#আমি_মায়াবতী
#পর্ব_১৩
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা
আম্মাকে দেখে মামী খুব বাজেভাবে হেসে বললো,”কিরে, তোর সতীনের মেয়ের না আমার ভাইপুকে পছন্দ না? তাহলে রাতের আঁধারে এইসব কি করছে?”
আমি ভয়ে জমে গেলাম। আম্মা কি আমাকে ভুল বুঝবে এইবার? আমি কিভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবো?
“আম্মা,আমি কিছু করিনি আম্মা। বিশ্বাস করো আমায়।”
“এই মেয়ে, তোরে কিসের বিশ্বাস করবে? তোর মায়ে ওর সংসারডারে নষ্ট করছে। এখন তুই আইছোস। আসলে তোরা মা বেডি একই রকম।পুরুষ মানুষ পাইলেই হইছে তোদের। তাইনা?”
“আম্মা, বিশ্বাস করো, আমি কিছুই করিনি। আমি তো শুধু পানি খেতে এসেছিলাম।”
আমাদের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সাবিহাও এসে দাঁড়িয়েছে। কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে। মামীর দিকে তাকিয়ে বললো, “কি হয়েছে মামী? সবাই এখানে কেন তোমরা?”
“আসছো তুমি মা? তোমার বোনের রক্ষাকর্ত্রী৷ একটু আগেই না বড় বড় কথা বলছিলা যে তোমার বইনরে রিকশাওয়ালা ছেলের কাছে বিয়া দিবা। তাও আমার ভাইপুর কাছে দিবা না। এখন তো তোমার বোইনই আমার ভাইপুরে ঘর থেকে বাইর কইরা আনছে। ন*ষ্টা*মি করার জন্য। এখন তো এরে আমার ভাইপুও বিয়া করবো না। নষ্ট পল্লীতে দিয়ে আয় গে যা তোর বইন রে। কোনো ভালো পোলায় কি আর বিয়া করবো তোর বোইন রে?”
সাবিহা একবার আমার দিকে আরেকবার আম্মার দিকে তাকালো। তারপর মামীর ভাইপোর দিকে তাকিয়ে বললো,” আমার বোন আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে, ভাইয়া?”
“হুমম। তোমার বোনই আমাকে ডেকেছে। তাই তো আমি এখানে এসেছি।”
“বাহ!আপনি তো দেখছি খুবই বোকা মানুষ। আমার বোন ডাকলো আর আপনি চলে আসলেন?”
“নাহ..মানে..আসলে আর কি…”
“মামী, আমার বোন বললো আর আপনার ভাইপো চলে আসলো? আমার বোনকে আমি কোথায় পাঠাবো আমি বুঝে নিবো। আপনার ভাইপোর চরিত্রও তো মাশাল্লাহ। তো, তাকে কোথায় পাঠাবেন?”
“আরেহ, আমার ভাইপো তো পুরুষ মানুষ। আর অনেক সরল সোজা। কিসের জন্য ডাকছে বুঝছে নাকি?”
“আমার বোন ন*ষ্টা*মি করতে হলে, আপনার ভাইপোর ঘরের ভিতরে থাকতো। বাইরে বের করে আনতো নাকি? আমি জানি আমার বোন এখানে কি করছিল। আপনি কি আমাকে বলবেন, আপনি আমাদের রুম থেকে কি নিয়ে এসেছিলেন তখন? আর আমাদের রুমেই বা আপনি কেন গিয়েছিলেন?”
“আমি..আমি কখন গেলাম? আমি তো যাই নি।”
“আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করো না মামী। তুমি আমাদের রুমে গিয়ে পানির জগ নিয়ে এসেছো কেন? মা, তুমি তো নিজেই আমাদের রুমে পানির জগ ভর্তি পানি দিয়ে এসেছো। সেটা এখানে কিভাবে এলো?”
“ভাবী, তোমাকে এখনো কিছু বলছি না তোমাকে কারণ তুমি আমার বড় ভাইয়ের বউ। তোমাকে তো মা গ্রাম থেকে পছন্দ করে এনেছিল। এখনও তুমি শোধরাওনি। একটুও না। তোমাকে ভালোবেসে মা এখানে এনেছিল। আর তুমি? আমাদের সাথে এখনও মিশে উঠতে পারোনি তুমি৷ কাউকে কষ্ট দেওয়ার একটা সুযোগও হাতছাড়া করো না। তাইনা? মায়া কি ক্ষতি করেছে তোমার?কেন এতো খারাপ ব্যবহার করো ওর সাথে? ও তো কোনো দোষ করেনি। দোষ করেছে ওর মা। যা ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমার হয়েছে। তোমাদের তো কিছু হয়নি। তাহলে এতো খারাপ ব্যবহার কেন করো তুমি?”
“কি বলতে চাইছিস তুই? আমি খারাপ?শোন, খারাপ হচ্ছিস তোরা দুই সতীন। তুইও কি খুব ভালো নাকি?যদি ভালোই হতি, তাহলে আর বাপের বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতি না বাপ-ভাইয়ের মুখে চুনকালি মেখে। আর তোর সতীন? সে তো সব জেনেশুনেও বিবাহিত লোককে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে। নিজেদের মধ্যে এতো খুঁত, আর তুই আমার খুঁত ধরতে আসছিস?হাস্যকার।”
“আমি কিন্তু তোমাকে এখনও সহ্য করছি ভাবি। শুধুমাত্র আমার ভাইয়ের স্ত্রী বলে তোমায় খারাপ কিছুই বলছি না।”
“কি বলবি তুই, হ্যাঁ? বেশ করেছি তোর ভোলাভালা সৎ মেয়েকে ফাঁসিয়েছি। তোর উপকারই তো করছিলাম আমি। আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর সাথে আমরা কোনো সম্পর্ক রাখবো না সাগরিকা। বলে দিচ্ছি আমি।”
“তোমরা নির্দ্বিধায় চলে যেতে পারো ভাবি। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি সব ছেড়েছুড়েই এখানে এসেছি। আমি আশা করিনা যে তোমাদেরকে আমাদের পাশে পেতেই হবে সবসময়। ”
মামী হঠাৎই দমে গেল যেন। মামী হয়তো এইরকম কথা আশা করেনি। আস্তে আস্তে বললো,”কি বলছিস সাগরিকা? সতীনের মেয়ের জন্য আমাদের কে ছেড়ে দিবি?”
“সতীনের মেয়ে হলেও সে আমার স্বামীরও মেয়ে। আমার স্বামীর সন্তান আমারও সন্তান। তোমাকে ভাবতে হবে না ভাবী। সকাল হলে নাস্তা খেয়ে তোমরা চলে যেও ভাবী। মায়াকে মন থেকে মেনে নিতে পারলে সেদিন এসো আমাদের বাসায়।”
সেদিন রাতটা কিভাবে কাটালাম জানিনা। তবে, মামী আর তার ভাইপো সেদিন সকালে নাস্তা না করেই চলে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর আবার কলিং বেল বেজে উঠলে আমি আঁতকে উঠলাম। ভয়ে ভয়ে দরজা খুললে বাবা রুমে প্রবেশ করলো। বুকের উপর থেকে একটা ভারী বোঝা যেন নেমে গিয়েছিল। বাবাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলাম। বাবা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,”ভয় নেই মা। আমি চলে এসেছি।”
আম্মা বসার ঘরে এসে বাবাকে দেখে বললো,”তুমি এখানে? কখন এলে?”
“আমি আসতে বলেছি বাবা কে। মা।” সাবিহা বললো।
“এতোকিছু হয়ে গেল, অথচ আমাকে খবর দাওনি কেন?”
“মায়া আপু মানা করেছে বাবা। তুমি নাকি কাজে গেছো তাই।” সাব্বির বললো।
ঘরে নিরবতা বিরাজ করলো কিছুক্ষণ। বাবাই বললো,” আমি কাজ করছি তোমাদের জন্য বুঝলে? তোমাদের কিছু হয়ে গেলে আমার টাকা-পয়সা সবই অর্থহীন। বুঝলে সবাই?”
“হুমম,বাবা।”
বাবার প্যান্ট ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে সাব্বির বললো,” একটা কথা বলি বাবা?”
“বলো বাবা।”
“সাবিহা আপু বলেছে মায়া আপুকে নাকি রিকশাওয়ালা ছেলের কাছে বিয়ে দিবে তাও মামীর ভাইপোর কাছে বিয়ে দিবে না। মায়া আপুকে কি সত্যিই রিকশাওয়ালার কাছে বিয়ে দিবে?”
এইরকম একটা কথা সব পরিস্থিতিতেই হয়তো হাসার মতো। বসার ঘরের সবাই হোহো করে হেসে উঠলো৷ অথচ তাদের সামনে কত বড় বিপদ অপেক্ষা করছে তাদের অগোচরে, সেটা কল্পনাও করতে পারছে না।
★★★
স্যান্ডউইচ এ কামড় দিয়ে কবিতা বলে,”মায়া, তোমার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?”
“কি বলছো এসব কবিতা?”
“হুমম। বলো আমাকে। ভয় নেই। আমি কাউকে কিছুই বলবো না। প্রমিস।”
“আরেহ। আমার কেউ নেই এমন।”
“কি সব বলো? তুমি এতো কিউট একটা মেয়ে। আর তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই?তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করবো?”
“তোমার কসম কবিতা। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।”
“তাহলে কাউকে পছন্দ তো অবশ্যই করো। তাইনা?”
“নাহ। তেমন কেউ ও নেই আমার।”
“তবে মায়া, জানো তো আমার পরিচিত একজন তোমাকে খুবই পছন্দ করে।”
“তাই নাকি? কে সে শুনি?”
“বলা যাবে না। ”
“ওকে। এখন তুমি বলো, তোমার কেউ আছে নাকি?”
কবিতা মুখ বিকৃত করে বললো,”আমার ভাই কে চিনো মায়া? মেরে আমাকে লাশ বানিয়ে দিবে। বুঝলে?”
“হুমম। কিন্তু পছন্দ তো অবশ্যই আছে। তাইনা?”
“হুমম। তা আছে, কিন্তু ভাইয়ার ভয়ে বলতে পারিনি।”
আমি কেন যেন আনমনে বললাম,” বলে দিও কবিতা। পরে দেখা যাবে ভুল সময়ে ভুল মানুষকে ভালোবাসার পরিনতি কতটা ভয়াবহ হয়।”
“বাহ মায়া, তুমি তো বেশ ভালো কথা বলতে পারো। এক্সপেরিয়েন্স আছে নাকি?”
আমি মুচকি হাসলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস নিজের অগোচরেই বের হলো বুক থেকে। কবিতা নামের এই মেয়েটা জানবে না আমার দীর্ঘশ্বাসের কারণ।অথচ সে আমার কত কাছে।
চলবে….