বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৫) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
303

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

“গতকাল রাতে কোথায় ছিলেন রোহান ভাই?”
চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে অতঃপর রোহানের দিকে দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় কথাটা বলে আরশি। চেহারায় তীব্র সন্দেহের ছাপ। তার সামনেই সোফায় পায়ের উপর পা তুলে ফোন হাতে বসে ছিল রোহান। আরশির কৌতুহলী প্রশ্নে তার দিকে চেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
“রাতে কোথায় থাকবো আর? আবশ্যই বাড়িতেই ছিলাম।”

রোহান সহজ ভাবে কথাটা বলে দিলেও আরশির কাছে তা হজম করাটা সহজ নয়। পূনরায় বলে,
“বাসায় কি করছিলেন?”
“রাতের বেলায় মানুষ কি করে? ঘুমায়। তো আমিও অবশ্যই ঘুমিয়েই ছিলাম।”
“কিন্তু আমার তো মনে হয় আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন না, অন্য কোথাও ছিলেন।”
রোহান এবার ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলে,
“আরে আজব, সারাদিন অফিস করে রাতের বেলায় একটু ঘুমানোর সুজুগ পাই। তো, না ঘুমিয়ে আমি কার পাঁকা ধানে মই দিতে যাবো? এত প্রশ্ন না করে কি হয়েছে ঝেড়ে কাঁশ তো।”

রোহান সত্য বলছে নাকি মিথ্যা বলছে তা বোঝার উপায় নেই। তবুও আরশির সন্দেহটা কমে এসেছে কিছুটা। রোহানের দিকে চেয়ে এবার কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“গতকাল রাতে আপনার মত কাউকে আমাদের বাসার সামনে দেখেছিলাম। দেখে মনে হয়েছিল সেটা আপনিই ছিলেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
“আচ্ছা তারপর কি হলো?”
“তারপর আর কি হবে?”

দুজনই কয়েক সেকেন্ড নিরব থাকলে রোহান আচমকাই হেসে দিয়ে বলে,
“সিরিয়াসলি আরশি? কাকে না কাকে দেখে, আমাকে এসে জার্জ করছিস? এই,, তুই আবার কোনো ভুত টুত দেখিস নি তো?”
বলেহ আবারও হেসে দিল রোহান। কিছুটা ব্যর্থতার ছাপ ভেসে উঠে আরশির চেহারায়। ভেবেছিল আজই বুঝি চিরেকুটের রহস্য উৎঘাটন হবে। কিন্তু না, রোহান ভাই দেখি এর কিছুই জানে না। তাহলে রোহান ভাইয়ের মত দেখতে সে কে ছিল? ওফ ভাবতেই মাথা ধরে আসার উপক্রম।

“”””””””””””””””””””””””””””””””

থাইগ্লাসের পাশে বসে বাইরের দিকে আনমনে চেয়ে আছে রিদ। মাথায় একঝাক পড়াশোনার টেনশনের সাথে প্রিয়জনদের কথা ভেবে কিছু সময়ের বিষণ্নতা যেন এখন নিত্য দিনের রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। আরশির চেহারাটা চোখে ভাসছে খুব। মনে হচ্ছে এই বুঝি মিষ্টি হেসে সামনে এসে দাড়ালো। আর সেই হাসিতে মুগ্ধ দৃষ্টি স্থির করে আলতো করে তুলতুলে গাল দু’টো টেনে আবারও পিচ্চি বলে ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।

বিদায় নেওয়ার আগের দিন রাতে কি কাঁন্নাটাই না করেছিল। কথা গুলো হৃদয়ে এমন ভাবে গেথে আছে, মাঝে মাঝে যেন দু’কান জুড়ে বাজতে থাকে সেগুলো।
সেদিন জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কেঁদেছিল সে। অতঃপর নিজেকে স্বাভাবিক করে নেওয়ার চেষ্টায় চোখের পানি মুছে নিল হাত দিয়ে। রিদের চোখে দৃষ্টি রেখে বলে,
“আপনার স্বপ্ন পূরণ করে দেশে ফেরা অব্দি আমি অপেক্ষার প্রহর গুনবো। প্রতিটা মুহুর্তেই আপনার কথা মনে হবে খুব। আচ্ছা আপনিও কি আমাকে অনুভব করবেন?”
রিদ কিছুটা মৃদু হেসে আরশির গাল ছুইয়ে দিয়ে বলে,
“অনুভব করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয় না পিচ্চি। আমি তো এমনিতেও সময়-অসময়ে, কারণে-অকারণে হুটহাট অনুভব করতে অভস্ত।”

কয়েক সেকেন্ড চুপ রইল আরশি। অথঃপর গাল ছুঁয়ে থাকা রিদের হাতটা ধরে গাল থেকে সরিয়ে বুকের বা’পাশটায় আলতো করে চেপে ধরে কৌতুহলী দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“শুনতে পাচ্ছেন কিছু। ধুকপুক করা প্রতিটা শব্দই যেন মনের বিরুদ্ধে বিদ্রহ করে বসেছে।”
কেঁপে উঠলো রিদের পুরো শরির। ক্ষনিকটা চোখ রাঙালো সে। রাঙানো দৃষ্টি আরশির চোখে স্থির রেখে বলে,
“খাবি এক চ’র। লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছিস নাকি?”
আরশি কিছুটা মুচকি হেসে উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“হুম। তাছাড়া আমারই তো মানুষ। নিজের মানুষটার কাছে নাহয় একটু নির্লজ্জ হলাম, সমস্যা কোথায়?”

সেদিন প্রথম আরশি নিজের মানুষ বলে সম্মোধন করেছিল। রিদ শুধু অবাক হয়ে চেয়েছিল তার দিকে। তার আচরণে এক মুহুর্তের জন্যও তাকে পিচ্চি মনে হয়নি। তবুও কেন জানি মাঝে মাঝে পিচ্চি বলে ডাকার মাঝেও এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।

এত কিছুর মাঝেও কেন যেন ভয় হয় খুব। প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয়। বাইরের খোলা আকাশটার দিকে তাকালো রিদ। নিশ্চুপ থাকলেও মন যেন চিৎকার করে বলছে,
‘এই সু-বিশাল আকাশ তুমি শাক্ষি থেকো। আমি সারা জীবনই আমার পিচ্চিটার প্রতিই আসক্ত থাকবো। সে ছাড়া অন্য সব নারী আমার জন্য বিশাক্ত হয়ে যাক। আমি শুধু তার ভালোবাসাকেই আকড়ে ধরে বাচতে চাই সারাটা জীবন।’

ভেবেই চোখ দু’টো বুঁজে একটা নিশ্বাস নিল রিদ। জীবন নদীর স্রোত কি সব সময় একই তালে বয়ে যায়? সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় সবকিছুর। তবে ভালোবাসা টা একই রকম থাকবে তো?

“”””””””””””””””””””””””””””””””

ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিল। কলেজ জীবনে প্রীতি ছাড়াও ধীরে ধীরো বেশ কয়েকটা বন্ধু হয়েছে আরশির। এর মাঝে চির জন মেয়ে আর তিনজন ছেলে। এই মুহুর্তে তাদের আড্ডার টপিক হলো জিদানের বার্থ-ডে পার্টি। যেখানে পুরো বন্ধু মহলকে ইনভাইট করেছে সে। সবাই হাসির মাঝে ইনভাইট গ্রহন করলেও চুপচাপ এক পাশে বসে রইল আরশি।

তাকে নিশ্চুপ দেখে পাশ থেকে তুহিন বলে,
“কিরে তুই কিছু বলছিস না যে? নাকি যাওয়ার ইচ্ছে নেই তোর?”
আরশি এবার নিরবতা ভেঙে বলে,
“যেতে পারবো না আমি। সন্ধার পর বাসা থেকে বের হতে দিবে না।”
আরশির কথায় পাশ থেকে অবনি বলে,
“কেন দিবে না? বলবি যে, প্রীতিদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছে। সব বান্ধবিরাও থাকবে সেখানে। তাছাড়া তোর বাসা আর প্রীতির বাসা তো কয়েক মিনিটের রাস্তা।”

আরশি কিছু না ভেবে পূনরায় অসম্মতি জানিয়ে বলে,
“না রে, লাভ হবে না। তোরা যা। আমাকে ইনবক্সে পিক পাঠিয়ে দিস।”
“এটা কেমন কথা? পার্টিতে মজা করা আর ইনবক্সে পিক দেখে শান্তনা নেওয়া কি এক?”
এর মাঝেই পাশ থেকে প্রীতি কিছুটা হেসে বলে,
“আরে ওর আসল কাহিনি তোরা বুঝবি না। মুল কথা হলো, পার্টিতে তো জিদানের আরো ছেলে বন্ধুও থাকবে। এদিকে ওর বয়ফ্রেন্ড ছেলেদের সাথে মিশতে নিষেধ করেছে তাকে। এটা হলো আসল কাহিনি।”

প্রীতির কথা শেষ হওয়ার দু’এক সেকেন্ডর মাঝেই একসাথে হেসে উঠে সবাই। তুহিন হাসতে হাসতে বলে,
“আহারে, প্রেমিক বাতরুমে যেতে মানা করলে সেখানেও যাইস না। একদম প্রেমিকের পুতুল হয়ে থাকিস সব সময়।”

তুহিনের কথায় আবারও হেসে দিল সবাই। সবার কাছে হাসির পাত্র হলে, বিরক্তিতে বিষণ্ন মনে ব্যাগ হাতে উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।
সেদিন থেকেই বন্ধুমহলে আরশির ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল প্রেমিকের পুতুল। সুজুগ পেলেই সবাই তাকে প্রেমিকের পুতুল বলেই ক্ষেপাতো। যা খুবই খারাপ লাগতো তার।

এক সময় ধীরে ধীরে স্বাধীন ভাবে বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাইলে রিদের নিষেধাজ্ঞা গুলো প্যারা মনে হতে শুরু হয় তার কাছে। ছোট বেলা থেকেই লুকোনো অনুভূতি নিয়ে তৈরি হওয়া সুন্দর সম্পর্কটা ধীরে ধীরে অবনতি শুরু হয়েছিল এই সূত্র ধরেই।

“”””””””””””””””””””””””””””””

কেটে গেলো অনেক দিন। ব্যস্ত রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে আছে আরশি ও প্রীতি। তাদের পাশেই একগুচ্ছ ফুল হাতে দাড়িয়ে আছে ফারুক। ফুল গুলো তার গার্লফ্রেন্ড ইয়াশার জন্যই নেওয়া। অনেকদিন দেখা হয়নি ইয়াশার সাথে। বাবার সাথে চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিল ইয়াশা। সেদিন বিদায় নেওয়ার জন্য ফারুকের সাথে দেখা করতে কলেজে আসলে আরশি ও প্রীতির সাথে প্রথম বার দেখা হয়েছিল। আজ অনেক দিন পর ঢাকায় ফিরেছে। আরশি ও প্রীতির সাথে ভালোভাবে পরিচিত হতে চাইলো সে। তাই ফারুক আজ এক গুচ্ছ ফুল হাতে কলেজ থেকে আরশি ও প্রীতিকে নিয়ে চললো তার সাথে দেখা করতে।

রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে ‘এগুলো একটু নাও’ বলে ফুল গুলো আরশির হাতে দিয়ে ফারুক বসে নিজের জুতার ফিতা ঠিক করছিল। অতঃপর উঠে আরশি এক হাত ধরে ফারুক তাড়া দিয়ে বলে,
“এখন রাস্তা কিছুটা ফাকা আছে। তাড়াতাড়ি আসো।”
আরশি অবাক হয়ে কিছু বলার আগেই ফারুক হাটা ধরলে আরশিও কিছু না বলে হেটে চুপচাপ রাস্তা পার হয়ে যায়। এরপর পূনরায় ফিরে এসে প্রীতিকেও রাস্তা পার করে দেয় ফারুক।

“”””””””””””””””””””””””””””””””””

ফোনের স্কিনে একটা ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রিদ। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আরশির এক হাত ধরে তাকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে ফারুক। আরশির অন্য হাতে এক গুচ্ছ ফুল। কয়েক সেকেন্ড পিকটার দিকে চেয়ে মুহুর্তেই যেন সারা শরির কাঁপতে শুরু হলো রিদের। হটাৎ করেই যেন দম বন্ধ অনুভূতি ঘিরে ধরেছে তাকে। যেন নিশ্বাস নেওয়াটাও ভারি কষ্টকর মনে হচ্ছে আজ। কারণ আরশির থেকে এমনটা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি সে। আরশি তো এমন ছিল না। সে ছিল সদ্য ফোটা একটা তাজা গোলাপের পাপড়ির মতোই।

To be continue……………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here