#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৭
রাত বাজে বারটা একুশ। ইশান সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করছে একবার এদিক তো ওদিক আর কিছু একটা নিয়ে বিরিবর করছে। ইশানের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে কি করে তীরকে তার মনের কথা বলবে। এক বার ভাবচ্ছে চিঠি লিখে জানাবে কিন্তু এর পরক্ষনে ভাবচ্ছে চিঠি তো আদি কালে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে দিতো। কিন্তু এখন কি সেই আগের যুগ আছে নাকি যে চিঠির মাধ্যমে প্রেম নিবেদন করবে। কিন্তু তীরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে গেলেই যে সব ওলট পালট হয়ে যায়। কি এক জ্বালায় পড়লো বেচারা। না পারছে সইতে আর না পারছে মুখ ফুটে কিছু বলতে। ইশান বা হাতটা একটু টান করতেই ব্যাথায় উফ করে। ইশান বেডে বসে ব্যান্ডেজের উপর অন্য হাতটা দিয়ে চেঁপে ধরে রাখে কিছুক্ষন। পাশেই পড়ে থাকা সেল ফোনটা হাতে তুলে নেয় কয়টা বাজে দেখার জন্য। সময় দেখে ফোনটা বেডে রাখতে যাবে সাথে সাথে বেজে উঠে ফোন। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রিফাত কল করেছে। ইশান ফোন পিক করে বলে।
–এত রাতে কল দিলি কেন?
–কেন দিতে পারি না আমি বুঝি তকে কল!
–এত ড্রামা না করে বল কেন কল দিয়েছিস?
–বলেছিস?
–কি বলবো?
–আরে তীরকে তর মনের কথা বলেছিস? আজকে না বলার কথা ছিলো!
–নাহ বলে নি মানে বলতে পারি নি।
রিফাত অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে।
–আমি তো ভেবেছিলাম এখন হয়তো তুই তর পুচকে প্রেয়সীর সাথে প্রেমালাপ করছিস। কিন্তু এখন যা শুনলাম তুই তর মনের কথা এখনও বলিস নি মেয়েটাকে। তা দোস্ত তুই কবে বলবি কথাটা?
–যখন মন চাইবে তখন বলবো।
–হো! তীরের বিবাহ হয়ে গেলে তারপর বলবি। আর তীরের সো কল্ড হাসবেন্ড এসে তর নাক বরাবর একটা ঘুষি দিবে।
–এই তুই ফোন রাখ তো। তর ফালতু কথা শুনতে ভালো লাগছে না আমার।
–আরে আরে আমার কথাটা শুন। একদম ফোন কাটবি না আমার কথাটা আগে শুন।
ইশান বিরক্তবোধ করে। একে তো তীরের চিন্তায় মাথা কাজ করছে না। তার উপর এখন এই আধ পাগলটা মধ্যরাতে তাকে ফোন করে তার মাথাটা খারাপ করতে চাইছে। ইশান তারপরও বলে।
–তাড়াতাড়ি বল কি বলবি!
–শুন তকে আমি একটা সাজেশন দেই কি করে তীরকে ভালোবাসার কথা বলবি। শুন….
–এত শুন শুন না করে মেইন কথাটা বল।
–আরে চেঁতোস ক্যান? বলছি তো তাহলে শুন, প্রথমে তুই তর ছয়এিশ ইঞ্চি বুকটা ফুলিয়ে একজন সাহসী বীরের মতো হয়ে তীরের সামনে গিয়ে দাঁড়াবি আর টুস করে বলে দিবি “তীর আমি তকে খুব ভালোবাসি”। ব্যস্ হয়ে গেলো কেল্লাফাতে।
–হয়েছে তর?
–আমার আবার কিহ হবে?
–আমাকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তর? যদি হয়ে থাকে তাহলে তর মুখটা বন্ধ করে ফোনটা রাখ।
–শালা তকে ভালো কথা বললেও তুই শুনিস না।
ইশান রেগে বলে উঠে।
–এই তকে না আমি বলেছি আমাকে শালা বলে ডাকবি না।
–একশো বার ডাকবো তর কোনো সমস্যা? শালা নিজের মনের কথা বলতে পারিস না একটা পুচকে মেয়েকে আর এখন এসেছে আমার সাথে রাগ দেখাতে।
–রিফাতের বাচ্চা তকে সামনে পেলে তর খবর করে ছাড়বো কিন্তু আমি।
–ওকে দেখা যাবে।
ইশানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলো রিফাত। না হলে দেখা যাবে কলের মাঝেই ইশান রিফাতের গলা চেঁপে ধরেছে। এই ছেলেকে একদম বিশ্বাস করে না রিফাত খুব ডেঞ্জেরাস একজন মানুষ।
________
–দোস্ত ভয় লাগছে তোর ছোট ভাই যেই ডেঞ্জেরাস লোক ধরা খেলে আমার গর্দান আর গর্দানের জায়গাতে থাকবে না। মাটিতে গড়াগড়ি খাবে।
ইশা রাহুলের কথা শুনে রাহুলকে আশ্বাস দিয়ে বলে।
–আরে কিচ্ছু হবে না। তুই মুখে কালো মাস্ক আর হেলমেট পড়ে থাকবি তাহলে তকে ভাইয়া চিনতে পারবে না।
ইশার কথা শুনে তীর বলে।
–কিন্তু তারপরও ভয় লাগছে। এটা একটু রিস্ক হয়ে যায় না ব্যাপারটা।
–ঠিক আছে এত যখন তোর ভয় লাগছে তাহলে আর ভাইয়ার মুখ থেকে তোর ভালাবাসার কথা শুনতে হবে না। আমি ভাইয়াকে কল করছি না যা।
রাহুল ইশার কথা শুনে বলে।
–হে হে এটাই বেস্ট দরকার নাই এসব করার। আমি বরং বাড়ি যাই। মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে বোধ হয়।
ইশা রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে।
–একটা দিবো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক এখানে। মা বোধ হয় অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
ইশা শেষের কথাটা ভেঙ্গিয়ে বলে আবার বলা শুরু করে।
–সবসময় তো বাইরে বাইরে থাকিস জানি না বুঝি আমরা। এখন মা মা করছিস। টাকা গুলা যদি ফেরত না দিতে চাস তাহলে এই কাজটা করে দে।
রাহুলের মুখটা চুপসে যায়। ইশা আর তীরের কাছ থেকে ধার নিতে নিতে প্রায় চার হাজার টাকা হয়ে গেছে। আর এখন যদি একটা কাজ করে দেয় তাহলে এই টাকা আর রাহুলকে ফেরত দিতে হবে না। তাই বেচারা বাধ্য হয়ে কাজটা করতে রাজি হয়েছে। ইশা তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।
–দেখ তীর ভাইয়ার মুখ থেকে যদি ভালোবাসার কথাটা শুনতে চাস তাহলে এই রিস্কটা নিতেই হবে আমাদের। আমি চাই না আমার বেস্টু আর আমার ভাই কষ্ট পাক। আমি সকালে দেখে এসেছি ভাইয়া কেমন মনমরা হয়ে বসে আছে। কিছু একটা নিয়ে প্রচুর টেনশনে আছে। হয়তো তকে নিয়েই টেনশনে আছে।
ইশানের বিষয়ে এমন কথা শুনে তীরের মুখে চিন্তার চাপ ফুঁটে উঠে। সত্যি তো লোকটা গত কাল কত চেষ্টা করলো কিন্তু মুখ ফুঁটে কিচ্ছুটি বলতে পারলো না শুধু আমতা আমতা করে গেল।
–তুই সিউর এমনটা করলে ওনি স্বীকার করবেন।
–আলবাত স্বীকার করবে দেখে নিস।
রাহুল বলল।
–ওই তর ভাই কি সত্যি তীরকে ভালোবাসে।
–হুমমম।
–বিশ্বাস হয় না।
ইশা রাহুলের পিঠে কিল দিয়ে বলে।
–তর বিশ্বাস না করলেও চলবে। তকে যে কাজটা দিয়েছি সেটা ঠিকঠাক মতো করবি।
রাহুল কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বলে।
–যদি ধরা পড়ে যাই তাহলে কি হবে?
–ধরা পরবি না বললাম তো। যদি ভাইয়া তর পিছু নেয় তাহলে চিপা রাস্তায় ঢুকে যাবি বাইক নিয়ে। ভাইয়া তো আর তার ইয়া বড় গাড়ি নিয়ে ছোট রাস্তায় ঢুকতে পারবে না।
রাহুল ঠোঁট উল্টিয়ে বলে।
–আচ্ছা বুঝলাম।
কিন্তু কিন্তু মনে মনে বলে।
–আমি ফাঁইসা গেছি রে মাইনকার চিপায়। টাকা গুলার জন্য শুধু টাকা গুলার জন্য এই রিস্কমার্কা কাজটা করা না হলে বাপের জন্মেও এই কাজ করতাম না।
ইশা বলল।
–শুন যেভাবে যেভাবে করতে বলেছি সেভাবে সেভাবে করবি।
–করমুনেআগে তুই তোর ভাইকে ফোন লাগা আর বল আসার কথা। দেখি আসে কি না।
–আসবে আসবে আমি জানি।
_____
ইশান নিজের ঘরে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। এমন সময় ইশার কল আসে। ইশান কল পিক করে বলে।
–হুম বল?
–কোথায় তুমি ভাইয়া?
–কোথায় আবার বাড়িতেই আছি।
–ভাইয়া আমাকে একটু নিতে আসবে কোচিং থেকে।
–কেন ইকবাল চাচা যায় নি তকে আনতে?
–ইকবাল চাচা তো অসুস্থ তাই আসতে পারবে না।
–ওও! কিন্তু কালকেই না চাচা ভালো ছিলো।
–অসুখ কি বলে কয়ে আসে নাকি ভাইয়া।
–তাও ঠিক কিন্তু কি হয়েছে চাচার?
–পেট খারাপ।
ইশান অবাক হয়ে বলে।
–পেট খারাপ। কই আমাদের তো কিচ্ছু…
ইশানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ইশা বলে।
–উফফ ভাইয়া এত প্রশ্ন করো কেন তুমি? তোমার যদি আসতে এতটাই সমস্যা হয় তাহলে আমি আর তীর রিক্সা করে চলে আসছি।
ইশান কিছু একটা ভেবে তড়িৎ বেগে বলে।
–এই না না আমি আসছি তরা দাঁড়া কিছুক্ষণ।
ইশান ল্যাপটপ বন্ধ করে সোফার এক সাইটে রেখে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে পরে। এই সুযোগ তীরকে একা পাওয়ার এই সুযোগের সৎ ব্যবহার করতেই হবে ইশানকে যে করেই হোক।
অন্য দিকে ইশা বাঁকা হেসে বলে।
–দেখলি আমার কথা মিললো তো ভাইয়া আসছে।
তীর ইশার হাত ধরে বলে।
–ইশু রে ভয় করছে।
–ভয় পাস না। ভালোবাসায় একটু রিস্ক নিতেই হয় বুঝলি। তাই বুকে সাহস সঞ্জয় কর।
রাহুল বলল।
–সাহস কি আর বলে কয়ে আনা যায় নাকি। কি যে হবে আমার এক আল্লাই ভালো জানেন।
–রাহুলের বাচ্চা এত ভাব না ধরে তাড়াতাড়ি যা এখান থেকে।
–হুমমম! যাচ্ছি রে বাবা।
রাহুল তার বাইকে উঠে তীরকে ইশারা করে বাইকে উঠার জন্য। তীরও সাবধানে বাইকে উঠে বসে। ইশা বলে।
–শুন আমি তদের মেসেজ দিয়ে সব ইনফর্মেশন দিবো। আমি যখন বলবো ওই সময় তরা চলে আসবি কেমন।
–আচ্ছা।
তীর আর রাহুল চলে যায়। ওরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই ইশানের গাড়ি এসে থামে ইশার সামনে। ইশা ইশানের গাড়ি দেখে মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বসে। ইশান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে। ভাইয়ের এমন চাওনি দেখে ইশা বলে।
–কি হয়েছে ভাইয়া? এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
–তুই একা কেন? তীর কোথায়?
ইশা নিজের মনে সাহস সঞ্জয় করে দু ঠোঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে।
–ভাইয়া! তীর তো চলে গেছে।
–চলে গেছে মানে! কোথায় চলে গেছে?
–আর বলো না ভাইয়া একটা ছেলে বাইকে করে কোথা থেকে আসলো তীরের সামনে আর ও হেসে হেসে বাইকে উঠে চলে গেলো। কত ডাকলাম আমি আমার কথা পাত্তাই দিলো না।
–ছেলে! কোন ছেলে? কোথাকার ছেলে?
–আমি চিনি না ভাইয়া। আমার মনে হয় ওর বয়ফ্রেন্ড হবে।
ইশান ভ্রু কুচ করে বলে।
–বয়ফ্রেন্ড!
–হুমম কিছু দিন যাবৎ দেখছি তীর কার সাথে যেন ফোনে কথা বলে ফিসফিস করে। আমি জিঙ্গেস করলেই বলে কেউ না।
ইশানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। নাকের পাটা ফুলে আসছে রাগে। কপালের রগও ফুলে উঠেছে রাগে। গাড়ির স্টিয়ারিং দু হাত দ্বারা চেপে ধরেছে। তীরের বয়ফ্রেন্ড আছে ইশানের যেন বিশ্বাসেই হচ্ছে না ইশার কথাটা। তাই দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–তুই সত্যি বলছিস!
–আমি যা দেখেছি তাই বলেছি ভাইয়া।
ইশান জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে বলল।
–ঠিক আছে আগে বাড়ি চল।
–হুমমম চলো।
#চলবে_________
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সরুপ দেখবেন।