#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_৩২
#নূন_মাহবুব
-” আমি আপনার আর একটা কথাও শুনতে চাই না রায়হান শ্বশুর স্যার। আপনার মেয়ের বাড়ি কি আপনার বাড়ি নয়? আপনি হসপিটাল থেকে সোজা আমাদের বাড়িতে যাবেন। ব্যাস এটাই ফাইনাল।বাবা হসপিটালের সব ফর্মালিটি পূরণ করতে গিয়েছে।বাবা আসলে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো। আপনি আমাদের সাথে শিকদার ভিলায় যাচ্ছেন। আপনার মেয়ে অধীর আগ্রহে আপনার পথ চেয়ে বসে আছে।”
-” এমনটা হয় না সাহিত্য। আমি আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি পড়ে থাকবো এটা ভালো দেখায় না। সমাজের লোকেরা ছিঃ ছিঃ করবে। নানা রকমের কথা উঠবে।”
-” সমাজ আমাদের খেতে পড়তে দেয় না রায়হান শ্বশুর স্যার। আপনি তাদের টা খাবেন না পড়বেন যে তাদের কথায় কান দিবেন? তাছাড়া আপনি অসুস্থ্য একটা মানুষ।এই অবস্থায় আমরা আপনাকে একা ছাড়তে পারি না।”
-” তুমি শুধু শুধু আমাকে নিয়ে চিন্তা করছো সাহিত্য। আমি একদম ঠিক আছি।”
-” কি ঠিক আছি ঠিক আছি বলছিস রায়হান? কেবিনে প্রবেশ করতে করতে বললো সাদ্দাম শিকদার। তোর শরীর কখনো দূর্বল রয়েছে। ডক্টর বলেছে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে।”
-” তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসেছো ভালো হয়েছে বাবা।দেখ না শ্বশুর স্যার কি বলছেন? তিনি নাকি শিক্ষা কে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যাবেন।”
-” তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে রায়হান? এসব তুই কি বলছিস দোস্ত ? তুই শিক্ষা কে নিয়ে যাবি মানে কি? শিক্ষা সাহিত্যের বিবাহিত স্ত্রী।ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তুই ওদের কে আলাদা করতে পারিস না।”
-” ডোন্ট প্যানিক সাদ্দাম।আগে আমার পুরো কথা টা শুনবি তো। তুই এই চিনেছিস আমাকে? তুই ভাবলি কি করে আমি উষ্ণতা কে তোদের থেকে আলাদা করে দিবো? শুধু মাত্র জন্ম দিলেই বাবা মা হওয়া যায় না। আমি শুধু নাম মাত্র উষ্ণতার বাবা। কিন্তু ওর প্রকৃত বাবা তুই।যে আদর ভালোবাসা আমি মেয়েটাকে দিতে পারি নি। তুই কোনো স্বার্থ ছাড়া সেই ভালোবাসা দিয়েছিস আমার মেয়েটাকে।কখনো বাবা মায়ের অভাব বুঝতে দিস নি।তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলেছিস।একটা যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিয়েছিস।আমি এতোটাও অকৃতজ্ঞ নই যে সব কিছু ভুলে যাবো।”
-” তাহলে মনি কে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চায়ছিস কেন?”
-” প্রত্যেক টা বাবা চায় তার মেয়েটা কে একটা যোগ্য ছেলের হাতে তুলে দিতে।তুই আমার হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করেছিস। কিন্তু আমি বাবা হয়েও সেই দায়িত্ব টা পালন করতে পারি নি।তাই আমি চাচ্ছি সাহিত্য আর উষ্ণতার মহা ধুমধাম করে আবার বিয়ে দিতে।পুরো শহরের মানুষ কে জানাতে যে রায়হান মীরের মেয়ে উষ্ণতা মীরের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।”
-” তো এতে তোর আলাদা বাড়িতে যাওয়ার কি আছে? আমরা নিজেদের বাড়িতে থেকেই ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিতে পারি।”
-” কিন্তু!”
-” কোনো কিন্তু নয়।আসলে মনি আর সাহিত্যের বিয়ে হয়েছিলো হসপিটালে।আমরা কেউ বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।মনি কে যবে থেকে শিকদার ভিলায় নিয়ে আসি ,তবে থেকে ও সবার চোখের মণি হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আমার আম্মার।আম্মা মনি কে অনেক ভালোবাসতো। আম্মা সবসময় বলতো,এই মায়ায় খনি কে আমি কোথাও যেতে দিবো না। আমার দাদু ভাইয়ের বউ করে আমার কাছে সারাজীবন রেখে দিবো। হঠাৎ করে আম্মা একদিন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। আম্মা কে হসপিটালে এডমিট করা হয়। আম্মা অসুস্থ্য অবস্থায় বারবার বলছিলো আমি বোধহয় আর বাঁচব না রে সাদ্দাম। শিক্ষা কে দাদু ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখার সাধ আমার থেকেই গেল।মনি , সাহিত্য দুজনেই আম্মাকে অনেক ভালোবাসতো। আম্মার এই অবস্থা দেখে দুজনেই রাজী হয় বিয়ে করতে। একদম অপ্রস্তুত ভাবে হসপিটালে দুজনের বিয়ে টা হয়ে যায়। আমি চেয়েছিলাম বড়ো একটা পার্টি দিতে মনি আর সাহিত্যের বিয়ের ব্যাপারে সবাইকে জানাতে। কিন্তু একটার পর একটা সমস্যার জন্য সেটা আর সম্ভব হয় নি। এখন তুই এসে গিয়েছিস আমরা দুই দোস্ত মিলে মহা ধুমধাম করে আমার ছেলেমেয়ের বিয়ে দিবো।এখন আর কথা না বাড়িয়ে চল তো।”
-” হুম চল।”
-” সাহিত্য দুজনকে আসতে দেখে হসপিটাল থেকে বেরিয়েছে এমন সময় নির্জনের সাথে দেখা হয়। সাহিত্যে কে দেখে নির্জন ফোড়ন কেটে বলে,কিরে শা’লা তোর শ্বশুরের কি অবস্থা? ”
-” এখন মোটামুটি ভালো। তুই বোধহয় স্যার কে দেখতে এসেছিলি?”
-” হ্যাঁ এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম , ভাবলাম আঙ্কেলের সাথে দেখা করে যাই।আর তুই তো আছিস ই ।তার একটা মাত্র মেয়ের জামাই বলে কথা।”
-” আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস নির্জন। আমি জানি তুই শিক্ষা কে ভালোবাসিস। কিন্তু তুই বিশ্বাস কর শিক্ষা যদি আমার বিবাহিত স্ত্রী না হতো, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোদের বিয়ে দিতাম।”
-” ভালোবাসলেয় সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। তেমনি আমার ভালোবাসা ও পূর্ণতা পাই নি। বিশ্বাস কর এতে আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না। আমার কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে তুই এতো বড় একটা সত্যি কথা আমার থেকে লুকিয়েছিস। হ্যাঁ আমি শিক্ষা কে ভালোবাসি। আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে শিক্ষার ছবি আঁকা।তার মানে এটা নয় যে ভালোবাসার জন্য আমি আমার বন্ধুত্ব বিসর্জন দিবো। এরকম একটা শিক্ষা গেলে হাজার টা শিক্ষা পাবো। কিন্তু তোর মতো একটা বন্ধু হারিয়ে গেলে আমি তাকে ফিরে পাবো না।তাই আমার কাছে ভালোবাসা নয়, বন্ধুত্বের মূল্য অনেক বেশি।”
-” নির্জনের কথা শুনে সাহিত্য তৎক্ষণাৎ নির্জন কে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি অনেক লাকি রে আমার জীবনে তোর মতো একটা বন্ধু পেয়েছি।”
-” যা কিছু হয়ে যাক না কেন আমাদের বন্ধুত্ব সারাজীবন এমনি অটুট থেকে যাবে বলে রহস্যময় হাসি হাসলো নির্জন।”
___________________________________
-” রাত বারোটা। শিক্ষা নিজের রুমে ঘুমিয়ে রয়েছে। বাড়ির সবাই মিলে শুক্রবার তাদের বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করছে। আর ততোদিন তাদের আলাদা আলাদা থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।সবার কথা রাখতে শিক্ষা সাহিত্যের রুমে না গিয়ে নিজের মতো করে ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিন তার উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে।তার পাপা কে ফিরে পাওয়ার আনন্দে নিজে হাতে রায়হান মীরের জন্য রান্না করেছে।পাপা কে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ যাবত বিড়াল ছানার মতো তার বুকে লেপ্টে পড়ে ছিলো।পাপার বুকে মাথা রেখে অনেক ক্ষণ ধরে সুখের কান্না ও করছে। অনেকক্ষণ ধরে কান্না আর সারাদিনের ক্লান্তি তে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে শিক্ষা। এমন সময় মনে হলো কেউ তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে।তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা চেষ্টা করেও দর্শনেন্দ্রিয় খুলতে পারছে না। একে একে শরীরে লোকটার বিচরণ ক্রমশ বাড়তে থাকে ।এক পর্যায়ে শিক্ষা লোকটার বুকে লা’থি মে’রে তাকে নিচে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসে রুমের বাতি জ্বালিয়ে দেয়।”
-” লোকটা মেঝেতে পড়ে গিয়ে বলে, তুই আসলে একটা রাক্ষসী।বরের বুকে কেউ এইভাবে লা’থি মা’রে?”
-” বরের খেতায় আগুন।এতো রাতে কেন এসেছেন আপনি? আমি কতোটা ভয় পেয়েছি জানেন আপনি? কেন এসেছেন আমার রুমে?”
-” ভালোবাসতে ,আদর করতে।”
-” হঠাৎ দেখছি আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা উৎলে উঠেছে । চোরের মতো লুকিয়ে আমার রুমে ঢুকেছেন।”
-” এতো কথা বাদ দে।চল আমার সাথে। তুই আমার সাথে ঘুমোবি।”
-” সবাই কি বলেছে শুনতে পান নি? বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আলাদা থাকতে বলেছে।”
-” হুস! মামা বাড়ির আবদার নাকি? আমার বউ । আমার সম্পদ। আমি আমার সম্পদ কোথায় রাখবো কি রাখবো না সেটা অন্য কেউ বলে দিবে নাকি? আর বললেও আমি শুনবো কেন? বর্তমানে আমি প্রচুর পরিমাণে বর বর ফিল পাচ্ছি।তাই আমার বউ নামক অস্পর্শনীয় সম্পদ নিতে এসেছি । অবশ্য আমি তোর কাছে স্থায়ী সম্পদ হলেও তুই আমার কাছে অস্পর্শনীয় সম্পদ। যা একদম ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ছুঁয়ে দিতে গেলেই ছ্যাত করে উঠিস।”
-“শুনুন আমি হিসাববিজ্ঞানের ছাত্রী।তাই এসব চলতি সম্পদ , স্থায়ী সম্পদের জ্ঞান আমাকে না দিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে দিন।কি হলো আপনি কি যাবেন নাকি আমি চিৎকার করে ডাকবো সবাইকে?”
-” ডাক”
-” শিক্ষা সবে বড়ো আম্মু বলতে যাবে তার আগেই সাহিত্যে একটা বিষ্ময়কর কাজ করে বসলো।যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না শিক্ষা। সাহিত্য শিক্ষা কে ছাড়তেই শিক্ষা ওড়না দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে সাহিত্য কে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো, অ’স’ভ্য লোক এই মাত্র বললেন আমি আপনার কাছে অস্পর্শনীয় সম্পত্তি। ছুঁতে গেলেই আমি ছ্যাত করে উঠি। তাহলে এইমাত্র যেটা করলেন সেটা কি ছিলো।”
-” বলতেই পারিস ব্যাপার টা তোর ভালো লেগেছে।আরো লাগবে। শুধু শুধু আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন সেটা কি ছিলো।যদি তুই অনুমতি দিস কি ছিলো আবারো দেখিয়ে দেই।”
-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ সাহিত্য কে ধাক্কা দিয়ে রুমের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, এবার বোধহয় আপনি আমাকে ভালোবাসার আগুন পু’ড়ি’য়ে মে’রে ফেলবেন সাহিত্য।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।