেকে ডায়মন্ডের আংটি বের করে হেনার অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দেয়।
” ফাইনালি আপনায় নিজের করে পেলাম। ভাগ্যিস ছেলেটার আগে থেকে গার্লফ্রেন্ড ছিলো তা না হলে কি করে বিয়ে ভাঙতাম বলুন।
” আমি তো আছি, আমিই তো শিখিয়ে দিলাম ছেলেকে কি কি বলতে হবে।
” তা যা বলেছেন হেনা। আমি ভাবতেই পরি নি নি আপনি নিজে থেকে হেল্প করবেন আমায় সিরিয়াসলি।
” দয়া হলো তাই দয়া করলাম।
” দয়া করে উদ্ধার করে ফেলছেন আমায়।
” হুমমম। এবার কিসসসসি দিন জানেন না বউকে চুমু খেতে হয় বাসর রাতে।
” শুধু কি কিসসসসি সাথে তো আরো কিছু করতে হয়।
” অ’সভ্য, হাতে কিস দিতে বলেছি। আংটি পড়িয়েছেন কিস করেন নি।
আরহাম তাজ্জব বনে যায়। আরহাম ভেবেছিলো অন্য কোথায় কিস করতে। কিন্তু এ দেখি হাতের আংটির উপর করতে বলছে।
রত্না বেগম ড্রয়িং রুমে বসে আফসোস শুরে বলে,,
” সবারই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমার আরাভের কবে বিয়ে হবে ছেলে টা তো বিয়ের নাম শুনলেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলছে। পাত্রী পাবো কোথায়,যে এই ছেলেকে বিয়ে করবে।
এনা ফস করে বলে ফেলে,,
” আমাদের মুনিয়া আছে তো বিয়ে দিয়ে দাও।
আব্রাহাম ভরকে যায় ছেলের বউয়ের কথা শুনে। রত্না বেগম কিছু একটা ভেবে বলে,,
” মন্দ বলিস নি এনা। আব্রাহাম ভাই আপনি কি বলেন?
আব্রাহাম কি বলবে ভেবে পায় না। ছেলের বউয়ের বোনের বিয়ে খেতে এসে তাকে ছেলের বউ করে নিয়ে যাচ্ছে এখন আবার মেয়েকে টানছে। মারুয়া বেগম উৎসুক হয় তার বেশ লেগেছে কথাটা। মেয়ে তার কাছেই থাকবে তাহলে।
” ভালোই হয় তাহলে। এখান থেকে না হয় কাবিন করিয়ে নিয়ে কানাডায় গিয়ে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করলাম।
এদিকে এনা হা হয়ে আছে। সে বুঝতে পারে নি তার কথাটা কে তারা এভাবে সিরিয়াস নিবে।
” চাচি,মনি আপনারা সিরিয়াসলি নিয়েছেন আমার কথাটাকে? আমি তো মজা করে বলেছি।
মারুয়া এনার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” তোমার ননদকে গিয়ে রাজি করাও।
আব্রাহাম স্ত্রীর পানে চায়। মারুয়া স্বামীর দৃষ্টি কে তোয়াক্কা না করে বলে,, কি হলো যাও এনা।
এনা চলে আসে। আসার পথে শানের সাথে দেখা হয়। শান কে সব খুলে বলে। শান মায়ের কাছে গিয়ে বলে,,
” ছোট মা এসব কি বলছো? আরাভের সাথে মুনিয়ার বিয়ে? আরাভ একজন কে ভালোবাসে। একজন কে ভালোবাসে কি করে অন্য একজন কে বিয়ে করবে?
মারুয়া বেগম অবাক হয়। তার জানা ছিলো না আরাভ কাউকে ভালোবাসে। রত্না বেগম বসা থেকে উঠে বলে,,
” ভালোবাসতো আগে এখন বাসে না। আর তাছাড়া মেয়ে খ্রিস্টান সেখানে বিয়ে পসিবল না তাই বলে কি আমার ছেলে তার আশায় থাকবে?
” না আন্টি তা বলি নি। কিন্তু যার বিয়ের কথা বলছেন সে কি রাজি?
” আমার ছেলে আমার কথা কখনো ফেলতে পারবে না। ধরে নাও সে রাজি।
” আপনার ছেলেকে নিজের মুখে বলতে বলুন সে আমার বোনকে বিয়ে করতে রাজি।
” বেশ।
কথাটা বলে রত্না বেগম ছেলের ঘরে চলে আসে। ছেলে তার ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কিছু একটা করছে। ছেলের সামনে বসে ল্যাপটপ টা কেঁড়ে নিয়ে বলে,,
” তোর মাকে তুই ভালোবাসিস?
হঠাৎ মায়ের এমন লজিকনেস কথা শুনে বিরক্ত হয় আরাভ।
” মা ল্যাপটপ দাও এসব লজিকনেস কথা না বললেই কি নয়?
” না নয়। বল ভালোবাসিস কি না আমায়।
” অবশ্যই ভালোবাসি।
” তাহলে আমি যা বলবো তাই শুনবি। আমার কথা মতো চলবি।
” তাই তো চলি।
” জানি,তাহলে আমার কথা মতো বিয়ে করবি। আমি যাকে তোর জন্য পছন্দ করবো চোখ বুজে তাকেই বিয়ে করবি।
সহসা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় আরাভ।
” এসব কি বলছো? বলেছি না বিয়ে করবো না। আর বিয়ে খেতে এসে হঠাৎ আমার বিয়ের কথা বলছো কেনো?
” আমার এক মেয়েকে ভারি পছন্দ হয়েছে তাই।
” আমার পক্ষে বিয়ে সম্ভব না। কাল এবার বলেছি হেনাকে বিয়ে করবো না। আবার বিয়ের পেঁচাল শুরু করছো।
” হেনা না মুনিয়া। আমি মুনিয়াকে তোর বউ করতে চাই।
” মানে?
” মানে হচ্ছে মুনিয়াকে আমি বউ করতে চাই তোর।
” মাথা কি খারাপ তোমার মা।
” আমার মাথা ঠিকই আছে। হেফজিবার জন্য আর কত অপেক্ষা করবি। হেফজিবা তো বিয়ে করে স্বামী নিয়ে সংসার করছে। আমার কি ছেলেকে সুখে দেখতে ইচ্ছে করে না? তুই যদি আমায় মা বলে একটু ও সম্মান ভালোবাসিস তাহলে নিচে গিয়ে বলবি তুই মুনিয়াকে বিয়ে করবি ব্যাস।
কথাটা বলে রত্না বেগম চলে যায় ঘর থেকে।
আরাভ দোটানায় পড়ে যায়। ফোন বের করে হোয়াটসঅ্যাপে হেফজিবাকে ফোন দেয়। হেফজিবা অফিস থেকে ফিরে কেবলই সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ এতো গুলো মাস পরে আরাভের ফোন পেয়ে চমকে উঠে ফোন রিসিভ করবে কি করবে না ভেবে পায় না। ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে যায়। আবার ফোন কল বেজে উঠে হেফজিবা ফোন রিসিভ করে।
” কেমন আছো হেফজিবা?
” ভালো আপনি?
” ভালো নেই আমি তুমি ছাড়া। তুমি তো স্বামী বিয়ে বেশ সুখেই আছো তাহলে।
হেফজিবার কি বলবে ভেবে পায় না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,
” হ্যাঁ স্বামী নিয়ে অনেক সুখে আছি।
” আমি বিয়ে করছি সামনে।
সহসা হৃদপিণ্ড টা কেঁপে উঠলো হেফজিবার। আরাভ বিয়ে করছে? পরক্ষণেই নিজেকে বুঝ দিলো সে তো এটাই চেয়ছিল আরাভ মুভ অন করুক।
” মেয়েটা কে?
” শানের বোন মুনিয়া। মায়ের ভীষণ পছন্দ হয়েছে তাকে।
” কংগ্রাচুলেশনস আগামী দিন সজ্জিত হোক। ভালো থাকবেন।
কথাটা বলে হেফজিবা ফোন কে’টে দেয়। ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে। কান্না পাচ্ছে খুব। আরাভের বিয়ে মানতে কষ্ট হচ্ছে। যতোই কষ্ট হোক এটা তাকে মানতেই হবে বিয়ে করে সুখে থাকুক আরাভ সেটাই হেফজিবা চায়।
❝ আপনি আমার কাছে এক ভীনদেশী তারা ছিলেন আরাভ যাকে চাইলেও আর ভালোবাসতে পারবো না,পারবো না আর আপনার মুখের হাসির কারন হতে রোজ। কারন নিজের হাতেই দিয়েছি সেসব রাস্তা বন্ধ করে, করেছি দাফন নিজের সুখ। বিধাতার তটে চাই এমন ভালোবাসা না দিক আর কোনো মানবীর জীবনে। যে ভালোবাসার প্রাপ্তি নেই। ভালো থাকুন ভিনদেশী তারা। নতুন জীবনের জন্য প্রাণঢালা শুভেচ্ছা রইল ❞
#চলবে?
(ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং। আজ রাতে অথবা কাল অতিম পর্ব দিবো। রেসপন্স করবেন সবাই)