#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_১৩
আগের রাতের বৃষ্টির রেশ সকালেও রয়ে গেল। অন্যান্য দিনের মতন সকালটা রোদ ছড়ালো না। বাদলা আবহাওয়া তার সাথে বয়ে নিয়ে আসলো শীত শীত পরিবেশ। শৈলীর রাতে ভালো ঘুম হয়নি। কেমন একটা উদ্ভ্রান্তির মাঝে যেন ছিল ও। খালি খাটের এপাশ আর ওপাশ ফিরেছে।
ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে নিজেকে বিছানা থেকে টেনে উঠালো ও। ফ্রেশ হয়ে এসে হাল্কা নীল আর হাল্কা বেগুণীর মিশ্রণের জর্জেটের একটা ফ্লোর টাচ্ গাউন পরে নিল। আয়নার সামনে যেয়ে নিজের চোখের দিশা দেখে ওর দিশাহারা হওয়ার অবস্থা। জলদি জলদি মেকআপ কিট টা বের করলো নিজের, মনে মনে ধন্যবাদ জানালো নিজেকে মেকাপ করার পদ্ধতি জানার জন্য। কিছুক্ষণ পরে আয়নায় আরেকবার সব পর্যবেক্ষণ করে রুম থেকে বের হলো শৈলী। মাহিরা আগেই বাসায় এসেছে, ওকে নিয়েই বের হয়ে পরলো। মা কে বললো, ব্রেকফাস্ট ভার্সিটিতে করে নিবে।
দরজার বাইরে মিহরান আর মেহরাব দুজনকেই একসাথে চোখে পরলো। একে অপরের সাথে গল্প করছে। বোঝাই যাচ্ছে, লিফ্টের অপেক্ষায় রয়েছে। শৈলী মিহরানকে দেখতে পেয়েই এক অজানা আড়ষ্টতায় জড়িয়ে পরলো। মাহিরার পেছনে চুপটি করে দাড়িয়ে রইলো ও। মাহিরা তো এসেই ভাইদের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে, তবে শৈলী চুপ রইলো। আড়চোখে একবার খেয়াল করলো তিরিশ বসন্ত পার করা সুন্দর মুখটার পানে। কিন্তু চোখ তুলতেই অমনি আটকা পরলো হীম আক্ষি যুগলে। মিহরান যে ওর দিকেই তাকিয়েছিল এতোক্ষণ এটা শৈলী প্রথমে বুঝতেই পারেনি। পারবে কিভাবে, দরজা দিয়ে বের হতেই মিহরান সামনে আছে বুঝতে পেরে সেই যে মাথাটা নুয়েই বুকের সাথে মেশালো, তা উঠেছে এই মাত্র।
দুজনের দৃষ্টি কয়েক মিলি সেকেন্ডের জন্য জোড়া লেগেছিল মাত্র। তারপরই মিহরান নিজেকে সরিয়ে ফেলে। শৈলী তো রীতিমতো ঢোক গিললো। ও নিশ্চিত স্যারের চোখে রাগ দেখেছে, ভীষণ পরিমানের রাগ।
শৈলীর চোখ বড় হয়ে যায়। যেন সত্যটা হুট করেই মাথায় বাড়ি দিয়ে ঢোকে ওর। কালকের ঘটনাগুলো প্রোজেক্টরে দেখা সিনের মতন একটার পর একটা সামনে আসতে থাকে। শৈলীর মাথা ঘুরোনো শুরু হয় তাতে। বুঝতে একটু সময় লাগে না মিহরান স্যার গতকালের কান্ডে ওর ওপর ক্ষেপে আছেন। ভীষণ ক্ষেপে। তাই তো এই হিমশীতল দৃষ্টিযুগল। ইশ! গতকাল রাতেই এই দুচোখের মোহে পরে ক্রাশ নামক মেশিনে নিজেকে পিশে ফেলতে নিয়েছিল শৈলী। আর আজ? আজ সেই চোখের দিকে তাকানো পর্যন্ত যাচ্ছে না। কি একটা অবস্থা!
ততক্ষণে লিফ্ট চলে এসেছে। দরজা খুলতেই মিহরান প্রথমে উঠে ভেতরের এক কোণায় দাড়িয়ে মোবাইলে মনোনিবেশ করলো নিজেকে।
এদিকে মিহরান ও শৈলী ছাড়াও যে বাকি দুজন ওদের সাথে আছে, তারাও আঁচ করতে পারছে আবহাওয়ার উত্তাপ। মাহিরা ও মেহরাব একটু পরপরই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় প্রশ্ন করছে,
মাহিরা: ভাইয়ার কি হয়েছে রে?
মেহরাব: আমি কি জানি?
মাহিরা- আরে? তুইই তো এতোক্ষণ ভাইয়ার সাথে ছিলি? জানবি না কেন?
ওদের ইশারার কথোপকথনের মাঝেই গ্রাউন্ডফ্লোরে এসে লিফ্ট থামলো। দরজা খুলে সবাই বের হতেই মিহরান সোজা গাড়ি আনতে চলে গেল। ও যেতেই ফোঁস করে উঠলো মাহিরা,
– ভাইয়া আজকে এই ভাবে রেগে আছে কেন? বাপ রে বাপ! ওনাকে দেখেই তো আমার গায়ে হিম ধরে যাচ্ছে।
মেহরাবও কাধ ঝাকায়,
-আমিও বুঝলাম না। তোরা আসার পর দেখি আরও চুপ হয়ে গেলেন।
-আমরা আসার পর?
– হ্যা। তার আগে তো আমার সাথে টুকটাক কথা বলছিলেন, কিন্তু পরে আর কিছুই…
-এই চুপ চুপ। ভাইয়া আসছে।
গাড়িটা দৃশ্যমান হতেই তিনজন সটান হয়ে দাড়িয়ে পরলো। ওদের সামনে আসতেই নিজেদের নির্ধারিত আসনে বসে পরলো ওরা। একবার আড়চোখে সবাইকে বসতে দেখে নিঃশব্দে গাড়ি ছোটালো মিহরান।
পুরো গাড়ীতে কোনো কথা হলো না। সামনের ঝোলানো রিয়ারভিউ মিররে শৈলী একটু পর পর মিহরানের লৌহের ন্যয় শক্ত মুখাননের দিকে দেখছিল। ভেতরে ওর ডামাডোল বাজছে ওনার রাগ দেখে। মেহরাবের শেষ কথায় নিজের প্রায় নিশ্চিত থাকা সন্দেহটা পুরোপুরি সত্য প্রমাণিত হলো। আসলেই ওর ওপরেই স্যারের রাগ, নয়তো ও আশার পর থেকে স্যার এভাবে চুপ হয়ে যাবেন কেন?
শৈলীর আশঙ্কার মাঝেই ভার্সিটির মূল ফটক দিয়ে গাড়ি ঢুকলো। ওরা নেমে দাড়াতেই মিহরান কোন কথা না বলে চলে গেল পার্কিং লটের দিকে। মাহিরা একবার সেদিকে চেয়ে আপনমনেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,
– কে বা কি কারণে যে ভাইয়া এতো রেগে আছে, আল্লাহ্ই জানে। তবে এইভাবে চললে ওনার মাইগ্রেন পেইন উঠতে দেরী হবে না। বেচারা নিজের অসুস্থতা নিজেই ডেকে আনে।
শৈলী চুপচাপ মাহিরার কথা শুনলো পুরোটা। কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না কারণ গলায় আটকে আছে অপরাধবোধ।
-স্যারের শরীর যদি আমার জন্য খারাপ হয়ে যায় তাহলে? আয় হায়! না না এটা ঠিক হবে না। মানুষটা আমাকে সব দিক থেকে বাচাঁনোর চেষ্টা করেছেন, আমাকে প্রোটেকশন দিয়েছেন, এমনকি আমার জন্য রিকের সাথে বাকবিতণ্ডায়ও জড়িয়েছেন। যার প্রতি আমি এতো কৃতজ্ঞ সে আমার জন্য অসুস্থ হয়ে যাবে, এটা ঠিক না।
শৈলী তত্ক্ষণাত সিদ্ধান্ত নেয় সে মিহরান স্যারের ক্যাবিনে যেয়ে নিজে দেখা করে আসবে। ক্ষমা চাবে গতকালের ব্যবহারের জন্য। বোঝাবে সে এটা কোনো ভাবেও মিন করেনি, মুখ ফষ্কে বের হয়ে গিয়েছে মাত্র। তাছাড়া… রিকের বিষয়টা নিয়েও তো ভালো করে তাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি।
…………………………
মালিহা আজ ভার্সিটি যাওয়ার সময় গাড়ি নেয়নি। মাঝে মাঝেই নেয় না। বাসায় বলে দেয় কোনো বান্ধবীর গাড়ি তে যাচ্ছে। কিন্তু আসলে সেদিনগুলোতে ও দেখা করতে যায় রায়হানের সাথে। এই মুহূর্তে ধানমন্ডির এক কফি শপে বসা দুজন। মালিহা নিজের হাত ভরে দিয়েছে রায়হানের হাতের মাঝে যা রায়হান মুঠি করে ধরে আছে। মেয়েটার মুখে এক অন্যরকম সুখানুভূতী খেলা করছে। মনে চলছে তীব্র প্রশান্তির ঢেউ। দুজনই চুপ থেকে শুধু সময়টাকে উপভোগ করছে।
এরই মাঝে পাশ থেকে শোনা গেল ওয়েটারের সুরেলা ধ্বনি। ফুল পাওয়ারের হাসি ঠোটে মেখে মেয়েটি মেনু কার্ডটা সামনে এগিয়ে দিল। রায়হান সৌজন্যের হাসি দিয়ে মেনু হাতে নিল, তাকালো মালিহার দিকে,
– আমার জানটা কি খাবে?
– মমম…একটা ক্যাপাচিনো।
– শুধু ক্যাপাচিনো? আরো কিছু নাও সাথে?
– না না রায়হান, আর কিছু খাব না। বাসা থেকে ব্রেকফাস্ট করে এসেছি। এখন পেট একদম ভরা।
রায়হান কপট রাগ দেখায়,
– ব্রেকফাস্ট করেছো তো বাসায়, তাই বলে আমার সাথে কিছু খাবা না নাকি? এতো কম খেলে বিল তো কিছুই আসবে না। এতো সস্তায় ছেড়ে দিলে পরে কথা হবে বয়ফ্রেন্ড কিপ্টা, গার্লফ্রেন্ডকে ভালো মতন ট্রিট করে না।
মালিহা রায়হানের আদর মাখা অভিযোগে হেসেই খুন,
– তুমি এতো কিউট কেন বলতো? আর আমি কবে বললাম তুমি কিপ্টা। বরং তুমিতো আমাকে খালি ট্রিটের ওপরেই রাখো। যখনই তোমার সাথে দেখা করতে আসি, খালি এতো এতো খাওয়াও তুমি। তাইতো তোমার সাথে যেদিন দেখা হয় সেদিন বাকি পুরো সময়টা আমি আর কিছুই খেতে পারি না। এভাবে খেতে থাকলে আমি একদিন বিশাল বড় একটা ফুটবলে পরিণত হবো দেইখো।
মালিহা হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেও, রায়হান কে দেখলো মুখ গম্ভীর করে রাখতে।
– তুমি ফুটবল হও কি বাস্কেটবল, আমি কি কখনো বলেছি যে এটা নিয়ে আমি চিন্তিত? লিসেন মালিহা, আই লাইক ইউ, নট ইউর ফিগার। তুমি যতই মোটা হও না কেন আমার কিছুই আসে যায় না। তাই এই ভয়ে খাওয়া বন্ধ করে দিবা বা পছন্দের খাবার খাবা না, এইটা হবে না। এবার বলো কি অর্ডার দিব তোমার জন্য? এখানের মেলটেড লাভা ব্রাউনি টা তো তোমার খুব পছন্দ, সেটা অর্ডার দেই?
মালিহা চোখে ততক্ষণে অথই জল। যে কোনো সময় টুপ করে পরতে পারে মুক্তার ন্যয় অশ্রুফোটা। ও ভেবে পায় না, এতো ভালো একটা মানুষকে নিজের ভাগ্যে ও পেল কিভাবে? যে ওকে এতো ভালো বুঝে, নিঃসার্থ ভাবে ভালোবাসে। কিভাবে?
শুধু মালিহাই না, ওদের পাশে দাড়ানো একুশ বছরের মেয়ে সার্ভারটারও চেহারায় ছিল আজকালকার বাহ্যিক ভালোবাসার গল্পের মাঝে এমন এক নিখাদ প্রেম উপলব্ধি করার মুগ্ধতা।
…………………………..
নিজের কেবিনে এসে ধপ্ করে চেয়ারে বসে পরলো মিহরান। শৈলীকে দেখে নিজের রাগ এতোক্ষণ অনেক কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করেছে, এখন আর পারছে না। সত্যি বলতে কালকে থেকেই মিহরানের মাথার রগ দপদপাচ্ছে। শৈলী মুখ থেকে সেই একটা লাইন বার বার ওর কানে বাজছিল।
-প্লিজ আমাকে ছুবেন না।
আবার নড়ে উঠে মিহরান। কপালের ভাজ বেড়ে যায় কয়েকগুন।
-কিভাবে এই কথাটা বলতে পারলেন আপনি শৈলী? আপনি কি তাহলে আমাকে এমনই মনে করেন?
মিহরানের গভীর তেষ্টা পায়। টেবিলের এক পাশে রাখা গ্লাসের ওপর থেকে কোস্টারটা সরিয়ে ঢকঢক করে পানি গিলে। ঠিক তখনই দরজায় নক্ পরে। মিহরান ঘড়ি দেখে ভ্রু জোড়া কুচকায়। মিটিং তো আরও আধা ঘন্টা পরে। এখন কে এলো?
………………….
তুরিন ভার্সিটিতে এসেই মালিহাকে পাগলের মতন ঘুরে ঘুরে খুজে বেড়িয়েছে। আসলে সে একটা আজিব কান্ড করেছে। গতকাল শপিং করতে গিয়ে হঠাৎ একটা টাইয়ের ওপর চোখ আটকায় তুরিনের। মিহরানের সেই টাইটা পরা এক ছবি আঁকে মনের ক্যানভাসে। পরমুহূর্তেই সেই টাইটা কিনে নেয় ও। কিন্তু কেনার পরে ম্যাডামের হুশ আসে। কিনে তো ফেললো, এখন এটার মালিকের কাছে এটা পৌছাবে কিভাবে? মিহরান তো ওর সাথে কথাই বলে না, কদাচিৎ তাকায়, সেইখানে ওর কাছ থেকে উপহার নিবে?
তুরিনের মাথায় চিন্তাটা আসতেই ও এটা বাদ দিয়ে দেয়। -আজগুবি আইডিয়া।
অনেক রাত পর্যন্ত ভেবেছে তুরিন, কিভাবে দেওয়া যায় উপহার তার পছন্দের মানবকে। শেষমেশ পুরো জগত ঘুরে এসে থামলো তার বান্ধবীর কাছেই। আসলেই মালিহা ছাড়া আর কোন পথ নেই ওর।
সেই প্ল্যান আর বুকে অসীম আশা নিয়েই আজ তুরিন মালিহাকে খুজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু মেয়েটাকে পাচ্ছে না কেন? ভার্সিটিতে আসে নি নাকি? ফোনও পিক করছে না।
-ভাউ!!
আতঁকে উঠলো তুরিন। সর্বাঙ্গে কাপুনি তুলে পেছনে ঘুরলো। মালিহাকে হাসতে দেখে স্বস্তির এক নিঃশ্বাস বের হলো। বান্ধবীর কাধ হালকা এক চড় বসালো,
-কি রে? এভাবে কেউ ভয় দেখায়? হার্ট এট্যাক হতো আমার আরেকটু হলে।
মালিহা হেসে কাছে এসে বান্ধবীকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে,
– এতো ওইক হার্ট নিয়ে মেজো ভাইয়াকে ভালোবাসার সাহস পাশ কিভাবে বান্ধবী? আমার ভাইটা একটা টর্নেডো, ওকে সামলানো কিন্তু কঠিন আছে। পারবি তো?
তুরিন, মালিহার কথায় চোখ সরু করে তাকায়।
-এখন যতই টর্নেডো থাকুক তোর ভাই, বিয়ের পরে সব পুরুষই শান্ত হয়ে যায়, কারণ তখন সে সোজা পরে সাইক্লোনের হাতে।
মালিহা মুগ্ধ হাতে তালি মারে,
-বাব্বাহ্ বান্ধবী। কিপ আপ দা স্পিরিট।
তুরিন হেসে মালিহার সামনে দাড়ায়,
– আচ্ছা এসব বাদ দে, আগে বল তোর ফোন তুই কোন দুনিয়ায় রাখিস? কল করলে পাওয়া যায় না কেন?
মালিহার হাসিমাখা মুখটা এইটুকু হয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
– আসলে…আসলে আমি…আসলে ব্যাগের ভেতরে ফোন তো, আওয়াজ শুনতে পারি নাই। সরি রে।
তুরিন হাল্কা ভ্রু কুচকে এক পলক মালিহাকে পরখ করলো। তারপর হেসে দিল,
-হইসে। বুঝছি। বাদ দে বাদ দে। তোকে যেই কারণে খুজছিলাম সেটা বলি।
মালিহাও ভেতর ভেতর নিজেকে সামলে নিল। রায়হানের ব্যাপারটা এখনো তুরিনকে বলেনি ও। রায়হানই মানা করেছে। প্রথমে মালিহা পছন্দ করেনি বিষয়টা। বলতে চেয়েছিল তুরিনকে, ওর বান্ধবীদেরকে, সবাইকে। কিন্তু রায়হান নিজের ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে মালিহাকে মানিয়ে নেয়। বলে, যে পারিবারিক ভাবে সব ঠিক হলে একসাথে সবাইকে জানাবে দুজন।
হঠাৎ মালিহাকে বর্তমানে কেউ টেনে নিয়ে আসে,
– মালিহা, শুনছিস?
মালিহা থতমত খেয়ে যায়,
-হ্যা হ্যা বল্।
তুরিনের দিকে তাকাতেই দেখে ওর হাতে একটা বাক্স। কৌতুহলবশত প্রশ্ন আসে,
– এটা কি রে?
তুরিন আগ্রহ নিয়ে বাক্সটা খোলে। টাইটা দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকায় মালিহা,
– আরে সুন্দর তো টাই টা! কিন্তু…এটা তোর কাছে কেন? আই মিন, তুই টাই নিয়ে ঘুরছিস কেন?
তুরিন অতি সাবধানে বাক্সটা বন্ধ করে তারপর মালিহার কাছে সেটা এগিয়ে দিতে দিতে বলে,
– এটা তোর মেজো ভাইয়ের জন্য কিনেছি। ও..ওনাকে দিয়ে দিস।
মালিহার চোখ প্রথম আসমানে পৌছায়,
– কি বললি? ভাইয়ার জন্য গিফ্ট? তোর মনে হয় ভাইয়া নিবে?
তুরিন বিরক্ত হয়,
– আরে গাধী, আমার নাম নিলে তো উনি নেবেনই না এটা জানা কথা। তুই আমার কথা বলবি কেন?
– তাহলে কি বলবো?
– বলবি তুই কিনসিশ।
– আমি কিনসি? ভাইয়ার জন্য?
– হ্যা… বোন তো ভাইয়ের জন্য কিনতেই পারে। পারে না?
মালিহা একবার ভাবলো। তারপর মাথা ঝাকিয়ে বললো,
– আচ্ছা, যা দিলাম নাহয় উপহারটা নিজের নাম করে। কিন্তু এতে তোর ক্রেডিট টা কই রইলো? ভাইয়া তো জানতেই পারলো না যে এটা এতো যত্ন সহকারে তুই তার জন্য কিনেছিস।
তুরিন মালিহার হাত ধরে ঝাকায়,
– আজ হয়তো জানতে না পারলেও একদিন পারবে রে। সেইদিন আমি নিজ হাতে ওনাকে এই টাইটা পরিয়ে আজকের ঘটনাটা জানাবো।
………………….
মিহরান দরজার দিকে তাকিয়ে ডাক দিল। অমনি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো ওর পিয়ন, আকমল।
– স্যার আসবো?
– হ্যা আকমল আসো।
-স্যার, ডিন স্যারের থেকে একটা নোটিস আসছে, সেটা দিতেই আসলাম।
বলেই হাতে রাখা ফাইলটা আকমল মিহরানের হাতে বাড়িয়ে দিল। তারপর মিহরানের অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
ফাইলটা খুলতেই মিহরানের চোখে পরলো বড় বড় অক্ষরে লেখা টাইটেলটা। মিহরান পুরো নোটিসটা পড়লো। ওদের আগামী সপ্তাহের পিকনিকের স্থান চেইঞ্জ হয়েছে। আগে গাজিপুরের একটা রিসোর্ট ভাড়া করা হয়েছিল এক রাতের জন্য। তবে এখন সেখানে আর যাওয়া হচ্ছে না। বরং পিকনিকের নতুন স্থান হলো, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের মেম্বার, শাহজাহান সাহেবের ফার্মহাউজ।
মিহরান না অবাক হয়ে পারলো না। তার সাথে ব্যাপারটা ওর সমিচিনও লাগলো না। ভার্সিটির একটা প্রোগ্রাম কারও ব্যক্তিগত বাড়িতে কেন করা হবে? ভার্সিটির কি ফান্ড কম আছে নাকি?
মিহরান ঠিক করলো কিছুক্ষণ পরের মিটিংয়ে এই বিষয়টা নিয়ে ও অবশ্যই কথা বলবে।
ঠিক তখনই আবার দরজায় টোকা পরলো। মিহরান অবাক। আকমল আবার কেন আসলো?
– আসো।
বলতেই দরজা খুলে গেল। তবে মিহরানের আশানরুপ আকমল রুমে ঢুকলো না। এবং যে ঢুকলো, তাকে এখানে, এই মুহূর্তে মিহরান আশা করেনি। কখনোই আশা করেনি…
চলবে।
কিছু বানান ভুল আজও থাকতে পারে। আগের থেকেই আমি ভীষন ভাবে দুঃখিত।